কে ইমাম মাহদী
(আহলে সুন্নাতের সূত্র থেকে)
লেখকঃ সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
অনুবাদঃ মুহাম্মাদ ইরফানুল হক
ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
শিরোনামঃ কে ইমাম মাহদী (আঃ) ?
লেখকঃ সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
অনুবাদঃ মুহাম্মাদ ইরফানুল হক
সম্পাদনাঃ এ.কে.এম. রাশিদুজ্জামান
সহযোগিতায়ঃ কালচারাল কাউন্সেলরের দফতর , ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান , ঢাকা বাংলাদেশ ।
প্রকাশকঃ ওয়াইজম্যান পাবলিকেশনস
প্রকাশকালঃ 20শে জামাদিউস সানি , 1430 হি. ,1লা আষাঢ় , 1416 বাং. ,15ই জুন , 2009 খ্রী.।
উৎসর্গ
এ বইটি উৎসর্গিত হলো আপনার প্রতি ‘ হে আবুল ক্বাসেম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আল আসকারী (আঃ) , ‘ হে বাক্বীয়াতাল্লাহ ’ (আল্লাহর কাছে যিনি বাকী রয়ে গেছেন) এবং হে তার দাসদের ওপর তার প্রমাণ ’ । আমি আশা করি আপনি আমার এ প্রচেষ্টাকে গ্রহণ করবেন। বাস্তবে ,উপস্থাপনার মূল্য এর উপস্থাপকের যোগ্যতা অনুযায়ী হয়।
-সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
আহলে সুন্নাতের তথ্যসূত্রের তালিকা
1 “ ইসাফুর রাগেবীন ” - রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তার পবিত্র আহলে বাইত (পরিবার)-এর মর্যাদা সম্পর্কিত বই। লিখেছেন শেইখ মুহাম্মাদ শাবান। তিনি 1206 খষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
2 . “ জামেউল লাতিফ ” - মক্কার মর্যাদা ও পবিত্র হারাম শরীফের নির্মাণ সম্পর্কে লেখা বই। লেখক আল্লামা শেইখ জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ জারুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে নরুদ্দীন ইবনে আবু বকর ইবনে আলী যাহিরাই কুরশী মাখযুমী। এ বইটি লেখা হয়েছে 950 হিজরীতে এবং প্রকাশিত হয়েছে 1276 হিজরীতে ‘ দার ইহয়াউল কিতাবুল আরাবিয়া ’ প্রকাশনী হতে।
3 নাহজুল বালাগার তাফসীর - লিখেছেন সাহিত্য ও ইতিহাসে পণ্ডিত শেইখ ইযযুদ্দীন আবু হামেদ আব্দুল হামিদ ইবনে হেবতুল্লাহ মাদায়েনি যিনি ইবনে আবিল হাদীদ নামে সুপরিচিত। তিনি 655 হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন। মিশরের দারুল কিতাব আল আরাবিয়া প্রকাশনী চার খণ্ডে তা প্রকাশ করেছে।
4 সহীহ বুখারী - লিখেছেন বিখ্যাত হাদীস সংগ্রাহক আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল ইবনে ইবরাহিম। তিনি 256 হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। এটি 1312 সনে মাইমানিয়া , মিশরে প্রকাশিত হয়।
5 সহীহ সুনানে মুস্তাফা - লিখেছেন সুপরিচিত হাদীসবেত্তা আবু দাউদ সুলাইমান ইবনে আশার সাজেস্তানি। তিনি ইন্তেকাল করেছেন 357 হিজরীতে।
6 সহীহ তিরমিযি - লিখেছেন আবু ঈসা মুহাম্মাদ ইবনে সুরাহ। তিনি 278 হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন। এটি 1310 হিজরীতে লখনৌ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।
7 ‘ সাওয়ায়েক্ব মুহাররেক্বা ’ - লিখেছেন শেইখ শাহাবুদ্দীন আহমাদ ইবনে হাজার হাইসাম। তিনি 974 হিজরীতে মক্কায় ইন্তেকাল করেন। 1933 খৃষ্টাব্দে বইটি মিশর থেকে পকাশিত হয়।
8 ‘ ইক্বদুদ দুরার ’ - প্রতিক্ষীত ইমাম সম্পর্কে লিখেছেন বিখ্যাত পণ্ডিত আবু বদর শেইখ জামালুদ্দীন ইউসুফ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে আলী ইবনে আব্দুল আযীয ইবনে আলী মুক্বাদ্দেসী , শাফেয়ী , সেলমি এবং দামাশক্বি । যিনি 658 হিজরীতে বইটি শেষ করেন। এ বইয়ের 2 কপি হযরত আলী ইবনে মূসা রিদা (আঃ)-এর লাইব্রেরীতে আছে। যার একটি 953 হিজরীতে কপি করা। অন্যটি আছে মির্যা মুহাম্মাদ হোসেইন নূরী তাবারসী-র লাইব্রেরীতে যিনি 1320 সনে ইন্তেকাল করেন। আরো একটি রয়েছে ইরানে সাইয়্যেদ শাহাবদ্দীন মারাশি নাজাফির লাইব্রেরীতে।
9 ‘ ফুতুহাতুল ইসলামিয়্যাহ ’ - লিখেছেন সাইয়্যেদ আহমেদ যাইনি দেহলান। তিনি একজন মুজতাহিদ। 1304 খৃষ্টাব্দে তিনি মক্কায় ইন্তেকাল করেন। বইটি মিশরে প্রকাশিত হয়েছে।
10 ‘ ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ ’ - আধ্যাত্মিক পণ্ডিত শেইখ আবু আব্দুল্লাহ মহিউদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে আলী। যিনি ইবনে আরাবি হাতেমী তাঈ হিসাবে সুপরিচিত। মিশরের দারুল কিতাব আল আরাবিয়া আল কুবরা প্রকাশনী বইটি প্রকাশ করেছে।
11 ‘ কাশফুস যুনুন আল আসামি আল কুতুব ওয়াল ফুনুন ’ - লিখেছেন মোল্লা কাতেবচালাবি। 1067 সনে তার মৃত্যু হয়।
12 ‘ মাফাতিহুল গায়েব ’ - এ বিখ্যাত তাফসীরটি লিখেছেন গবেষক ও পণ্ডিত মুহাম্মাদ ফখরুদ্দীন রাযী। তিনি 606 হিযরীতে ইন্তেকাল করেছেন। 1308 হিযরীতে ‘ আমেরা ’ প্রকাশনী 8 খণ্ডে তা প্র কাশ করে। এ তাফসীরের মার্জিনে আবু সউফ-এর তাফসীরও ছাপা হয়েছে।
13 ‘ মুফরাদাতুল কোরআন ’ - লিখেছেন গবেষক পণ্ডিত আবুল ক্বাসিম হোসেইন ইবনে মোহাম্মাদ ইবনে মুফাযযাল , যিনি রাগেব ইসফাহানি নামে পরিচিত। 502 হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন। মিশরে ইবনে আসীর-এর ‘ নিহায়া ’ -র মার্জিনে এ কিতাব উল্লেখ করা হয়েছে।
14 ‘ নুরুল আবসার ’ - নবীর (সাঃ) আহলে বায়েতের মর্যাদার উপর লিখিত বই। লিখেছেন সাইয়্যেদ মুমিন ইবনে হাসান শাবলানজি। 1208 হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। বইটি প্রকাশিত হয়েছে মিশর থেকে 1304 হিজরীতে উসমানি প্রকাশনী থেকে।
15 ‘ নিহায়া ’ - কোরআনের শব্দের ব্যাখ্যার উপর লিখিত বই। লিখেছেন গবেষক পণ্ডিত ও ভাষাবিদ আবু সাদাত মুবারাক ইবনে মুহাম্মাদ জাওযী। তিনি ইবনে আসির নামে পরিচিত। এ লেখক 606 হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। মিশর থেকে বইটি পকাশিত হয়েছে।
16 ‘ ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দা ’ ফী মুওয়াদ্দাত যুল ক্বুরবা ’ - লিখেছেন আধ্যাত্মিক পণ্ডিত শেইখ সুলাইমান ইবনে খাজা কালান হোসেইনী বলখী কুনদুযী । 1294 হিজরীতে তিনি ইন্তেকাল করেন। ‘ আখতার ’ প্রকাশনী তা প্রকাশ করেছে।
17 ‘ নাহজুল বালাগা ’ - সংগ্রহ ও সংকলণ করেছেন আল্লামা শরীফ রাযী মুহাম্মাদ ইবনে আবু আহমাদ মুসাউই। তিনি ছিলেন বাগদাদের অনেক বড় জ্ঞান অনুসন্ধানকারী ব্যক্তি। এ বইটিতে আছে আমিরুল মুমিনিন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)-এর খোতবা , চিঠি ও জ্ঞানগর্ভ উক্তি ও উপদেশ। এটি মিশরে ‘ ইসতেকামাহ ’ প্রকাশনী থেকে তিন খণ্ডে প্রকাশিত। শেইখ মুহাম্মাদ আবদুহ এবং মুহাম্মাদ আব্দুল হামিদ (আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর)-এর তাফসীর লিখেছেন।
18 ‘ হুদাল ইসলাম ’ - মিশরের একটি বিখ্যাত ধর্মীয় সপ্তাহিক। 1354 হিযরীতে প্রথম প্রকাশ হয়ে আজও প্রকাশিত হচ্ছে। মিশরের জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিরা একে কেন্দ্র করে জ্ঞানগর্ভ অবদান রেখে আসছেন।
লেখকের কথা
আল্লাহর মহিমান্বিত নামে
এ বইটি বেশ কিছু হাদীসের ধারাবাহিক সংগ্রহ , যা বর্ণিত হয়েছে পবিত্র নবী (সাঃ) , তার বংশধর ও সাথীদের কাছ থেকে এবং এর সবগুলোই আমাদের সুন্নী ভাইদের উৎস থেকে। এতে আরো রয়েছে সুন্নী বিজ্ঞ ব্যক্তিদের কথা ও লেখা , আল মাহদী (আঃ) সম্পর্কে যিনি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বংশ থেকে।
আশা করি এ বইটি আমার স্মৃতিচিহ্ন ও অন্যদের জন্য দুরদৃষ্টি হিসেবে থাকবে। আমি বইটিকে সাজিয়েছি একটি ভূমিকা , আটটি অধ্যায় দিয়ে। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি এর সফলতার জন্য এবং তাকেঁ বিনয়ের সাথে অনুরোধ করি যিনি তারঁ নেয়ামতে সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী।
বইটি লেখার কারণ ও লেখকের পদ্ধতি
আমার কিছু বিজ্ঞ বন্ধু মর্যাদাপূর্ণ ও বিজ্ঞজনদের এক জমায়েতে আমার সাথে যোগ দেন। আলোচনা চলতে থাকে হাদীসের সত্যতা নিয়ে এবং এক পর্যায়ে তা বহু প্রতিক্ষীত আল-মাহদী (আঃ) এর বিষয়টি পর্যন্ত গড়ায়। এটি এমন একটি বিষয় যা আমরা (12 ইমামী শিয়ারা) বিশ্বাস করি এবং যা ধর্মের প্রধান বিষয়গুলোর একটি।
তখন উপস্থিতদের মাঝে কেউ কেউ জিজ্ঞেস করলেন : ‘ আমাদের সুন্নী ভাইরা এ সম্পর্কে কী বলে এবং কোন হাদীস তাদের উৎস থেকে বর্ণিত হয়েছে কিনা , যা আমাদের হাদীসগুলোর সাথে মেলে ?
আমি বললাম : ‘ হ্যা , তাদের নিজস্ব গবেষণা অনুযায়ী তাদের কাছে মিশ্রিত (মুসতাফিযা) এবং পূর্ণ নির্ভরযোগ্য (মুতাওয়াতির) হাদীস আছে এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ এ বিষয়ে বইও লিখেছেন। যাহোক , তাদের মধ্যে অল্প ক ’ জন এর সত্যতা , বৈশিষ্ট্য ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে বলেছেন , যা আমরা বিশ্বাস করি।
অবশ্য এগুলোর মাঝে রয়েছে বিতর্ক , অনিশ্চয়তা এবং অসম্ভাব্যতা যা আসলে এক প্রজন্ম তার পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে এবং তারা সেগুলো বলে ও উল্লেখ করে তাদের বইগুলো ও লেখালেখিতে শুধু শব্দের পার্থক্য রেখে , কিন্তু অর্থে একই।
তখন একজন বললেন : ‘ আপনি কি এ বিষয়ে একটি প্রবন্ধু লিখতে পারেন এবং যে লেখাতে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন শুধু ঐ হাদীসগুলোর মধ্যে যেগুলো তাদের কাছেও এসেছে এবং এরপর ঐসব সমস্যা এবং অসম্ভাব্যতাসমূহ (যেগুলো নিয়ে তারা সমস্যায় আছে) উল্লেখ করবেন এবং এর উত্তর দেবেন ? ’
আমি বললাম : ‘ এ ধরনের আলোচনায় প্রবেশ করলে বন্ধুত্বের সীমালংঘন হবে এবং আমি চাই না এরকম কোন ফাটল দেখা দিক এসময়ে যখন আমরা মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য দেখতে চাচ্ছি। ’
এরপর আরেকজন বললেন : ‘ জ্ঞানের বিষয়ে আলোচনা কোন ক্ষতি আনবে না যদি এ আলোচনা বিতর্কের নিয়মকানুন মেনে চলে এবং কারো কথা যদি সৌজন্য ও নৈতিকতার সীমা অতিক্রম না করে। প্রকৃতপক্ষে কারো অধিকার নেই কঠোরভাবে কথা বলার ও অন্যকে তিরষ্কার করার।
প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার ও আদর্শে স্বাধীন এবং তার অধিকার আছে সেগুলোর পক্ষে কথা বলার। তবে আমরা দেখেছি এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যক্তি তাদের কথার মাধ্যমে অন্যের ক্ষতি করেছে এবং তাই তারা সে বিষয়ে দায়- দায়িত্ব বহন করে। ’
জবাবে আমি বললাম : ‘ আমি আপনাদের যুক্তি মেনে নিলাম এবং আমি এ কাজে আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতার উপর নির্ভর করে প্রবেশ করবো সব সৌজন্যমূলক আচরণ বজায় রেখেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাকে সত্য পথ দেখান যাকে তাঁর ইচ্ছা হয়। ’
এ বিয়য়ে সুন্নী ভাইদের লেখা বইগুলোর গুটি কয়েকমাত্র আমরা ব্যবহার করবো যা আমার কাছে আছে। আমি এদের প্রত্যেকটি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছি। ওগুলোর বেশীরভাগের মাঝেই হাদীসগুলো সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজানো নেই। আমি বেশ কিছু হাদীস সেগুলো থেকে নিয়েছি এবং বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজিয়ে নিয়েছি যেন তা আমাদের উদ্দেশ্যকে সফল করে।
আমি প্রত্যেক হাদীসকে নির্দিষ্ট বিষয়ের অধীনে লিখেছি এবং যেসব হাদীসে অনেকগুলো বিষয় আছে সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি বিষয়কে বিষয়ের শিরোনামের অধীনে এনেছি এবং এরপর হাদীসের বিচ্ছিন্নতা উল্লেখ করেছি।
এটি বলা উচিত হবে যে আমি উপরোল্লেখিত হাদীসগুলো নিয়েছি আমার কাছে থাকা বইগুলো থেকে এবং যেসব বই আমার কাছে নেই সেগুলোকে আমি বর্ণনা করেছি সম্মানিত বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করে।
এছাড়াও হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে আমি নিজেকে শুধু সেসব বইগুলোতে সীমাবদ্ধ রেখেছি যা সুন্নী প্রিন্টিং হাউস থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া আমি ওসব বই এড়িয়ে গেছি যেসব বই ইরানে প্রকাশিত হয়েছে যেমন , ‘ আল বায়ান-ফি-আখবার-সাহেবুয যামান ’ , ‘ আল-ফুসুল-মুহিম্মে-ফি-মারিফাত-উল-আইম্মা ’ এবং ‘ তাযকেরাতুল-উম্মাহু ফি- আহওয়াল-আইম্মা ’ । শুধু ‘ তাযকেরাতুল আইম্মা ’ বই থেকে কিছু বিষয় ছাড়া।
একইভাবে আমি নিজেকে বিরত রেখেছি আমাদের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করা থেকে এবং যা আমাদের বইগুলোতে ও লেখাতে জমা আছে। এসব করেছি শুধু এ সাধারণ কারণে যে হয়তো তা সন্দেহের উদ্রেক করবে (যেমন কেউ মনে করতে পারে যে বর্ণিত হাদীস মিথ্যা ও বানানো)। যাহোক , আমি কিছু নজির উল্লেখ করেছি ‘ আল-দুরার-আল- মূসাউইয়া-ফি-শার-আল ক্বায়েদ-আল জাফারিয়া ’ থেকে যেটি লিখেছেন আমাদের অভিভাবক আয়াতুল্লাহ আবি মুহাম্মাদ সাইয়্যেদ হাসান আল সদর কাযেমী। যার রয়েছে বিরাট অধিকার এবং যার কাছে আমরা অনেক ঋণী। আমি তার নজিরসমূহ উল্লেখ করেছি যুক্তি তর্কের জন্য নয় , বরং শুধুমাত্র আলোচ্য বিষয়টিকে সমর্থন করার জন্য।
আমি আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আমি এসব হাদীস ও পূর্ববর্তী লোকদের কথাকে ন্যায়বিচারের দৃষ্টিতে দেখেছি এবং পক্ষপাতিত্ব ও পথভ্রষ্টতা এড়িয়ে গেছি। আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছি যে আমি আমার বিশ্বাসকে যুক্তির আলোকে গ্রহণ করবো কিন্তু বিশ্বাসকে যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবো না। যে কেউ বইয়ের বিষয়বস্তু পরীক্ষা করবে সে এ সত্য উপলদ্ধি করতে পারবে।
নিশ্চয়ই প্রত্যেকের ওপর এটি বাধ্যতামূলক বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়সমূহের ক্ষেত্রে , অন্যের দেখানো পথটির সন্দেহ ও অনুমান থেকে নিজেকে মুক্ত করা। ব্যক্তির উচিত ধর্মীয় গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা এবং শুধু সত্যকে মনের উদ্দেশ্য রাখা। যা গ্রহণ করা উচিত তা হলো সত্য এবং যদি কেউ তা কোথাও পায় তাহলে সে তাকে জড়িয়ে ধরবে।
আল এক পলক দেখুন
যে গবেষক বিখ্যাত জ্ঞানী ব্যক্তিদের বইগুলোতে ‘ উসুলে দ্বীন ’ (ধর্মের মূল বিশ্বাস) অথবা ‘ ফুরুয়ে দ্বীন ’ (ধর্মের শাখা প্রশাখা) সম্পর্কে গবেষণা করেন , তিনি ‘ মাহদাভীয়াত ’ সম্পর্কে সুন্নী ভাইদের বইগুলোতে আলোচনা দেখতে পারেন। যেমন , এর বিশ্বাসযোগ্যতা , এর নির্ভরযোগ্যতা ইত্যাদি এবং এর বর্ণনাকারীরা অসংখ্য যারা হাদীস শাস্ত্রে প্রথম সারির ব্যক্তিত্ব।
‘ উসুলে দ্বীন ’ (মূল বিশ্বাস) ও ‘ ফরু ’ (শাখা প্রশাখা) এর মধ্যে অনেক বিষয়েই আমাদের ঐক্য রয়েছে। এর মধ্যে মাহদী (আঃ) সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের ভাইরা বিশদভাবে লিখেছেন।
তাদের নিজস্ব গবেষণা অনুযায়ী তারা হাদীস বর্ণনা করেছেন ‘ মাহদী ’ (আঃ) সম্পর্কে নবী (সাঃ)- এর কাছ থেকে সূরাসরি , কিছু তার মর্যাদাবান সাথীদের কাছ থেকে , কিছু তার স্ত্রীদের কাছ থেকে হাদীসের দৈর্ঘ্যে কিছু কমবেশী রেখে। তারা মাহদী (আঃ) সম্পর্কে দীর্ঘ ও সংক্ষিপ্ত উভয় হাদীসই নিয়েছেন তাদের প্রধান হাদীস বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যেমন , বুখারী , মুসলিম , নাসাঈ , আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ থেকে।
তাদের মধ্যে হাদীস বিশেষজ্ঞদের নাম আরও বলা যায় যেমন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বাল ,আবুল ক্বাসেম তেহরানী , আবু নাঈম ইসফাহানী , হামাদ ইবনে ইয়াক্বুব রাউজানী এবং ‘ মুসতাদরাক ’ -এর লেখক হাকেম প্রমুখ।
একইভাবে গাঞ্জি , সিবতে ইবনে জাওযী , খাওয়ারাযমী , ইবনে হাজার , মোল্লা আলী মুত্তাকী (কানযুল উম্মালের লেখক) , শাবলাঞ্জী এবং কুন্দুযীর নাম উপেক্ষা করা যায় না।
[এ বিষয়ে তাদের কিছু বই হচ্ছে : ‘ মানাক্বেব আল মাহদী ’ , আবু নাঈম ইসফাহানীর ‘ চল্লিশ হাদীস ’ , আবু আব্দুল্লাহ গাঞ্জীর ‘ বায়ান ফি আখবার সাহেবুয যামান ’ , কানযুল উম্মালের লেখক মোলা আলী মত্তাকীর ‘ আল বুরহান ফিমা জা ’ আ ফি সাহেবুয যামান ’ , হামাদ ইবনে ইয়াক্বুব রাউজানীর ‘ আখবার আল-মাহদী ’ , ও ‘ আলামাত আল-মাহদী ’ এবং ইবনে হাজার আসকালানীর ‘ আল-ক্বওল উল মুখতাসার ফি আলামাত মাহদী মুনতাযার ’ ।
নিশ্চয়ই ‘ মাহদী-ই-মুনতাযার ’ ও ‘ ক্বায়েম ’ সম্পর্কে নবী (সাঃ) এর কাছ থেকে হাদীস যা সুন্নী ধারার মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে তার সংখ্যা অনেক এবং সেগুলো তাদের বক্তব্য সম্পর্কে ‘ মুতাওয়াতির ’ (নির্ভরযোগ্য) ।
ইবনে হাজার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ - এর 99 পৃষ্ঠায় এরকমই বলেন যে ‘ আবুল হোসেন আবরি বলেছেন যে , ‘ মাহদী ’ (আঃ) -এর আত্মপ্রকাশ সম্পর্কে যে হাদীসগুলো নবী (সাঃ)- এর কাছ থেকে এসেছে এবং যা আহলুল বাইতের বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে এসেছে সবই ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে।
“ নুরুল আবসার ” -এর 231 নং পৃষ্ঠায় শাবলাঞ্জি বলেন : “ রাসূল (সাঃ)- এর কাছ থেকে যে হাদীস এসেছে যে ‘ মাহদী আমার বংশ থেকে ও পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে ভরে দেবে ’ তা ধারাবাহিকভাবে বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে এসেছে। ”
‘ ফতুহাতুল ইসলামিয়ার দ্বিতীয় খণ্ডের 322 নং পৃষ্ঠায় যাইনি দেহলান বলেন : “ মাহদী (আঃ)- এর আগমন সম্পর্কিত হাদীসের সংখ্যা অনেক এবং সেগুলো ‘ মুতাওয়াতির ’ (নির্ভরযোগ্য)। সেগুলোর মাঝে হতে পারে কিছু হাদীস ‘ সহীহ ’ (সঠিক) , ‘ হাসান ’ (ভালো) অথবা ‘ যাইফ ’ (দূর্বল)। যাহোক , (সহীহ) হাদীসের সংখ্যার আধিক্য এবং বর্ণনাকারীর সংখ্যাও অনেক হওয়ার কারণে তা নির্ভরযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করা ছাড়া উপায় থাকে না। ”
দ্বিতীয় অধ্যায়ের একই পৃষ্ঠায় তিনি উল্লেখ করেছেন যে আল্লামা সাইয়্যেদ মোহাম্মদ ইবনে রাসূল বারযানজী তার বই “ আশশাত ফি আশরাত ই সাআহ ” -র শেষে উল্লেখ করেছেন যে মাহদী (আঃ) সম্পর্কে হাদীসগুলো ‘ মুতাওয়াতির ’ (নির্ভরযোগ্য)। তিনি আরো বলেন : ‘ মাহদাভিয়াতের বিষয়টি সন্দেহাতীত এবং তিনি যে ফাতেমা (আঃ)-এর বংশ থেকে এবং পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন তা নির্ভরযোগ্য। ’
আমরা যা বলেছি তা হলো মাহদী (আঃ) সম্পর্কিত হাদীসগুলোর নির্ভরযোগ্যতা ও সঠিকতা সম্পর্কে এরকম বিজ্ঞ লোকদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রয়েছে। এসবের ভিত্তিতে এবং হাদীসের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী সন্দেহের আর কোন সুযোগ থাকে না। অস্বীকার করাতো দূরের কথা।
যদি এখন আমরা ঐসব সাক্ষ্য প্রমাণকে পিছনে রেখে হাদীসগুলোকে পরীক্ষা করতে যাই এদের ধারাবাহিক বর্ণনা ও মর্মার্থ অনুযায়ী তাহলে আমরা হাদীসগুলোকে তিনভাগে ভাগ করতে পারি।
প্রথম প্রকারঃ
ঐ সব হাদীসসমূহ যাদের বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা সুস্পষ্ট এবং সন্দেহমূক্ত। এছাড়া আহলে সুন্নাতের নেতারা ও (হাদীস বিষয়ে) নেতৃস্থানীয় ’ ব্যক্তিরা এদের নির্ভরযোগ্যতা ও সঠিকতা স্বীকার করেছেন। হাকেম তার ‘ মুসতাদরাকে ’ এগুলো থেকে কিছুর নির্ভরযোগ্যতা স্বীকার করেছেন বোখারী ও মুসলিমের নীতি অনুযায়ী এবং এগুলো গ্রহণের পয়োজনীয়তা সম্পর্কে এবং এগুলোর উপরে আমল করাতে কোন সন্দেহ থাকে না ।
দ্বিতীয় প্রকারঃ
ঐ হাদীসগুলো যাদের বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতা সঠিক নয় এবং তাদের মিথ্যা সুস্পষ্ট। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সেগুলোকে গ্রহণ করতে বলে কারণ এর বক্তব্য প্রথম দলটির মত শক্তিশালী এবং দেখা যায় যে তা সাধারণভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। বরং বলা যায় যে এর বক্তব্য সমর্থিত হয়েছে ঐক্যমতে।
তৃতীয় প্রকারঃ
ঐ হাদীসগুলো যার মধ্যে আছে সঠিকতা ও দূর্বলতা উভয়টিই। কিন্তু অন্যান্য নির্ভরযোগ্য হাদীসের সাথে এর অসঙ্গতি থাকার কারণে তাদেরকে বাতিল বলে গণ্য করতে হবে এবং হিসাবে নেয়া হবে না। অন্যভাবে বলা যায় এদেরকে কোনভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না যাতে এগুলোর সাথে অন্য হাদীসগুলোর সঙ্গতি পাওয়া যায়। যেমন ‘ হযরত মাহদী (আঃ) এর নাম হবে আহমাদ অথবা তার বাবার নাম হবে হযরত মুহাম্মাদ এর বাবার নামের মত অথবা সে হবে আবু মুহাম্মাদ হাসান যাকীর বংশ এবং আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর নয় ’ -এগুলো প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এছাড়া গবেষণায় দেখা যায় এ হাদীসগুলোর সংখ্যা কম এবং সাধারণভাবে জানা যায় যে এগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
এটি সম্ভব যে প্রথম বিষয়টি (মাহদী আঃ - এর নাম) ঐ সব হাদীসের কারণেই এসেছে যেগুলো বলে মাহদী (আঃ) এর নাম নবী (সাঃ)-এর নামের অনুরূপ। তখন ভাবা হয়েছে যে নবী (সাঃ) এর নাম আহমাদ ; যদিও ‘ মুসতাফিযা ’ হাদীসে আমরা পাই ‘ মুহাম্মাদ ’ । একইভাবে বিশ্বাস করা হয় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিষয়টিও বানোয়াট এবং শীঘ্রই আপনারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমরা এখানে যে কথাটি বলতে বাধ্য হচ্ছি তা হলো প্রথম ও দ্বিতীয় প্রকার হাদীসগুলোর দু ’ একটি এমন বক্তব্য ধারণ করেছে যে তাদের প্রত্যাখ্যান করা প্রয়োজন। ইতিহাস ও বিশেষভাবে পরীক্ষা করলে এ হাদীসগুলো তাদের বানোয়াট হওয়ার সাক্ষ্য দিবে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী যখনই কোন হাদীস কয়েকটি বাক্য ধারণ করে এবং প্রত্যেক বাক্যই স্বাধীনতা রাখে অথবা এর নিজস্ব অর্থ প্রচার করে এবং যদি সাধারণ ঐক্যমত এর একাংশ প্রত্যাখ্যান করে তাহলে শুধু সেই বাক্যটি বাদ দিতে হবে এবং বাকী হাদীস রেখে দিতে হবে।
যদিও সুন্নী বিজ্ঞ ব্যক্তি ‘ দায়েরাতুল মা ’ আরেফ ’ -এর লেখক ফাযেল ফারিদ ভাজদী আফানদী এ নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তিনি মনে করেন পুরো হাদীসটিই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আমরাও তার সাথে একমত হবো (যদিও আমাদের মত ভিন্ন) এবং এ ধরনের হাদীস উপেক্ষা করবো। বাকী যে হাদীসগুলো থেকে যাবে তা আমাদের বক্তব্য প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট।
- সাইয়্যেদ সাদরুদ্দীন আল সাদর
প্রথম অধ্যায়
মাহদী (আঃ) সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
নাহাজুল বালাগায় হযরত আলী (আঃ)-এর পজ্ঞাপূর্ণ কথা- 205 নম্বর এ আছে যে তিনি বলেন : “ পৃথিবী আমাদের দিকে বাকাঁ হয়ে আসবে অবাধ্য হওয়ার পর , যেভাবে কামড় দেয় এমন মাদী উট তার বাচ্চার দিকে বাকাঁ হয়। ”
এটি একটি রূপক মন্তব্য। নবী (সাঃ)-এর সময় বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক অভিভাবকত্ব দু ’ টোই ছিলো তার ঘরে। একইভাবে হযরত মাহদী (আঃ)- এর পুনরাগমনে সরকার ও আধ্যাত্মিক অভিভাবকত্ব দু ’ টোই নেতার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
এরপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন :
) وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ (
“ এবং আমরা চাইলাম তাদের ওপর নেয়ামত দান করতে যাদেরকে পৃথিবীতে দূর্বল ভাবা হতো এবং তাদেরকে ইমাম বানাতে এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাতে। ” (সূরা ক্বাসাসঃ 05)
ইবনে আবিল হাদীদ মোতাযালী তার নাহজুল বালাগার ব্যাখ্যায় বলেন (পৃষ্ঠা 329 , খণ্ড-4) : “ আমাদের সাথীরা বলেন যে এ আয়াতে আল্লাহ ইমাম ও নেতার কাছে ওয়াদা করেছেন যে সে পৃথিবীর দখল পাবে এবং সব জাতির উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে। ”
আবু আব্দুল্লাহ নাইম ইবনে হেমাদ ‘ ইকদুদ দুরার ’ বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে বলেছেন : “ ইমাম আবু ইসহাক্ব সালবী ঐশীح م ع س ق বক্তব্যের তাফসীরে ইবনে আব্বাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন :ح ইঙ্গিত করে কুরাইশ ও দাসদের মধ্যে যুদ্ধের যেখানে কুরাইশরা বিজয়ী হবে ;م ইঙ্গিত করে বনি উমাইয়্যাদের রাজ্য ও সরকারের ;ع হচ্ছে বনি আব্বাসের মর্যাদা ও সম্মান ;س ইঙ্গিত করে মাহদী ( আঃ ) এর যুগ।ق ইঙ্গিত করে ঈসার নাম ও মাহদী ( আ ) এর আত্মপ্রকাশের সময়। লেখক বলেন س হচ্ছে মাহদী (আা .) এর উজ্জ্বলতা এবংق ঈসা ইবনে মরিয়মের ক্ষমতা। ”
ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্বের 16 পৃষ্ঠায় ব্যাখ্যা করেন এ কথার এভাবে :
) وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ (
“ এবং সে ক্বিয়ামতের নিদর্শন ” (সূরা যুখরুফঃ 61 )
“ তাফসীরকারকদের মধ্যে মাক্বাতেল ইবনে সুলাইমান ও তার অনুসারীগণ বলেছেন যে এ আয়াত আল মাহদী (আঃ)- এর পক্ষে নাযিল হয়েছে। ‘ ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 156 তম পৃষ্ঠায় তাই লিখেছেন। ”
‘ নুরুল আবসার ’ - এর লেখক আবু আব্দুল্লাহ গাঞ্জি থেকে 228 নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেনঃ আল্লাহ বলেন :
) لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ (
“ যেন তা সব ধর্মের উপরে বিজয় লাভ করে , মুশরিকরা তা যতই অপছন্দ করুক। ” (সূরা আস সাফ্ফঃ 09)
সাইয়্যেদ ইবনে জুবায়ের বলেন : “ তা মাহদীর কথা বলে যিনি ফাতেমা (আঃ)- এর বংশধর , যিনি এ আয়াতের আদেশ বলে সব ধর্মের উপর বিজয় লাভ করবেন। ”
ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র 443 পৃষ্ঠায় মানাক্বিবে খাওয়ারাযমী থেকে এবং তা জাবীর ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে এক দীর্ঘ ঘটনা বর্ণনা করেন , সেখানে একজন ইহুদী নবী (সাঃ)- এর কাছে আসে এবং তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে যার ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করে। একটি প্রশ্ন সেই ইসলাম গ্রহণকারী জিজ্ঞেস করেছিলো নবী (সাঃ)-এর উত্তরাধীকারী সম্পর্কে এবং নবী (সাঃ) উত্তরে বলেছিলেন তারা সংখ্যায় বারোজন। তিনি নাম নিয়ে প্রত্যেককে গোনেন ইমাম হাসান আল আসকারী পর্যন্ত। এরপর তিনি বলেন : “ তার পর আসবে তার ছেলে মুহাম্মাদ যে পরিচিত হবে মাহদী , ক্বায়েম ও হুজ্জাত নামে। এরপর সে কিছু সময়ের জন্য লোকচক্ষুর আড়ালে যাবে এবং আবার উপস্থিত হবে এবং যখন সে তা করবে সে পৃথিবীকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে। কারণ ততদিনে পৃথিবী নিষ্ঠুরতায় ও নিপীড়নে পূর্ণ হয়ে যাবে।
রহমতপ্রাপ্ত তারা যারা তার অন্তরালে যাওয়ার সময়টিতে ধৈর্য ধরবে এবং রহমতপ্রাপ্ত তারা যারা তাঁর প্রতি ভালোবাসায় দৃঢ় থাকবে। তারাই হলো ওরা যাদেরকে আল্লাহ তাঁর কিতাবে প্রশংসা করেছেন এভাবে :
) وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ (
“ যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে (যেমন মাহদীর অর্ন্তধান) এবং নামাজ ক্বায়েম করে এবং আমরা যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে ব্যায় (সূরা বাক্বারাঃ 03)
আল্লাহ আরো বলেন :
) أُولَـٰئِكَ حِزْبُ اللَّـهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّـهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (
“ তারাই হলো আল্লাহর দল ; জেনো যে আল্লাহর দলই সফলতা লাভ করবে ‘
(সূরা মুজাদিলাঃ 22 )
(হাদীসটি এখানে শেষ । )
উপরোক্ত বইয়ের 448 পৃষ্ঠায় তিনি ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ বই থেকে একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন যা হাসান ইবনে খালিদ বর্ণনা করেছেন আবু হাসান আলী ইবনে মুসা রেযা (আঃ) থেকে মাহদী (আঃ) সম্পর্কে । যেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন তিনি হবেন তার বংশ থেকে চতুর্থ এবং যখন তিনি পুনরায় আগমন করবেন পৃথিবী ঐশী আলোতে ঢেকে যাবে। এরপর ইমাম বলতে লাগলেন : সে-ই ঐ ব্যক্তি যার পুনরাগমন আকাশ থেকে এক আহবানকারীর আহবানের সময়ের সাথে মিলে যাবে , তা এমন হবে যে পৃথিবীর সব অধিবাসী তার এ চীৎকার শুনবে- “ জেনো যে আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ) আল্লাহর ঘরের কাছে আত্মপ্রকাশ করেছে , তাই তাকে অনুসরণ করো। কারণ সত্য তার ভেতরে আছে এবং তার সাথে আছে। ” আল্লাহর কথাও তাই বলেঃ
) إِن نَّشَأْ نُنَزِّلْ عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاءِ آيَةً فَظَلَّتْ أَعْنَاقُهُمْ لَهَا خَاضِعِينَ (
“ আমরা যদি চাই , আমরা তাদের ওপর এক নিদর্শন পাঠাবো আকাশ থেকে , যেন তাদের ঘাড় এর দিকে নীচু হয়। ” (সূরা শু ’ আরাঃ 04 )
নিশাবুরী তার তাফসীরে (খণ্ড-1) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ শিয়াদের কেউ কেউ বিশ্বাস করেন “ অদৃশ্য ” এ আয়াতে মাহদীকে (আঃ) ইঙ্গিত করে , যার প্রতীক্ষা করা হচ্ছে। যার সম্পর্কে আল্লাহ তার কিতাবে এরকম ওয়াদা করেছেন :
) وَعَدَ اللَّـهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ (
“ আল্লাহ তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে এবং ভালো কাজ করে তাদেরকে ওয়াদা করেছেন যে তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীর শাসক বানাবেন। ” (সূরা নূ রঃ 55)
এছাড়া , তার সম্পর্কে নবী (সাঃ) বলেছেন :
“ যদি পৃথিবীর জীবন এক দিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সেদিনকে এত লম্বা করে দেবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না এক ব্যক্তি আমার বংশধর থেকে আসবে যে আমার নামে নাম বহন করবে এবং পৃথিবীকে ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে ঠিক বিপরীতভাবে যেভাবে তা অবিচার ও নিপীড়নে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। ”
নিশাবুরী আরো বলেন :
“ আহলে সূন্নাতের মত অনুযায়ী উপরোক্ত আয়াত ‘ খোলাফায়ে রাশেদীনের ’ ইমামত সম্পর্কে ইঙ্গিত করে। কারণ শব্দটি পবিত্র আয়াতে ‘ অংশ ’ ইঙ্গিত করে এবং যখন সম্বোধন করা হবে এ ‘ অংশ ’ -র জন্য উপস্থিত থাকা জরুরী । এছাড়া এটি সবাই জানে যে চার খলিফা (আবু বকর , উমর , উসমান এবং আলী) বিশ্বাসী ও নৈতিকগুণ সম্পন্ন ছিলেন এবং তারা তখন উপস্থিত ছিলেন। পরিণতিতে খিলাফত ও বিজয় তাদের জন্য নিশ্চিত ছিলো। তাই এটি বলা প্রয়োজন যে এ আয়াত তাদেরকেই ইঙ্গিত করে। ”
এরপর তিনি বলেন :
“ একদল তাদের ( উপরোক্ত অভিমতের ) বিরুদ্ধে গিয়েছেন এ যুক্তি দিয়ে যেمن ‘ শব্দটি ’ প্রকাশ করা অর্থে ধরা অনুমোদন যোগ্য নয়। তারা বলেন পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হওয়া অর্থ এর দখল ও এর ওপরে অধিপত্য যেমন তা হয়েছিলো বনি ইসরাইলীদের ক্ষেত্রে। ”
তিনি আরো বলেন : “ চলুন আমরাمن শব্দটির অর্থ “ অংশ ” -ই গ্রহণ করি , কিন্তু কিসের ভিত্তিতে তা অনুমোদনযোগ্য হবে না যদি ‘ অংশ ’ বলতে আলীর খেলাফত বোঝায় এবং ধরুনمن এখানে বহুবচনে ধরা হয়েছে শুধু আলীর সম্মান ও বিরাট মর্যাদা দেখানোর জন্য অথবা হযরতের প্রতি ও তার পরে তার এগারোজন সন্তানের প্রতি ইঙ্গিত করার জন্য। ”
মাহদী ( আঃ ) সম্পর্কে নবীর ( সাঃ ) হাদীস
আবু দাউদ তার ‘ সহীহ ’ -তে (পৃষ্ঠা 87 , চতুর্থ খণ্ডে) , আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন নবী (সাঃ) বলেছেনঃ
“ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনও অবশিষ্ট না থাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ দিনটিকে এত দীর্ঘ করে দিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি এক ব্যক্তিকে আমার বংশ থেকে নিয়োগ দিবেন। ”
এরপর তিনি একইভাবে বলেন যে হাদীসে সুফিয়ানে এসেছে যে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ পৃথিবীর জীবন শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না একজন আরব আমার বংশ থেকে পৃথিবী শাসন করবে। ”
ঐ একই বইয়ের একই পৃষ্ঠায় আলী (আঃ) থেকে একটি হাদীস এসেছে যে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনও অবশিষ্ট না থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন। ”
তিরমিযী তার সহীহতে , (খণ্ড-2 , পৃষ্ঠা- 27) , আব্দুল্লাহ থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন :
“ পৃথিবীর জীবন শেষ হবে না যতক্ষণ না একজন আরব আমার বংশ থেকে আসবে এবং শাসন করবে। ”
তিরমিযী বলেন : এ হাদীসটি হাসান (গ্রহণযোগ্য) এবং সহীহ (সঠিক) এবং একই জিনিস বর্ণিত হয়েছে আলী , আবু সাইয়ীদ , উম্মে সালামা এবং আবু হুরায়রা থেকে।
একই বইতে একই পৃষ্ঠায় একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে আবু হুরায়রা থেকে যে , নবী (সাঃ) বলেছেন :
“ যদি পৃথিবীর জীবন এক দিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সেদিনকে এত দীর্ঘ করে দিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না এক ব্যক্তি আমার বংশ থেকে আসবে ও শাসন করবে। ”
এরপর তিনি বলেন : এ হাদীসটি হাসান (গ্রহণযোগ্য) এবং সহীহ (সঠিক)।
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এ , (পৃষ্ঠা নং 97) বলেন : আবু আহমাদ , আবু দাউদ , তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন :
“ যদি পৃথিবীর জীবন এক দিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে অবশ্যই আল্লাহ সেদিন আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন। ”
ইসাফুর রাগেবীনের 147 নং পৃষ্ঠায় এ হাদীসটি বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসাফুর রাগেবীন এ হাদীস বর্ণনা করেছে 148 পৃষ্ঠায়।
ইবনে হাজার পূর্বে উল্লেখিত বইয়ের 97 পৃষ্ঠায় বলেন : আবু দাউদ এবং তিরমিযী নবী (সাঃ) থেকে এরকম বর্ণনা করেছেন :
“ এ পৃথিবীর জীবন শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আসবে ও শাসন করবে। ”
ইসাফুর রাগেবীনও একই হাদীস 148 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছে।
ইবনে হাজার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এ (পৃষ্ঠা-97) লিখেছেন : আবু দাউদ এবং তিরমিযী নবী (সাঃ) থেকে এরকম বর্ণনা করেছেন :
“ যদি পৃথিবীর জীবন এক দিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে আল্লাহ সেদিনকে এত দীর্ঘ করে দিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেন। ”
ইসাফুর রাগেবীনও একই হাদীস 148 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছে।
নুরুল আবছারে , (পৃষ্ঠা-299) আলী (আঃ) থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে নবী (সাঃ) বলেছেন :
“ যদি পৃথিবীর জীবন এক দিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে অবশ্যই (সেদিন) আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির আগমন ঘটাবেন। ”
এরপর লেখক বলেন : ‘ এ হাদীসটি আবু দাউদ কৃতর্ক তার ‘ সুনানে ’ বর্ণিত হয়েছে। ’
একই বইতে (পৃষ্ঠা 231) আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে নবী (সাঃ) বলেছেন :
“ ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আসে এবং শাসন করে। ”
ইসাফুর রাগেবীনের 151 পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে আহমাদ ও মাওয়ারদী নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন : “ সুসংবাদ তোমাদের (সবাইকে) মাহদীর বিষয়ে। ” একই হাদীস এসেছে নুরুল আবসারে 151 পৃষ্ঠায়।
নুরুল আবসারের লেখক 231 পৃষ্ঠায় লেখেন : আহমাদ বর্ণনা করেছেন আবু সাইদ খুদরী থেকে যে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ আমি তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি মাহদী সম্পর্কে। ”
ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাতে (পৃষ্ঠা 432) ক্বাতাদা থেকে বর্ণিত হয়েছে : “ আমি সাইদ ইবনে মাসীবকে জিজ্ঞেস করলাম : “ মাহদী সম্পর্কে কী কোন সত্যতা আছে ? ” সে বললো : হ্যা , সে সত্য এবং সে ফাতেমার বংশ থেকে। ”
একই বইতে পূর্বে উল্লেখিত পৃষ্ঠায় আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ যদি পৃথিবীর জীবন এক দিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে অবশ্যই আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির আগমন ঘটাবেন। ” এরপর তিনি লেখেন : “ এ হাদীসটি আবু দাউদ , আহমাদ , তিরমিযী ও ইবনে মাজাহও বর্ণনা করেছেন। ”
একই বইতে , (পৃষ্ঠা 432) একটি হাদীস আহমাদ এর ‘ মুসনাদ ’ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ ক্বেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না পৃথিবী নিষ্ঠুরতায় ও নিপীড়নে পূর্ণ হবে। তখন আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আসবে তা ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিতে। ”
আবার একই বইতে 440 পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন : মুফেক্ব ইবনে আহমাদ আখতার খাওয়ারাযম-এর খোতবা থেকে বর্ণনা করেন যিনি বর্ণনা করেন আব্দুর রহমান ইবনে আবি লাইলী থেকে , তিনি তার বাবা থেকে যিনি বলেন : খাইবারের যুদ্ধে নবী (সাঃ) আলীর (আঃ) হাতে পতাকা দিলেন। তারপর আল্লাহ তার হাতে বিজয় দিলেন। পরে গাদীরে খুমে তিনি লোকদেরকে মনে করিয়ে দিলেন যে আলী সকল বিশ্বাসী পুরুষ ও নারীর মাওলা (অভিভাবক) এবং আরো বলতে থাকলেন এবং এক পর্যায়ে কিছু বাক্য বললেন আলী , ফাতেমা , হাসান এবং হুসাইনের নৈতিক গুণাবলী সম্পর্কে।
এরপর তিনি বললেন : “ জীবরাইল আমাকে জানিয়েছে আমার বিদায়ের পর তারা অবিচার ও নিপীড়নের শিকার হবে এবং এ নিপীড়ন চলতে থাকবে একটি আন্দোলন পর্যন্ত যা তাদের ‘ ক্বায়েম ’ শুরু করবে এবং সে সময় তাদের বিশ্বাসকে উচুঁতে উঠানো হবে , জনগণ তাদের বন্ধুত্বের দিকে ফিরবে , তাদের বিরুদ্ধে খারাপ কথা শেষ হবে। তাদের প্রতি যাদের তিক্ততা আছে তারা অপমানিত হবে এবং যারা তাদের প্রশংসা করবে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের ঘটনা তখন ঘটবে যখন শহরগুলো পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে এবং জনগণ দূর্বল হয়ে যাবে এবং রেহাই পাওয়ার ক্ষেত্রে অসহায় হয়ে পড়বে। তখন (ক্বায়েম) আসবে আমার বংশ থেকে এবং আল্লাহ সত্যকে প্রকাশ করবেন তার মাধ্যমে এবং মিথ্যাকে নিভিয়ে দিবেন তার তরবারীর মাধ্যমে। ”
এরপর তিনি বললেন : ‘ হে জনতা , সুসংবাদ তোমাদের বোঝা লাঘব এবং বিরামের বিষয়ে। অবশ্যই আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং তিনি কখনো তা ভাঙ্গেন না এবং তার আদেশ কখনো খণ্ডন হয় না। তিনি সর্বসচেতন এবং সর্বদ্রষ্টা এবং আল্লাহর বিজয় নিকটবর্তী । ”
একই বইতে পৃষ্ঠা 447 এ তিনি শেইখ আবু ইসহাক ইবরাহিম ইবনে ইয়াকুব এর ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন বই থেকে যিনি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন :
“ যে ব্যক্তি মাহদীর আগমনকে অস্বীকার করলো সে অবশ্যই অবিশ্বাস করলো যা আল্লাহ মুহাম্মাদের ওপর নাযিল করেছেন এবং যে ঈসা-র আগমনকে অস্বীকার করলো অবশ্যই সে অবিশ্বাসীতে পরিণত হলো এবং যে দাজ্জালের বিদ্রোহকে অস্বীকার করলো সে অবশ্যই অবিশ্বাসীতে পরিণত হলো। ”
মাহদী ( আঃ )সম্পর্কে হযরত আলী ( আঃ )- এর খোতবা
নাহাজুল বালাগা , খোতবা নং 91 , মাহদী (আঃ) সম্পর্কে ইমাম আলী (আঃ)এর বক্তব্য। এটি একটি খোতবার অংশ যা তিনি বনি উমাইয়্যা ও জনগণের প্রতি তাদের অপকর্ম সম্পর্কে দিয়েছিলেন যার এক পর্যায়ে তিনি বললেন : এরপর , আল্লাহ তোমাদের উপর অপ্রীতিকরভাবে বিস্তৃতৃ করবেন সমস্যাবলী এবং অন্যান্য ঘটনা এবং চামড়া কেটে নেয়া হবে , গোশত চেঁছে নেয়া হবে , তখনই (শুধু) দুর্যোগ সাফ করা হবে। ” এরপর তিনি আরো বললেন : আল্লাহ এ স্বাধীনতা ও নাজাত এক ব্যক্তির মাধ্যমে আনবেন যার আচরণ সেই গোত্রের প্রতি হবে কঠিন ও দয়াহীন এবং সে তাদেরকে শাস্তি দিবে এবং সে তাদের তৃষ্ণা মেটাবে (কষ্টের) তিক্ত পেয়ালা দিয়ে এবং তাদের প্রতি তরবারী ছাড়া কিছু বাড়িয়ে দিবে না। ”
মোতাযালী এর তাফসীরে , তার বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডে (পৃষ্ঠা 178) উপরোক্ত খোতবার অধীনে বলেন : এ খোতবাটি একদল ইতিহাসবিদ স্মরণ করেছেন এবং এটি প্রায়ই পাওয়া যায় এবং বর্ণিত হয়েছে যে এটি ইসতেফাদাহ ’ র (প্রচুর পাওয়া যায়) স্তরে পৌঁছেছে।
নাহরেওয়ানের যুদ্ধের পর আলী (আঃ) এ ধরনের বাক্যে কথা বলেন :
“ আমি ছাড়া কারো সাহস ছিলো না দৃঢ় থাকায় ও ঐসব বিদ্রোহ ও গণ্ডগোল প্রতিরোধ করায় ” [সম্ভবত : দৃঢ় থাকার কথা বলেছেন খারেজীদের বিদ্রোহের সময়ে , যখন মুয়াবিয়ার সাথীরা আমর-আস-এর চালাকিতে কোরআনকে বর্ষার আগায় বিদ্ধ করে এবং এভাবে তারা নিজেদের হাতের তরবারীর আঘাত থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিলো। আলী (আঃ)-এর সৈন্যরা এ দেখে তার হুকুম মানতে দ্বিধায় পড়ে যায় এবং তার বিরোধিতা করে বলে : ‘ এ লোকদের ওপর আমাদের তরবারী উঠানোর সাহস করা উচিত না। ’ অথবা সম্ভবত জামালের যুদ্ধের প্রতিপক্ষের কথা ইঙ্গিত করে যেখানে অংশগ্রহণ করেছে এ ধরনের ব্যক্তিত্ব যেমন হযরত আয়শা , তালহা এবং যুবাইর , যারা মুসলিমদের চোখে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন । এ কারণে তাদের সাহস ছিলো না তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা একমাত্র আলী (আঃ) ছাড়া যিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন ও তাদের পরাজিত করেছেন]।
এরপর ইবনে আবিল হাদীদ বলেন : একটি বক্তব্য যা রাযী উল্লেখ করেন নি তা হলো একটি খোতবা যা তিনি বনি-উমাইয়্যা সম্পর্কে দিয়েছেন , তার বিষয়বস্তু এরকম :
“ তখন অবশ্যই আল্লাহ জনগণকে মুক্ত করবেন আমাদের পবিত্র পরিবারের একজনকে দিয়ে। আমার বাবা তার জন্য কোরবান হোক যার মা বেহেশতের শ্রেষ্ঠ নারীদের একজন। ”
এরপর তিনি স্বীকার করেছেন যে আলী (আঃ) এ বক্তব্যে প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ)এর কথা বলেছেন।
নাহাজুল বালাগা- খোতবা নং 148। হযরত আলী (আঃ) অদৃশ্যের খবর সম্পর্কে যা বলেছেন তা এরকম :
“ হে জনতা , এটি হলো সময় প্রত্যেক শপথকৃত ঘটনা ঘটার এবং বিভিন্ন বিষয়ের আগমনের যা সম্পর্কে তোমরা জানো না। জেনে রাখো আমাদের মাঝ থেকে (নবী (সাঃ)-র পবিত্র পরিবার থেকে) সে ভবিষ্যতে আমাদের পথে চলবে একটি পোজ্জ্বোল বাতি নিয়ে এবং নৈতিকগুণ সম্পন্নদের পায়ের ছাপ অনুসরণ করবে গিট খোলার জন্য , দাসদের মুক্ত করার জন্য এবং বিভক্তদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য। সে জনগণের কাছ থেকে গোপন থাকবে এমনভাবে যে কোন পায়ের ছাপ সন্ধানকারী তার পায়ের ছাপ খুজে পাবে না যদি সে তার পিছু নেয়। ”
মোতাজালী তার বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডে (পৃষ্ঠা 436 এ) এ খোতবার অধীনে বলেন :
“ হযরত এখানে প্রতীক্ষিত মাহদী এবং তার গোপন থাকার কথা বলেছেন। ”
নাহাজুল বালাগা , খোতবা 180। আলী (আঃ) যেসব খোতবা কুফার লোকদের উদ্দেশ্যে দিয়েছিলেন সেগুলোর মধ্যে এটি একটি। খোতবাটি বর্ণনা করার পূর্বে এটি উল্লেখ করা ভালো হবে যে , নুফিল বুকালি বর্ণনা করেন আলী (আঃ) এ খোতবাটি দিয়েছিলেন একটি পাথরের উপর দাঁড়িয়ে যা জুদা ইবনে হুবাইরা মুখযুমী তার জন্য স্থাপন করেছিলেন। আলীর (আঃ) গায়ে ছিলো একটি উলের জামা , তার তরবারীর বেল্ট ছিলো পাতার তৈরী এবং পায়ের স্যান্ডেলও ছিলো খেজুর পাতা দিয়ে তৈরী। তার কপালে ছিলো একটি শক্ত জায়গা উটের হাঁটুর মত। তিনি বললেন :
“ সে পরে থাকবে প্রজ্ঞার বর্ম , যা সে লাভ করবে এর সব শর্তসহ। যেমন এর প্রতি পূর্ণ মনোযোগ (এর পুরো জ্ঞান এবং এর প্রতি পূর্ণ আত্মনিয়োগ)। তার জন্য এটি এমন একটি জিনিস যা সে হারিয়ে ফেলেছিলো এবং সে এখন তা খুঁজছে অথবা তার প্রয়োজন যা সে মেটাবার চেষ্টা করছে। যদি ইসলাম বিপদে পড়ে সে হারিয়ে যাওয়া ভ্রমণকারীর মত অনুভব করে এবং (ক্লান্ত) এক উটের মত এর লেজের অগ্রভাগ দিয়ে আঘাত করতে থাকে তার ঘাড় মাটিতে শুইয়ে দিয়ে। সে আল্লাহর যুক্তির শেষ জন এবং তার নবীদের একজন প্রতিনিধি। ”
নাহাজুল বালাগার ব্যাখ্যাকারী ইবনে আবিল হাদীদ তার দ্বিতীয় খণ্ডে 535 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : “ প্রত্যেক দল একথাগুলো ব্যাখ্যা করেছে তাদের বিশ্বাসের সুবিধা অনুযায়ী এবং বারো ইমামি শিয়ারা মনে করে হযরতের বক্তব্যে যে ব্যক্তির ইঙ্গিত করা হচ্ছে তিনি মাহদী (আঃ) ছাড়া আর কেউ নন। ”
এরপর তিনি বলেন : “ আমি যেভাবে তা দেখি , এটি বিশ্বাস করা কঠিন মনে হয় না যে এখানে মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর বংশধর ‘ আল-ক্বায়েম ’ -এর কথা বলা হচ্ছে। ”
‘ ইয়ানাবিউল-মুওয়াদ্দা ’ বইয়ের লেখক 46 নং পৃষ্ঠায় ‘ দুররুল মুনাযযাম ’ বই থেকে বর্ণনা করেন : “ আমিরুল মুমিনীন (আঃ)-এর কথা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশধর মাহদী অথবা ক্বায়েম সম্পর্কে এরকম :
“ মুহাম্মাদী পতাকার বাহক ও আহমাদী সরকারের শাসক প্রকাশিত হবে। সে এমন একজন যে তার তরবারী নিয়ে বিদ্রোহ করবে। সোজা করবে বাকাকে। পৃথিবী জয় করবে এবং ভুলে যাওয়া ফরজ ও সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করবে। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 467 পৃষ্ঠায় লেখেন : অতিন্দ্রীয় জ্ঞান ও দৃষ্টিসম্পন্ন কিছু মানুষ আমিরুল মুমিনীন থেকে বর্ণনা করেছেন :
“ শীঘ্রই আল্লাহ একটি দলকে আনবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসেন এবং তারাও তারঁ প্রেমিক এবং তাদের মধ্যে যে আগন্তুকের মত সে সরকারের দায়িত্ব নেবে। অবশ্যই সেই হবে ‘ মাহদী ’ , তার চেহারা গোলাপী , তার চুলের রঙ সোনালী। সে পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে কোন সমস্যা ছাড়াই। তার একেবারে শৈশবে সে তার পিতামাতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে এবং প্রশিক্ষণের দৃষ্টিকোণ থেকে সে হবে বিরল ও তুলনাহীন। সে মুসলমান দেশগুলোর উপরে শাসন করবে চুড়ান্ত স্থিরতা ’ ও নিরাপত্তার মাধ্যমে এবং সময় হবে তার পক্ষে ও তার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ । তার কথা গ্রহণ করা হবে : যুবক ও বৃদ্ধরা তাকে বিনয়ের সাথে মেনে চলবে। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। তখন তার ইমামাত পূর্ণতায় পৌঁছুবে এবং খেলাফত তার জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এছাড়া আল্লাহ মৃতদেরকে কবর থেকে জাগাবেন এবং পৃথিবীতে ফেরত পাঠাবেন। তখন সকালের ঘুম থেকে মানুষ যেমন জাগে তারা তেমনি নিজেদের বাড়ি ছাড়া আর কিছু দেখবে না। জমি সমৃদ্ধি লাভ করবে এবং তার (মাহদীর) অবস্থানের রহমতে তা সতেজ ও ফলদায়ক হবে। বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা উধাও হয়ে যাবে এবং রহমত ও কল্যাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে । ”
মাহদী ( আঃ ) সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিদের কথা
মহিউদ্দীন আরাবী তার ‘ ফুতুহাতুল মাক্কীয়া ’ -র তৃতীয় খণ্ডে (366 অধ্যায়) বলেন :
“ অবশ্যই আল্লাহর এক প্রতিনিধি রয়েছে যিনি আসবেন যখন পৃথিবী পূর্ণ থাকবে নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নে এবং তখন তিনি তা পূর্ণ করে দেবেন ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে। যদি পৃথিবীর জীবন একদিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে আল্লাহ দিনটিকে এত দীর্ঘ করে দিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না এ প্রতিনিধি মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বংশ থেকে এবং ফাতেমা (আঃ)-এর সন্তান থেকে উপস্থিত হন। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক ভূমিকায় সে সময়কার পরিস্থিতি ও বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলার মাত্রাতিরিক্ততার নিন্দা করার পর বলেছেন : “ কেউ কেউ মনে করেন এ ধরনের পরিস্থিতি সবসময় চলতে থাকবে। কিন্তু তারা কিছু হাদিসের বাইরের দিকটি শুধু অনুসরণ করেছেন। তখন আমি বলি এ হাদিসগুলো গ্রহণযোগ্য এবং আমরা তা গ্রহণ করতে ও অনুসরণ করতে বাধ্য। যাহোক এ হাদীসগুলোতে এমন কিছু নেই যা ইঙ্গিত করে এ ধরনের পরিস্থিতি কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। এটি মনে হয় যে বিদ্রোহের শেষ ও আরামের আগমন এমন এক সময়ে আসবে যখন ইমাম মাহদী নিজেকে প্রকাশ করবেন। কারণ আলেমগণ ও বিজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদের বইতে তার সুসংবাদ দিয়েছেন তার আত্মপ্রকাশের এবং এ সত্যের যে আল্লাহ একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন তার রাজ্যের জন্য। তা হবে এমন ক্ষমতা দিয়ে যা পাহাড় নাড়াতে পারে এবং তার রাজ্য হবে সুবিস্তৃত। তিনি পুরো দুনিয়া শাসন করবেন এবং একে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন। তখন লুকানো ভাণ্ডার উম্মোচিত হবে এবং তিনি তা জনগণকে উপহার দেবেন।
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 410 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : শেইখ কামালুদ্দীন ইবনে তালহা তার বই ‘ দুররুল মুনাযযাম ’ এ লিখেছেন : “ গবেষণায় পাওয়া যায় যে আল্লাহর একজন প্রতিনিধি রয়েছেন যিনি সময়ের শেষ দিকে আসবেন যখন পৃথিবী নিষ্ঠুরতায় ও নিপীড়নে পূর্ণ থাকবে। যদি পৃথিবীর জীবন একদিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে তিনি তার প্রতিনিধিকে আনবেন ফাতেমা যাহরার সন্তান থেকে। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিরা তাকে চিনতে পারবে। তার লম্বা নাক , কালো চোখের পাতা এবং ডান গালে একটি দাগ থাকবে। তার নাম হবে মুহাম্মাদ , তার উচ্চতা হবে মাঝারির চাইতে উচুঁ । তার চেহারা সুন্দর ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং চুল দেখতে খুবই সুন্দর।
তার মাধ্যমে আল্লাহ শীঘ্র ধ্বংস করবেন বেদআত (ধমীর্য় আবিষ্কার) , সমুন্নত করবেন প্রত্যেক জীবিত জিনিসকে এবং তার সৈন্যদেরকে তৃপ্ত করবেন আদনের ভুমি থেকে। তার সামনে সবচেয়ে সমৃদ্ধ হবে কুফার লোকরা। তিনি নেয়ামতগুলো সমানভাবে ভাগ করে দিবেন এবং লোকদের সাথে সদাচরণ করবেন এবং তার সময়কালে তর্কবিতর্ক উধাও হয়ে যাবে। মেঘ বৃষ্টি দেবে শুধু জমিকে সমদ্ধৃ করার জন্য। এ ইমাম হলেন সেই মাহদী , যিনি আল্লাহর আদেশকে উঁচু করে রাখবেন ঐ পর্যন্ত যে , সমস্ত মিথ্যা ধর্মগুলো উধাও হয়ে যাবে। তখন আর কোন ধর্ম থাকবে না শুধু প্রকৃত ধর্ম ছাড়া। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 432 নং পৃষ্ঠায় শারীফ মামা সামহুদির ‘ জাওহার উল নাগদীন ’ বই থেকে বর্ণনা করেছেন : গবেষণায় লক্ষ্য করা যায় যে , আলী ও ফাতিমার (আঃ) বিয়েতে নবী (সাঃ) এর দোয়ার বরকত হাসান ও হোসাইনের সন্তানদের ভিতর দেখা যায়। তাদের প্রজন্ম থেকে যারা এসেছিলো , তারা যারা চলে গেছে এবং তারা যারা আসবে (ভবিষ্যতে) , এবং যদি ইমাম মাহদী ছাড়া কেউ নাও আসে তা হবে যথেষ্ট (অঙ্গীকার পুরণে এবং বিশৃঙ্খলা বদলে শৃঙ্খলা আনায়)।
ইবনে আসির জাযারি তার বই ‘ নেহায় ’ -তে ‘ জালা ’ শব্দটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন : “ মাহদীর বৈশিষ্ট্য বলতে গিয়ে বলা হয়েছে তা ‘ আজলাল আজবাহ ’ এবং তা হচ্ছে চোখ ও কানের মাঝামাঝি নরম চুল এবং তিনি হচেছন সে যিনি তার চুল আচড়াবেন চেহারা থেকে । ”
এছাড়া ‘ হুদা ’ শব্দটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেছেনঃ মাহদী হচ্ছেন এমন যাকে আল্লাহ সত্যের দিকে পথ দেখিয়েছেন । তার এ গুণ এমনভাবে নামের জায়গায় বর্ণিত হয়েছে যে তা নামের মতই হয়ে গেছে এবং ব্যাপক ব্যাবহারে তার নাম মাহদী হয়ে গেছে যার বিষয়ে নবী (সা .) সুসংবাদ দিয়েছেন যে তিনি সময়ের শেষ দিকে আসবেন । ”
‘ ফুতুহাতে ইসলামিয়াহ ’ -র দ্বিতীয় খণ্ডে 322 পৃষ্ঠায় লেখক মাহদী সম্পর্কে হাদীসের ব্যাপকতা নিশ্চয়তার পর্যায়ে উল্লেখ করে বলেন যেঃ
“ এ বিষয়ে নিশ্চিত যে তার আত্মপ্রকাশ অবশ্যম্ভাবী । অবশ্যই তিনি ফাতেমার বংশ থেকে এবং তিনি পৃথিবী ন্যায়বিচারে পূর্ণ করবেন । ”
এরপর তিনি বলেনঃ সাইয়্যেদ মুহাম্মদ ইবনে রাসূল বারাযানজী এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন তার ‘ আল আশা -হাত ’ বইতে ।
ইবনে আবিল হাদীদ তার নাহজুল বালাগার তাফসীরে দ্বিতীয় খণ্ডে 535 পৃষ্ঠায় , হযরতের (আলী -আঃ ) কিছু খোতবা উল্লেখ করার সময় (যা আমরা আগে উল্লেখ করেছি ) বলেনঃ ‘ গবেষণায় দেখা যায় সব মুসলিম মাযহাব একমত যে পৃথিবী ও দায়িত্ব শেষ হবেনা একমাত্র মাহদীর আগমনের পরে ছাড়া এবং আসবেন শেষ সময়ে ’ ।
মাহদী সম্পর্কে কবিতা ও গীতি কবিতা
“ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ” -র লেখক 438 পৃষ্ঠায় আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ ) এর একটি কবিতা উল্লেখ করেছেন যেখানে হযরত বলেন (ইমাম হোসেইকে )ঃ “ হে হোসাইন , যখন তুমি নিজেকে পাবে কোন জায়গায় বহিরাগত , এর অভ্যাস ও প্রচলনের সাথে সম্পৃক্ত হও ! আমি যেন দেখছি আমার আত্মা এবং আমার সন্তানদের কারবালায় এবং এর যুদ্ধের দৃশ্য । আমাদের দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হবে যেভাবে একজন বধুয়ার জামা রাঙানো হয় । আমি সেই বিপর্যয় দেখছি কিন্তু আমার চর্মচোখে নয় । এর মূল্যের চাবটি আমার কাছে দেয়া হয়েছে । আল্লাহ আমাকে কল্যাণ দান করুন যা আমাকে দেয়া হয়েছে , আল্লাহ আমাদের ক্বায়েমকে কল্যাণ দান করুন যে ন্যায়বিচারকে উপরে তুলে ধরবে । ”
“ হে হোসাইন ! ক্বায়েম আমার রক্তের প্রতিশোধ নেবে । বরং সে তোমার রক্তের প্রতিশোধও নেবে । তাই ধৈর্য ধরো তোমার দুঃখ কষ্টে । ”
একই বইয়ের 439 পৃষ্ঠায় তিনি আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ ) থেকে নীচের কবিতাটি বর্ণনা করেনঃ
“ আল্লাহ তার রহমত ও অনুগ্রহ বর্ষণ করুন সেই সাহসী ইমামের উপর যে মুশরিকদের সৈন্যদের ডিভিশনগুলোকে তার বিজয়ী তরবারীর লক্ষ্য বানাবেন । তিনি ধর্মকে পৃথিবীর সব অংশে প্রকাশ করবেন এবং নিপীড়নকারী মুশরিকদের অপমানিত করবেন । আমি অহংকার ও দাম্ভিকতা থেকে একথাগুলো বলছিনা বরং তা আমাকে দিয়েছেন আলে হাশিমের নির্বাচিত ব্যক্তি (নবী -সাঃ ) । ”
এ একই বইতে আবারও 454 পৃষ্ঠায় তিনি দেবেল খুযাইর গীতি কবিতা থেকে উদ্ধৃত করেছেন যা খুযাই ইমাম রেযা (আঃ ) এর সামনে আবৃতি করেছিলেন । তিনি দেবেলকে উদ্ধৃত করে বলেনঃ
“ আমি আমার গীতি কবিতা আবৃত্তি করলাম এ অংশ পর্যন্ত ‘ ইমামের আবির্ভাব হবে যিযন আল্লাহর নামে উঠে দাড়াবেন এবং তার রহমত অনিবার্য । তিনি আমাদের জন্য সত্য ও মিথ্যা চিহ্নিত করবেন এবং পরহেযগারতের পুরুস্কৃত করবেন এবং খারাপদের শাস্তি দিবেন । ”
ইমাম রেযা (আঃ ) চোখের পানি ফেললেন এবং বললেনঃ ‘ হে দেবেল , রুহুল কুদ্দুস তোমার জিহবার মাধ্যমে কথা বলেছে --- । ”
আল ফুতুহাতুল মাক্কিয়ার তৃতীয় খণ্ডে 366 নং অধ্যায়ে আমরা নীচের কবিতাটি দেখতে পাইঃ
‘ জেনে রাখো , ওলীদের মধ্যে শেষজনকে শহীদ করা হবে এবং মহাবিশ্বের আলো নিভে যাবে , তিনি মাহদী , মুহাম্মদের পরিবার । সে হিন্দী তরবারীর মত , এক ধ্বংসকারী । তিনি সূর্য়ের রশ্মি যা প্রত্যেক মেঘকে এবং অন্ধকারকে উজ্জ্বল করে । তিনি বৃষ্টির প্রথম ফোটা যা উদারভাবে দান করবে । ’
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দার ’ লেখক 461 নং পৃষ্ঠায় মহিউদ্দীন আরাবীর ‘ দুরুরুল মাকনূন ’ বই থেকে একটি কবিতা বর্ণনা করেন । যা এরকমঃ
“ যখন সময় এগিয়ে যাবে বিসমিল্লাহর অক্ষরগুলোর মাধ্যমে । মাহদী আবির্ভূত হবেন । রোযা রাখার পর তিনি কাবা থেকে বের হবেন । আমার পক্ষ থেকে তার প্রতি শুভেচ্ছা পাঠাও । ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক 4র্থ পরিচ্ছেদে লিখেছেনঃ “ আল্লামা আদাব আব্দুল্লাহ ইবনে বাশার দার মূল্যবান গীতি কবিতার কয়েক লাইন -এর মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন আলে মুহাম্মদ ও নাফসে যাকিয়ার কথাঃ
‘ নাফসে যাকিয়ার হত্যাকাণ্ডে , যে তা স্মরণ রেখেছে তার জন্য রয়েছে সত্য নিদর্শন । অন্য আরেক নাফস যে কাজে নব্যস্ত আছে যাকে কাবার কাছে হত্যা করা হবে -আবির্ভূত কৎহবে এবং (জনগণকে ) আহবান করবে ইমামের দিকে এবং সে জানাবে যে সূর্য উঠার পর দিনের কিছু অংশ যখন পার হয়ে যাবে , কুফাতে একটি আগুন জ্বালানো হবে রক্তের একটি স্রোতের সাথে । পরিণতিতে কুফা জ্বলতে থাকবে । সিরিয়ার লোকেরা বাইদাহর দিকে তাদের বিরূদ্ধে এক সৈন্যদল পাঠাবে এবং তাদেরকে মাটি গিলে ফেলবে । সাহসী ঘোড়সাওয়াররা (বাতাসের মত যা ধূলা ও ধোয় ছড়ায় ) অগ্রসর হবে সামনে । শুয়াইব ইবনে সালেহ যে থাকবে সৈন্যবাহিনীর সর্বাগ্রে তাদেরকে নিয়ে যাবে এক সাইয়্যেদের কাছে যিনি আলে হাশিম থেকে আবির্ভূত হবেন ; ঐ সাইয়্যেদের মুখের ডান দিকে চোখের ও কানের মাঝামাঝি একটি দাগ রয়েছে । ”
এছাড়া একই বইয়ের ভূমিকায় লেখক মাহদীর প্রশংসায় একটি কবিতা এনেছেন কিন্তু বলেন নি কবিতাটি তার নিজের না অন্য কারো । কবিতাটি এমনঃ
মাহদীর বরকতে ধর্মের কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হবে । মাহদীর বরকতে ধর্মের অধঃপতন শেষ হবে ;
তার সাহায্যে মরুভুমিগুলো (নিষ্ঠুরতা ও অত্যাচার থেকে ) মুক্ত হবে ;
মাহদীর বরকতে নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নের অন্ধকার দূর হবে ;
আল্লাহর শুভেচ্ছা ও সালাম মাহদীর উপর প্রতিদিন । ”
“ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ” -র লেখক 466 পৃষ্ঠায়ঃ এ কবিতাটি শেইখ আব্দুল কারীম ইয়ামানী থেকেঃ
“ এর জনতা সমৃদ্ধি ও শক্তির মাঝে বসবাস করছে এবং তোমরা দেখবে হেদায়েতের আলোকে যে ‘ হায়দার ’ -এর বংশ ও আহলুল বায়েত থেকে আরবি অক্ষর ‘ মিম ’ এর মাধ্যমে আসবে । তাক মোহদী বলে ডাকা হবে এবং সে সত্যের জন্য আবির্ভূত হবে । সর্বপ্রথম সে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (সা .) এর সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে আদেশ দিবেন । ”
একই বইয়ের 461 পৃষ্ঠায় তিনি ‘ দুররাত উল মাআরেফ ’ বইয়ের লেখক শেইখ আব্দুর রহমান বাসতামীর এ কবিতাটি বর্ণনা করেছেনঃ
“ সম্মানিত এবং আহমদ এর বংশ থেকে বিখ্যাতজন আবির্ভূত হবে । সবার আগে তিনি আসমানী ন্যায়বিচার প্রকাশ করবেন জনগণের মাঝে যেভাবে বর্ণনা করেছে হযরত আবুল হাসান রিযা (আঃ ) এবং যা জ্ঞানের ভাণ্ডারে সংরক্ষিত আছে । ”
নীচের কবিতাটিও বাসতামী উল্লেখিত পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেনঃ
“ মীম অক্ষরটি -شین ( শিন ) এর পরে বিজয়ীর বেশে আবির্ভূত হবে মক্কা শহরে কাবা ঘর থেকে । তিনিই সেই মাহদী যিনি সত্যসহ আবির্ভূত হবেন এবং শীঘ্রই তাকে আল্লাহ পাঠাবেন সত্যের জন্য । তিনি সম্পূর্ণ পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন । সর্ব প্রথম তিনি নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নের অন্ধকারকে মুছে দিবেন ও ধ্বংস করে দিবেন । আসমানী বিষয়ে তার হেদায়েতের দায়িত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে । আল্লাহ তাকে নির্বাচন করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর প্রতিনিধি ও উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য । ”
উল্লেখিত বইয়ের 468 নং পৃষ্ঠায় তিনি শেইখ সদরুদ্দীন কুনাউইর একটি কবিতা উল্লেখ করেছেনঃ
“ মাহদী আবির্ভূত হবেন এবং পৃথিবীতে উঠে দাড়াবেন আসমানী বিষয়ের জন্য । পাশাপাশি , তিনি সব অবিশ্বাসী শয়তানদের ধ্বংস করবেন । সব খারাপ মানুষের ধ্বংস হবে তার হাতে ; শক্তিধর তরবারীর সাহায্যে ; যদি তুমি জানতে পার প্রকৃত মর্যাদা কি তাহলে এটি তোমাকে শয্যাশায়ী করে ছাড়বে । এ তরবারী ও ‘ ক্বায়েম ’ এর বাস্তবতা , যাকে সত্যপথে ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা আসমানী বিষয় । ”
“ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ” -র 474 পৃষ্ঠায় কুনদুযী একটি গীতি কবিতা বর্ণনা করেছেনঃ
“ প্রায়ই তারা আমাকে আহলুল বায়েতের ভালোবাসা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে -আমি কি তা এখন লুকাবো , না অস্বীকার করবো ? আমি আল্লাহর কসম করে বলছি আহলুল বাইতের ভালোবাসা আমার রক্ত ও মাংশের সাথে মিশে গেছে । তারা হেদায়েতের মশাল । নবী (সাঃ ) এর পর হায়দার ও হাসনায়েন এলেন । তাদের পরে এলেন আলী , মুহাম্মদ , জাফর সাদিক এবং মূসা । মূসার পর এলেন আলী আর রেযা , যিনি মানুষের আশ্রয় । তারপর তার ছেলে মুহাম্মদ এবং তারপর তার পরহেজগার ছেলে আলী এবং এরপর হাসান এবং মুহাম্মদ । তারা আমার ইমাম এবং মনিব যদিও একটি দল আমাকে গালাগালি করেছে এবং আমার তীব্র নিন্দা করেছে (এ বিশ্বাস রাখার জন্য ) ।
তারা হলেন ইমাম যাদের নাম আমরা প্রায়ই শুনি । তার আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ ) তার দাসদের উপর । তার আল্লাহর দিকে হেদায়েতের পথ । তারা হলেন ইমাম যারা আল্লাহর জন্য দিনের বেলা রোযা রেখেছে এবং রাতগুলি কাটিয়েছে আল্লাহর সামনে রুকু ও সিজদা করে । তার একদল যাদের অধীন হল মক্কা , আবতাহ , কিফ , জামা এবং (জান্নাতুল ) বাকী ’ র কবরস্থান । তারা একদল যাদের অধীনে আছে মীনা । দু ’ টি পবিত্র সৌধ , দু ’ টি ‘ মারওয়া ’ এবং মসজিদ । তার একদল যাদের প্রত্যেক জায়গাতে একটি মাযার আছে , বরং তাদের একটি মাযার আছে প্রত্যেক হৃদয়ে । ”
মুহাম্মদ ইবনে তালহা শাফেয়ী ‘ মাতালিবুস সূলে ’ এরকম বলেছেনঃ
“ বারোতম অধ্যায়ে আবুল কাসিম মুহাম্মদ ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে মূসা ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব -তিনিই মাহদী , হুজ্জাত , খালাফে সালেহ এবং মুনতাযার ।
তিনিই হচ্ছেন উত্তরাধিকারী এবং ‘ হুজ্জাত ’ (প্রমাণ ) যাকে আল্লাহ সমর্থন দিয়েছেন । এছাড়া আল্লাহ তাকে পথ দেখিয়েছেন সত্য পথে এবং তাকে তার মেজাজ দিয়েচেন এবং তার মর্যাদাকে উচুতে উঠিয়েছেন । আল্লাহ তার অনুগ্রহের অলংকারকে তার উপরে দান করেছেন এবং তিনিও নৈতিক গুণাবলীর পোষাক পরিধান করেছেন । নবী (সাঃ ) কিছু বলেছেন যা আমাদের জন্য বর্ণনা করা হয়েছে এবং যে নবীর (সাঃ ) কথা সম্পর্কে জ্ঞাত হবে সে এর অর্থ বুঝতে পারবে । একজন জ্ঞানী ব্যক্তি জানে মাহদী (আঃ )- এর নিদর্শনের খবর এসে গেছে , এবং নবী (সাঃ )- এর কথাই উল্লেখ করা যথেষ্ট যিনি বলেছেনঃ ‘ মাহদীর চেহারার আলো হচ্ছে আামার আলো থেকে । যাকে যত্ন করা হয়েছে যাহরার কাছে (যা তার দেহেরই অংশ ), কেউ এ ধরণের মর্যাদা পাবে না যা আমি মাহদীকে দান করেছি । এরপর যে বলবে সে মাহদী সে সত্য কথা বলেছে । ”
আমরা যা লিখেছি তা ছাড়াও ফরসী ও আরবীতে আরো অনেক কবিতা রয়েছে যে কেউ সেগুলোর ভেতরে অনুসন্ধান করবে সে আলোকিত হবে । “ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ” -র লেখক আরো এ ধরণের অনেক কবিতা উল্লেখ করেছেন । যেমন শেইখ আহমাদ জামী , শেইখ আতহার নিশাপুরী , শেইখ জালালুদ্দীন রুমী প্রমুখ ব্যক্তিদের কবিতা । যা হোক আমারা যা বর্ণনা করেছি তা যথেষ্ট ।
দ্বিতীয় অধ্যায়
মাহদী(আঃ ) আরব বংশ থেকে
‘ ইকদুদ দুরার ’ এর লেখক প্রথম অধ্যায়ের চতুর্থ ভাগে আবু আব্দুল্লাহ নাইম ইবনে হেমাদ (তার বই আল ফিতান ) থেকে যিনি আলী (আঃ ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেন - “ বনি আব্বাসের সাম্রাজ্য হলো এমন যদি তুর্কীরা , ডাইলামাইটরা এবং ইনদুস উপত্যকার অধিবাসীরা ও ভারত তাদেরকে আক্রমণ করে তারা তাদেরকে দ্বংস করতে ব্যর্থ হবে এবং বনি আব্বাসরা সাফল্য লাভ করতেই থাকবে ঐ পর্যন্ত যখন তারা দাস ও দূর্বলদের উপর আক্রমণাত্মক না হয়ে উঠবে । এরপর আল্লাহ একজন ‘ গুসেল ’ বানাবেন (এক খারাপ লোক যে বনি আব্বাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে ও তাদেরকে ধ্বংস করবে ) তাদের উপর আধিপত্য করার জন্য যা এক জায়গা থেকে বেরিয়ে আসবে যেখানে তাদের রাজত্ব প্রকাশিত হয়ে পড়বে । সে এমন কোন শহর অতিক্রম করবে না যা সে দখল করবে না , তার সামনে যে পতাকাই উচু হবে সে তা ধ্বংস করবে । সে যে সম্পদই লাভ করবে তার অপব্যবহার করবে । দুর্ভোগ তার উপর যে তার পক্ষ নেবে । এরকম চলতেই থাকবে যতক্ষণ না একজন আরবের হাতে বিজয় আসে যে সত্যের জন্য উঠে দাড়াবে এবং এর উপর কাজ করবে । ”
এটি পরিষ্কার যে ‘ একজন আরব ’ বলতে উপরোক্ত বাক্যে মাহদীকে বোঝানো হয়েছে , যিনি প্রতীক্ষিত এবং যিনি সময়ের শেষ দিকে আসবেন এবং তার নিদর্শনগুলো হচ্ছে সেগুলো যা এ বইয়ের এ অধ্যায়ে এসেছে যা ‘ আল ফিতান ’ বই থেকে নেয়া হয়েছে । এখানে এর লেখক ইসাস আবু আব্দুল্লাহ নাইম ইবনে হেমাদ আবি ক্বাবিল থেকে বর্ণনা করেনঃ ‘ জনগণ আরামে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না বনি আব্বাসের রাজত্ব শেষ হয় । এরপর তারা সমস্যায় থাকবে মাহদী না আসা পর্যন্ত । ’
লেখক বলেন ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় হালাকুর বিদ্রোহের সময় থেকে প্রাচ্য স্বাধীনতা ভোগ করে নি । অস্থির অবস্থা ও বিভেদ , শাসক ও বাদশাহদের মাঝে চলতেই থাকে । এরকমই ছিলো আলীর কথা ‘ সে বিজয় অর্জন করা পর্যন্ত এবং কোন আরবের কাছে হস্তান্তর না করা পর্যন্ত ’ বলতে সম্ভবত তিনি এটিই ইঙ্গিত করেছেন যে বিভেদ ও অস্থির অবস্থা হালাকুর আগমনের সাথে ও তার বিদ্রোহের সাথে সম্পৃক্ত এবং তা তেমনই থাকবে মাহদীর আবির্ভাব পর্যন্ত । মাহদীর বিজয় ও জনগণকে (তার মিশনের দিকে ) আহবান ও শহরগুলোর উপরে তার আধিপত্যের একটি কারণ হচ্ছে হালাকুর পরে অস্থির অবস্থা । মনে হয় হালাকু নিজেই সরকারের দায়িত্ব হযরত (মাহদী )-এর কাছে তুলে দেবেন । আরেকটি কারণ হচ্ছে হাদীসসমূহ যা তার পরিবার ও আত্মীয়দের চিহ্নিত করে এবং প্রমাণ করে যে মাহদী আরব বংশীয় ।
রাগেব তার ‘ মুফরাদাত ’ -এ বলেনঃ “ (عرب ) আরবরা হচ্ছে ইসমাইলের বংশধর এবং (اعراب ) হচ্ছে এর বহুবচন । পরবর্তীতে বেদুইনদের এ নামে ডাকা হতো । ”
“ সাবায়েকুযযাহাক ” এর লেখক 4র্থ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ “ শহরবাসীদেরকে বলা হয় (عرب ) আরব , এবং মরুবাসীদেরকে (اعراب ) আ ’ রাব বলা হয় এবং যা সাধারণভাবে ঘটে তা হলোاعراب শব্দটি উভয় দলের জন্য ব্যবহৃত হয় । ”
জাওহারী ‘ সিহাহ ’ তে বলেনঃ (عرب ) আরব একটি গোত্র এবং তারা শহরবাসী । তাদেরকে আরাবী বলা হয় । কিন্তু সাধারণভাবে সব স্তরে (عرب )আরব শব্দটি ব্যবহার হয় । একই কথা অভিধানগুলোতে লেখা আছে । ”
‘ এবার ’ এর লেখক বলেনঃ আরবعرب শব্দটিاعراب শব্দ থেকে নির্মিত হয়েছে আর এর অর্থ নেয়া হয়েছে এ কথা থেকেاعراب الرجل حاجتة তাই জেনে রাখুন আরব নয় - হোক সে ইরানি , তুর্কী , রোমান অথবা ইউরোপীয় সবাই (عجم ) আজাম । লোকোর সাধারণত বিশ্বাস করে যেعجم শব্দটি ফার্সীভাষীদের বোঝায় আসলে তা নয় । বরং পশ্চিমারা ফরাসীদের সম্পর্কে এ শব্দটি ব্যবহার করেছে এবং তাদেরও যারা এ দলে পড়ে । যাহোকاعجم শব্দটিতে একটি আলিফ যোগ হয় কোন ব্যক্তির জন্য যখন সে আরব হওয়া সত্ত্বেও পরিষ্কার করে কথা বলতে পারে না ।
মাহদী ( আঃ ) এ ‘ উম্মাহ ’ ( জাতি ) থেকে
তিরমিযী তার ‘ সহীহ ’ তে 270 পৃষ্ঠায় আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ ‘ আমি ভয় পেলাম নবী (সাঃ )-এর পর খারাপ কিছু ঘটতে পারে তাই আমি নবীকে জিজ্ঞেস করলাম এবং তিনি উত্তরে এরকম বললেনঃ “ নিশ্চয় মাহদী আমার উম্মত থেকে এবং সে তাদের মধ্য থেকে আবির্ভূত হবে । ”
‘ হুদাল ইসলাম ’ - এর 25তম সংস্করণে একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে ইবনে মাযাহ থেকে যে আবু সাঈদ থেকে তা বর্ণনা করেছেন ।
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক প্রথম পরিচ্ছেদে আবু মুসলিম আব্দুর রহমান ইবনে আউফ এবং তিনি তার পিতা থেকে , তিনি নবী (সাঃ ) থেকে , তিনি বলেছেনঃ
“ অবশ্যই আল্লাহ একজন মানুষকে আামার উম্মত থেকে নিয়োগ দিবেন । তিনি ঐ পর্যন্ত বললেনঃ ‘ সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পরিপূর্ণ করে দিবে । ”
একই বইয়ের তৃতীয় পরিচ্ছেদে লেখক হাফেয আবু নাঈম এর ‘ সেফাতুল মাহদী ’ কিতাব থেকে যিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে , তিনি নবী (সাঃ ) থেকে যিনি বলেছেনঃ
“ মাহদী আমাদের আহলুল বায়েত থেকে , সে আমার উম্মত থেকে । ”
‘ ফুসুল আল মুহিম্মা ’ -র লেখক আবু দাউদ ও তিরমিযী থেকে এবং এ দু ’ জন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ থেকে এবং তিনি নবী (সাঃ ) থেকে , তিনি বলেছেনঃ
“ পৃথিবীর জীবন একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ দিনটিকে এমন দীর্ঘ করে দিবেন যে , আমার উম্মত থেকে এবং আমার বংশ থেকে একজন আসবে যে আমার নাম বহন করবে এবং পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে । ”
ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা -র লেখক 433 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন আবু সাঈদ খুদরীর ‘ জাওহার উল আক্বদাইন ’ থেকে । ঐ হাদীসে নবী (সাঃ ) বলেনঃ “ মাহদী আমার উম্মতের মধ্যে । ” এছাড়া উক্ত লেখক আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদের বই ‘ আল ফিতান ’ থেকে এবং তিনি হিশাম ইবনে মুহাম্মদ এবং তিনি নবী (সাঃ ) থেকে যিনি বলেছেনঃ “ মাহদী আমার উম্মত থেকে এবং তিনি সে ঈসা ইবনে মরিয়মের নেতা হবে । ”
রাগেব তার ‘ মুফরাদাত ’ -এ বলেছেনঃ উম্মাহ হলো কোন দল যা তৈরী হয় আচার -ব্যাবহার , সময় ও স্থানের মাধ্যমে , তা তাদেরকে একত্র করে স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় তাতে কোন পার্থক্য নেই ।امة ( উম্মাহর ) বহুবচন হচ্ছেامم ( উমাম ) । একটি দল বলেছেঃ প্রত্যেক নবীর উম্মাহ হচ্ছে তার অনুসারীরা এবং যে তার আচার - ব্যবহার অুনসরণ করে না সে তার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত হবে না এমনও যদি হয় সে তার সময়ে জীবন যাপন করেছে । অতএব ইসলামের ‘ উম্মাহ ’ হলো ঐ মানুয়েরা যারা ইসলামী আইন এবং যা কিছু নবী ( সাঃ ) এনেছেন তা মেনে চলা । সে নবী ( সাঃ ) কে দেখেছে বা দেখেনি অথবা তার সময়ে জীবন যাপন করেছে কি করেনি তাতে কোন পার্থক্য নেই । অধিকিন্তু , তা সবার জন্য প্রযোজ্য , তা পরিবার ও গোত্রের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না । এমনও যদি হয় তাদের ভাষা , সময় ও স্থানের কারণে পরস্পরের মধ্যে পার্থক্য আছে ।
এ বইয়ে লেখক অভিমত ব্যক্ত করেছেনঃ এটি পরিষ্কার যে স্পষ্টভাবে জানানোর উদ্দেশ্যে আল মাহদী শব্দে আলিফ ও লামের ব্যবহার একটি চুক্তির কারণে । এ অর্থে যে মাহদী , যাকে আসমানী কিতাবসমূহে স্মরণ করা হয়েছে এবং যার বিষয়ে নবীরা সুসংবাদ দিয়ে গেছেন তাদের জাতীসমূহের মাঝে আসবেন এ বরকতপূর্ণ উম্মাহ থেকে এবং আর কোন উম্মাহ থেকে নয় । তাই এ উম্মাহর আনন্দিত ও খুশী হওয়া প্রাপ্য এ সম্মানে ভূষিত হওয়ার জন্য । এটি সত্য যে কিছু বিচ্ছিন্ন হাদীসে আমরা এ ধরণের কথা পাই যে , “ মাহদী ঈসা ইবনে মারিয়াম ছাড়া কেউ নয় । ”
ইবনে হাজার এ হাদীসটি লিখেছেন ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এর 89নং পৃষ্ঠায় ।
ইবনে হাজার এবং হাকেম এ ধরণের একটি হাদীস এনেছে নবী ( সাঃ ) এর কাছ থেকেঃ ‘ সময় খুব দূরে নয় যখন সমস্যা ও কষ্ট জনগণের উপর আধিপত্য করবে এবং পৃথিবী এর অধিবাসীদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এবয় জনগণ লোভের দিকে এগিয়ে যাবে । খারাপদের ইপর সময় ঘনিয়ে আসবে এবং মাহদী ঈসা ইবনে মারিয়াম ছাড়া কেউ নয় । ’
ইনে হাজার হাকেমের উদ্ধৃতি দিয়েচেনঃ “ এ হাদীসগুলো আমাকে চিন্তান্বিত করে নি বরং অনেক আশ্চর্য হয়েছি । ”
বায়হাক্বী বলেনঃ “ শুধু মোহাম্মদ ইবনে খালিদ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন । ”
হাকেম বলেনঃ “ সে ( মোহাম্মদ ইবনে খালিদ ) অপরিচিত এবং তার বর্ণিত হাদীসগুলোতে বর্ণনার ক্রমধারায় পার্থক্য আছে । ”
নাসাঈও এ ধরণের হাদীস প্রত্যাখ্যান করেছেন ।
‘ দায়েরাতুল মাআরেফের ’ 10ম খণ্ডে 475 পৃষ্ঠায় লেখক এ হাদীসটি বর্ণনা করে ইবনে মাজাহর মতামত ব্যক্ত করেনঃ “ ইমাম কুরতুবী বলেছেন - এ হাদীসটি আল মাহদী সম্পর্কে পূর্ববর্তী হাদীসগুলোর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয় । কারণ এ হাদীসটির উদ্দেশ্য শুধু মাহদীর উপরে ঈসা ইবনে মারিয়মে ( আঃ ) এর মর্যাদা বর্ণনা করা । তাহলো ক্রটিহীনতা ও পূর্ণতার দৃষ্টিভঙ্গিতে ঈসা ছাড়া কোন মাহদী নেই । তাই এটি মাহদীর অস্তিত্বের বিরোধী নয় । এটি হচ্ছে সেরকম কথার মত যে আলী ছাড়া কোন শক্তিশালী লেঅক নেই । ”
এছাড়া এ দৃষ্টিভঙ্গি এ হাদীসটি দ্বারা সমর্থিত যে , “ মাহদী আমার বংশ থেকে , সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করবে এবং ঈসার ( আঃ ) সাথে আবির্ভূত হবে , যে তাকে দাজ্জালকে হত্যা করতে সাহায্য করবে ‘ লাদ ’ নামে ফিলিস্তিনের এক জায়গাতে । নিশ্চয় সে এ উম্মতের উপর শাসক হবে এবং ঈসা ইবনে মারিয়ম তার পিছনে নামাজ পড়বে এবং আল্লাহ সব জানেন । ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ - এর লেখক ভূমিকাতে লিখেছেনঃ “ এবং মানুষের মাঝে তারা আছে যারা মনে করে মাহদী হচ্ছে পুতঃপবিত্র ঈসা ইবনে মারিয়ম ছাড়া আর কেউ নয় । তাই আমি তাদের বলেছিঃ যে ব্যক্তি মাহদীর আবির্ভাবকে অস্বীকার করে সে আসলে ঈসার কথা বলছে না ; কারণ একথা বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই যে এখানে তার কথা বলা হচ্ছে এবং যে মনে করে মাহদী হলো ঈসা ইবনে মারিয়ম এবং এ হাদীসের নির্ভরযোগ্য নিয়ে জিদ করে অবশ্যই তার ধর্মান্ধতা ও ভূল তাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনেছে । এরপর তিনি বলেছেন - ‘ যদিও এ হাদীসটি প্রবাদের মত লোকের মুখে মুখে আছে তবুও কিভাবে এটিকে সত্য বলে বিবেচনা করা যায় যখন হাদীস বিশেষজ্ঞরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন ? ’ এর উৎসগুলো বিবেচনা করে এবং এর সনদের উপর গভীরভাবে ভাবার পর কোন ব্যক্তি যদি এ হাদীসের উপর নির্ভর করে তাহলে তা হবে এক প্রহসন । ”
এ বক্তব্যের প্রমাণ হচ্ছে ইমাম আবু আব্দুর রহমান একে প্রত্যাখ্যান করার উপর জোর দিয়েছেন এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণযোগ্য , কারণ হাদীসটি ফিরে যায় মুহাম্মদ ইবনে খালেদ জুনদীর কাছে ।
এছাড়া ইমাম আবুল ফারাজ জওযী তার বই ‘ ইলাল - মুতানাহিয়া ’ তে এ হাদীসটির দূর্বলতা বর্ণনা করেছেন হাফেজ আবি বকর বায়হাক্বীর কথা থেকে যিনি বলেছেনঃ “ এ হাদীসটি জুনদীর সাথে সম্পর্কিত এবং সে একজন অপরিচিত ব্যক্তি । অধিকিন্তু জুনদী বর্ণনা করেছে আবান ইবনে আইয়াশ থেকে এবং সেও প্রত্যাখ্যাত এবং অপ্রশংসিত ব্যক্তি । আবান বর্ণনা করেছে হাসান থেকে এবং তিনি নবী ( সাঃ ) থেকে এবং তার বর্ণনা উৎসের ধারায় ফাক রয়েছে । যা হোক , এ হাদীসটি সত্য বিবেচনা করার কোন কারণ নেই । ”
বায়হাক্বী তার উস্তাদ হাকেম নিশাপুরী থেকৈ বর্ণনা করেছেন ( তার কথা হাদীসের কৌশল ও এর বর্ণনাকারীর স্থান বোঝাতে যথেষ্ট ): জুনদি এবং ইবনে আইয়াশ অপরিচিত ও প্রত্যাখ্যাত এবং হাদীসটির সূত্র বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । প্রায় সব হাদীস বিশেষজ্ঞ ইমাম মাহদী সম্পর্কে হাদীস এনেছেন এবং সবাই তার নাম উল্লেখ করেছেন এবং তাকে স্মরণ রেখেছেন এবং যারা পরিষ্কার দৃষ্টিসম্পন্ন ও সচেতন তাদের জন্য এটি স্পষ্ট যে হাদীসগুলোর একটি অংশ অন্য অংশকে সমর্থন করে এবং এটি হচ্ছে সর্বোচ্চ প্রমাণ যে ঐ হাদীসগুলো এ প্রত্যাখ্যাত হাদীসটি থেকে উত্তম ।
এছাড়া হাফেয আবু আব্দুল্লাহ হাকেম এ বিষয়ে তার ‘ মুসতাদরাকে ’ কথা বলেছেন যা দুটি সহীহতেও ( বুখারী ও মুসলিম ) উল্লেখিত হয়েছে এবং এ কারণে এ বিষয়ে আর কোন কথা বলা অপ্রয়োজনীয় । তিনি মনে করিয়ে দেন যে যদি কোন হাদীস বিরাট সংখ্যক লোক বর্ণনা করে থাকে তা এমন হাদীসের চাইতে অধিকতর গুরুত্ব রাখে এরকম নয় এবং হাদীসটি বিশ্বাসযোগ্য কি অবিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে আলোচনা করেছেন । তিনি লিখেছেনঃ “ যে কারণে আমি এ হাদীসটি এনেছি তা এর উপর যুক্তি তর্ক করার জন্য নয় বরং আমার বিস্ময় প্রকাশ করার জন্য । ”
তিনি আরো বলেনঃ
“ এ হাদীসটির চাইতে সূনান সূরী ও তার শিষ্যদের হাদীসটি আরও ভালো । ”
এরপর তিনি নবী ( সাঃ )- এর হাদীসটি বর্ণান করেন যা বলেঃ
“ তার নাম ও আমার নাম একই ” এবং এরপর লিখেছেনঃ “ প্রখ্যাত আলেমগণের অভিমত হযরদ ( সাঃ ) এ বক্তব্যের মাধ্যমে যা বলতে চেয়েছেন তাহলো মাহদীর নাম ও তার নাম একই রকম । ”
এভাবে উপরোক্ত বক্তব্য এ কথার সত্যতা প্রকাশ করে যে মাহদী ঈসা ইবনে মারিয়ম ( আঃ ) নন । অন্য কেউ । তাছাড়া যদি আমরা এ হাদীসটি সঠিক বলে ধরেও নেই তবুও আমরা এটিকে এর আপাতঃ অর্থে নিতে পারিনা , বরং আমাদের উচিৎ এর আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা নেয়া , কারণ সত্য হাদীসগুলো আমারা প্রত্যাখ্যান করতে পারিনা যা এ হাদীসটির বিপক্ষে যায় । হতে পারে এর আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা এ কথার আরবী আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যার মত । এ দিক থেকে দু ’ টি হাদীসের আধ্যাত্মিক অর্থ পরস্পরের নিকটে এবং এ ধরণের হাদীসের সংখ্যা প্রচুর । তাই প্রত্যাখ্যান করার প্রকৃত উদ্দেশ্য এটি নয় যে আমরা উপসংহারে আসব যে মাহদী ও ঈসা ইবনে মারিয়ম একই ব্যক্তি । বরং এটি বলা উচিৎ যে এ বাক্যটি এসেছে হযরত মাহদী অথবা ঈসাকে সম্মান দিতে অথবা এর রয়েছে অন্য কোন আধ্যাত্মিক অর্থ ।
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ - র লেখক 434 পৃষ্ঠায বলেনঃ নিশ্চয়ই ইবনে খালিদ এর কাছ থেকে এ হাদীসটি যে মিথ্যা তার প্রমাণ বিভিন্নভাবে পাওয়া যায়ঃ
প্রথমতঃ যদি হাদীসটি সঠিক হত তাহলে ইয়াযিদ ও হাজ্জাজ এর সময়কার নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতা আরও অনেকগুন বৃদ্ধি পেত এবং আজ পৃথিবীতে ভাল কোন কিছু থাকতো না । বরং উল্লেখিত সময়ের পর অর্থাৎ উমর ইবনে আব্দুল আযীয ও আব্বাসীর খলীফাদের সময় থেকে আজ পর্যন্ত শান্তি ও কল্যাণ বজায় আছে আল্লাহর রহমতে ।
দ্বিতীয়তঃ নবী ( সাঃ ) নবুয়তের নিয়োগ প্রাপ্তির আগে আরবদের মধ্যে মাহদাভিয়াত বিষয়টি প্রচলিত ছিলো না যাতে বলা যেতো ঈসা ইবনে মারিয়ম ছাড়া কোন মাহদী নেই ।
তৃতীয়তঃ আল্লাহ তার কিতাবের অনেক আয়াতে মাহদী সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়েছেন , নবী ( সাঃ ) নিজেও তার অনুসারীদের কাছে তার সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন যেভাবে পূর্ববর্তী নবীগণ ( আঃ ) আমাদের নবীর ( সাঃ ) আগমন সম্পর্কে এবং মাহদী সম্পর্কিত পরিস্থিতির বিষয়ে অন্যদের সুসংবাদ দিয়েছেন । আমি এসব সুসংবাদ সংগ্রহ করেছি ও উল্লেখ করেছি ;‘ মাশারেকুল ইখওয়ান ’ কিতাবে । ”
আমরা এসব সম্মানিত ব্যক্তিদের কথা থেকে যা বুঝতে পারি তা হলোঃ
প্রথমতঃ এটি একটি মিথ্যা হাদীস ।
দ্বিতীয়তঃ এটি অকার্যকর ও দূর্বল ।
তৃতীয়তঃ এটি বহুল বর্ণিত হাদীসগুলোর বিরোধিতা করে ।
চতুর্থতঃ এর প্রকৃত অর্থ এর আপাতঃ অর্থ থেকে ভিন্ন ।
এ হাদীস থেকে উপসংহার টানা যায় যে , মাহদীর আবির্ভাব ও আকাশ থেকে ঈসার অবতরণ দু ’ টো সম্পর্কিত বিষয় , যেখানে তাদের পরস্পরকে আলাদা করা যায় না । এটি ঠিক যে মনে হয় তারা দু ’ জনে একই অথবা হাদীসটি থেকে কিছু হারিয়ে গেছে ; প্রকৃতপক্ষে যা ছিলো তা হলো -মাহদী (আঃ ) হলো সেই যার সাথে রয়েছে ঈসা (আঃ ) । এছাড়া ছড়ানো ছিটানো হাদীসসূহ প্রমাণ করে এ অর্থ সঠিক । তাই ঈসা (আঃ ) হচ্ছেন মাহদীর (আঃ ) বিষয়ে একটি সত্য নিদর্শন ।
মাহদী(আঃ ) কেনান থেকে
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তার প্রথম অধ্যায়ে ইমাম আবু আমারা উসমান ইবনে সাইদ মুক্বারী থেকে এবং তিনি ক্বাতাদাহ থেকে , যিনি বলেছেনঃ
“ আমি সাইদ ইবনে মাসায়েবকে জিজ্ঞেস করলাম মাহদী সত্য কিনা । সে বললোঃ হ্যাঁ , তিনি সত্য । আমি তখন বললামঃ সে কোন গোত্রের ? সে বললোঃ কেনান । আমি আবার জিজ্ঞেস করলামঃ কোন শাখা ? সে বললোঃ কুরাইশ । আমি আরও জিজ্ঞেস করলাম সে কোন পরিবারের লোক ? সে বললোঃ বনি হাশিম । আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম কোন পরিবারের তিনি ? সে বললঃ ফাতেমার (আঃ ) বংশ । ”
লেখক বলেনঃ “ কেনান হলো কাযিমার সেই ছেলে যে মাদরকার সন্তান ছিলো , তার পিতা ইলিয়াস , তার পিতা মাযার , তার পিতা নেযার , তার পিতা সাদ , তার পিতা আদনান । ”
‘ সাবায়েক আল যাহাব ’ -এর লেখক বলেনঃ বনু কেনান হলো মাযার থেকে এক পরিবার এবং মাযারের এক ছেলে ছিল যার বংশধারায় এসেছেন নবী (সাঃ ) – তার নাম ছিল নেযার । মাযারের আরো সন্তান ছিল যারা নবীর (সাঃ ) ধারায় এসেছিলো ; তারা ছিলঃ মালিক , মালকান , হারিম , আমর , আমের , সাদ , ঘানাম , আউফ , মুজরাবা , কারওয়াল , জাযাল এবং গুরওয়ান । আবু উবাইদ বলেনঃ ‘ তারা সবাই ছিলেন ইয়েমেন থেকে এবং ‘ ইবার ’ নামের বইতে এসেছে যে তাদের বাসস্থান ছিলো মক্কার উপকন্ঠে । ’
মাহদী(আঃ ) ক্বুরাইশ থেকে
ইক্বদুদ দুরার ’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে লেখক ইমাম আবু আব্দুল্লাহ নাইম ইবনে হেমাদ থেকে তিনি ইবনে ওয়ায়েল থেকে তিনি ইমাম আবুল হুসেইন আহমাদ ইবনে জাফর মানাউই থেকে তিনি কাতাদা থেকে , যিনি বলেছেনঃ “ আমি সাইদ ইবনে মাসায়েবকে জিজ্ঞেস করলাম মাহদী সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কিনা । সে বললঃ হ্যা । আমি বললামঃ ‘ সে কোন গোত্রের ? সে বললোঃ কুরাইশ । আমি জিজ্ঞেস করলাম সে কোন দলের ? সে বললঃ বনি হাশিম । আমি বললামঃ সে কোন পরিবারের?সে বললঃ সে আব্দুল মোত্তালিবের বংশধর। আমি বললামঃ কোন পরিবারের ? সে বললঃ সে ফাতেমার বংশ থেকে । আমি বললামঃ তার কোন সন্তান থেকে ? সে বললঃ যথেষ্ট হয়েছে । ” এছাড়া একই বইয়ে সপ্তম অধ্যায়ে হাফেয আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ এর ‘ আল ফাতান ’ থেকে যা ইসহাক্ব ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে তালহা থেকে তিনি তাউস থেকে যিনি বলেনঃ ‘ উমর ইবনে খাত্তাব মৃত্যুশয্যায় ছিলেন এবং তার পরবিারের সদস্যরা বিদায় জানাচ্ছিলেন । এরপর তিনি বললেনঃ আমি কোন ধনভান্ডার সম্পর্কে জানি না যা আমি দান করতে পারি । কাবাঘর এবং এতে যে সম্পদ ও অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে তা আল্লাহর পথে ব্যয় কর ।
তখন আলী বললেনঃ ‘ হে আমিরুল মু ’ মিনীন , আপনি এ বিষয়টি ছেড়ে দিন , কারণ আপনি এ সম্পদের মালিক নন । বরং এর মালিক ক্বুরাইশ গোত্রের এক যুবক যে সময়ের শেষে তা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে । ’
ইবনে হাজার তার বই ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এর 99 পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ আহমাদ এবং মাওয়ারদি নবী (সাঃ ) থেকে একটি হাদীস এনেছে যিনি বলেছেনঃ “ সুসংবাদ তোমাদের মাহদী সম্পর্কে , সে কুরাইশ থেকে , আমার বংশ থেকে । ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এ 151 পৃষ্ঠায় একই জিনিস বর্ণনা করা হয়েছে । এ বইয়ের লেখক বিশ্বাস করেনঃ ‘ কুরাইশ হলো নেযার ইবনে কেনান । আমার জামেউল লতিফে পড়িঃ জেনে রাখো কুরাইশ কেন ডাকা হয় তার বিষয়ে মতভেদ আছে । বলা হয় তাদের এ নাম দেয়া হয় সমূদ্রের একটি পশুর নামে । যে পশু খায় কিন্তু তাকে খাওয়া হয়না । বিজয় লাভ করে কিন্তু পরাজিত হয় না (রূপক মন্তব্য শক্তি ও শ্রেষ্ঠত্বের ইঙ্গিত করে ) এবং এ গোত্রও এ পশুটির মত তাদের কাঠিন্য ও মর্যাদায় । ”
‘ মাদারেকে ’ আমরা পাইঃ ‘ কুরাইশ হচ্ছে এক শক্তিধর পশু যা জাহাজ নিয়ে খেলা করে এবং আগুন ছাড়া একে পতিহত করা যায় না । এবং ক্ষুদ্র সংস্করণ সম্মান দেখানোর জন্য । ”
অন্যরা বলেনঃ ‘ তাদেরকে কুরাইশ বলা হয় এজন্য যে তাদের গোত্রের নেতা ইবনে ইয়াখলেদ গালিব ইবনে ফাহরকে কুরাইশ নামে ডাকা হত । আর এভাবে বলা হতো -কুরাইশের গোত্র এসেছিলো । কুরাইশের গোত্র গিয়েছিলো এবং এভবে তারা এ নামে বিখ্যাত হয়ে যায় ।
অন্যরা বলেনঃ তাদের গোত্রর একজনের নাম ছিলো ‘ কুসাই ’ যে তাদেরকে একত্র করে মক্কায় এনেছিলো এবং ‘ ক্বরাশ ’ অর্থ ‘ একত্র হওয়া ’ যেহেতু সে তাদেরকে একত্র করেছিলো তাই তাকে এ নাম দেয়া হয় । এটিও বলা হয় যে কুরাইশ ছিলো কুসাই এর নাম আর এ কারণে তার গোত্রের নাম দেয়া হয় কুরাইশ ।
আবার কেউ কেউ বলেনঃ কুরাইশ শব্দটি ‘ তাক্বরীশ ’ শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ ‘ উপার্জন করা ’ এবং যেহেতু তারা ব্যবসা করতো এবং তার মাধ্যমে উপার্জন করতো অতএব তাদেরকে কুরাইশ বলা হয় ।
এটিও বলা হয় ‘ নাযর ’ এর নাম ছিলো ক্বুরাইশ । তাই তার পরিবারও এ নামে বিখ্যাত হয়ে উঠে ।
আবার কেউ বলেঃ তাদের ক্বুরাইশ ডাকা হয় এজন্য যে তারা হাজীদের মালপত্রের তাক্বরীশ করতো , আর তাক্বরীশ অর্থ তল্লাশী করা । আর তারা চেকপয়েন্ট খুলে মালামাল তল্লাশী করা ছাড়া হাজীদের সামনে যেতে বাধা দিতো ।
মাহদী(আঃ ) বনি হাশিম থেকে
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তার বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে ইমাম আবুল হুসেইন আহমাদ ইবনে জাফর মানাউই এবং ইমাম আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং এ দু ’ জন কাতাদা থেকে বর্ণনা করেন ’ যিনি বলেছেনঃ আমি সাঈদ ইবনে মাসীবকে জিজ্ঞেস করলামঃ
“ মাহদী কি সত্য ? ”
সে বললোঃ হ্যাঁ
আমি বললামঃ সে কোন গোত্রের ?
সে বললোঃ ক্বুরাইশ
আমি বললামঃ সে কোন দলের ?
সে বললোঃ বান হাশিমের দল
আমি বললামঃ কোন পরিবারের ?
সে বললোঃ আব্দুল মোত্তালিবের বংশ থেকে ।
আমি বললামঃ তাদের কোন জনের কাছ থেকে ?
সে বললোঃ ফাতেমার বংশ থেকে
আমি বললামঃ তার কোন সন্তান থেকে ?
সে বললোঃ যথেষ্ঠ হয়েছে ।
লেখক বলেনঃ হাশিম ছিলো আবদে মুনাফ , যে ছিলো কুসাই এর সন্তান , তার পিতা কাল্ব , তার পিতা মুররা , তার পিতা কা ’ ব , তার পিতা লুই , তার পিতা গালিব , তার পিতা পাহর , তার পিতা মালিক , তার পিতা নাযর , তার পিতা কেনান ।
জামেউল লতিফ এ এসেছেঃ হাশিমের নাম ছিলো আমরুল আলা এবং এ নামে তাকে ডাকার কারণ ছিলো দুর্ভিক্ষের সময় সে তার গোত্রকে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতো । উদারতায় ও দানশীলতায় সে এতই উপরে উঠেছিলো যে সে পশু ও পাখিদের খাবার সরবরাহ করার জন্য পাহাড়ের উপর উট জবাই করে দিতো । যখনই মক্কায় কোন দুর্ভিক্ষ দেখা দিতো সে এর অধিবাসীদের খাওয়াতো নিজের অর্জিত সম্পদ থেকে এবং মক্কার ধনীদেরকে দরিদ্রদের জন্য সম্পদ দান করতে উদ্বুদ্ধ করতো যতক্ষণ না আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণ করতেন ।
এরপর সে সিরিয়াতে যায় ও সিজারের (বাদশাহ ) সাথে দেখা করে িএবং তার কাছ থেকে কুরাইশদের স্বাধীনতার জন্য নিরাপত্তাপত্র সংগ্রহ করে । সে আব্দুল মোত্তালিবকে উয়েমেনের দিকে পাঠায় এবং সে জায়গার রাজা থেকে একটি বিশ্বস্তদার সনদ সংগ্রহ করে । এরপর সে ক্বুরাইশদের ব্যবসায়ীদের শীত ও গ্রীষ্মে ব্যবসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতে আদেশ দেয় । এভাবে তারা গ্রীষ্মে সিরিয়ার দিকে যেতো এবং শীতে ইয়েমেনের দিকে যেতো । এভাবেই তাদের জীবন ধারণের উপকরণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলো হাশিমের উসিলায় । আল্লাহ তাদেরকে ক্ষুধা ও প্রাণভয় থেকে রক্ষা করলেন । আবদে মানাফ ছিলেন হাশিমের পিতা যার নাম দেয়া হয়েছিলো ‘ চৌদ্দতম রাতের চাঁদ ’ তার সুন্দর চেহারা ও উদারতার জন্য । তারপর কুসাই তার উত্তরাধিকারী হয় এবং শাসন কাজ ও হাজীদের পানি খাওয়ানোর দায়িত্ব তার কাছে ন্যস্ত হয় । কুসাইয়ের আরও নাম ছিলো যেমন , যাইদ ও ইয়াজিদ । তাকে কুসাই ডাকা হত এজন্য যে সে ও তার মা ফাতিমা , যে ছিলো সাদ এর কন্যা , বনি উযরার গোত্রকে ছেড়ে তার চাচাদের সাথে বাস করতে শুরু করে এবং মক্কা থেকে দূরে সরে যায় । তাই তাকে কুসাই ডাকা হতো যা قاصی শব্দ থেকে নেয়া যার অর্থ ‘ দূর ’ ;‘ জমা করা ’ - ও এর একটি অর্থ , কারণ সে যখন বড় হয়ে উঠে সে মক্কায় ফেরত আসে এবং মরুভুমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কুরাইশদের একত্র করে মক্কায় আনে এবং এরপর ‘ খাযাই ’ গোত্রকে সেখান থেকে বহিষ্কার করে ।
মাহদী ( আঃ ) আব্দুল মোত্তালিবের বংশ থেকে
‘ ইকদুদ দুরার ’ এর লেখক সপ্তম অধ্যায়ে একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ থেকে যেমন ইমাম আবু আব্দুল্লাহ ইবনে মাজার ‘ সুনান ’ , হাফেজস আবুল কাসেম তাবারানীর ‘ মু ’ জাম ’ থেকে এবং হাফেজ আবু নাঈম ইসফাহানী এবং আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেন , যিনি বলেছেনঃ নবী (সাঃ ) এরশাদ করেছেনঃ
“ আমরা সাত জন -আমার ভাই আলী , আমার চাচা হামযা , জাফর , হাসান , হোসেইন , মাহদী এবং আমি আব্দুল মোত্তালিবের সন্তান বেহেশতের সর্দার । ”
লেখক বলেনঃ সাদ ইবনে মাসীর থেকে ক্বাতাদা যে হাদীস বলেছেন তা বিষয়টিকে চিহ্নিত করে । ‘ জামেউল লতিফ ’ এ লেখা আছেঃ আব্দুল মোত্তালিবের নাম ছিল ‘ শাইবাতুল হামদ ’ এবং কোন কোন সময় তাকে আমের নামেও ডাকা হতো । তাকে শাইবাতুল হামদ বলা হত কা্রণ তার চুলে সাদা নিদর্শন ছিলো । তাকে আবুল হারিসও বলা হত কারণ তার আবুল হারিস নামের একটা ছেলে ছিল । তাকে আব্দুল মোত্তালিব বলা হত কারণ তার পিতা হাশিম মক্কায় মৃত্যুশয্যায় থাকাকালীন তার ভাই , মোত্তালিবকে বলেছিলঃ ‘ ইয়াসরিবে তোমার আবদের (চাকর ) যত্ন নিও ’ তাই তখন থেকে তাকে আব্দুল মোত্তালিব বলা হয় । ”
কেউ কেউ বলেন যে যখন তার চাচা তাকে মক্কায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তার চেহারা খু্ব ভাল ছিলো না । মোত্তালিবকে তার ভাতিজার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে তাকে ভাতিজা পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করত এবং বলতঃ সে আমার ‘ দাস ’ । পরে যখন মক্কায় তার চেহারা ভাল হয়ে গেল মোত্তালিব প্রকাশ করলেন সে তার ভাতিজা ছিল । বলা হয় তার ছিল ফ্যাকাশে চেহারা এবং যখন সে চাচা মোত্তালিবের সাথে মক্কায় গেল লোকেরা মনে করল সে ছিল তার চাকর এবং বলত মোত্তালিব একজন আবদ বা চাকর এনেছে । এভাবে সে আব্দুল মোত্তালিব নামে সুপরিচিত হয়ে উঠে ।
মাহদী(আঃ ) আবু তালিবের বংশ থেকে
‘ ইকদুদ দুরার ’ এর লেখক 4র্থ অধ্যায়ের 3নং ভাগে সাইফ ইবনে উমাইরা থেকে বলেন , যিনি বলেছেনঃ “ আমি জাফর মানসুরের সাথে ছিলাম । তিনি আমাকে এভাবে বললেনঃ ‘ হে সাইফ এটা অবশ্যই ঘটবে যে , একজন আহবান কারী আকাষ থেকে ডাকবে , একজন মানুষের পক্ষ থেকে যে আবু তালিবের বংশধর । ’ আমি বললামঃ ‘ আপনার জন্য আমি উৎসর্গ হই হে আমিরুল মুমিনীন । আপানি কি হাদীস বর্ণনা করছেন যা এইমাত্র বললেন ?; তিনি বললেনঃ হ্যাঁ , আমি তার নামে কসম করে বলছি যার হাতে আমার প্রাণ । আমি ঠিক সেই কথা বর্ণনা করেছি যা আমার কান শুনেছে । ’ আমি বললামঃ কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি এরকম হাদীস শুনিনি । তিনি বললেনঃ হে সাইফ , নিশ্চয় তিনি সত্য এবং যে সময় এ ঘটনা ঘটবে আমার (তার ডাকে )সাড়া দিতে অন্যের চাইতে অগ্রবর্তী থাকব । আর মাহদী হবে আমাদের চাচাতো ভাইদের একজন থেকে । আমি বললামঃ ‘ ফাতিমার বংশ থেকে ? ’ তিনি বললেনঃ হে সাইফ আমি যদি আবু জাফর (হযরত বাক্বির ) ছাড়া অন্য কারো কাছে তা শুনতাম আমি তা তোমার কাছে বলতাম না এবং নিশ্চয়ই এ বিষয়ে আমাকে বলেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি । ”
আমার ‘ সাবায়েক আল যাহাবে ’ পড়িঃ ইবনে ইসহাক্ব বলেন “ আবু তালিবের নাম ছিল আবদে মানাফ । অন্যদিকে হাকেম আবু আব্দুল্লাহ বলেনঃ আবু তালিবের নাম ও ডাক নাম একই । ”
তাযকেরাতুল আইম্মার লেখক লিখেছেনঃ “ তার বংশ পরিচয় সম্পর্কে আমার বলেছি যে সে আব্দুল মোত্তালিবের সন্তান এবং যখন আব্দুল মোত্তালিব মৃত্যুপথযাত্রী তিনি নবী (সাঃ ) কে আবু তালিবের কাছে সোপর্দ করেন । ”
মুহাম্মদ ইবনে সাদ ‘ তাবাক্বাত ’ বইতে ইবনে আব্বাস , মুজাহিদা , আ্তা , যাহরী এবং তাদের আরো উলামা থেকে বর্ণনা করেন যে আব্দুল মোত্তালিব ‘ আম -উল -ফীল ’ (হস্তি বর্ষের )-এর 2য় বর্ষে ইন্তেকাল করেন এবং নবী (সাঃ ) সে সময় আট বছর বয়সী ছিলেন । প্রকৃতপক্ষে আব্দুল মোত্তালিব ইন্তেকাল করেন একশ বিশ বছর বয়সে এবং তাকে হেজওয়ানে কবর দেয়া হয় । উম্মে আইমান বলেনঃ ‘ আমি দেখেছি নবী (সাঃ ) আব্দুল মোত্তালিবের কাফিনের নীচে হাটছেন ও কাদছেন যখন তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল । ’
অন্য আরেক বর্ণনায় পাওয়া যায় আব্দুল মোত্তালিব আশি বছর বয়সী ছিলেন যখন তিনি এ পৃথিবী ত্যাগ করেন । যাহোক প্রথম বক্তব্যটি বেশী সঠিক বলে মনে হয় ।
মুজাহিদ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছে যে ক্বাফা গোত্রের বনি মুযহাক্ব এর একদল লোক যখন নবী (সাঃ ) এর পায়ের ছাপ দেখলো তারা শিশুটিকে বলল ‘ আমরা পায়ের ছাপের এমন মিল আর দেখি নি যা নবীদের পায়ের ছাপের মত । তখন আব্দুল মোত্তালিব আবু তালিবের দিকে ফিরলেন এবং বললেনঃ ‘ তারা যা বলেছে তা শুনে রাখ , নিশ্চয় আমার এ সন্তানের এক রাজ্য হবে । ’
তখন থেকে , আবু তালিব যতটুকু সম্ভব উঠে দাড়ালেন আল্লাহর রাসূলকে সাহায্য করার জন্য এবং তিনি নিজের উপর দায়িত্ব মনে করলেন তার বিষয়ে তাকে সাহায্য করার জরন্য । এমন হল যে তিনি তার কাছ থেকে কখরোই বিচ্ছিন্ন হতেন না । তিনি তার প্রতি এতই আকর্ষিত ছিলেন যে তিনি তাকে তার নিজের ছেলেদের চাইতে অগ্রাধিকার দিতেন এবং শুধু তখনই ঘুমাতেন যখন হযরত তার পাশে থাকতেন । তিনি তাকে বলতেন তোমার চলা ফেরা ভাল এবং তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল । ’
ইবনে সাদ তাবাকাত বইতে লিখেছেনঃ একবার আবু তালিব রাসূলুল্লাহর (সাঃ ) সাথে ‘ যিল মুজায ’ -এ গেলেন । যখন রাসূল (সাঃ ) পিপাসার্ত হলেন তখন আবু তালিব বললেনঃ হে ভাতিজা , তুমি পিপাসার্ত হয়েছো অথচ কোন পানি নেই । ” এরপর নবী (সাঃ ) নীচে নেমে আসলেন ও পায়ের গোড়ালী দিয়ে মাটিতে আঘাত করলেন । খুব শীঘ্রই পানি ঠেলে বেরিয়ে এল এবং হযরত তা থেকে পানি পান করলেন । ’ ঐতিহাসিকরা লিখেছেন আবু তালিব হযরতকে সাহায্য করার জন্য উঠে দাড়িয়েছিলেন এবং প্রায়ই তার কাছ থেকে শত্রুদের তাড়িয়ে দিতেন । কুরাইশরা একদিন তার কাছে এলো এবং বললঃ তোমার ভাতিজা আমাদের খোদাদেরকে অপমান করেছে , আমাদের বড় বড় লোকদের পাগল বলেছে এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের পথভ্রষ্ট বলেছে । অতএব তাকে আমাদের কাছে সোপর্দ কর অন্যথায় আমাদের মাঝে যাদ্ধ হবে ।
আবু তালিব উত্তরে বললেনঃ তোমাদের মুখ চিরকালের জন্য বন্ধু হোক । আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি আমি কখনোই তাকে তোমাদের কাছে তুলে দিবো না । ’
তারা বললঃ “ ইমারা ইবনে ওয়ালিদ ইবনে মুগীরা কুরাইশদের মাঝে সবচেয়ে সুদর্শন ও মর্যাদাবান যুবক । তুমি তাকে তোমার সন্তান হিসেবে রাখতে পারমুহাম্মদের বদলে আর মুহাম্মদকে তুলে দাও আমাদের হাতে যেন আমার তাকে হত্যা করতে পারি । চলো আমরা আমাদের মানুষ বদলা বদলি করি । ”
আবু তালিব উত্তর দিলেনঃ “ তোমাদের উপর দুর্ভোগ আসুক । আল্লাহ তোমাদের চেহারা কালো ও অন্ধ করে দিক । আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি যে নিশ্চয় তোমরা অত্যন্ত খারাপ কথা বলেছ । তোমরা কি বলতে চাও আমি আমার সন্তানকে তোমাদের হাতে তুলে দেই যেনর তোমরা তাকে হত্যা কর এবং এর বদলে তোমরা আমাকে তোমাদের সন্তান দিবে যেন আমি তার যত্ন নেই ! আল্লাহর শপথ করে বলছি তা যদি করি তাহলে আমি একজন অত্যন্ত খারাপ লোক হবো । ”
এরপর তিনি বললেনঃ “ আমি চাই তোমরা বাচ্চা উটকে তার মা থেকে আলাদা কর যদি মা উট অন্য বাচ্চার প্রতি আকৃষ্ট হয় আমি মুহাম্মদকে তোমাদের হাতে তুলে দিব । ” এরপর তিনি একটি কবিতা পড়লেন ।
জন্মের আট বছর পর থেকে তার রিসালাত প্রকাশের জন্য নিয়োগ প্রাপ্তির দশম বছর পর্যন্ত প্রায় চুয়াল্লিশ বছর আবু তালিব হযরত (সাঃ ) এর সমর্থনে উঠে দাড়িয়েছেন এবং তার ক্ষতি করা শত্রুদেরকে বাধা দিয়েছেন । তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার যত্ন নিতে তিনি কোন প্রচেষ্টা বাকী রাখেন নি ।
‘ নূরুল আবসার ’ -এ লেখক আবু তালিবের মৃত্যুর তারিখ বলেছেন 1লা যিলক্বাদ , অর্থনৈতিক অবরোধের পরে । ডা বজায় ছিল আট মাস একুশ দিন ।
মাওয়াহেব -উল -লাদনিয়া ’ তে উল্লেখ করা হয়েছে যে আবু তালিবের মৃত্যুর সময় বয়স ছিলো সাতাশি বছর । একই বছরে উম্মুল মুমিনীন খাদিজা ইন্তেকাল করেন এবং নবী (সাঃ ) এ বছরকে দুঃখের বছর (আম উল -হুযন ) নাম দেন ।
আবু তালিব সম্পর্কে আরো জানার জন্য ইতিহাস বিইগুলো যেমন , ’ সিরাতে ইবনে হিশাম ও তারিখে তাবারী ’ ও সমকালের লেখা পড়তে পারেন । বিশেষ করে যাইনি দেহলানের ‘ বাগইয়াত আত -তালিব ফী আহওয়াল আবি তালিব ’ পড়তে পারেন । একই লেখক আল ফুতুহাত আল ইসলামিয়া বইটিও লিখেছেন । এ ছাড়া আমাদের চাচাতো ভাই সাইয়্যেদ মুহাম্মদ আলী শারাফুদ্দীন আমালীর লেখা শেইখ উল -আবতাহ ’ পড়তে পারেন যা এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালবই হিসেবে পরিচিত ।
মাহদী(আঃ ) মুহাম্মদ (সাঃ ) এর বংশ থেকে
আবু দাউদ তার সহীহ -র 4র্থ খণ্ডে (87 পৃষ্ঠায় ) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ ) বলেছেনঃ
“ যদি পৃথিবীর জীবন এর একদিনেরও বেশী না থাকে আল্লাহ দিনটিকে এত দীর্ঘ করে দিবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি আমার বংশ থেকে একজনকে নিয়োগ দিবেন । ”
উক্ত বইয়ের 81 পৃষ্ঠায় আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ ) বলেছেনঃ ‘ মাহদী আমার থেকে । ’
নূরুল আবসার এর লেখক 230 পৃষ্ঠায় তিরমিযী থেকে বর্ণনা করেন একই ধরনের একটি হাদীস । এরপর তিনি লিখেছেন তিরমিযী মনে করেন এ হাদীসটি দৃঢ় ও সত্য এবং তাবারানী ও অন্যান্যরাও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ।
ইবনে হাজার তার সাওয়ায়েক্ব এর 98 পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে রুইয়ানি , তাবারানী ও অন্যান্যরা নবী (সাঃ ) থেকে এ ধরণের একটি হাদীস এনেছেন যেঃ ‘ মাহদী আমার বংশ থেকে । ’
ইসাফুর রাগেবীন এর 149 পৃষ্ঠায় ও নূরুল আবসার এর 230 পৃষ্ঠায় নবী (সাঃ ) এর একটি হাদীস শিরভিয়া থেকে বর্ণিত হয়েছে , যে বর্ণনা করেছে হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে ।
এছাড়া নূরুল আবসার এর লেখক 231 পৃষ্ঠায় আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেছেনঃ “ আমি নবী (সাঃ ) কে জিজ্ঞেস করলাম মাহদী আমাদের থেকে আসবে কি না । মুহাম্মদের বংশধর নাকি অন্যদের মাঝ থেকে ? তিনি উত্তরে বললেনঃ সে আমাদের থেকে ।
অন্য একদল বলেঃ নবীর (সাঃ )ال ‘ আল ’ হলো তারা যাদের যাকাত নেয়া হারাম এবং এর বদলে খুমস (এক পঞ্চমাংশ আয়কর )অনুমোদিত ।
আরেকদল বলেঃال (আল ) বলতে ঐ ব্যক্তিদের বোঝায় যারা ধর্ম অনুসরণ করে ও তার আচার ব্যবহার অনুসরণ করে ।
যাহোক , প্রথম অভিমতটি সঠিক এ কারণে যে একটি হাদীস রয়েছে হোসাইন ইবনে মাসুদ বাগউইর ‘ তাফসীরে সুন্নাতে রাসূল ’ কিতাবে (যা ঐক্যমতের হাদীসগুলোর সংগ্রহ ) এবং তিনি আব্দুর রহমান ইবনে লাইলী থেকে বর্ণনা করেন যিনি বলেছেনঃ কা ’ ব ইবনে আজযা আমার সাথে সাক্ষাত করলো এবং বলল , আমি কি তোমাকে কিছু দিব যা আমি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ )বলতে শুনেছি ? আমি বললামঃ হ্যা , আমাকে দাও । ’
সে বললঃ আমি রাসূলকে জিজ্ঞেস করলাম আমি কিভাবে আহলুল বায়েতের উপর দরুদ পেশ করব । রাসূলুল্লাহ (সাঃ ) বললেনঃ
اللهم صل علی محمد و علی آل محمد کما صلیت علی ابراهیم و آل ابراهیم وبارک علی محمد و علی آل محمد کما بارکت علی ابراهیم و علی آل ابراهیم انک حمید مجید.
“ হে আল্লাহ , শান্তি বর্ষণ করুন মুহাম্মদ ও তার বংশের উপর যেভাবে আপনি শান্তি বর্ষণ করেছেন ইবরাহিম ও তার বংশের উপর এবং বরকত নাযিল করুন মুহাম্মদ ও তার বংশের উপর যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহিম ও তার বংশের উপর । ”
এরপর তিনি বলেনঃ নবী (সাঃ ) তার আহলুল বায়েতকেال (আল )বলেছেন ।এভাবে দুটো একই অর্থ বহন করে এবং হযরত একটি শব্দের সাথে অন্য শব্দটির অদল -বদল করেন এমনভাবে যে তার ال হল তার আহলুল বায়েত এবং তার আহলুল বায়েত হল তার ال ।অতএব এর অর্থ হল একই ।
দ্বিতীয় অভিমতটি সঠিক একটি হাদীসের কারণে যা হাদীস বিশেষজ্ঞরা তাদের হাদীস বইতে এনেছেন । এছাড়া ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ , আবু দাউদ ও নাসাঈ একমত যে হাদীসটি সত্য এবং তাদের প্রত্যেকেই তাদের সহীহ -তে আব্দুল মোত্তালিব ইবনে রাবিয়া ইবনে হারিস থেকে বর্ণনা করেছেনঃ
আমি নবী (সাঃ )-কে বলতে শুনেছিঃ ‘ সাদকা ময়লা তা নয় , মুহাম্মদ ও তার আলের জন্য তা থেকে খাওয়া অনুমোদিত নয় ।
এছাড়া তারা তাদের অভিমতকে সমর্থন দিয়েছেন একটি হাদীস দিয়ে যা মালিক ইবনে আনাস ‘ মূসা ’ -তে বর্ণনা করেছেন নবী (সাঃ ) থেকে যে তিনি বলেছেনঃ সাদকা মুহাম্মদের বংশের জন্য অনুমোদিত নয় , কারণ তা লোকদের ময়লা । ” এভাবে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে তার আলের উপর সাদকা নিষিদ্ধ করেছেন এবং ডাদের উপর সাদকা গ্রহণ নিষিদ্ধ তারা হলেন বনি হাশিম ও বনি আব্দুল মোত্তালিব ।
যায়েদ ইবনে আরক্বামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কারা রাসূল (সাঃ )-এর বংশ যাদের উপর আল্লাহ সাদকা গ্রহণ নিষিদ্ধ করেছেন , তিনি বললেনঃ আলীর বংশ , জাফরের বংশ , আব্বাসের বংশ এবং আক্বিলের বংশ । আর দ্বিতীয় অভিমতটি প্রথমটির নিকটতর ।
যারা তৃতীয় মতটি দেয় তাদের কারণ হলো আল্লাহর এ কথাঃ
) إِلَّا آلَ لُوطٍ إِنَّا لَمُنَجُّوهُمْ أَجْمَعِينَ (
তবে লুতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয় , আমরা অবশ্যই এদের সবাইকে রক্ষা করবো । ” (সূরা হিজরঃ59 )
“ লুতের বংশ ছাড়া ;” তাফসীরকারকদের মাঝে ঐক্যমত রয়েছে যে এ আয়াতেال (বংশ ) হলো তারা যারা তার দিকে ঝুকে ছিলো ও তার পথ অনুসরণ করেছিল ।
সবগুলো অভিমত দৃষ্টির সামনে রাখলে স্পষ্ট হয় যেال হচ্ছে আহলুল বায়েত , যাদের উপর যাকাত গ্রহণ নিষিদ্ধ এবং তারা তার ধর্ম অনুসরণ করেছে এবং তার পথ অনুসরণ করেছে ।
মাহদী (আঃ) নবীর (সাঃ) বংশ থেকে
আবু দাউদ তার ‘ সহীহ ’ র চতুর্থ খণ্ডের 87 পৃষ্ঠায় উম্মে সালামা থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ মাহদী আমার বংশ থেকে ” ।
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ এর 147 পৃষ্ঠায় নবী (সাঃ) থেকে একই রকমের একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে নাসায়ী , ইবনে মাজাহ , বায়হাক্বী ও অন্যান্যদের থেকে।
ইবনে হাজার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এর 98 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : ‘ আবু নাঈম নবী (সাঃ) থেকে একটি হাদীস এনেছেন যে , “ নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার বংশ থেকে একজন মানুষকে পাঠাবেন। ” এরপর তিনি বললেন : “ সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে। ”
একই হাদীস এসেছে ‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ 149 পৃষ্ঠায়। একই বইতে লেখক 97 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : আবু দাউদ , তিরমিযী এবং ইবনে মাজাহ নবী (সাঃ) থেকে একটি হাদীস এনেছেন যা এরকম : “ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে নিশ্চয় আল্লাহ আমার বংশ থেকে একজন মানুয়ের আবির্ভাব ঘটাবেন । ”
অন্য এক হাদীসে নবী (সাঃ ) বলেছেনঃ সে আমার বংশ থেকে যে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিল । ”
একই হাদীস রয়েছে ‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ এর 147 পৃষ্ঠায় । ‘ মাতালিবুস সূল ’ এর লেখক লিখেছেনعترة ইতরাত (বংশ ) এর অর্থ আরবীতেعشیرة (পরিবার ) এবং অন্যরা বলেনذرّیة জুররিয়াত (সন্তান ) ।
এরপর তিনি বলেন : দু ’ টো অর্থই তাদের মাঝে পাওয়া যায় কারণ তারা তার পরিবার ও একই সাথে সন্তান। যাহোক তারাعشیرة ও ইতরাত (পরিবার) হিসেবে বিবেচিত কারণ নিকট রক্ত সম্পর্কীয়। তারা তারذرّیة জুররিয়াত (সন্তান) হিসেবে বিবেচিত কারণ তারা তার কন্যার সন্তান। কারণ আল্লাহ ইবরাহিম (আঃ) সম্পর্কে বলেন :
) وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ (84) وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِنَ الصَّالِحِينَ (
“ আর আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়া ’ কুব ,তাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম ; এর আগে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ , সুলায়মান ও আইউব , ইউসুফ , মূসা ও হারুনকেও ; আর এভাবেই সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করি এবং যাকারিয়া , ইয়াহইয়া , ঈসা এবং ইলইয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। তারা সবাই সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত । ” (সূরা আন ’ আমঃ 84-85)
এভাবে আল্লাহ সবহানাহু ওয়া তায়ালা হযরত ঈসা সহ উল্লেখিত ব্যক্তিদেরকে হযরত ইবরাহিমের সন্তানদের মধ্যে গন্য করেছেন যেখানে হযরত ইবরাহিমের সাথে হযরত ঈসার সম্পর্ক শুধু তার মায়ের মাধ্যমে এবং আর কারো মাধ্যমে নয়।
এরপরে তিনি আরো লিখেছেন : বর্ণিত হয়েছে যে শোবি নামে একজন সুন্নী আলেম হাজ্জাজ ইবনে ইউসফূ সাক্বাফীর সময়ে বাস করতো। সে ছিলো হাসান ও হোসেইনের পেমিক। তা এমনই যে যখনই সে তাদের স্মরণ করতো , বলতো : “ এ দু ’ জন আল্লাহর রাসূলের সন্তান। ” পরে কিছু লোক হাজ্জাজকে এ বিষয়ে জানিয়ে দেয়। যার ফলে সে খুবই রাগান্বিত হয় এবং তাকে অভিশাপ দিতে থাকে। একদিন তাকে তার এক মজলিশে ডাকা হলো যেখানে বসরা ও কুফার সম্মানিত ব্যক্তিগণ , আলেমরা ও ক্বুরাইশরা উপস্থিত ’ ছিলো। শোবি প্রবেশ করলো ও সালাম দিলো কিন্তু হাজ্জাজ কোন গুরুত্বই দিলো না এবং তার সালামের উত্তরও দিলো না অথচ শোবির সেই অধিকার ছিলো। যখন সে বসলো হাজ্জাজ বললো : “ হে শোবি , তুমি কি জানো আমি তোমার সম্পর্কে কী শুনেছি যা নিশ্চয়ই তোমার নির্বুদ্ধিতা প্রমাণ করে ? ”
শোবি বললো : ‘ সেটি কী ? ’ হাজ্জাজ বললো : তুমি কি জানো না যে পুরুষদের পুত্র সন্তানরা হলো তারা যারা তার মিত্র এবং রক্তের সম্পর্ক শুধু পিতার মাধ্যমে। তাই তুমি কিসের উপর ভিত্তি করে বলছো যে আলীর সন্তানরা নবী (সাঃ) এর সন্তান! তাদের মা ছাড়া তাদের কি আর কোন সম্পর্ক আছে রাসূলের সাথে একথা বিবেচনা করে যে রক্তের সম্পর্ক কন্যাদের মাধ্যমে নয় বরং তা পিতার দিক থেকে। শোবি কিছু সময়ের জন্য মাথা নীচু করে রইলো ঐ পর্যন্ত যখন হাজ্জাজ তার অস্বীকৃতিতে সীমালংঘন করলো এবং মজলিশের অন্যান্যদের এ বিষয়ে জানালো। শোবি চুপচাপ রইলো এবং হাজ্জাজ তাকে চুপ থাকতে দেখে আরো তিরষ্কার করতে থাকলো। এরপর শোবি তার মাথা উঁচু করলো এবং বললো : ‘ হে আমির , আমি আপনাকে আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাহতে একজন অজ্ঞ বক্তা ছাড়া কিছু দেখছি না যে সেগুলো নিয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছে , হাজ্জাজের রাগ বৃদ্ধি পেলো সে শোবিকে বললো : “ অভিশাপ তোমার উপর , তোমার কত বড় সাহস তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলো! ”
শোবি উত্তর দিলো : “ হ্যাঁ , তারা আপনার মজলিশে উপস্থিত আছে- মিশর থেকে আসা কোরআনের ক্বারী এবং কিতাবের জ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তিগণ , যারা আপনার কাছে আরো প্রিয় তারা সবাই জানে আমি কি বলছি। এটি কি ঠিক নয় যে আল্লাহ যখন তাঁর দাসদের সম্বোধন করতে চান তখন তিনি বলেন : ‘ হে আদমের সন্তানগণ অথবা হে ইসরাইলের সন্তানগণ। ’ ইবরাহিম সম্পর্কে আল্লাহ বলেনو من ذرّیّته (এবং তার সন্তানদের থেকে) ঐ পর্যন্ত যখন ইয়াহইয়া ও ঈসার কথা বলেন। অতএব , হে হাজ্জাজ কিভাবে আপনি আদম , ইবরাহিমের ও ইসমাইল সাথে ঈসার সম্পর্ক দেখেন ? তা কি তার পিতার মাধ্যমে নাকি পূর্বপুরুষদের মাধ্যমে ? সে কি তাদের সাথে তার মা মরিয়মের মাধ্যমে যুক্ত নয় ? এছাড়া সত্যবাদী বর্ণনাকারীদের বর্ণনা অনুযায়ী হাসান সম্পর্কে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ নিশ্চয়ই আমার সন্তান (এবং তিনি হাসানের দিকে ইঙ্গিত করলেন) একজন সাইয়্যেদ (সর্দার)। ” যখন হাজ্জাজ এ যুক্তি শুনলো সে লজ্জায় মাথা নীচু করলো। পরবতীর্তে সে শোবির প্রতি দয়া ও ভদ্রতা দেখিয়েছে এবং মজলিসে উপস্থিত ’ সকলের সামনে লজ্জা পেয়েছে।
এখন এটি পরিষ্কার হলো -ইতরাত (বংশ) হচ্ছে নবীর (সাঃ) সন্তান , এবং পরিবার , সবগুলো অর্থই তাদের প্রতি পযোজ্য।
মাহদী (আঃ) নবীর (সাঃ) পরিবার থেকে
আবু দাউদ তার সহীহর 4র্থ খণ্ডে 17 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস এনেছেন যা বর্ণনা করেছেন হযরত আলী (আঃ) নবী (সাঃ) থেকে : “ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে , নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভার্ব ঘটাবেন। ”
তিরমিযী তার ‘ সহীহ ’ র দ্বিতীয় খণ্ডে 270 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস এনেছেন আবু হুরায়রা থেকে যে নবী (সাঃ) বলেছেন :
“ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ সে দিনটিকে লম্বা করে দিবেন যতক্ষণ না আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হয়। ”
এরপর তিনি বলেনঃ এটি একটি ভালো ও সত্য হাদীস। এছাড়া একই ধরনের একটি হাদীস সামান্য পাথর্ক্যে বর্ণনা করেছেন ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এর 97 পৃষ্ঠায় ও শেইখ শাবান তার ‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ 148 পৃষ্ঠায় আবু দাউদ ও তিরমীযি থেকে।
‘ হুদাল ইসলাম ’ এর 25 তম সংস্করণে রয়েছে : ইবনে মাজাহ আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীস এনেছেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ মাহদী আমার পরিবার থেকে। ”
শেইখ শাবান তার ‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর 148 পৃষ্ঠায় এবং ইবনে হাজার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এর 99 পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে আহমাদ , আবু দাউদ , তিরমিযি এবং ইবনে মাজাহ নবীর (সাঃ) একটি হাদীস এনেছেন : “ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটাবেন। ” অন্য হাদীসগুলোতে আমরা পাই ‘ আমার পরিবার। ’
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 97 পৃষ্ঠায় এবং শেইখ শাবান তার ‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর 148 পৃষ্ঠায় লিখেছেন আহমাদ , আবু দাউদ এবং তিরমিযী নবীর (সাঃ) একটি হাদীস এনেছেন :
“ পৃথিবী যাবে না অথবা সম্ভবত তিনি বলেছেন : পৃথিবীর অস্তিত্ব বিলীন হবে না যতক্ষণ না আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তি আসে ও শাসন করে। ”
‘ নূরুল আবসার ’ এর লেখক 231 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস এনেছেন আবু দাউদ থেকে যিনি বর্ণনা করেছেন যার-ইবনে-আব্দুল্লাহ থেকে যে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ পৃথিবী নিষ্পন্ন হবে না যতক্ষণ না আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তি আসে এবং আরবদের মাঝে শাসন করে। ” এরপর তিনি বললেন : “ সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে। ”
একই বইতে 229 পৃষ্ঠায় লেখক লিখেছেন : আবু দাউদ আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে নবী (সাঃ) বলেছেন : “ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ আমার পরিবার থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটাবেন এবং পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
‘ মাতালিবুস সূল ’ - এর লেখক লিখেছেন : কেউ কেউ বলেছেন ‘ আহলুল বাইত ’ বলতে তাদের বোঝায় যারা উত্তরাধীকার লাভে পরস্পর সম্পর্কে নিকটে। অন্যরা বলেন ‘ আহলুল বাইত ’ তারা যারা এক গর্ভে একত্রিত হয়। অন্যরা বলে আহলুল বাইত তারা যারা তার সাথে যুক্ত রক্ত সম্পর্কে ও আত্মীয়তায়। এসব অর্থ তাদের মাঝে পাওয়া যায় কারণ তাদের বংশধারা ফিরে যায় নবীর (সাঃ) দাদা আব্দুল মোত্তালিব পর্যন্ত ।
এছাড়া তারা তার [নবীর (সাঃ)] সাথে এক গর্ভে একত্রিত হয়েছে এবং তারা তার সাথে যুক্ত রক্তের সম্পর্কে ও আত্মীয়তায়। এভাবে প্রকৃতপক্ষে ‘ আলে ’ (বংশ) ও ‘ আহল ’ (আহলুল বাইত) একই , তারা অর্থে পাথর্ক্য রাখুক বা না রাখুক। এ দু ’ য়ের অর্থ নির্দিষ্ট হয়ে আছে।
মুসলিম তার ‘ সহীহ ’ -তে সাইদ ইবনে হাসান থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন : আমি হাসাইন ইবনে সিরা ও উমর ইবনে মুসলিমের সাথে যাইদ ইবনে আরক্বাম এর সাক্ষাতে গেলাম। আমরা যখন বসলাম হাসাইন কথা বলা শুরু করলেন : ‘ হে যাইদ , নিশ্চয়ই , যেহেতু আপনার আমলনামায় অনেক ভালো কাজ জমা হয়েছে , নবীকে দেখেছেন , তার কাছ থেকে হাদীস শুনেছেন তার পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তার পিছনে নামাজ আদায় করেছেন তাই আমাদের কাছে বর্ণনা করুন আপনি নবী (সাঃ) এর কাছ থেকে কী শুনেছেন। ’
যাইদ বললেন : ‘ হে ভাই , নিশ্চয়ই আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং আমার স্মৃতিশক্তি কমে গেছে। এর ফলে আমি নবী (সাঃ) থেকে যা অর্জন করেছিলাম তার এক অংশ আমি ভুলে গেছি। তাই গ্রহণ করো আমি যা তোমাদের কাছে বর্ণনা করি এবং আমাকে বিরক্ত করো না যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করছি না সে বিষয়ে। ”
এরপর তিনি বললেন : ‘ একবার নবী (সাঃ) “ হেমা ’ আ ” নামে এক জায়গার কাছে দাড়ালেন যা মক্কা ও মদীনার মাঝামাঝি এবং একটি খোতবা দান করলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগানের পর জনতাকে উপদেশ দিলেন। তিনি বললেন : “ হে জনতা , আমি একজন মানুষ এবং মনে হচ্ছে আমার রবের দূত (আযরাইল) আসবে এবং আমার প্রাণ নিয়ে যাবে। আমি তোমাদের মাঝে দু ’ টো মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি। তাদের প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব যাতে তোমরা পাবে হেদায়েত ও আলো। তাই আল্লাহর কিতাবকে ধরো ; তিনি বললেন : অন্যটি আমার আহলুল বাইত। আমি আমার আহলুল বাইত সম্পর্কে তোমাদের আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে তাদের বিষয়ে আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তখন হাসাইন বললো : ‘ হে যাইদ ’ , কারা তার আহলুল বাইত , তার স্ত্রীরা কি আহলুল বাইত ? তিনি বললেন : না , তার আহলুল বাইত তারা যাদের উপর যাকাত (গ্রহণ) হারাম। ’
মাহদী (আঃ) নিকটাত্মীয় থেকে
যখন প্রমাণিত হলো মাহদী (আঃ) নবীর (সাঃ) সন্তান , বংশ এবং পরিবার এবং আলী , ফাতেমা , হাসান এবং হোসেইনের সন্তান তখন তা এমনিতেই প্রমাণ করে যে সেذوی القربی নিকটাত্মীয় বা জ্ঞাতি যাদের জন্য নিখাঁদপ্রেম সবার জন্য বাধ্যতামূলক।
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 106 পৃষ্ঠায় বুখারী ও মুসলিম থেকে বর্ণনা করেন : ‘ ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে কাদেরকে আয়াতে কুরবাতে আল ক্বুরবা বলা হয়েছে ? তখন তিনি বলেন : তারা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সন্তান। ’
‘ মাতালিবুস সূল ’ - এর লেখক ইমাম আল হাসান আলী ইবনে আহমাদ ওয়াহাদীর তাফসীর থেকে বর্ণনা করেন (ইবনে আব্বাস বলেছেন) : যখন এ আয়াত
) قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى (
“ বলুন তোমাদের কাছে এর (রিসালাত) বিনিময়ে কিছুই চাই না শুধু রক্তজ বংশের ভালোবাসা ছাড়া। ” (সূরা আশ শুরাঃ 23)
নাযিল হয় তখন জিজ্ঞাসা করা হলো : ‘ ইয়া রাসূলুল্লাহ , এরা কারা যাদেরকে ভালোবাসার জন্য আমাদের আদেশ করা হয়েছে ?
নবী (সাঃ) উত্তর দিলেন : “ আলী , ফাতেমা ও তাদের সন্তানরা। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এর 101 পৃষ্ঠায় এবং কুনদুযী তার ‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ তের 106 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস এনেছেন [একই রকম] উপরোক্ত আয়াতের অধীনে। বর্ণনা করেছেন তাবরানীর ‘ মুয়াজাম ’ তাফসীর ই ইবনে আবু হাতিম , মানাজির ই হাতিম , ওয়াসিতই ওয়াহাদী , আবু নাঈমের হিলইয়াত ই আউলিয়া , তাফসীর ই সুয়ালাবি এবং ফারায়েদুস সিমতাইন থেকে।
ইবনে হাজার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এর 101 পৃষ্ঠায় ইমাম যায়নুল আবেদীন (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে , যখন তাকে বন্দী করা হয় তার পিতা হুসেইনকে (আঃ) হত্যা করার পর এবং সিরিয়া যাওয়ার পথে খারাপ মুখের কিছু লোক বলেছিলো : ‘ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর তোমাদের সবাইকে হত্যা করার কারণে , তোমাদেরকে দুরাবস্তায় ’ দেখার জন্য এবং বিদ্রোহের গোড়া ছিন্ন করার জন্য। ’ তিনি বলেছিলেন : তোমরা কি আল্লাহর কিতাব পড় নি যেখানে আল্লাহ বলেছেন :
) قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى (
“ বলুন তোমাদের কাছে এর (রিসালাত) বিনিময়ে কিছুই চাই না শুধু রক্তজ বংশের ভালোবাসা ছাড়া। ” (সূরা আশ শুরাঃ 23)
“ তারা বললো : ‘ তাذوی القربی কি তোমাদের বোঝায়! ? ” তিনি বললেন : ‘ হ্যা ’ ।
‘ মাতালিবুস সূল ’ এর লেখক বলেছেন : ‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 234 পৃষ্ঠায় ‘ ফেরদাউস ’ এর লেখক থেকে এবং তিনি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে বর্ণনা করেন যিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
“ নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা প্রত্যেক নবীর সন্তানদের তাদের পিঠ থেকে এনেছেন এবং আমার সন্তানদের এনেছেন আলী ইবনে আবি তালিবের পিঠ থেকে। ”
লেখক বলেন : এ মূল্যবান হাদীসটি সুস্পষ্টভাবে বলে যে আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) এবং ফাতেমা (আঃ) এর সন্তানরা প্রকৃতপক্ষে নবী (সাঃ) এর সন্তান এবং হাসান ও হোসেইনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। প্রকৃতপক্ষে প্রতীক্ষিত মাহদী এ পরিবার থেকেই এবং এর পবিত্র সন্তান। তাই তাকে নবী (সাঃ) এর সন্তান হিসেবে গণ্য করা হয়। (গবেষণা অনুযায়ী এবং সন্তান কথাটির পূর্ববর্তী ব্যাখ্যা অনুযায়ী) ।
‘ তুহুফুল উক্কুল ’ এর লেখক একটি দীর্ঘ হাদীস এনেছেন হযরত মূসা ইবনে জাফর (আঃ)-এর সাথে খলিফা হারুন-উর-রশীদের কথাবার্তা থেকে এবং আমরা এখানে শুধু ততটুকুই বর্ণনা করবো যতটুকু আমাদের আলোচনায় দরকার। তিনি লিখেছেন :
‘ হযরত মূসা ইবনে জাফর (আঃ) হারুনের কাছে গেলেন কারণ হারুন-উর-রশীদ তার কাছে জানতে চেয়েছেন সেসব বিষয়ে যেসব বিষয়ে কিছু লোক (মিথ্যা) অভিযোগ করেছে হারুনের কাছে তার বিরুদ্ধে। তাই তিনি একটি লম্বা কাগজ বের করলেন যাতে ছিলো তার শিয়াদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এবং তিনি তা পড়ে শোনালেন।
তখন হযরত বললেন : ‘ হে আমিরুল মুমিনীন , আমরা এমন এক পরিবার যারা এ ধরনের অভিযোগে আঘাতপাপ্ত হয়েছি এবং আল্লাহ সর্বক্ষমাশীল এবং যিনি ত্রুটি ঢেকে রাখেন এবং তিনি তার দাসদের কার্যকলাপ থেকে পর্দা তুলে ফেলা থেকে বিরত থাকেন শুধু তখন ছাড়া যখন তিনি তাদের হিসাব নিবেন ; সেদিন হবে এমনই একদিন যখন সম্পদ ও সন্তান কোন কাজে আসবে না এবং শুধু যে আল্লাহর সামনে প্রশান্ত হৃদয়ে আসবে সেই লাভবান হবে। এরপর তিনি বললেন : আমার পিতা আলী থেকে এবং তিনি নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন : ‘ যখনই আত্মীয়তার বন্ধুন অনুভূত হয় এবং অন্যের সাথে তা রক্ষা করা হয় তখন একটি আলোড়নের সৃষ্টি হয় এবং তা শান্ত হয়ে আসে ; যদি আমিরুল মুমিনীন (হারুন) আত্মীয়তা বজায় রাখা এবং আমার সাথে হাত মেলানো ভালো মনে করেন তাহলে তিনি তা করতে পারেন। ’
তখন হারুন তার সিংহাসন থেকে নেমে এলেন এবং তার ডান হাত লম্বা করে হযরতের হাত ধরলেন। তিনি তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তাকে তার পাশে বসালেন এবং বললেন : ‘ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি সত্যবাদী , এবং আপনার পিতা এবং দাদারাও সত্যবাদী ছিলেন। যখন আপনি এসেছিলেন আমি ছিলাম আপনার প্রতি সবচেয়ে কঠোর ব্যক্তি রাগের কারণে। আপনি যেভাবে আমার সাথে কথা বললেন এবং আমার সাথে হাত মেলালেন তাতে রাগের অনুভুতি আমার অন্তর থেকে চলে গেছে এবং আমি আপনার উপর সন্তষ্ট হয়ে গেছি। ’ এরপর তিনি কিছু সময় চুপ থেকে বললেন : ‘ আমি আপনাকে আব্বাস ও অন্যান্যদের সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই। কিসের ভিত্তিতে আলী নবীর (সাঃ) চাচা আব্বাসের চাইতে নবীর (সাঃ) উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার রাখে ? ’
হযরত বললেন : ‘ আপনি এ বিষয়ে আমাকে মার্জনা করবেন। হারুন বললো : ‘ আল্লাহর শপথ , আমি আপনাকে মার্জনা করবো না যতক্ষণ না আপনি আমার উত্তর দিবেন। ’
হযরত বললেন : ‘ যদি আপনি আমাকে মার্জনা না করেন তাহলে আমাকে নিরাপত্তা দিন। ’ তিনি বললেন : ‘ আমি আপনাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। ’ হযরত বললেন : ‘ অবশ্যই নবী (সাঃ) উত্তরাধিকারী হিসেবে তাকে নিয়োগ দেন নি যিনি হিযরত করতে সক্ষম ছিলেন অথচ হিযরত করেন নি। নিশ্চয়ই আপনার পিতা তাদের মাঝে ছিলো যারা ঈমান এনেছিলো অথচ হিযরত করেন নি এবং আলী ঈমান এনেছিলো এবং হিযরতও করেছিলো। আল্লাহ বলেন :
) وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُمْ مِنْ وَلَايَتِهِمْ مِنْ شَيْءٍ حَتَّى يُهَاجِرُوا (
“ আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু হিজরত করে নি তাদের ব্যাপারে তোমাদের কোন অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নেই যতক্ষণ পর্যন্ত তারা হিজরত না করে। ” (সূরা আনফালঃ 72)
হারুন ফ্যাকাশে হয়ে গেলো এবং বললো : ‘ কিসের ভিত্তিতে আপনি নবীর সাথে সম্পর্ক দাবী করেন এবং আলীর সাথে নয় অথচ আলী ছিলেন আপনার পিতা এবং নবী ছিলেন আপনার নানা! ? ’
হযরত বললেন : ‘ নিশ্চয়ই আল্লাহ ঈসা ইবনে মরিয়মকে তার খালিল হযরত ইবরাহিমের সাথে সম্পর্কিত করেছেন ঈসার মা- এর মাধ্যমে যিনি ছিলেন কুমারী। যেভাবে আল্লাহ বলেন :
) وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّا هَدَيْنَا وَنُوحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ (84) وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِنَ الصَّالِحِينَ (
“ আর আমি তাকে দান করেছিলাম ইসহাক ও ইয়া ’ কুব , তাদের প্রত্যেককে সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম ; এর আগে নূহকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম এবং তার বংশধর দাউদ , সুলায়মান ও আইউব , ইউসুফ , মূসা ও হারুনকেও ; আর এইভাবেই সৎকমপরায়ণদেরকে পুরুস্কৃত করি। এবং যাকারিয়া , ইয়াহইয়া , ঈসা এবং ইলয়াসকেও সৎপথে পরিচালিত করেছিলাম। তারা সকলে সজ্জনদের অন্তর্ভুক্ত । ” (সূরা আন ’ আমঃ 84-85)
এভাবে তিনি ঈসাকে ইবরাহিমের সাথে সম্পর্কিত করেছেন মরিয়মের মাধ্যমে। ঠিক যেভাবে তিনি সুলাইমান , আইয়ুব , ইউসূফ , মূসা ও হারুনকে তাদের পিতা ও মাতার সাথে সম্পর্কিত করেছেন। ঈসার মর্যাদা তার মাঝে এসেছে তার মায়ের দিক থেকে অন্য কোন ব্যক্তি ছাড়াই ; কোরআনে এসেছে :
) وَإِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَامَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلَى نِسَاءِ الْعَالَمِينَ (
‘ এবং যখন ফেরেশতারা বললো , হে মরিয়ম , নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে নির্বাচিত করেছেন এবং পবিত্র করেছেন এবং তিনি তোমাকে পৃথিবীর মহিলাদের উপর বাছাই করেছেন (ঈসার কারণে)। ’ (সূরা আলে ইমরানঃ 42)
তাই একইভাবে আল্লাহ ফাতেমাকে বাছাই করেছেন , তাকে পবিত্র করেছেন এবং তাকে পৃথিবীর সব মহিলার উপর শ্রেষ্ঠ বানিয়েছেন হাসান ও হোসেইনের জন্য , যারা বেহেস্তের দুই যুবক সর্দার। ”
মাহদী (আঃ) আলীর (আঃ) বংশ থেকে
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 494 পৃষ্ঠায় খাওয়ারাযমীর ‘ মানাক্বেব ’ থেকে (যার শেষ বর্ণনাকারী সাবেত ইবনে দিনার) যিনি সাইদ ইবনে জুবাইর থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে যিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
“ নিশ্চয়ই আলী আমার পরে আমার উম্মতের ইমাম এবং তার সন্তাদের মাঝ থেকে ‘ ক্বায়েম ’ আসবে , এবং যখন সে আবির্ভূত হবে সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে ও ইনসাফে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তার প্রথম অধ্যায়ে আবু দাউদের সুনান , তিরমিযীর ‘ জাম ’ এবং নাসাঈর ‘ সুনান ’ থেকে , যারা ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন : “ আলী (আঃ) তার সন্তান হোসেইনের দিকে তাকালেন এবং বললেন : নিশ্চয়ই আমার সন্তান একজন সাইয়্যেদ (সর্দার) যেভাবে নবী (সাঃ) তাকে নাম দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই সে তার পিঠ থেকে আবির্ভূত হবে। যার নাম হবে নবীর (সাঃ) নামের মত। সৃষ্টিতে সে নবীর (সাঃ) মতই কিন্তু নৈতিক চরিত্রে সে সেরকম নয়। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে। ”
একই বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখক বায়হাক্বীর ‘ বাআস ওয়া নুশুর ’ থেকে একই ধরনের একটি হাদীস এনেছেন , যেখানে আলী (আঃ) বলেছেন যে : ‘ আচার স্বভাবে সে নবীর মত নয়। ’
এছাড়া ঐ বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে লেখক লিখেছেন : ‘ আবু ওয়ায়েল বলেছেন : ‘ আলী তার ছেলে হোসেইনের দিকে তাকালেন ও বললেন :
“ নিশ্চয়ই আমার সন্তান একজন সাইয়্যেদ (সর্দার) যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে নাম দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই এক ব্যক্তি , যার নাম হবে নবীর নামের মত , আবির্ভূত হবে হোসেইনের পিঠ থেকে। সে আবির্ভূত হবে যখন জনগণ থাকবে অবহেলায় নিমজ্জিত ও অসচেতন। এমন এক সময় যখন সত্য থাকবে মৃত এবং নিপীড়ন চলবে জোরদার। আকাশ ও পৃথিবীর বাসিন্দারা তার আবির্ভাবে উল্লসিত হবে। তার থাকবে এক প্রশস্ত কপাল , লম্বা নাক , পশস্ত পেট , পশস্ত উরু , তার ডান গালে একটি চিহ্ন এবং তার সামনের দাতগুলো পরস্পর ফাকাঁ থাকবে। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
মাহদী (আঃ) ফাতেমার (আঃ) বংশ থেকে
আবু দাউদ তার ‘ সহীহ ’ র 4র্থ খণ্ডে 87 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : উম্মে সালামা বলেন : ‘ আমি নবী (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি : মাহদী আমার বংশ থেকে , ফাতেমার সন্তানদের মাঝ থেকে। ’
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 97 পৃষ্ঠায় এবং শেইখ শাবান ‘ ইসাফুর রাগেবীনে ’ -র 148 পৃষ্ঠায় এক হাদীস এনেছেন মুসলিম , আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনে মাজাহ ও বায়হাক্বী থেকে।
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ র লেখক 430 পৃষ্ঠায় ‘ মাশকুত আল মাসাবিহ ’ থেকে তা আবু দাউদ থেকে এবং তিনি উম্মে সালামা থেকে , যিনি বলেছেন : ‘ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি মাহদী আমার বংশ থেকে , ফাতেমার সন্তানদের মাঝ থেকে। ’
একই বইয়ের লেখক 223 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন আলী ইবনে হাল্লাল থেকে তিনি তার বাবা থেকে , যিনি বলেছেন : ‘ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাক্ষাত লাভের সম্মান অর্জন করেছিলাম যখন তিনি সুস্থ বোধ করছিলেন না এবং ফাতেমা তার পাশে বসে কাঁদছিলেন। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন :
“ হে আমার কন্যা , কেন তুমি কাঁদছো ? ’ তিনি বললেন : ‘ আমি ভয় পাচ্ছি আপনার পরে আমার উপর বিপদ নেমে আসবে। ’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : ‘ হে আমার আদরের কন্যা , আল্লাহ পৃথিবীর অধিবাসীদের উপর দেখাশোনার লাগাম দিয়েছেন। এরপর তাদের মধ্যে থেকে তোমার বাবাকে নিয়োগ দিয়েছেন এবং তাকে রিসালাত দান করেছেন। এরপর তিনি আরেকটি অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তোমার স্বামী হিসেবে আলীকে নির্বাচিত করেছেন এবং আমার কাছে ওহী পাঠিয়েছেন যেন আমি তোমাকে তার কাছে বিয়ে দেই। হে ফাতেমা আমরা এমন এক আহলুল বাইত (পরিবার) যে মহান আল্লাহ আমাদের সাতটি জিনিস দান করেছেন যা অন্যদের নেই। যারা আমাদের আগে এসেছে তারাও এবং যারা আমাদের পর আসবে তারাও এ সাতটি জিনিস পাবে না।
আমি তোমার পিতা , নবীদের মধ্যে শেষজন , এবং তাদের মধ্য থেকে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত এবং আমার ‘ ওয়াসী ’ হলো তোমার স্বামী যে ওয়াসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তাদের মধ্য থেকে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আমাদের শহীদ হামযা তোমার বাবার ও তোমার স্বামীর চাচা ও শহীদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তাদের মধ্য থেকে আল্লাহর সবচাইতে প্রিয়। এছাড়াও আছে সে যার আছে দু ’ টো পাখা , সেও আমাদের মাঝ থেকে। সে ফেরেশতাদের সাথে বেহেশতে উড়বে যে জায়গায় তার যেতে ইচ্ছা হয়। সে তোমার বাবার চাচাতো ভাই এবং তোমার স্বামীর ভাই (জাফর)। এ উম্মাহর দুই ‘ সেব্ত ’ (সন্তান) আমাদের মধ্য থেকে এবং তারা হলো হাসান ও হোসেইন। বেহেশতের যুবকদের দুই সর্দার এবং তারা তোমার সন্তান। আমি তারঁ শপথ করে বলছি যিনি আমাকে নবীর মর্যাদা দিয়েছেন যে মাহদী তোমার সন্তানদের মাঝ থেকে। সে পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক উল্লেখ করেছেন যে হাফেয আবুল আলা হামাদানী এ হাদীসটি এনেছেন ‘ চল্লিশ হাদীস ’ নামের কিতাবে যা মাহদী সম্পর্কে লেখা হয়েছে।
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 434 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন ‘ আউসাথ ’ - এর লেখক তাবারানী থেকে যিনি আবায়া ইবনে রাবেই যিনি বর্ণনা করেছেন আবু আইউব আনসারী থেকে যিনি বলেছেন : “ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফাতেমা (আঃ)-কে বলেছেন : নবীদের মাঝে শ্রেষ্ঠজন আমাদের মাঝ থেকে এবং সে তোমার পিতা। ওয়াসীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠজন আমাদের মাঝ থেকে এবং সে তোমার স্বামী। শহীদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আমাদের মাঝ থেকে সে হামযা তোমার বাবার চাচা। যে দু ’ টি পাখার অধিকারী সে আমাদের মাঝ থেকে। সে (ফেরেশতাদের) তাদের সাথে উড়ে বেড়াবে বেহেশতে যেখানে তার ইচ্ছা এবং সে জাফর , তোমার বাবার চাচাতো ভাই। এ উম্মাহর দুই ‘ সেব্ত ’ (সন্তান) হলো বেহেশতের যুবকদের দুই সর্দার , তারা আমাদের মধ্য থেকে এবং তারা হাসান ও হোসেইন তোমার দুই সন্তান। মাহদী আমাদের মাঝ থেকে সে আসবে তোমার সন্তানদের মাঝ থেকে। ”
একই বইতে লেখক 490 পৃষ্ঠায় আবু মুযাফ্ফার সামআনীর ‘ ফাযায়েল আস সাহাবা ’ গ্রন্থ থেকে বর্ণনা করেছেন যিনি আবু সাইদ খুদরী থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং তা প্রায় একই রকম।
এ বইয়ের লেখক বলেন : এ বিষয়ে হাদীসসমূহ ‘ মুসতাফিযা ’ । এগুলো ব্যাপকভাবে বর্ণিত এবং আমরা যা লিখেছি তা যথেষ্ট।
মাহদী (আঃ) ‘ সেবতাঈনের ’ ( ইমাম হাসান ও হোসেইনের আঃ) বংশ থেকে
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ের 3য় ভাগে হাফেয আবু নাইম ইসফাহানীর ‘ সিফাত আল মাহদী ’ কিতাব থেকে বর্ণনা করেন যিনি বর্ণনা করেছেন আলী ইবনে হাল্লাল থেকে যিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন : “ আমি রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাক্ষাত লাভের সম্মান লাভ করলাম তার অন্তিম সময়ে এবং ফাতেমা তার পাশে কাদছিলেন। ’ তিনি উক্ত দীর্ঘ হাদীসটি বর্ণনা করলেন এবং শেষে এসে বললেন : ‘ হে ফাতেমা , আমি তার শপথ করে বলছি যিনি আমাকে নির্বাচিত করেছেন যে মাহদী এ উম্মাহ থেকে আসবে ঐ দু ’ জন (হাসান ও হোসেইন) থেকে। ’
পৃথিবীর অবস্থা এমন হবে যে বিবাদ বৃদ্ধি পাবে। সমাধানের সব পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং জনগণ একে অপরের উপর হিংস্রভাবে ঝাপিয়ে পড়বে। এমন হবে যে না বড়রা ছোটদের উপর দয়া করবে , না ছোটরা বড়দের সম্মান করবে। যখন তা ঘটবে আল্লাহ একজনকে (মাহদী) নিয়োগ দিবেন যিনি পথভ্রষ্ট দুর্গগুলো জয় করবেন এবং আবৃত হৃদয়গুলোকে মুক্ত করবেন (এক উদাহরণমূলক মন্তব্য ; যে হযরত মাহদী (আঃ) মিথ্যা ধর্মগুলোর উপর বিজয় লাভ করবেন এবং ইসলামের দিকে বিপথগামী হৃদয়গুলোকে অনুগত করে আনবেন)। নিশ্চয়ই সে শেষ সময়ে বিদ্রোহ করবে যেভাবে আমি আমার সময়ে বিদ্রোহ করেছি। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
লেখক বলেন : ‘ এ হাদীসটি গাঞ্জি বর্ণনা করেছেন আবু নাঈম ইসফাহানীর ‘ নিতাই মাহদী ’ এবং আবুল কাসেম তাবারানীর ‘ মুআ ’ জাম কাবীর ’ থেকে এবং বেশীর ভাগ হাদীস বিশেষজ্ঞ এ হাদীসটি তাদের কিতাবে বর্ণনা করেছেন শব্দের কিছু তারতম্য রেখে। এদের কিছুতে ‘ আমাদের থেকে ’ লেখা হয়েছে ‘ ঐ দু ’ জন থেকে ’ -র জায়গায়।
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 432 পৃষ্ঠায় লিখেছেন ‘ জাওহার আল আক্বদাইন ’ -এর লেখক বলেছেন , ‘ গবেষণায় দেখা যায় , আলী ও ফাতিমা (আঃ)-এর বিয়ের সময় নবী (সাঃ)-এর দোয়ার প্রভাব হাসান ও হোসেইনের বংশে সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাদের বংশ থেকে কিছু এসে চলে গেছে এবং কিছু আসার বাকী আছে। যদি ভবিষ্যতে মাহদী ছাড়া আর কেউ নাও আসে নবী (সাঃ)-এর দোয়া বাস্তবে ঘটেছে বলে যথেষ্ট প্রমাণিত হবে। ’ এ বইয়ের লেখক বলেন : আলী ইবনে হাল্লাল এর হাদীসে আমরা যেভাবে দেখেছি যে সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও হযরত শপথ করে বলছেন বিষয়টির গুরুত্ব বুঝানোর জন্য।
যাহোক , যে কারণে মাহদী (আঃ) ‘ সিবতাইন ’ (আঃ) (আলীর সন্তানদের ) থেকে তাহলো হযরত বাক্বের এর মা (ফাতিমা) হযরত আলী ইবনে হোসেইন যয়নুল আবেদীনের (আঃ) স্ত্রী এবং হযরত হাসান ইবনে আলী আল মুজতাবা (আঃ) এর কন্যা এবং এ মহিলা সম্পর্কে ইমাম বাক্বের (আঃ) বলেছেন :
“ ফাতেমা একজন পরহেযগার মহিলা। আর আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল বাক্বের হাসান ও হোসেইনের সন্তান এবং সে ও তার সম্মানিত সন্তানরা তাদের অন্তর্ভূক্ত যারা এ সম্মান লাভ করেছে। প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) এ সম্মানিত ও বরকতপূর্ণ বংশধারা থেকে ; কারণ তিনি মুহাম্মাদ ইবনে হাসান ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে বাক্বের ইবনে আলী ইবনে হুসেইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব , আমিরুল মুমিনীন (আঃ)। ”
মাহদী (আঃ) ইমাম হোসেইনের (আঃ) বংশ থেকে
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তার কিতাবের প্রথম অধ্যায়ে হাফেজ আবু নাঈমের ‘ সিফাত আল মাহদী ’ থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বলেন :
“ রাসূলুলাহ (সাঃ) একটি খোতবা দিলেন। এরপর তিনি আমাদের কাছে সব প্রকাশ করলেন কী কী অবশ্যই ঘটতে যাচ্ছে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত । এরপর তিনি বললেন : “ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনও না থাকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ দিনটিকে এত লম্বা করে দিবেন যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে একজন আসবে যার নাম আমার নামে। ” তখন সালমান উঠে দাড়ালেন এবং বললেন , ‘ হে আল্লাহর রাসূল আপনার কোন বংশ থেকে তিনি আসবেন ? রাসূল (সাঃ) বললেন : “ সে আসবে আমার এ সন্তান থেকে এবং তিনি তার হাত হোসেইনের মাথার উপর রাখলেন। ”
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 49নং পৃষ্ঠায় বলেছেন ‘ নাহজলু বালাগার ব্যাখ্যায় (খুব সম্ভব তিনি ইবনে আবিল হাদীদের ব্যাখ্যার কথা বলেছেন) কাযী উল কযাত , কাফি উল কুফাত আবুল কাসিম ইসমাইল ইবনে ইবাদ থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যার বর্ণনাধারা আলী (আঃ) পর্যন্ত সংযুক্ত , যিনি মাহদী সম্পর্কে কিছু একটা বলেন এবং এরপর বলেন , ‘ নিশ্চয়ই সে হোসেইনের বংশ থেকে। ’
এ বইয়ের লেখক বলেন : এ বিষয়ে হাদীসগুলো ‘ মুসতাফিযা ’ হাদীস। আমাদের ইমামিয়া শিয়াদের মধ্যে একই মত এবং সুন্নী বিশেষজ্ঞ ভাইদের মাঝে যা বিখ্যাত তা আমাদের মাঝেও একই। যাহোক কিছু অল্প সংখ্যক হাদীসে এর বিপরীত অর্থেরও কিছু পাই।
এদের মাঝে আবু দাউদ তার সহীহতে (খণ্ড 4 , পৃষ্ঠা- 89) আবু ইসহাক থেকে বর্ণনা করেন : “ আলী (আঃ) হাসানের দিকে তাকালেন এবং বললেন : ‘ নিশ্চয়ই আমার সন্তান ‘ সাইয়্যেদ ’ যেভাবে নবী (সাঃ) তাকে ডেকেছেন। খুব শীঘ্র তার বংশ থেকে একজন আবির্ভূত হবে। যার নাম হবে তোমাদের নবীর নামে। সৃষ্টিতে সে নবীর (সাঃ) মত হবে কিন্তু তার আচরণে সে সেরকম হবে না। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে। ”
কিছু সুন্নী আলেম মাহদীকে আবু মুহাম্মাদ হাসান আল মুজতাবা (আঃ)-এর বংশ থেকে উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে ইবনে হাজার তার কিতাব ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এর 99 পৃষ্ঠায় লিখেছেন : “ আবু দাউদ তার ‘ সুনানে ’ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে মাহদী হাসানের বংশ থেকে এবং এর রহস্য এর মধ্যে নিহিত আছে যে হাসান খেলাফতকে ত্যাগ করেছিলেন আল্লাহর জন্য এবং জনগণের প্রতি তার স্নেহের জন্য। এভাবে আল্লাহ ক্বায়েমকে (যিনি প্রচণ্ড দুঃখ কষ্টের দিনে আসবেন) স্থাপন করলেন তার বংশধারায় যেন তিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিতে পারেন। যেসব হাদীস বলে যে তিনি হোসেইনের বংশ থেকে সেগুলো দূর্বল । ”
এ বইয়ের লেখক বলতে চান : ‘ উসুলে ফিক্বহ ’ -র নিয়মাবলী অনুযায়ী উপরে উল্লেখিত হাদীসের উপর নির্ভর করা সঠিক হবে না নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য :
প্রথমত : আবু দাউদের বর্ণনায় কিছু অসামঞ্জস্য রয়েছে যেভাবে ‘ ইকদুদ দুরার ’ এর লেখক আবু দাউদের সুনান থেকে বর্ণনা করেছেন যে সবাই হোসেইনের দিকে তাকালো।
দ্বিতীয়ত : একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ একই হাদীস বর্ণনা করেছেন হুবুহু শুধু তা বাদে যে আলী হোসেইনের দিকে তাকালেন।
তৃতীয়ত : ভুলের একটি সম্ভাবনা রয়েছে যে হাসান ও হোসেইন শব্দ দু ’ টো কোন কোন সময়ে একটি অন্যটির জায়গায় ভুলভাবে লেখা হয় , বিশেষ করে কুফী অক্ষরে।
চতুর্থত : সুন্নী আলেমদের মাঝে যা বিখ্যাত এ হাদীসটি তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
পঞ্চমত : হাদীসটি অন্যান্য হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক যেগুলো তাদের বর্ণনা ধারায় আরো বিশ্বস্ত এবং প্রকাশে আরো সুস্পষ্ট। এগুলোর কিছু কিছু ইতোমধ্যেই বর্ণনা করা হয়েছে এবং আল্লাহ চাইলে পরে বাকীগুলো বর্ণনা করা হবে।
আর ষষ্ঠত : হাদীসটি সম্ভবত মিথ্যা ও জাল। হয়তো এজন্য যে তারা মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহর নিকটবর্তী হতে চেয়েছিলো যিনি ‘ নফসে যাকিয়্যাহ ’ নামে পরিচিত। তারা তাকে খুশী করার জন্য সম্ভবত এটি করেছিলো।
মাহদী (আঃ) ইমাম হোসেইনের (আঃ) নবম বংশধর
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 493 নম্বর পৃষ্ঠায় মুয়াফফাক্ ইবনে আহমাদ খাওয়ারাযমীর ‘ মানাক্বিব ’ থেকে এবং তিনি সলিম ইবনে ক্বায়েস হাল্লালি থেকে , তিনি বর্ণনা করেন সালমান ফারসী থেকে , যিনি বলেন :
“ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাক্ষাত এর সুযোগ লাভ করলাম। আমি যা দেখলাম তা হলো হোসেইন ইবনে আলী তার কোলে বসে আছে এবং নবী (সাঃ) তার চোখের উপর চমু দিচ্ছেন এবং তার জামা চুষছেন এবং বলছেন : ‘ তুমি একজন সর্দার , একজন সর্দারের সন্তান এবং একজন সর্দারের ভাই। তুমি একজন ইমাম , একজন ইমামের সন্তান এবং একজন ইমামের ভাই। তুমি একজন ঐশী প্রমাণ , একজন ঐশী প্রমাণের ভাই এবং নয় জন ঐশী প্রমাণের পিতা এবং তাদের নবম জন হচ্ছে ক্বায়েম । ”
একই কথা দেখা যায় ‘ ইক্বদুদ দুরার ’ -এ। উক্ত বইয়ের 258 পৃষ্ঠায় “ মাওয়াদ্দাতুল ক্বুরবা ” -র দশম অধ্যায় থেকে বর্ণনা করেন : সালিম ইবনে ক্বায়েস হাল্লালি থেকে বর্ণিত হয়েছে যে সালমান ফারসী বলেন :
“ আমি যখন নবী (সাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করতে গেলাম আমি দেখলাম হোসেইন তার কোলে বসে আছে এবং তিনি তার চোখের উপর চুমু দিচ্ছেন ও তার জামা চুষছেন। এরপর নবী (সাঃ) বললেন : ‘ তুমি একজন সর্দার , একজন সর্দারের সন্তান , তুমি একজন ইমাম এবং একজন ইমামের সন্তান। তুমি একজন ঐশী প্রমাণ এবং নয়জন ঐশী প্রমাণের পিতা , তাদের নবমজন হচ্ছে ক্বায়েম। ”
এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু হাদীস রয়েছে যেগুলো ইনশাআল্লাহ আমরা শীঘ্র বর্ণনা করবো।
এ বইয়ের লেখক বলছেন : এটি সম্ভব মনে হয় না যে মুসলমানরা কেউ এ নয় ব্যক্তিত্বের কথা জানে না এবং তাদের নাম জানে না। এ বর্ণনার পরে তাদের নাম আর উল্লেখ না করে পারা যায় না। তাদের প্রথম জন হলো আবুল হাসান যয়নুল আবেদীন। তার ছেলে আবু জাফর মোহাম্মাদ আল বাক্বের , তার ছেলে আবু আব্দুল্লাহ জাফর আস- সাদেক , তার ছেলে আবুল হাসান মুসা আল-কাযেম , তার ছেলে আবুল হাসান আর-রিদা , তার ছেলে আবু জাফর মোহাম্মাদ আল জাওয়াদ , তার ছেলে আবুল হাসান আলী আল হাদী , তার ছেলে মুহাম্মাদ হাসান আল- আসকারী , তার ছেলে আবুল ক্বাসিম মোহাম্মাদ মাহদী , যিনি তাদের মধ্যে নবম এবং “ ক্বায়েম ” ।
মাহদী (আঃ) ইমাম সাদিক (আঃ)-এর বংশ থেকে
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 499 পৃষ্ঠায় হাফেয আবু নাঈম ইসফাহানীর ‘ আরবাইনে ’ (যা মাহদী-আঃ সম্পর্কিত 40 টি হাদীসের সংকলন) থেকে বর্ণনা করেছেন। এদের মধ্যে একটি হাদীস ‘ লাগভী ’ যিনি ‘ ইবনে খেসবাব ’ নামে বেশী পরিচিতি , তার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন : আবুল ক্বাসেম তাহের ইবনে হারুন ইবনে মূসা কাযিম তার দাদা থেকে একটি হাদীস আমার জন্য বর্ণনা করেন , তিনি বলেছেন :
আমার মালিক জাফর ইবনে মুহাম্মাদ বলেছেন , পরহেযগার উত্তরাধিকারী আমার বংশ থেকে আসবে এবং সে মাহদী। তার নাম হচ্ছে মুহাম্মাদ আর তার উপাধি হচ্ছে আবুল ক্বাসিম। সে আত্মপ্রকাশ করবে শেষ সময়ে। তার মায়ের নাম হবে নারজীস এবং তার মাথার উপরে থাকবে এক টুকরো মেঘ। যা তাকে সূর্যের মাঝে ছায়া দান করবে। এটি তার সাথে সাথে যাবে যেখানেই সে যাবে এবং উচ্চস্বরে ভারী কন্ঠে বলবে : ‘ এ হলো মাহদী অতএব তাকে মেনে চলো। ’
এছাড়াও অন্য হাদীস রয়েছে যার সাথে আপনাদের শীঘ্রই পরিচয় করিয়ে দিবো।
ইবনে হাজার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 120 পৃষ্ঠায় বলেন , “ মুহাম্মাদ ইবনে আলী আল-বাক্বের ছয়টি সন্তান রেখে গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী ও পূর্ণ ছিলো জাফর সাদেক ; এ কারণেই তাকে তার পিতার উত্তরাধিকারী ও ওয়াসী বানানো হয় এবং জনগণ তার কাছ থেকে এত জ্ঞান বর্ণনা করেছে যে তার সুখ্যাতি সব জায়গায় পৌছে গেছে। ”
বিখ্যাত সুন্নী জ্ঞানী ব্যক্তিগণ যেমন ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ , ইবনে জারীহ , মালিক , সুফিয়ানীন , আবু হানিফা , শুয়াবা এবং আইয়ুব বাখতিয়ানি তার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন :
) إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ (
“ আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করেছি। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর। নিশ্চয় তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই নির্বংশ। ” (সূরা কাউছার)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী বলেন : (কাউসার)- এর বিভিন্ন অর্থের একটি হতে পারে বংশ। কারণ এ সূরা নাযিল হয়েছিলো তাদের যুক্তি খণ্ডন করে যারা নবী (সাঃ) কে সন্তান না থাকার জন্য টিটকারী করত। তখন আল্লাহ তাকে এমন এক প্রজন্ম দিলেন যা সময়ের সাথে বজায় থাকবে। এভাবে আপনারা নিজেরাই দেখতে পারেন নবী (সাঃ)-এর বংশের কত জনকে হত্যা করা হয়েছে তারপরও পৃথিবী তাদের উপস্থিতিতে ’ পূর্ণ অথচ বনি উমাইয়্যার একজনও বেঁচে নেই। আবারও আপনারা দেখতে পাচ্ছেন যে যারা আহলুল বায়েত থেকে যেমন বাক্বের , সাদেক , কাযিম , রেযা (সাঃ) নফসে যাকিয়্যাহ এবং তাদের মত অন্যরা কত বড় জ্ঞানী।
মাহদী (আঃ) ইমাম রেযা (আঃ)-এর বংশ থেকে
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 448 পৃষ্ঠায় ‘ ফারায়েদুস সেমতাইন ’ থেকে বর্ণনা করেন যে হাসান ইবনে খালিদ বলেছেন : আলী ইবনে মুসা রেযা (আঃ) বলেছেন :
“ যার ধার্মিকতা নেই , তার বিশ্বাস নেই এবং তোমাদের মধ্যে আল্লাহর সামনে সেই সবচেয়ে সম্মানিত যে সবচেয়ে ধার্মিক । এরপর তিনি বললেন : ‘ নিশ্চয়ই আমার বংশধর থেকে চতুর্থ জন দাসীদের নেত্রীর সন্তান যে পৃথিবী থেকে সব নৃশংসতা ও নিপীড়ন মুছে ফেলবে। ”
একই বইয়ের 454 পৃষ্ঠায় লেখক ‘ ফারায়েদুস সেমতাইন ’ থেকে বর্ণনা করেন : আহমাদ ইবনে যিয়াদ দেবেল খুযাঈ থেকে বর্ণনা করেন : আমি আমার কবিতা পড়লাম যার শুরু ছিলো ইমাম রেযা (আঃ)- এর সামনে , যখন আমি কবিতার এ অংশে পৌছুলাম :
خروج امام الا محالة واقع |
یقوم علی اسم الله بالبرکات |
یمیز فینا کل حق و باطل |
ویجزی علی النعماء و النقمات |
হযরত কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন এবং বললেনঃ “ হে দেবেল , রুহুল কুদুস তোমার জিহ্বা দিয়ে কথা বলেছে , তুমি কি জানো এ ইমাম কে ? ”
আমি বললামঃ না আমি তাকে জানি না । কিন্তু আমি শুনেছি যে একজন ইমাম আপনার বংশ থেকে আসবেন যিনি পৃথিবীকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন । ’
হযরত বললেনঃ “ আমার পরে ইমাম হবে আমার সন্তান মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের পর তার সন্তান আলী এবং আলীর পর তার সন্তান হাসান এবং হাসানের পর তার সন্তান হুজ্জাত আল -ক্বায়েম এবং সেই প্রতীক্ষিত ব্যক্তি । ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 122 পৃষ্ঠায় বলেছেঃ যখন হযরত মূসা ইবনে জাফর ইন্তেকাল করলেন তিনি সাইত্রিশ জন পুত্র ও কন্যা সন্তান রেখে গেলেন । তাদের মধ্যে একজন আলী আল -রিদা যিনি বেশী পরিচিতি এবং মেধায় অন্যদের চাইতে সুস্পষ্টভাবে অগ্রগামী ছিলেন । এ কারণে মামুন (তৎকালীন শাসক ) তাকে তার হৃদয়ে স্থান দিয়েছিলেন এবং তার মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি তার সাম্রাজ্যে তাকে একজন অংশীদার হিসিবে নিয়ে ছিলেন ও তার কাছে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন । 201 হিজরীতে তিনি নিজ হাতে হযরতের অভিভাবকত্ব লিখে দেন এবং বিরাট সংখ্যক জনতাকে সাক্ষী রাখেন । যা হোক হযরত এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তার আগেই যার কারণে মামুন খুব শোকাবিভূত হয়ে পড়েন । ইন্তেকালের আগেই হযরত ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে তিনি আঙ্গুর ও রুম্মানের বিষক্রিয়ায় মারা যাবেন এবং মামুন তাকে তার বাবা রশীদের পাশে কবর দিতে চাইবে কিন্তু সফল হবে না , এভাবে হযরত সব বলে গিয়েছিলেন কী ঘটবে ।
একবার হযরত এক ব্যক্তিকে বলেন : “ হে আব্দুল্লাহ , আল্লাহর প্রতি সন্তষ্ট থাকো এবং প্রস্তুত থাকো সেজন্য যা তোমার জন্য ঘটবেই। ” এরপর তৃতীয় দিন আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করলো। এ ঘটনাটি হাকেম বর্ণনা করেছেন। তিনি বর্ণনা করেছেন মুহাম্মাদ বিন ঈসা থেকে যিনি বর্ণনা করেছেন আবু হাবিব থেকে , যিনি বলেছেন : “ আমি স্বপ্নে দেখলাম যে আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাক্ষাত করেছি এবং তাকে সালাম দিয়েছি। সে সময় আমি দেখলাম তাঁর পাশে একটি ট্রেতে সাইহানী খেজুর এবং তিনি আমাকে আঠারোটি খেজুর দিলেন। এরপর আমি জেগে উঠলাম এবং আমার স্বপ্নকে ব্যাখ্যা করলাম এভাবে যে আমি আর আঠারো দিন বাচবো।
যাহোক বিশ দিন পর আবুল হাসান আলী আর রিদা মদীনা থেকে এলেন এবং সেই একই মসজিদে এলেন যেখানে স্বপ্নে আমি রাসূল (সাঃ)-কে দেখেছিলাম। জনগণ তার দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলো তাদের সালাম পেশ করার জন্য। আমি নিজেও তার কাছাকাছি গেলাম এবং তাকে বসে থাকতে দেখলাম সেই জায়গায় যেখানে আমি রাসূল (সাঃ)-কে বসে থাকতে দেখেছিলাম এবং দেখলাম তার পাশেই রাখা আছে একটি সাইহানি খেজুরের ট্রে । সেই একই ট্রে যা আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম। পরে আমি উনাকে সালাম দিলাম এবং তিনি আমাকে তার নিজের কাছে ডাকলেন এবং আমাকে সেই খেজুরের একমুঠ দিলেন। যখন আমি সেগুলো গুণলাম আমি বুঝতে পারলাম যে সেগুলো একই সংখ্যার যা রাসূল (সাঃ) আমাকে স্বপ্নে দিয়েছিলেন। আমি আরো চাইলে তিনি বললেন , যদি রাসূলল্লাহ (সাঃ) তোমাকে এর চাইতে বেশী দিতেন আমিও তোমাকে আরো বেশী দিতাম। ”
যখন হযরত নিশাপুরে আসলেন তিনি একটি খচ্চরের গাড়ীর উপরে ছিলেন এবং সেখানে ছিলো পর্দা টাঙ্গানো। তখন দু ’ জন ব্যক্তি যারা ছিলো হাদীস বিশেষজ্ঞ , আবু জাররা রাযী এবং মুহাম্মাদ ইবনে আসলাম তুসী তার কাছে গেলেন বেশ কিছু সংখ্যক আলেমকে সাথে নিয়ে। তারা হযরতকে অনুরোধ করলেন তার মোবারক চেহারা প্রকাশ করার জন্য এবং তাদের জন্য হাদীস বর্ণনা করার জন্য যা তিনি তার পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তখন তার আদেশ অনুযায়ী খচ্চরের গাড়িটি থেমে গেলো এবং তার দাসেরা পর্দা খুলে দিলো। যখন জনগণের চোখ তার বরকতময় চেহারার উপর পড়লো তারা আমোদ উল্লাস করতে লাগলো। কিছু লোক আনন্দ করছিলো আর কিছু লোক বেশী আনন্দে কাদছিলো। কিছু মানুষ মাটিতে বসে পড়লো এবং যারা তার কাছে ছিলো তারা খচ্চরের পায়ে চুমু খেতে লাগলো। তখন আলেমগণ চীৎকার করে বললো : “ হে জনগণ , শান্ত হও এবং হযরত যা বলেন তা শোন। ”
যখন জনগণ শোনার জন্য প্রস্তুত হলো হযরত এ হাদীসটি বলতে শুরু করলেন , আর যেহেতু জনতার সংখ্যা খুব বেশী ছিলো ঐ দু ’ জন , আবু জাররা এবং মুহাম্মাদ ইবনে আসলাম হযরতের বাণী চীৎকার করে প্রচার করছিলো জনতার কাছে। পরে হযরত বললেন : ‘ আমার পিতা মূসা ক্বাযিম আমার কাছে তার পিতা জাফর সাদেক থেকে যিনি তার পিতা মুহাম্মাদ বাক্বের থেকে যিনি তার পিতা যায়নুল আবেদীন থেকে যিনি তার পিতা হোসেইন থেকে যিনি তার পিতা আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে যিনি বলেছেন : আমার প্রিয় আল্লাহর হাবীব রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
জিবরাইল আমাকে এমন বলেছে - আমি মহান আল্লাহকে বলতে শুনেছি :لا اله الا الله -র শব্দগুলো আমার দূর্গ , তাই যে কেউ তা বলবে সে আমার দূর্গে প্রবেশ করবে এবং যে আমার দূর্গে প্রবেশ করবে সে আমার শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে। ’
এরপর তিনি পর্দা টেনে দিলেন এবং সামনে এগিয়ে চললেন। প্রায় 20 হাজার লেখক এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। অন্য একটি হাদীসে এসেছে হযরত বলেছেন : ‘ বিশ্বাস হলো হৃদয় দিয়ে স্বীকৃতি দান , জিহবার স্বীকারোক্তি এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ ’ । হয়তোবা তিনি বলেছিলেন উভয়টিই।
আহমাদ বলেন : “ যদি এ হাদীসটি এর বর্ণনাকারীদের ক্রমধারাসহ কোন পাগল লোকের সামনে পড়া হয় তাহলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। ”
মাহদী (আঃ) ইমাম হাসান আসকারীর (আঃ) সন্তান
যখন আপনারা বুঝতে পারবেন আমরা কি বলছি ও রেওয়ায়েত কী বলছে তখন এর শেষে বুঝতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না (অর্থাৎ প্রতীক্ষিত মাহদী যে আবু মোহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান)। যাহোক , একটি সিদ্ধান্তে আসার পদ্ধতিগত বিষয়ের প্রয়োজনে আমরা তা উপরের শিরোনামের অধীনে লিখেছি। আমরা বলছি ইতোমধ্যে উল্লেখিত রেওয়ায়েতসমূহ ইঙ্গিত করে যে মাহদী হলেন ইমাম হোসেইনের (আঃ) নবম বংশ এবং আবুল হাসান আল-রিদার (আঃ) চতুর্থ বংশধর তা বিষয়টি প্রমাণ করে (মাহদী হাসান আসকারীর (আঃ) সন্তান)। বিশেষ করে যে রেওয়ায়েত আমরা ফারায়েদুস সিমতাঈন থেকে বর্ণনা করেছি যেখানে হযরত রিদা (আঃ) দেবেল খুযাঈকে বলেছেন :
“ নিশ্চয়ই আমার পরে ইমাম হবে আমার সন্তান মুহাম্মাদ তাক্বী জাওয়াদ এবং তার পরে ইমাম হবে তার সন্তান আলী হাদী নাক্বী এবং তার পরে ইমাম হবে তার সন্তান হাসান আসকারী এবং তার পরে ইমাম হবে তার সন্তান মুহাম্মাদ হুজ্জাত মাহদী মুনতাযার । ”
এছাড়া আমরা যা পরবতীর্তে বর্ণনা করবো তা এ বিষয়কে প্রমাণিত করবে যে মাহদী খলিফাদের মধ্যে 12তম , ইমামদের মধ্যে 12তম। তিনি একজন ওয়াসী এবং আসমানী প্রমাণ।
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 491 পৃষ্ঠায় হাফেয আবু নাঈম- এর ‘ আরবাঈন ’ থেকে বলেছেন : “ পরহেযগার উত্তরাধিকারী আসবেন হাসান ইবনে আলী আসকারীর সন্তানদের মাঝ থেকে। তিনিই মাহদী , যুগের নেতা। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ লেখক 157 পৃষ্ঠায় আব্দুল ওয়াহাব শরোনীর ‘ আল ইয়াওয়াকিত্ব ওয়াল জাওহার ’ থেকে এবং তিনি ‘ আল ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ ’ বই থেকে বর্ণনা করেছেন :
“ জেনে রাখো মাহদীর আগমন অবশ্যম্ভাবী কিন্তু সে আত্ম প্রকাশ করবে না যতক্ষণ না পৃথিবী নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ হয়। তখন তিনি একে ইনসাফ ও ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবেন। তিনি নবী (সাঃ)-এর বংশ ও ফাতেমা (আঃ)-এর বংশধর। তার পূর্ব পুরুষ হোসেইন ইবনে আবি তালিব এবং তার পিতা হাসান আসকারী যার পিতা ইমাম আলী আল নাক্বী তার পিতা ইমাম মোহাম্মাদ তাক্বী তার পিতা ইমাম আলী আর-রিদা , তার পিতা ইমাম মুসা কাযিম , তার পিতা ইমাম জাফর সাদেক , তার পিতা ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বের , তার পিতা ইমাম যয়নুল আবেদীন , তার পিতা ইমাম হোসেইন তার পিতা আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)।
তার নাম নবী (সাঃ)-এর নামে এবং মুসলিমরা তার হাতে বাইয়াত হবে ‘ রুকন ’ এবং ‘ মাক্বাম ’ -এর মাঝে (মাকামে ইবরাহিমের)। ”
(এ বইয়ের) লেখক বলেন : আমাদের বেশীর ভাগ শিয়া আলেম এবং আহলে সুন্নাতের আলেমগণও এ মহামূল্যবান বাক্যগুলো “ আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জাওহার ’ বই থেকে বর্ণনা করেছেন , তিনি তা আবার ‘ আল ফুতুহাত আল মাক্কিয়্যাহ ’ থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ বইয়ের বতমার্ন সংস্করণে তা আমি পাই নি (তাই একটু ভাবুন হয়তোবা এ হাদীসটি বর্তমান যুগে বাদ দেয়া হয়েছে)।
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 451 পৃষ্ঠায় ‘ ফাসলুল খেতাব ’ থেকে বর্ণনা করেছেন : “ এটি পবিত্র ইমাম আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর (আঃ) কথা যিনি বলেছেন : কোন সন্তান রেখে যাবো না আবুল ক্বাসিম মুহাম্মাদ ছাড়া যাকে এ উপাধি দেয়া হবে যেমন , ‘ ক্বায়েম ’ , ‘ হুজ্জাত ’ , ‘ মাহদী ’ , ‘ সাহেবুয্যামান ’ , ‘ খাতামুল আইম্মা , ‘ ইসনা আশার ’ , ‘ ইমামিয়াদের মাঝে। ”
এ বইয়ের লেখক বলছেন : ‘ ইমামিয়াদের মাঝে ’ কথাটি সত্যের সাথে সম্পর্কিত যে তিনি 12তম।
একই আলেম উল্লেখিত বইয়ের 470 পৃষ্ঠায় বলেছেন : সাইয়্যেদ আব্দুল ওয়াহহাব শারানী তার বই ‘ আল ইয়াওয়াক্বিত ওয়াল জওহার ’ -এর 65তম অধ্যায়ে লিখেছেন :
‘ মাহদী ইমাম হাসান আসকারীর সন্তান ’ ।
আবারও এ আলেম 471 পৃষ্ঠায় ‘ মাতালিবসু সূল ’ এবং কামাল উদ্দীন তাইহার ‘ দুররুল মুনাযযাম ’ থেকে বলেছেন : ‘ মাহদী মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান। ’
একই বইয়ের 471 পৃষ্ঠায় লেখক বলেছেন : ‘ বায়ান ’ নামের কিতাবের শেষ অধ্যায়ে গাঞ্জী বলেন : “ নিশ্চয়ই মাহদী হবে হাসান আসকারীর ছেলে। ”
একই বইয়ের 471 পৃষ্ঠায় লেখক লিখেছেন : ‘ ফুসুলুল মুহিম্মার ’ লেখক বলেছেন- “ নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুত্র মাহদী আলী আল-নাক্বীর সন্তান আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান (আঃ)। ”
‘ দুররুল মূসাউইয়া ’ -র লেখক বলেন : যাদেরকে আমি পেয়েছি আমাদের শিয়াদের মত বিশ্বাস রাখে মাহদীর বিষয়ে তারা হলো মুহাম্মাদ ইবনে ইউসূফ গাঞ্জী তার ‘ আল বায়ানে ’ , মুহাম্মাদ ইবনে তালহা শাফেঈ ‘ মাতালিবুস সূল ’ -এ , সিবতে ইবনে জওযী ‘ তাসকিরাতুল আইম্মা ’ -তে এবং শারাণী ‘ আল ইয়া ওয়াকীত্ব আল জওহার ’ -এ , যেখানে তারা সবাই বলেছেন :
‘ মাহদী ইমাম হাসান আসকারীর সন্তান। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন 255 হিজরীর 15ই শাবানের রাতে এবং তিনি এখনও বেচেঁ আছেন যতক্ষণ না তিনি এবং ঈসা ইবনে মরিয়াম পরস্পর সাক্ষাত করেন। ’
একই বিষয় এসেছে ‘ তাবাক্বাত ’ -এ যেখানে এর লেখক শেইখ হাসান আরাক্বী থেকে বর্ণনা করেছেন (যিনি মাহদীর সাথে সাক্ষাত লাভ করেছিলেন যার পূর্ণ বর্ণনা তাবাক্বাতে ’ এসেছে)।
আলী খাওয়াস ও শেইখ মহিউদ্দীন (তার ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ-র 366 অধ্যায়ে) এ বিশ্বাসে মত দিয়েছেন। শারানী তার ‘ লওয়াক্বেহ আল আনওয়ার ’ এ (যা ফুতুহাতুল মাক্কীয়্যাহর উপসংহারে) শাবান মিসরী ‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এ এবং তার “ আল ইয়াওয়াক্বিত ’ -এ তার হুবহু কথা (দু ’ টোই মিশরী ছাপা) শেইখ সালাহউদ্দীন সাফাদি যার হুবহু বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে , ‘ শার এ দায়েরা ’ থেকে ‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দাত ’ -এ , ‘ ফুসুলুল মুহিম্মাতে ’ শেইখ আলী ইবনে মুহাম্মাদ মালিকি এবং শেইখ হামুইনি শাফেঈ ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ -এ বর্ণনা করেছেন : “ নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুত মাহদী হচ্ছেন আলী আল নাক্বীর সন্তান মুহাম্মাদ হাসান আসক্বারীর সন্তান। ”
তৃতীয় অধ্যায়
মাহদী (আঃ) ও তার চেহারা
আবু দাউদ তার সহীহতে (খণ্ড-4 , পৃষ্ঠা-88) আবু সাইদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
“ মাহদী আমার থেকে , তার ঝকঝকে কপাল এবং লম্বা নাক। ”
আবু নাঈম থেকে ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক ’ -এর 98 পৃষ্ঠায় নবী (সাঃ)-এর একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন :
“ নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটাবেন। তার সামনের দাতগুলোতে সামান্য ফাক আছে এবং তার কপাল আলোতে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ লেখক আবু নাইম থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন , ইবনে হাজার (98 পৃষ্ঠায়) রুইয়ানি ও তাবরানি থেকে এবং তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে : “ মাহদী আমার বংশ থেকে। তার রং আরবী এবং তার দেহগঠন ইসরাইলী (অর্থাৎ তার উচ্চতা , শক্তিশালী দেহগঠন)।
একই হাদীস ইসাফুর রাগেবীনে এসেছে (149 পৃষ্ঠায়)। ইসাফুর রাগেবীনের 140 পৃষ্ঠায় লেখক আবু নাঈম ইসফাহানীর ‘ হুলিয়াতুল আউলিয়া ’ থেকে বর্ণনা করেছেন : “ মাহদী এক যুবক যার আছে কালো চোখ , লম্বা ভ্রু , উচুঁ নাক , কোঁকড়ানো দাড়ি এবং ডান গালে ও ডান হাতে তিল। ”
‘ নুরুল আবসার ’ -এর লেখক 229 পৃষ্ঠায় আবু দাউদ ও তিরমিযী থেকে এবং তারা আবু সাঈদ খুদরী থেকে , যিনি বলেন , ‘ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- কে বলতে শুনেছি যে ,
“ মাহদী আমার থেকে। তার আছে জ্বলজ্বলে কপাল ও উচুঁ নাক। ”
একই বইতে লেখক 230 পৃষ্ঠায় ইবনে শিরউইয়্যা থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে , তিনি নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেনঃ
“ মাহদী আমার সন্তান , তার গায়ের রং আরবী (ফর্সা) এবং তার দেহগঠন ইসরাইলের দেহগঠনের মত। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ে আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন , যিনি মাহদী সম্পর্কে বলেন :
“ সে এক পুরুষ যার রয়েছে জ্বলজ্বলে কপাল , খাড়া নাক , প্রশস্ত উরু। তার ডান গালে আছে একটি তিল এবং তার দাঁতগুলোর মাঝে ফাঁক রয়েছে। ”
একই বইতে একই অধ্যায়ে লেখক আবু জাফর মুহাম্মাদ আলী আল বাক্বের (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে : ‘ আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিবকে মাহদীর দেহগঠন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন :
“ সে একজন যুবক মাঝারী গঠনের , এবং আকর্ষণীয় চেহারার , তার চুল তার কাধঁ পর্যন্ত ঝুলে থাকবে , তার চেহারা থেকে জ্যোতি ছড়াবে। ”
মাহদী (আঃ) ও তার চরিত্র
ইবনে হাজার ‘ সাওয়ায়েক ’ -এর (98 পৃষ্ঠায়) রুইয়ানি ও তাবরানি থেকে এবং তারা রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে : “ মাহদী আমার বংশ থেকে। ” এরপর তিনি বলেন : “ আকাশের বাসিন্দারা এবং পৃথিবীর বাসিন্দারা তার শাসন নিয়ে খুশী। ” তাবরানি যোগ করেছেন , “ আকাশের পাখিরা। ” একই হাদীস পাওয়া যায় ‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ 149 পৃষ্ঠায়।
‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ লেখক 151 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন আহমাদ ও মাওয়ারদী থেকে , তারা নবী (সাঃ) থেকে ,
“ সুসংবাদ তোমাদেরকে মাহদী সম্পর্কে ” এরপর তিনি বলেন : “ আকাশের বাসিন্দারা এবং পৃথিবীর বাসিন্দারা তাকে নিয়ে খুশী। সে সম্পদ সমানভাবে ভাগ করে দিবে , মুহাম্মাদের উম্মাহকে অভাব থেকে মুক্তি দেবে এবং তাদেরকে তার সৎকর্মশীলতা দিয়ে আরাম দিবে। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ এর লেখক 8ম অধ্যায়ে তাউস থেকে বর্ণনা করেন , “ মাহদীর নিদর্শন হচ্ছে তিনি শাসকদের প্রতি কঠোর হবেন এবং জনগণের প্রতি উদার হবেন সম্পদ বণ্টনে এবং অসহায়দের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়াতে নরম হবেন। ” এরপর তিনি লিখেছেন : এ হাদীসটি নেয়া হয়েছে আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ‘ ফাতান ’ বই থেকে।
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর তৃতীয় অধ্যায়ের 9ম অংশে লেখক হাফেজ আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি আবু রুমিয়াহ থেকে বলেন , “ মাহদী অসহায়দের খাওয়াবেন। ”
‘ নুরুল আবসারের ’ লেখক ইমাম আহমাদ-এর ‘ মুসনাদ ’ থেকে এবং তিনি আবু সাইদ খুদরী থেকে যিনি বলেছেন , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : “ আমি মাহদীর বিষয়ে তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি। ”
এরপর তিনি বললেন : “ আকাশের বাসিন্দারা ও পৃথিবীর বাসিন্দারা তাকে নিয়ে খুশী। সে জনগণের মাঝে সম্পদ সমানভাবে বন্টন করে দিবে এবং মুহাম্মাদের উম্মাহর হৃদয়কে অভাবমুক্ত করে দিবে। সে তাদেরকে তার সৎকর্মশীলতা দিয়ে আরাম দিবে। ”
একই বইয়ের একই পৃষ্ঠায় লেখক বলেছেন হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী-এর ‘ ফাতান ’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ,
‘ মাহদী আমার সন্তান। এরপর তিনি বললেন , ‘ আকাশের বাসিন্দারা , পৃথিবীর বাসিন্দারা এবং আকাশের পাখিরা তার শাসন নিয়ে আনন্দিত। ”
মাহদী (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মত
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 493 পৃষ্ঠায় খাওয়ারাযমীর ‘ মানাক্বেব ’ থেকে যিনি জাফর ইবনে মুহাম্মাদ মাসরুর থেকে , তিনি হুসেইন ইবনে মুহাম্মাদ আমের থেকে , যিনি বর্ণনা করেন তার চাচা আব্দুল্লাহ ইবনে আমের থেকে , যিনি মুহাম্মাদ ইবনে আবু উমাইর থেকে , তিনি আবু জুমাইলা মুফাযযাল ইবনে সালেহ থেকে , তিনি জাবের ইবনে ইয়াযদী থেকে , তিনি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহিল আনসারী থেকে , যিনি বলেছেন , রাসূলুলাহ (সাঃ) বলেছেন :
“ মাহদী আমার সন্তান। তার নাম ও উপাধি আমার নাম ও উপাধির মত। সমস্ত মানুষের মাঝে সে সৃষ্টিতে ও চরিত্রে আমার মত হবে। ”
উল্লেখিত বইতে একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে আবু বাসীর থেকে , যিনি বর্ণনা করেছেন হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মাদ আস সাদিক থেকে , যিনি তার পিতা আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।
‘ ফুতুহাতুল মাক্কীয়্যাহ ’ র লেখক 366তম অধ্যায়ে মাহদীর (আঃ) চরিত্র সম্পর্কে লিখেছেন : “ তিনি সৃষ্টিতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মত কিন্তু চরিত্রে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চাইতে সামান্য কম যেহেতু কেউই তার মত হতে পারবে না যেমন আল্লাহ বলেছেন :
) وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ (
“ অবশ্যই তুমি সুমহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত। ” (সূরা ক্বালামঃ 4)
এ বইয়ের লেখক বলতে চান ; কোন মত অনুযায়ীই দু ’ জন ব্যক্তি এক হওয়া অসম্ভব স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু এ ধরনের মন্তব্য একজনের সাথে অন্যজনের নৈকট্য বোঝায় , যেমন প্রথম হাদীস থেকে এ ধরনের অর্থ পাওয়া যায় , ‘ সব মানুষের মধ্যে তিনি রাসূল (সাঃ)-এর সাথে সবচেয়ে মিল রাখেন।
মাহদী (আঃ) ও তার চিন্তাভাবনা
আবু দাউদ তার ‘ সহীহ ’ -র 88 পৃষ্ঠায় রাসূল (সাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে সালামা থেকে একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে , মাহদী এবং ‘ রুকন ’ ও ‘ মাক্বাম ’ -এর মাঝে তার বাইয়াত গ্রহণ প্রসঙ্গে কথা বলার সময় বলেন : “ জনগণ তাদের নবীর মত কাজ করবে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর নীতিমালা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (437 পৃষ্ঠায়) আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন , যিনি মাহদীর (আঃ) বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণনা করেন-
“ যখন তারা (জনগণ) হেদায়েতকে তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করার জন্য পদক্ষেপ নিবে তখন মাহদী খেয়াল খুশীকে হেদায়েতের অনুসরণ করার জন্য পরিবর্তন করে দিবেন। যখন তারা কোরআনকে তাদের বুদ্ধি অনুযায়ী ব্যাখা করবে , মাহদী তখন বুদ্ধিকে কোরআনের অনুসরণ করাবে। মাহদী তোমাদের কাছে ন্যায়বিচার প্রদর্শন করবে। মাহদী কোরআন ও সুন্নাহর বিধানকে জীবিত করবে যা তখন পর্যন্ত ছিলো মৃত ও প্রাণহীন। ”
‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 98 পৃষ্ঠায় ইবনে হাজার বলেন : ইবনে হেমাদ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন , যার বর্ণনাধারা রাসূল (সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছায়। হযরত বলেছেন :
“ মাহদী আমার জাতি থেকে , সে আমার সুন্নাহর জন্য যুদ্ধ করবে যেভাবে আমি আল্লাহর ওহীর জন্য যুদ্ধ করেছি। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখর 445 পৃষ্ঠায় হামুইনী থেকে বর্ণনা করেন , তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
“ নিশ্চয়ই আল্লাহ এ ধমর্কে শক্তিশালী করেছেন আলীর হাত দিয়ে। এরপর যখন তাকে হত্যা করা হবে ধর্ম নীচের দিকে নামতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না মাহদী আসে এবং একে শুদ্ধ করে। ”
এ বইয়ের লেখক বলতে চান , মাহদী (আঃ) পৃথিবীকে ইসনাফ ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর। এ ধরনের হাদীস মুস্তাফিযা পর্যায়ের , ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই আপনারা এরকম ও অন্যান্য হাদীসগুলো দেখতে পাবেন।
মাহদী (আঃ) ও তার জ্ঞান
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর তৃতীয় অধ্যায়ে লেখক হারিস ইবনে মুগাইরা আনসারী থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি আবু আব্দুল্লাহ হোসেইন ইবনে আলীকে জিজ্ঞেস করেন , “ কী নিদর্শনের ভিত্তিতে আমরা মাহদীকে চিনবো ? ”
তিনি বললেন : “ তার শান্তভাব ও ভাবগাম্ভীর্য থেকে। ”
আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম , “ কোন নিদর্শনের মাধ্যমে ? ”
তিনি বললেন , “ নিষিদ্ধ ও অনুমোদিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে এবং তার প্রতি মানুষের প্রয়োজনীয়তা দেখে ও অন্যদের কাছে তার পয়োজনীয়ত্রা দেখে। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 801 পৃষ্ঠায় ‘ দুররাতুল মাআরেফ ’ থেকে বর্ণনা করেছেন : “ মাহদী ‘ আনথাকিয়ার গুহা থেকে কিতাব (তাওরাত ও ইঞ্জিল) বের করে আনবেন এবং তাবারিয়া হৃদ থেকে যবুর বের করে আনবেন যা মুসা ও হারুনের পরিবার রেখে গেছে এবং যা ফেরেস্তারা বহন করেছিলো এবং ফলকসমূহ (পাথর ও কাঠের ফলক যেখানে ঐশী বাণী লেখা হয়েছিলো) এবং মূসা (আঃ)-এর লাঠি। এছাড়া মাহদী সব মানুষ থেকে জ্ঞানে ও অন্তরদৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠতর। ”
উল্লেখিত বইয়ে লেখক খাওয়ারাযমী থেকে , যার বর্ণনা ধারা আবু জাফর বাক্বির (আঃ)-পর্যন্ত পৌঁছেছে , যিনি মাহদীর বিষয়ে নবীর (সাঃ) অনুরূপ দেখতে হওয়া নিয়ে কথা বলছিলেন। তিনি বললেন , “ এবং সেসব নবীরা যা জমা রেখে গেছে তা বের করে আনবে। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক (3য় অধ্যায় , 9ম অংশে) আব্দুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেন , “ আমি হযরত আবু জাফর (বাক্বির)-কে জিজ্ঞেস করলাম মাহদী সম্পর্কে আমাকে জানানোর জন্য , এবং তিনি উত্তর দিলেন : “ আমি ক্বায়েম নই এবং সেও নয় যাকে তোমরা তাওয়াফ করেছো। ” আমি তাকে মাহদীর আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম তিনি উত্তরে বললেন , “ যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আচরণ করতেন। ”
মাহদী (আঃ) ও তার ন্যায়পরায়নতা
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর তৃতীয় অধ্যায়ে লেখক কাবুল আখবার থেকে বর্ণনা করেন যে , ‘ আমি নবীদের বইতে মাহদীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি যে তার আদেশসমূহ নীপিড়নমূলক ও সীমালংঘনমূলক নয়। ’
এরপর তিনি লিখেছেন : ইমাম আবু উমার ও মুক্কারী তাদের ‘ সুনান ’ -এ এবং হাফেজ আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ইবনে হেমাদও এ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মাহদীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ‘ ফুতুহাতুল মাক্কীয়াহ ’ র লেখক 363 নং অধ্যায়ে লিখেছেন : ‘ তিনি সম্পদ সমানভাবে বন্টন করবেন , জনগণের মাঝে ন্যায়বিচার করবেন এবং ঝগড়া বিবাদকে বন্ধু করবেন। ’
‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ লেখক 161 পৃষ্ঠায় ‘ ফুতুহাতুল মাক্কিয়াহ ’ থেকে বলেন : ‘ গবেষণায় দেখা যায় হযরত মাহদী সেই আদেশ দিবেন যা ফেরেশতারা দিবে এবং নিশ্চয়ই তার কাছে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর বিশ্বাসকে প্রকাশ করা হবে।
একই বিষয় দেখা যায় অন্য একটি হাদীসে যেখানে রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “ মাহদী আমাকে অনুসরণ করবে এবং সব ভুলের উর্ধ্বে থাকবে। ”
এভাবে রাসূল (সাঃ) আমাদের বুঝতে শিখিয়েছেন যে মাহদীর (আঃ) আদেশগুলো রাসূল (সাঃ) এরই আদেশ। কোন নতুন আবিষ্কার নয়। এছাড়া এটি প্রমাণ করে যে তিনি নির্ভূল বা মাসুম এবং সত্য ছাড়া কোন আদেশ দিবেন না।
এরপর লেখক বলেছেন : ‘ আল্লাহ তাকে ওহীর মাধ্যমে শুধু সত্যই জানাবেন তা নয় বরং তাকে কারও সাথে তুলনা করাও নিষিদ্ধ। ’
মাহদী (আঃ) ও তার উদারতা
‘ হুদাল ইসলামের ’ 25তম সংখ্যায় ইবনে মাজাহ থেকে একটি হাদীস যা আবু সাঈদ খদরী রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন :
“ নিশ্চয়ই মাহদী আমার উম্মাহ থেকে। ” এরপর তিনি বলেছেন , “ একজন ব্যক্তি তার কাছে যাবে এবং বলবে ‘ মাহদী আমাকে দিছু দান করুন। তখন সে তাকে সম্পদ ঢেলে দিবে এমন পরিমাণ যা সে বহন করতে পারে। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ লেখক 149 পৃষ্ঠায় আবু দাউদ এবং আবু আব্দুল্লাহ হাকেম নিশাবুরী থেকে ;‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 431 পৃষ্ঠায় তিরমিযী থেকে এবং তিনজনই আবু সাঈদ খুদরী থেকে রাসূল (সাঃ)-এর একই হাদীস হুবহু বর্ণনা করেছেন।
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 98 পৃষ্ঠায় আবু নাঈম থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেন : “ আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন। ” এরপর তিনি বললেন : “ সে প্রচুর পরিমাণ সম্পদ দান করবে। ” একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে ‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ 149 পৃষ্ঠায়।
এছাড়া ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 98 পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে আহমাদ এবং মুসলিম রাসূল (সাঃ) থেকে একটি হাদীস এনেছেন যেঃ “ সময়ের শেষে একজন খলিফা আসবে যে সম্পদ দান করবে প্রচুর পরিমাণে কোন সীমাবদ্ধতা ছাড়া। ”
একই হাদীস বর্ণিত হয়েছে ‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর 149 পৃষ্ঠায়।
মাহদী (আঃ) ও তার শাসন
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক আবু আব্দুল্লাহ ইবনে জওযীর ‘ তারিখ ’ থেকে এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন :
“ পৃথিবীর শাসনকর্তা ছিলো 4 জন। দু ’ জন বিশ্বাসী ও দু ’ জন অবিশ্বাসী। দু ’ জন বিশ্বাসী হলো যুলক্বারনাইন এবং সোলাইমান আর অবিশ্বাসী দু ’ জন হলো বাখতুন নাসর (নেবুযাদ নেযযার) এবং নমরুদ। শীঘ্রই আমার বংশ থেকে একজন এর (পৃথিবীর) নিয়ন্ত্রণ লাভ করবে। ”
ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 152 পৃষ্ঠায় বলেছেন : ‘ হাদীসে এসেছে মাহদী পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত মালিক হবেন। ’
লেখক বলেছেন : ‘ কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে তার শাসন পূর্ব ও পশ্চিমকে ঢেকে ফেলবে। ’
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক ‘ জওহারুল আক্বদাইন ’ থেকে এবং তিনি আলী থেকে বর্ণনা করেন :
“ যখন মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বংশ থেকে ক্বায়েম আত্মপ্রকাশ করবে আল্লাহ তার জন্য পূর্ব ও পশ্চিমের অধিবাসীদের একত্র করবেন। ”
মাহদী (আঃ) ও তার সংস্কার
আবু দাউদ তার ‘ সহীহ ’ -তে 4র্থ খণ্ডের 87 পৃষ্ঠায় আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , মাহদী (আঃ) ও তার বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ)
“ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনও বাকী না থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন। সে পৃথিবীকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
‘ নুরুল আবসার ’ -এর লেখক 231 পৃষ্ঠায় আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন : ‘ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম , মাহদী কি মুহাম্মাদের বংশ থেকে আসবে নাকি অন্য কোন বংশে ? ’
তিনি উত্তর দিলেন : “ না সে আসবে আমাদের থেকে। আল্লাহ ধর্মকে সম্পর্ণতা দিবেন তার হাতে ঠিক যেভাবে তিনি আমাদের দিয়ে তার প্রসার ঘটিয়েছেন। আমাদের বরকতে তারা (জনগণ) দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাবে যেভাবে তারা মূর্তিপূজা থেকে মুক্তি পেয়েছিলো। আমাদের বরকতে তাদের হৃদয়গুলোকে একতাবদ্ধ করবেন ষড়যন্ত্রমূলক শত্রুতার পর যেভাবে তিনি তাদের হৃদয়গুলোকে মূর্তিপূজার শত্রুতার পর একতাবদ্ধ করেছিলেন। আমাদের বরকতে তারা বিশ্বাসে ভাই হয়ে যাবে , পরস্পরের প্রতি শত্রু হওয়ার পর। ”
কিছু আলেম এ হাদীসটিকে হাসান (গ্রহণযোগ্য) এবং বর্ণনা ধারায় শ্রেষ্ঠতর বলে মনে করেছেন এবং হাদীসের বিশেষজ্ঞরা তাদের নিজ নিজ কিতাবে তা লিখেছেন। কিন্তু তাবরানী এটিকে শুধু উল্লেখ করেছেন তার ‘ ম ’ আজাম ’ (আউসাথ)-এ , আবু নাইম শুধু বর্ণনা করেছেন তার ‘ হুলিয়াতুল আউলিয়াতে ’ এবং আব্দুর রহমান শুধু তার ‘ আওয়ালী ’ তে। ”
মাহদী (আঃ ) ও তার বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ )
‘ ইকদুদ দুরারের ’ লেখক 1ম অধ্যায়ের 4র্থ অংশে আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলী থেকে বর্ণনা করেন :
“ মাহদী ‘ আশুরা ’ -র দিন আবির্ভূত হবেন (আর সেদিন ইমাম হোসেইন (আঃ) শহীদ হন কারবালাতে , সম্ভবত শনিবার দিন) রুকন ও মাক্বামের মাঝে এবং তার ডান দিকে থাকবে জিবরাইল ও তার বায়ে থাকবে মিকাইল। আল্লাহ তার শিয়াদের (অনুসারীদের) সব জায়গা থেকে তার চারদিকে জড়ো করবেন এবং পৃথিবী তাদের জন্য গুটিয়ে যাবে। ”
উল্লেখিত বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের চতুর্থ অংশে লেখক আবু আব্দুল্লাহ হাকেম এর ‘ মুসতাদয়াক ’ থেকে এবং তিনি উম্মে সালামা থেকে বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :
“ জনগণ রুকন ও মাকামের মাঝে ঐ ব্যক্তির বাইয়াত করবে যে আমার অনুসারীদের একজন এবং তাদের সংখ্যা ‘ বদর ’ -এর লোকদের সংখ্যার সমান হবে। ”
আবার একই বইয়ের 7ম অধ্যায়ে এর লেখক নাইম ইবনে হেমাদ এর ‘ আল ফাতান ’ থেকে এবং তিনি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন :
“ মাহদীর কাছে বাইয়াত করা হবে কোন মানুষকে তার ঘমু থেকে না জাগিয়েই এবং এক ফোটা রক্ত ঝরানো ছাড়াই। ”
‘ ফুতুহাতলু মাক্কীয়্যাহ ’ -র লেখক (366 অধ্যায়) মাহদীর কথা উল্লেখ করেন যে তিনি ফাতেমার বংশধর ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নামে তার নাম এবং তার প্রপিতামহ হাসান ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব এবং বলেন : “ জনগণ তার কাছে বাইয়াত করবে ‘ রুকন ’ ও মাকামের মাঝে। ”
প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) অদ্বিতীয়
আমরা এ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে (মাহদী (আঃ) সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের মন্তব্য উল্লেখ করার সময় ইবনে হাজার এর ‘ আল কুয়্যাল উল মুখতাসার ফী আলামাত মাহদী আল মুনতাযার ’ -এর মন্তব্য উল্লেখ করেছি :
“ প্রতীক্ষিত মাহদী একজনই এবং অনেক নয় ” ইবনে হাজারের কথা মূল্যবান মন্তব্য। নিশ্চয়ই তা উদ্দেশ্য পূর্ণ করেছে এবং বাস্তবতাকে জানিয়ে দিয়েছে।
নিশ্চয়ই প্রতীক্ষিত মাহদী এবং ‘ ক্বায়েম ’ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশ থেকে এবং তিনিই সে ব্যক্তি যার কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। সম্মানিত নবী ও তার আহলে বায়েত তার আগমন সম্পর্কে সুসংবাদ দিয়েছেন , সাহাবীরা এবং তাবেঈন ও বিজ্ঞ ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে তিনি (মাহদী) একজনই এবং অদ্বিতীয়। তিনি অনেকজন নন যদিও তার উপাধি বেশ ক ’ টি।
যে হাদীসগুলো আমরা আগে উল্লেখ করেছি এবং যা আমরা আগামীতে উল্লেখ করবো তা সামনের অধ্যায়গুলোতে বিষয়টির সত্যতার ইঙ্গিত করে। নিশ্চিতভাবে এ হাদীসগুলো সব ভুল বুঝাবুঝি দূর করবে এবং মাহদী সম্পর্কে কোন সন্দেহকারীর মনে কোন সন্দেহ থাকবে না যে তিনি একজন ও অদ্বিতীয়।
আমরা যে হাদীসগুলো লিখেছি এবং যে হাদীসগুলো আমরা উল্লেখ করবো সেগুলো মাহদীকে (আঃ) পরিচয় করিয়ে দিবে , সত্যায়ন করবে ও আলাদা করে চিনিয়ে দিবে ; আর তাই মাহদীর (আঃ) সংখ্যা একের অধিক বলে বিবেচনা করা হবে অযৌক্তিক। এখন আমরা সেসব চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করবোঃ
প্রথম : তার বাড়ি ও পরিবারের সুনির্দিষ্ট পরিচয়।
দ্বিতীয় : তার পিতা ও পিতামহদের পরিচয়।
তৃতীয় : তার পিতা ও মাতার নাম।
চতুর্থ : তার নাম , ডাকনাম ও উপাধি।
পঞ্চম : তার গুণাবলী ও নিদর্শনসমূহ।
ষষ্ঠ : তার নৈতিকতা ও আচার-ব্যাবহার।
সপ্তম : তার আত্মগোপন ও তার দীর্ঘ সময়।
অষ্টম : তার আগমন সময়ের শেষে।
নবম : সেসব ঘটনা যা তার পুনরাগমনে ঘটবে।
দশম : তার পুনরাগমনের সময় দাজ্জাল ও সুফিয়ানীর আগমন।
এগারতম : তার কাছে রুকন ও মাক্বামের মাঝে বাইয়াত।
বারোতম : ঈসার (আঃ) অবতরণ ও তার পিছনে নামাজ।
তেরতম : তার সংস্কার কার্যক্রম।
চোদ্দমত : তার আবির্ভাবে বরকত।
পনেরতম : যেসব বিষয়ে জনগণকে আদেশ করবেন।
ষোলতম : তার যদ্ধসমূহ ও বিজয়সমূহ।
সতেরোতম : তার সরকারের প্রসার ও শাসন।
আঠারোতম : তার খিলাফত ও নেতৃত্বের সময়কাল।
উনিশতম : তার ইন্তেকাল বা গুপ্ত হত্যার পরিবেশ পরিস্থিতি। ’
বিশতম : তার পুনরাগমনের পর কিছু মতৃ ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন।
তাওরাত ও বাইবেলে নবী (সাঃ)-এর কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণিত হয়েছে। সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে তার পন্থা , আচার-ব্যবহার , অন্তর্দৃষ্টি , বংশধারা এবং পরিবার রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিমের কেউই এসব বৈশিষ্ট্যকে বিভিন্ন মুহাম্মাদের বলে ভাবে নি।
লেখক বলতে চান , ‘ আমার মনে হয় (যদিও মনে হওয়াটা সত্য চাওয়া থেকে কাউকে মুক্ত করে দেয় না) বিভিন্ন মাহদী আসবেন এ ধারনার উৎস তিনটি :
প্রথমতঃ শাসন কতর্তৃ , সরকার গঠনে এবং রাজ্য ও খিলাফতের আকর্ষণে হয়তো কেউ কেউ এ দাবী করতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ এটি হয়তো কোন সুফী তরিকায় প্রথম আবির্ভার্ব হয়েছে যেখানে বিশেষ খিলাফত লাভে ব্যর্থ হয়ে তারা বিভিন্ন মাহদী আবিষ্কার করেছে।
তৃতীয়তঃ বনি উমাইয়্যার কিছু অনুসারী যখন এমন কিছু হাদীস লক্ষ্য করেছে যেখানে মাহদীর কথা বলা হয়েছে এবং তারা ভেবেছে মাহদী মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর বংশ থেকে এবং ফাতেমার বংশ ও হোসেইনের বংশ থেকে এবং হযরত হাসান আসকারীর সন্তান- একথা তারা ঘোষণা করতে বাধ্য হবে যা ছিলো তাদের জন্য খুবই কষ্টকর এবং তাদের লক্ষ্য পরিপন্থী। তখন তারা বিভিন্ন মাহদীতে বিশ্বাস করা শুরু করেছে।
এ বিষয়ে অন্য কথাও পাওয়া যায় যা যুক্তিহীন যেমন , মাহদী আব্বাস- এর বংশধর এবং হাসান আল মুজতবার সন্তান থেকে অথবা তার জন্ম হবে পরে। এগুলোর সবগুলোর মূল কারণ হচ্ছে উপরের তিনটি কারণের একটি।
চতুর্থ অধ্যায়
মাহদী (আঃ) ও তার সম্মান
‘ ইকদুদ-দুরার ’ -এর প্রথম অধ্যায়ে লেখক আবু আইউব আনসারী থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফাতিমা (আঃ)- কে বলেছেনঃ
“ আমাদের নবী নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সে তোমার পিতা। আমাদের শহীদ শহীদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং সে হলো হামযা , তোমার পিতার চাচা এবং আমাদের কাছ থেকে সে যার দু ’ টো পাখা আছে এবং তাদের (ফেরেশতাদের) সাথে উড়ে বেড়াবে বেহেশতের যে জায়গায় তার ইচ্ছা এবং আমাদের কাছ থেকে এ উম্মতের দুই সেব্ত (সন্তান) হাসান ও হোসেইন এবং তারা তোমার সন্তান এবং আমাদের কাছ থেকে আসবে মাহদী। ”
এরপর তিনি লিখেছেনঃ ‘ হাফেয আবুল ক্বাসিম তাবরানী এ হাদীসটি তার ‘ মু ’ আজাম-এ সগীর ’ এ বর্ণনা করেছেন। ’
এ বইয়ের লেখক বলতে চান - কী সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বই না আল্লাহ প্রতীক্ষিত মাহদীকে দান করেছেন যে তার সত্যবাদী ও মহান প্রপিতামহের ভাষায় তিনি এমন এক পরিবারের একজন যাদের কাছ থেকে আল্লাহ অপবিত্রতা দূর করেছেন এবং তাদেরকে পুতঃপবিত্র করেছেন।
মাহদী (আঃ) ও তার উচ্চ মর্যাদা
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক (প্রথম অধ্যায়) আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন- “ ঈসা ইবনে মারইয়াম তার দৃষ্টিতে যখন প্রথম দেখলেন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশধর ক্বায়েমকে কী দান করা হবে তখন তিনি বললেনঃ ইয়া রাব , আলে মুহাম্মাদের ক্বায়েমের মর্যাদা আমাকে দান করুন। তাকে বলা হলো- ‘ সে আসবে আহমাদের সন্তান থেকে। ’ এরপর তিনি দ্বিতীয়বার দেখলেন এবং প্রথমে যা দেখেছিলেন তা-ই দেখলেন। তিনি আবারও একই জিনিস চাইলেন এবং একই উত্তর শুনলেন। তিনি তৃতীয়বারের মত তাকালেন এবং আগের মতই সব দেখলেন। তিনি আবারও অনুরোধ করলেন এবং একই উত্তর পেলেন। ”
এছাড়া ‘ ইকদুদ দুরার ’ - এর লেখক সালেম আশাল থেকে বর্ণনা করেন- আমি ঠিক এ ধরনের একটি হাদীস শুনেছি যে আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আঃ) বলতেন-
“ হে মাহদী , হে প্রতীক্ষিতজন , হে আলে মুহাম্মাদের ক্বায়েম , তোমার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত হোক। কী ঐশী মর্যাদাই না আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেন এবং নির্ধারিত করেছেন ; আর এটিকে শ্রেষ্ঠতর করেছেন তোমার মর্যাদার জন্য ঐ পর্যন্ত যখন আল্লাহর সাথে নিভৃতে আলাপকারী দু ’ জন মূসা ইবনে ইমরান এবং রুহুল্লাহ ঈসা ইবনে মরিয়ম চেয়েছিলেন তোমার এ উচ্চ মর্যাদা পেতে যদিও তাদের ছিলো উচ্চ ঐশী মর্যাদা । যাহোক , আল্লাহ তাদের ইচ্ছাকে গ্রহণ করেন নি। যখন তারা দু ’ জনই তাকিয়েছিলো তোমার ঐশী মর্যাদার দিকে , যা তোমাকে আল্লাহ দান করেছেন , তখন তারা মগ্ধু হয়ে গেলো এবং এ মর্যাদা তাদেরকেও দানের জন্য আল্লাহকে অনুরোধ জানালো। কিন্তু তারা যে উত্তর পেলো তা হলো- ‘ একমাত্র আলে মুহাম্মাদের ক্বায়েম ছাড়া এ মর্যাদা কেউ পাবে না।
তখন তারা মাহদীর অস্তিত্ব ও আবির্ভাবের কারণে যে প্রতিক্রিয়া ঘটবে (অথার্ৎ সত্য বিশ্বাস পূর্ব ও পশ্চিমে বিজয় লাভ করবে , সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং নৃশংসতা ও অত্যাচার ধ্বংস হবে) , তার দিকে তাকালেন , তারা আল্লাহকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন এর প্রতিক্রিয়া তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় আসুক এবং তাদের প্রচার কাজের ফলাফল হিসাবে আসুক। কিন্তু তাদেরকে বলা হয়েছিলো ‘ এ উচ্চ মর্যাদা শুধু আলে মুহাম্মাদের কায়েমের জন্য নিধারিত ’ । ”
মাহদী (আঃ) ও ঈসা (আঃ)
বোখারী তার ‘ সহীহ ’ র 2য় খণ্ডে 158 পৃষ্ঠায় আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “ তোমাদের অবস্থান তখন কী হবে যখন মারইয়ামের পুত্র তোমাদের মাঝে অবতরণ করবে এবং তোমাদের ইমাম তোমাদের মাঝ থেকে আসবে ? ”
একই হাদীস একই সূত্র থেকে বর্ণনা করেছেন মুসলিম।
‘ ইকদুদ দুরার ’ - এর লেখক (প্রথম অধ্যায়ে) হাফেজ আবু নাঈম ইসফাহানীর ‘ মানাক্বেবুল মাহদী ’ থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে , তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ “ আমাদের কাছ থেকেই সেই ব্যক্তি যার পিছনে ঈসা নামাজ পড়বেন। ”
এ বিষয়ে হাদীস অনেক রয়েছে এবং তার ইমামত , মর্যাদা ও নেতৃত্ব সম্পর্কে যা বর্ণনা করেছি তা যথেষ্ট।
গাঞ্জী তার কিতাব ‘ বায়ান ’ - এ নামাজ সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন- যদি কেউ বলেঃ এ হাদীসের সত্যতা যে ঈসা (আঃ) মাহদী (আঃ)- এর পিছনে নামাজ পড়বেন এবং তার পাশে থেকে যুদ্ধ করবেন এবং ঈসা মাহদীর উপস্থিতিতে দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং নামাজের সময় ঈসার উপরে মাহদীর অগ্রাধিকার থাকবে এগুলো সবই সুপরিচিত , তাহলো একইভাবে ‘ জিহাদ ’ এর সময়ও তার মর্যাদা ঈসার চাইতে বেশী হবে।
এ হাদীসসমূহের সত্যতা আহলে সূন্নাতের কাছে দৃঢ় এবং একইভাবে শিয়ারাও তা বর্ণনা করেছে।
মাহদী (আঃ) ও উম্মাহ
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণনা করেন আবু উমার মুক্কারী থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে , যিনি সুফিয়ানী ও তার খারাপ কাজের ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেনঃ
“ একটি উচ্চ কন্ঠ শোনা যাবে আকাশ থেকে - এক ধমকের কন্ঠ- ‘ হে জনগণ , নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে অত্যাচারী , মোনাফেক ও তাদের অনুসারীদের হাত কেটে ফেলেছেন এবং মুহাম্মাদ-এর উম্মাহ থেকে সর্বশ্রেষ্ঠকে তোমাদের পথ প্রদর্শক বানিয়েছেন , তাকে মক্কায় খোজঁ কর। নিশ্চয়ই সেই হলো মাহদী। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ - এর লেখক (7ম অধ্যায়) ইমাম আহমদের ‘ মুসনাদ ’ ও হাফেয আবু নাঈমের ‘ আওয়ালী ’ থেকে এবং এ দু ’ জন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন- রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
“ ধ্বংস সে উম্মাহর জন্য নয় যার প্রথম হচ্ছি আমি , এর শেষ হচ্ছে ঈসা এবং মধ্যবর্তী হচ্ছে মাহদী। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক ’ - এ আবু নাঈম- এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে যে , রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “ এক জাতি যার প্রথম জন আমি। যার শেষ জন ঈসা ইবনে মরিয়ম এবং মধ্যবর্তী জন মাহদী তা কখনোই ধ্বংস হবে না। ”
একই হাদীস পাওয়া যায় ইসাফুর রাগেবীনের 151 পৃষ্ঠায়।
‘ ইকদুদ দুরার ’ - এর লেখক (7ম অধ্যায়) নাসাঈ-র ‘ সূনান ’ থেকে এবং তিনি আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
“ ধ্বংস সে জাতির নেই যার প্রথম জন হচ্ছি আমি , মাহদী হচ্ছে মধ্যবর্তী জন ও মসিহ হচ্ছে শেষ জন। ”
মাহদী (আঃ) ও বেহেশত
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক (7ম অধ্যায়) ইবনে মাজাহ , তাবরানী , আবু নাঈম এবং অন্যান্যদের কাছ থেকে , তারা আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমরা আব্দুল মোত্তালিবের সাত জন সন্তান- আমার ভাই আলী , জাফর , হাসান , হোসেইন , মাহদী এবং আমি বেহেশতের মানুষদের সর্দার। ”
নাহাজুল বালাগাতে আলী (আঃ) বলেছেনঃ “ জেনে রাখো , হে আল্লাহর সৃষ্ট জীবেরা , যে আল্লাহকে ভয় করে তাকে অবশ্যই ফিতনা থেকে বের হওয়ার পথ দেখানো হবে এবং তার অন্ধকারে তাকে একটি নূর দান করা হবে। সে যা চাইবে তা তাকে দেয়া হবে। এছাড়া আল্লাহ তাকে প্রাসাদ দেবেন তার কাছে এক সুন্দর জায়গায় , একটি প্রাসাদ যা সে নিজেই নির্মাণ করেছে। তার ছাদ হবে তাঁর আরশ এবং এর উজ্জ্বলতা হবে তার নিজের সত্তা। ফেরেশতারা তার দর্শনার্থী হবে এবং নবীরা তার বন্ধু হবে। ”
এ বইয়ের লেখক বলতে চান - বেহেশত হচ্ছে একটি জায়গা যা আল্লাহ তাঁর অনুগত দাসদের জন্য তৈরী করেছেন। তাই এর অধিবাসীরা হচ্ছে সবচেয়ে ভালো ও সবচেয়ে পরহেযগার। সেখানে থাকবে নবীরা , রাসূলরা , বিভিন্ন বিশ্বাসী ও শহীদরা , এদের সাথে মাহদী হবে বেহেশতের সাত জন সর্দারের একজন। আর বড় সর্দার বলতে এখানে বয়সের কথা বলা হয় নি বলা হয়েছে আধ্যাত্মিকতার কথা।
‘ নুরুল আবসার ’ - এর লেখক 229 পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ ইবনে শিরউইয়্যাহ তার ‘ ফিরদাউস ’ কিতাবে লিখেছেন- “ ইবনে আব্বাস বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী হচ্ছে বেহেশতের বাসিন্দাদের মাঝে ময়ুরের মত। ”
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ র লেখক এ ধরনের একটি হাদীস ‘ কানযুল দাক্বায়েক্ব ’ থেকে এবং তা আহমাদ ইবনে হাম্বাল থেকে বর্ণিত হয়েছে।
মাহদী (আঃ) ও আত্মসমপর্ণ
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়তে আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে যিনি বলেছেন- এক ব্যক্তি একবার আবু জাফর মুহাম্মাদ ইবনে আলীর সাথে সাক্ষাত করলো এবং বললো- এ 500 দিরহাম আমার কাছ থেকে আমার সম্পদের যাকাত হিসেবে নিন। আবু জাফর বললেন “ ওগুলো তুলে নাও এবং সেগুলোকে তোমার মুসলিম প্রতিবেশী ভাইদের দাও যারা খুব অভাবে আছে। ” এরপর তিনি বললেন , “ যখন আমাদের বংশ থেকে মাহদী আত্মপ্রকাশ করবে সে সমানভাবে সম্পদ বন্টন করবে এবং জনগণের সাথে ন্যায়পরায়ণ আচরণ করবে। অতএব যে তাকে মেনে চলবে সে আল্লাহকে মেনে চললো এবং যে তার অবাধ্য হলো সে আল্লাহর অবাধ্য হলো। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ে হাফেজ আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
“ এক আহবানকারী আকাশ থেকে ডাক দিবে এভাবে- ‘ জেনে রাখো , আল্লাহর দাসদের মাঝে তাঁর বাছাইকৃত হচ্ছে অমুক। তাই তার কথা শোন ও তাকে মেনে চলো। ”
একই হাদীস এসেছে উক্ত বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে এবং এর লেখক বলেছেন অমুক বলতে ‘ মাহদী ’ -কে বোঝানো হয়েছে।
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (435 পৃষ্ঠায়) ইবনে মাজাহ থেকে , যিনি ইবনে উমার থেকে , যিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ
“ ফেরেশতারা আকাশ থেকে ডেকে উঠবে এবং জনগণকে তার প্রতি উৎসাহিত করবে এবং বলবে- নিশ্চয়ই মাহদী আত্মপ্রকাশ করেছে। তাকে মেনে চলো। ”
মাহদী (আঃ) ও সত্য
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক (সপ্তম অধ্যায়ে) বর্ণনা করেছেন আবুল কাসেম তাবরানীর ‘ মুয়াজাম ’ , আবু নাঈম ইসফাহানীর ‘ মানাকিবুল মাহদী ’ এবং হাফেয আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে , যারা আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে , যিনি বলেছেনঃ
“ যখন আহবানকারী আকাশ থেকে ডাকবে যে , সত্য পাওয়া যাবে মুহাম্মাদের পরিবারে , মাহদী সেই মুহূর্তে আত্মপ্রকাশ করবে। ”
উল্লেখিত বইয়ের (অংশ 3 , অধ্যায় 7) লেখক বর্ণনা করেন আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে যে- “ যখনই আহবানকারী আকাশ থেকে ডেকে উঠবে যে মুহাম্মাদের পরিবারের সাথে সত্য রয়েছে , মাহদী তখন আসবে। ”
‘ আল মূসাউইয়্যাহ ’ -র লেখক লিখেছেন- আহমাদ ইবনে মূসা ইবনে মারদুইয়্যা বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্র থেকে , রাসূল (সাঃ)- এর স্ত্রী আয়শা থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকেঃ
“ সত্য আলীর সাথে এবং আলী সত্যের সাথে। এ দু ’ য়ের মাঝে কখনোই বিচ্ছেদ ঘটবে না যতক্ষণ না তারা আমার সাথে হাউযে কাউসারে সাক্ষাত করে। ”
মাহদী (আঃ) এবং তার খিলাফত
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক (8ম অধ্যায়ে) বর্ণনা করেন হাফেয আবু নাঈম থেকে এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আবির্ভূত হবে এবং তার উপরে থাকবে একটি মেঘ যেখান থেকে একজন ফেরেশতা ডাক দিয়ে বলবে- ‘ নিশ্চয়ই এ ব্যক্তিই মাহদী , ঐশী উত্তরাধিকারী (খলিফা) , অতএব তাকে মেনে চলো। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীনে ’ র লেখক 153 পৃষ্ঠায় বলেছেন- হাদীসসমূহ উল্লেখ করে যে তার আবির্ভাবের সময় ফেরেশতারা ডেকে উঠবেঃ “ এ হলো মাহদী , ঐশী প্রতিনিধি , অতএব তাকে মেনে চলো। তখন জনগণ তার সাথে যোগদান করবে। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 447 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন আবু নাঈমের ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ থেকে , তিনি আবু উমার থেকে যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আবির্ভূত হবে এবং একজন ফেরেশতা তার মাথার উপর থেকে চীৎকার করে বলবে- ‘ এ হলো মাহদী আল্লাহর প্রতিনিধি , অতএব তাকে অনুসরণ করো। ”
মাহদী (আঃ) ও তার কাছে বাইয়াত
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক (পরিচ্ছদ 3 , 9ম অধ্যায়ে) বর্ণনা করেন আবু উমারের সুনান , উসমান ইবনে সাইদ মুক্কারী এবং হাফেয আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে , যিনি বর্ণনা করেছেন ইসহাক ইবনে আউফ থেকে , যিনি বলেছেন , মাহদীর পতাকায় লেখা থাকবেالبیعة (আল বাইয়াত বা আল্লাহর জন্য চুক্তি) ‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখকও এ ধরনের একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন 435 পৃষ্ঠায়।
মাহদী (আঃ) ও ফেরেশতারা
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক (8ম অধ্যায়ে) বর্ণনা করেছেন আবু উমার ও উসমান ইবনে সাঈদ থেকে যারা বর্ণনা করেছেন হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে যে রাসূল (সাঃ) মাহদী সম্পর্কে এবং রুকন ও মাক্বামের মাঝে তার কাছে জনগণের বাইয়াত গ্রহণ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বলেনঃ
“ জিবরাইল তার সামনে এগিয়ে আসবে এবং মিকাইল থাকবে তার ডান দিকে। আকাশসমূহ ও পৃথিবীর বাসিন্দারা এবং পশু- পাখিরা তার উপস্থিতিতে খুশী হয়ে উঠবে। ”
ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 152 পৃষ্ঠায় লিখেছেন- হাদীসে এসেছে যে , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মাহদীকে সমথর্ন দিবেন 3 ,000 ফেরেশতা দিয়ে এবং আসহাবে কাহাফ তার সাহায্যকারীদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে।
মাহদী (আঃ) ও আসহাবে কাহাফ
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক 7ম অধ্যায়ে লিখেছেন যে- ইমাম আবু ইসহাক্ব সুলবি তার কোরআনের তাফসীরে আসহাবে কাহাফ সম্পর্কে বলেছেন- ‘ তারা তাদের ঘুমের জায়গায় চলে গেলো এবং সময়ের শেষ পর্যন্ত থাকবে মাহদীর আবির্ভার্ব পর্যন্ত । এরপর আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করবেন। এরপর আবার তারা তাদের ঘুমের জায়গায় ফেরত যাবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত জাগবে না। ’ তাফসীরে এ আয়াতের অধীনে তিনি বলেছেনঃ রাসূলুলাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ নিশ্চয়ই মাহদী (আঃ) গুহার লোকদেরকে সালাম জানাবে এবং আল্লাহ সবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদেরকে জীবিত করবেন। তখন তারা সালামের উত্তর দিবে। এরপর তারা তাদের জায়গায় ফেরত যাবে কিয়ামত পর্যন্ত আর জাগবে না। ”
লেখক বলতে চান , সম্ভবত আল্লাহ তাদেরকে জীবিত করবেন এ কারণে যে তারা মাহদীর হাতে বাইয়াত করবেন। ইসাফুর রাগেবীনের লেখক বলেন হাদীস অনুযায়ী তারা তার সাহায্যকারী ও সাথী হবেন।
মাহদী (আঃ) আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ)
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (448 পৃষ্ঠায়) হাসান ইবনে খালিদের ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ থেকে এবং তিনি আলী ইবনে মূসা আল-রিদা (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন- “ যে পরহেযগার নয় তার কোন ধর্ম নেই। নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝে সেই আল্লাহর সামনে সবচেয়ে মর্যাদাবান যে সবচেয়ে পরহেযগার। ’ এরপর তিনি বললেন , ‘ আমার বংশে চতুর্থতম সন্তান হচ্ছে দাসীদের নেত্রীর সন্তান। তার মাধ্যমে আল্লাহ পৃথিবীকে প্রত্যেক নৃশংসতা ও নিপীড়ন থেকে মুক্ত করবেন। সে সেই জন যার জন্ম হয়েছে কিনা তা নিয়ে জনগণ সন্দেহ করবে এবং তার জন্য থাকবে এক আত্মগোপনকাল। যখন সে আত্মপ্রকাশ করবে , পৃথিবী ঐশী আলোতে আলোকিত হয়ে যাবে এবং জনগণের মাঝে ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লা প্রতিষ্ঠিত হবে এমনভাবে যে , কেউ অন্যকে নিপীড়ন করবে না। নিশ্চয়ই সে সেইজন যার জন্য পৃথিবী গুটিয়ে যাবে এবং তার কোন ছায়া থাকবে না। সে সেইজন যার বিষয়ে আকাশ থেকে এক আহবানকারী ডেকে উঠবে এবং পৃথিবীর প্রত্যেক বাসিন্দা শুনতে পাবে-
‘ জেনে রাখো আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ) আল্লাহর ঘরের কাছে আত্মপ্রকাশ করেছে। অতএব তাকে অনুসরণ কর যেহেতু সত্য তার ভেতরে ও তার সাথে আছে। ”
মাহদী (আঃ) ও ধর্মের পূর্ণতা
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 97 পৃষ্ঠায় আবুল ক্বাসিম তাবারানী থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যেঃ “ মাহদী আমাদের কাছ থেকে। ধর্ম তার মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে যেভাবে তা আমাদের মাধ্যমে প্রসার পেয়েছে। ”
ইসাফুর রাগেবীনের লেখক একই হাদীস বর্ণনা করেছেন 148 পৃষ্ঠায় সাইয়্যেদ মুমিন- ইবনে-হাসান শাবলনজি ‘ নুরুল আবসার ’ -এ বর্ণনা করেন (231 পৃষ্ঠায়) আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে যিনি বলেছেনঃ
“ আমি আল্লাহর রাসূলকে জিজ্ঞাসা করলাম যে মাহদী আমাদের কাছ থেকে , মুহাম্মাদের পরিবার থেকে আসবে , না কি অন্য কোন পরিবার থেকে ? তিনি বললেন , ‘ না , বরং সে আসবে আমাদের কাছ থেকে। তার মাধ্যমে আল্লাহ ধমর্কে পূণঃ প্রতিষ্ঠিত করবেন যেভাবে তিনি আমাদের মাধ্যমে এর প্রসার ঘটিয়েছেন। ”
বিষয়টি আরও শক্তিশালী হয় বেশ কিছু মুসতাফিযা হাদীসের মাধ্যমে যেগুলো ইঙ্গিত করে যে ধর্ম পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হবে না যতক্ষণ না 12জন খলিফা আসেন এবং প্রস্থান করেন। ইবনে আবিল হাদীদ মুসলমানদের ঐক্যমত বর্ণনা করেছেন যে দায়িত্ব শেষ হবে না মাহদীর মাধ্যমে ছাড়া। আর এভাবে বোঝা যায় যে তিনি ওয়াসীদের মধ্যে শেষ জন এবং ইসলাম ধর্ম তার কাছে গিয়ে শেষ হবে , যেভাবে তার প্রপিতামহ ছিলেন শেষ নবী এবং ধর্ম তার কাছে থেকেই শুরু হয়েছিলো।
মাহদী (আঃ) 12তম খলিফা (প্রতিনিধি)
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (447 পৃষ্ঠায়) ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ থেকে এবং তা বর্ণনা করে সাইদ ইবনে জুবায়ের থেকে , যিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ নিশ্চয়ই আমার প্রতিনিধি ও উত্তরাধিকারীরা হলো আমার পরে জনগণের উপর আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ) এবং তারা সংখ্যায় 12জন। তাদের প্রথম জন আলী এবং তাদের শেষ জন আমার সন্তান মাহদী। ”
মাহদী (আঃ) 12তম ওয়াসী (অসিয়ত সম্পাদনকারী)
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (486 পৃষ্ঠায়) খাওয়ারাযমীর ‘ মানাকিব ’ থেকে বর্ণনা করেন তিনি আলী ইবনে মূসা আল-রিদা থেকে , তিনি তার পিতা থেকে এবং তিনি তার পিতা থেকে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার নিজের গুণাবলী এবং তার পরিবার ও তার মেরাজ সম্পর্কে কিছু বলার সময় বলেছেন , আমি জিজ্ঞেস করলাম-
‘ হে আমার রব , কারা আমার ওয়াসী ? ’ তখন একটি কন্ঠস্বর শোনা গেলো। বললো- ‘ তোমার ওয়াসী হলো তারা যাদের নাম আমার আরশে লেখা রয়েছে। ’ এরপর , আমি তাকিয়ে দেখলাম বারোটি নূর যার প্রত্যেকটির উপর আমার ওয়াসীর নাম সবুজ রং দিয়ে লেখা ছিলো। তাদের প্রথম জন আলী এবং শেষ জন ‘ ক্বায়েম ’ । ”
উক্ত বইয়ের লেখক (486 পৃষ্ঠায়) খাওয়ারাযমীর ‘ মানাক্বিব ’ থেকে তিনি আবু সুলাইমান থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ যে রাতে আমাকে আকাশে নিয়ে যাওয়া হলো (এবং তিনি বললেন ঐ পর্যন্ত যখন আল্লাহ বললেন) : ‘ হে মুহাম্মাদ , তুমি কি তাদের সাথে সাক্ষাত করতে চাও ? ’ আমি উত্তরে বললাম , ‘ জ্বী , হে আমার রব। ’ তখন আল্লাহ বললেন , “ আরশের ডান দিকে তাকাও। ” যখন আমি তাকালাম হঠাৎ দেখলাম আলী , হাসান , হোসেইন , আলী ইবনে হোসেইন , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , মূসা ইবনে জাফর , আলী ইবনে মূসা , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মাদ , হাসান ইবনে আলী এবং মুহাম্মাদ ইবনে হাসান মাহদীকে দেখলাম , তাদের মধ্যে সম্ভবত মাহদী জ্বলজ্বল নক্ষত্রের মত দেখা গেলো। তখন তিনি বললেন ‘ হে মুহাম্মাদ , তারা আমার দাসদের উপর আমার হুজ্জাত (প্রমাণ) এবং তারা তোমার ওয়াসী। ”
একই বইয়ে লেখক (487 পৃষ্ঠায়) ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ থেকে তিনি সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুলাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ নিশ্চয়ই আমার ওয়াসী ও আমার পরে জনগণের উপর আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ) সংখ্যায় বারো জন। তাদের প্রথম জন আমার ভাই এবং তাদের শেষ জন আমার সন্তান। লোকজন জিজ্ঞেস করলো- ‘ কে আপনার ভাই ? ’ তিনি বললেন- ‘ আলী ’ ; আবার তাকে জিজ্ঞেস করা হলো , কে আপনার সন্তান ? তিনি বললেন- ‘ মাহদী ’ । ”
একই বইয়ের (487 পৃষ্ঠায়) লেখক ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , “ আমি নবীদের সর্দার এবং ওয়াসীদের সর্দার। নিশ্চয়ই আমার পরে ওয়াসীদের সংখ্যা বারো জন। তাদের প্রথম জন আলী এবং শেষ জন মাহদী। ”
মাহদী (আঃ) 12তম ইমাম
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (492 পৃষ্ঠায়) খাওয়ারাযমীর ‘ মানাক্বিব ’ থেকে এবং তিনি আবু আব্দুল্লাহ হোসেইন ইবনে আলী থেকে বর্ণনা করেনঃ
“ একবার যখন আমি আমার নানার সাথে দেখা করলাম রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে তার কোলে বসালেন এবং এরপর বললেন , ‘ আল্লাহ তোমার পিঠ থেকে নির্বাচন করবেন নয়জন ইমামকে , তাদের মধ্যে নবম জন হবে ‘ ক্বায়েম ’ । তাদের পত্যেকের মান ও মর্যাদা আল্লাহর কাছে একই। ”
একই বইয়ে লেখক বর্ণনা করেন (493 পৃষ্ঠায়) খাওয়ারাযমীর উল্লেখিত বই থেকে এবং তিনি আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমার পরে ইমামদের সংখ্যা বারো জন। তাদের প্রথমজন তুমি (আলী) এবং তাদের শেষ জন হবে ‘ ক্বায়েম ’ যার মাধ্যমে আল্লাহ পূর্ব ও পশ্চিমকে মুক্ত করবেন। ”
মাহদী (আঃ) যুগের ইমাম
আলী (আঃ) নাহজুল বালাগাতে বলেছেন- পৃথিবী আল্লাহর হুজ্জাত ও ক্বায়েম ছাড়া থাকবে না। সে হয় প্রকাশ্য ও সুপরিচিত থাকবে অথবা গোপন এবং (শত্রুদের কারণে) ভীত থাকবে। ” তাফতাযানী একই বিষয় বর্ণনা করেছেন আলী (আঃ) থেকে।
একটি বিখ্যাত হাদীস রয়েছে যা শিয়া ও সুন্নী উভয়ের কাছে সুপরিচিত ও এর সত্যতার বিষয়ে উভয় মাযহাবে কোন বিরোধিতা নেই তাহলো রাসূল (সাঃ) বলেছেন- “ যে ব্যক্তি তার যুগের ইমামকে না জেনে মারা গেলো সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করলো। ”
প্রশ্ন হলো বর্তমান যুগের ইমাম কে ?
বোখারী তার ‘ সহীহ ’ তে মুসলিম থেকে বর্ণনা করেন তিনি জাবির ইবনে সামারা থেকে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ ধর্ম সুসংহতভাবে চলতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত এবং কুরাইশ থেকে 12জন উত্তরাধীকারী যারা জনগণের অভিভাবক থাকবে , তারা আসবে এবং চলে যাবে। ”
আলী ইবনে মুহাম্মাদ এ একই হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং শেষ করেছেন এ বলে যে “ নয় জন আসবে হোসেইনের পিঠ থেকে এবং মাহদী তাদের একজন। ”
আব্দুর রহমান ইবনে সামারা বলেন , “ আমি রাসূল (সাঃ)-কে বললাম- ‘ আমাকে নাজাতের পথ দেখান। ’ তিনি বললেন- ‘ হে সামারার সন্তান , যখন আকাঙ্ক্ষা বিভিন্ন রকম হয়ে যায় এবং মতামত বিভিন্ন হয় তোমার দায়িত্ব আলী ইবনে আবি তালিবের সাথে থাকা। নিশ্চয়ই সে আমার উম্মতের নেতা এবং আমার পরে আমার প্রতিনিধি--- নিশ্চয়ই তার কাছ থেকে আমার উম্মতের ইমামরা আসবে এবং বেহেশতের যুবকদের দুই সর্দার (হাসান ও হোসেইন) এবং হোসেইনের কাছ থেকে আসবে নয়জন বংশধর যাদের শেষ জন হবে আমার উম্মতের ‘ ক্বায়েম ’ । ”
এছাড়া ইবনে মুগাযালি আবু ইমামাহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , “ আমার পরে ইমামদের সংখ্যা 12জন এবং তাদের প্রত্যেকেই কুরাইশ বংশ থেকে। নয় জন হোসেইনের পিঠ থেকে এবং তাদের একজন মাহদী। ”
এছাড়া আবু সালেহ বর্ণনা করেছেন যায়েদ ইবনে সাবিত থেকে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “ পৃথিবী শেষ হবে না যতক্ষণ না হোসেইনের বংশ থেকে একজন আবির্ভূত হবে উম্মতের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো।
আমরা জিজ্ঞেস করলাম , ‘ কে সেই ব্যক্তি ? ’
তিনি বললেন , ‘ সে নবম ইমাম , হোসেইনের বংশ থেকে ’ । ”
আরেকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে হাসান ইবনে আলী রাযী থেকে যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ হাদীসের শেষে বলেছেনঃ “ নিষ্পাপ ও ত্রুটিমুক্ত নেতারা আবির্ভূত হবে হোসেইনের বংশ থেকে। তাদের একজন হবে মাহদী এবং সে সেই ব্যক্তি যার পিছনে ঈসা ইবনে মারইয়াম নামাজ পড়বে এবং সে হবে হোসেইনের নবম বংশধর। ”
কিছু হাদীস এসেছে মাহদীর জনগণ থেকে আত্মগোপন করার বিষয়ে। এ হাদীসগুলো (যা একটু পরে বর্ণনা করবো) পরিষ্কারভাবে বলে দেয় তার আনুগত্য বাধ্যতামূলক , তার অনুপস্থিতিতে হোক অথবা উপস্থিতিতে ’ হোক , সে প্রকাশ্য থাকুক অথবা গোপন। আর এ কারণে মসলমানরা তাকে চিনতে বাধ্য।
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (488 পৃষ্ঠায়) সাঈদ ইবনে জুবায়ের থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আলী আমার পরে আমার উম্মাতের নেতা এবং তার বংশধর থেকে আসবে ‘ ক্বায়েম ’ যে পৃথিবীকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যিনি আমাকে সত্যসহ নিয়োগ দিয়েছেন এবং সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী বানিয়েছেন , যে তার ইমামতে (আত্মগোপনের সময়) বিশ্বাসকারীদের সংখ্যা লাল রংয়ের দিয়াশলায়ের চাইতে দূর্লভ হবে। ”
উক্ত বইয়ের লেখক খাওয়ারাযমীর ‘ মানাক্বিব ’ থেকে বর্ণনা করেন যে আবু জাফর বাক্বির (আঃ) বলেছেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ রহমতপ্রাপ্ত সে যে আমার আহলে বাইত থেকে ‘ ক্বায়েম ’ -কে খুঁজে পায় এমন অবস্থায় যখন সে তাকে আত্মগোপনকালে তাকে অনুসরণ করেছে এবং তার বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব করেছে এবং তার শত্রুদের সাথে শত্রুতা করেছে। এ ধরনের ব্যক্তি আমার সাহাবীদের ও বন্ধুদের অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হবে এবং বিচার দিনে সে আমার সামনে সবচেয়ে সম্মানিত বলে বিবেচিত হবে। ”
একই বইয়ের লেখক (494 পৃষ্ঠায়) খাওয়ারাযমীর ‘ মানাকিব ’ থেকে এবং তিনি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ হে জাবির , নিশ্চয়ই আমার পরে আমার ওয়াসী এবং মুসলমানদের নেতারা হলো , প্রথমজন আলী , এরপর যথাক্রমে হাসান , হোসেইন , আলী ইবনে হোসেইন , মুহাম্মাদ ইবনে আলী- বাক্বির বলে বিখ্যাত , শীঘ্রই তুমি তার সাথে সাক্ষাত করবে এবং যখন তুমি সাক্ষাত করবে তার কাছে আমার সালাম পৌছেঁ দিও। তার পরে আসবে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , মূসা ইবনে জাফর , আলী ইবনে মূসা , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মাদ , হাসান ইবনে আলী এবং ক্বায়েম । তার নাম হবে আমার নামে এবং তার ডাক নাম হবে আমার ডাকনাম। সে হোসেইন ইবনে আলীর সন্তান এবং তার মাধ্যমে আল্লাহ পূর্ব ও পশ্চিমকে মুক্ত করবেন। সে তার বন্ধুদের কাছ থেকে গোপন থাকবে। এমন হবে যে তারা তার ইমামতে দঢ়ৃ থাকবে না শুধু সে ছাড়া যাদের অন্তরকে আল্লাহ বিশ্বাস দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। ”
‘ দুররুল মূসাউইয়াহ ’ -এর লেখক লিখেছেন , “ মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ হাফেয বুখারী যিনি খাজা পারসা নামে বিখ্যাত তিনি তার বই ‘ ফাসলুল খিতাবে ’ -র মার্জিনে মাহদী (আঃ)-এর জন্ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেনঃ “ এ বিষয়ে প্রাপ্ত হাদীসের সংখ্যা অসংখ্য এবং মাহদীর (আঃ) গুণাবলী সম্পর্কিত হাদীস অনেক এবং পরস্পরের সমর্থক। এছাড়া , তার আবির্ভাব , তার আলোকিতকারী নূর , তার মাধ্যমে মুহাম্মাদের (সাঃ)
শরীয়ত জীবিতকরণ , আল্লাহর পথে তার যুদ্ধসমূহ এবং পৃথিবীকে সব ময়লা থেকে পবিত্রকরণ সম্পর্কিত সব হাদীস সুষ্পষ্ট। তার সাথীরা প্রত্যেক সন্দেহ থেকে পবিত্র ও প্রত্যেক ভুল থেকে মুক্ত। তারাই ওরা যারা হেদায়েতের পথ অতিক্রম করেছে এবং সত্যের পথে গবেষণার দিকে যাচ্ছে। খিলাফত ও ইমামত তার ভিতরে শেষ হবে এবং তার পিতা কর্তৃক এ পৃথিবীকে বিদায় জানানোর সময় থেকে তিনি ইমাম হয়ে আছেন এবং তিনি সেরকম থাকবেন কিয়ামত দিবস পর্যন্ত। ঈসা (আঃ ) তার পিছনে নামাজ পড়বেন এবং তাকে স্বীকার করে নিবেন এবং জনগণকে আহবান জানাবেন তার বিশ্বাস অনুসরণের জন্য যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়। ”
পঞ্চম অধ্যায়
মাহদী (আঃ) ও তার জন্ম
একদল বিশেষজ্ঞ , তাদের মধ্যে আছেন সূফী হাদীসবেত্তা মুহাম্মাদ খাজা বুখারী তার বই ‘ ফাসলুল খেতাব ’ এ (ইয়া নাবিউল মাওয়াদ্দার 387 পৃষ্ঠায় যেভাবে লেখা আছে) বর্ণনা করেছেন যে , “ হযরত ইমাম মুহাম্মাদ জাওয়াদ (আঃ)-এর কন্যা হাকিমাহ এবং আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর (আঃ) ফুপু সবসময় প্রর্থনা করতেন ও কাদতেনঁ এবং আল্লাহর কাছে চাইতেন তিনি যেন তাকে হযরত এর পুত্র সন্তান-এর সাক্ষাত লাভে সফলতা দেন। 255 হিজরীর 15ই শাবান যখন তিনি হযরত হাসান আসকারীর (আঃ) সাথে সাক্ষাত করলেন তখন হযরত তাকে তার সাথে থাকতে বললেন কারণ একটি ঘটনা ঘটবে। তাই তিনি ঐ জায়গায় থেকে গেলেন। খুব সকালে নারজিস বেগম (হযরত মাহদীর মা) অসুবিধা বোধ করতে লাগলেন। তখন হাকিমাহ তার কাছে দ্রুত্র গেলেন এবং এর কয়েক মহুর্ত পর নারজিস বেগম খতনা করা এক বরকতময় সন্তান প্রসব করলেন। যখন হাকিমাহর দৃষ্টি বাচ্চার উপর পড়লো তিনি তাকে কোলে তুলে নিলেন এবং হযরত হাসান আসকারী (আঃ)-এর কাছে গেলেন। হযরত হাসান আসকারী তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং তার বরকতময় হাত পিঠ ও চোখে বুলিয়ে দিলেন এবং তার মুখের উপর মুখ রাখলেন। এরপর তিনি ‘ আযান ’ দিলেন বাচ্চার ডান কানে এবং ‘ আকামাত ’ দিলেন তার বাম কানে। এরপর বললেন , ‘ হে ফুপু , তাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যান। ’ হাকিমাহ তা পালন করলেন এবং বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে নিয়ে গেলেন। হাকিমাহ বলেন , ‘ আবার আমি আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর বাসায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ আমি দেখলাম হযরত একটি হলদু জামা পড়া বাচ্চাকে বহন করছেন যার চেহারা আলোতে উজ্জ্বল হয়ে আছে। ’ তখন তার ভালোবাসা আমার হৃদয় ঢেকে ফেললো এবং আমি বললাম , ‘ হে আমার ওয়ালী (অভিভাবক) এ বরকতময় বাচ্চা সম্পর্কে আপনার কী বলার আছে ? ’ তিনি বললেন- ‘ হে ফুপু , সে সেই প্রতীক্ষিত জন যার সম্পর্কে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। ’ তখন আমি নিজেকে মাটিতে ফেলে দিলাম এবং আল্লাহকে সিজদা করলাম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে। ”
এ বইয়ের লেখক বলতে চান- “ যা আমরা আগে বর্ণনা করেছি এবং পরে যা আমরা বর্ণনা করবো তা তার জন্মকে প্রমাণ করে। এসব রেওয়ায়েতের বেশ কয়েকটি অংশ আছে। এক অংশ ইঙ্গিত করে তিনি 12তম উত্তরাধিকারী , অন্যগুলি বলে তিনি 12তম ওয়াসী। এছাড়া অন্যগুলো বলে তিনি ইমাম হোসেইন (আঃ)-এর নবম বংশধর। আরো কিছু অংশ বলে তিনি ইমাম রিদা (আঃ)-এর 4র্থ বংশধর এবং কিছু বলে তিনি হযরত আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান। আরো কিছু অংশ বলে তার আত্মগোপন সম্পর্কে এবং তাকে যে চেনা যাবে না সে সম্পর্কে । ”
এ মুসতাফিযা , বরং মুতাওয়াতির রেওয়ায়েতসমূহ পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে যে প্রতীক্ষিত মাহদী হলেন ইমাম আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তান।
এখন কেউ বলতে পারে উপরোক্ত রেওয়ায়েতগুলো বর্ণনা ধারার দুর্বলতায় দুষ্ট তাই এগুলোকে অস্বীকার করা যায়।
লেখক বলতে চান- যে কেউ রেওয়ায়েতগুলো দেখেছে এবং রিজাল শাস্ত্র পড়ে দেখেছে সে কখনোই তা চিন্তা করবে না। কারণ একদল হাদীসবেত্তা এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা স্বীকার করেছেন এবং কেউ কেউ এদের সত্যতা ও গ্রহণযোগ্যতার পক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন। বরং হাকেম , যিনি এ শিল্পের একজন নেতা তিনি নিজেও বোখারী ও মুসলিম- এর অভিমত অনুযায়ী এগুলোকে সঠিক বলে গ্রহণ করেছেন।
আহলে সুন্নাতের বেশীরভাগ আলেম এ হাদীসগুলোর বর্ণনাধারা উল্লেখ করেছেন এবং তাদের সঠিকতা সমর্থন করেছেন। এদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে প্রত্যাখ্যান করার শামিল।
বেশ কিছু সুন্নী আলেম , হাদীসবেত্তা এবং ঐতিহাসিকের নাম আমরা উল্লেখ করতে চাই যাদের বক্তব্য হলো হযরত মাহদী (আঃ)-এর জন্ম হয়েছে , যেমন-
1। ‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ অনুযায়ী শেই মহিউদ্দীন আরাবীর ফুতহাতুল মাক্কিয়্যাহ-তে যা এসেছে।
2। শেইখ আব্দুল ওয়াহহাব শারানীর কিতাব ‘ আল ইওয়াকিত- ওয়াল- জাওহার ’ -এ।
3। শেইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসফূ গাঞ্জীর কিতাব ‘ আল বায়ান ।
4। ‘ নুরুল আবসার ’ অনুযায়ী ইবনে ওয়ারদীর ‘ তারিখ ’ -এ।
5। ইবনে হাজার হাইসামীর কিতাব ‘ সাওয়ায়েকুল মুহরেক্বা ’ - তে।
6। সেবতে ইবনে জওযীর কিতাব ‘ তাযকেরাতুল আইম্মা ’ ।
7। শেইখ মুহাম্মাদ ইবনে তালহার কিতাব “ মাতালিবুস সূল ’ -এ।
8। শেইখ নুরুদ্দীন আলীর কিতাব “ ফুসুলুল মুহিম্মা ’ -তে।
9। সম্মানিত সাইয়্যেদ আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ সিরাজুদ্দীন-এর কিতাব ‘ সিহাহুল আখবার ’ ।
10। বিখ্যাত ঐতিহাসিক ইবনে খাল্লেকান তার ‘ ওয়াফায়াতুল আইয়ান ’ এ।
11। ইবনে খালেক্বানের বর্ণনা অনুযায়ী ইবনে আযরাক্ব-এর কিতাব ‘ তারিখ ’ -এ।
12। সূফী শেইখ সাইয়্যেদ হাসান আরাক্বী (আল ইওয়াক্বিত ওয়াল জাওহার অনুযায়ী)।
13। শেইখ আলী খাওয়াস (উপরে উল্লেখিত কিতাবে যেভাবে এসেছে)।
14। সূফী আলেম শেইখ মোহাম্মাদ খাওয়াজার “ ফাসলুল খেতাব ’ -এ (ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা অনুযায়ী)।
15। সাইয়্যেদ মুমিন শাবলানজি তার ‘ নুরুল আবসার ’ কিতাবে।
16। সূফী আলেম শেইখ কুন্দুযির ‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ তে।
17। বিজ্ঞ বংশ ইতিহাসবিদ আবুল ফায়েয মুহাম্মাদ আমিন বাগদাদী সুয়েদী তার ‘ সাবা ’ য়েকুস যাহাব ’ কিতাবে।
18। বর্তমান যুগের বংশ ইতিহাসবিদ আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সাইয়্যেদ হোসেইন রাফাঈ তার ‘ নুরুল আনওয়ারেশ ’ কিতাবে।
19। শেইখ আহমাদ জামীর কবিতা অনুযায়ী যা ‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ তে এসেছে। আখবার সাহেবুয যামান ’ -এ।
20। শেইখ আতহার নিশাবুরী ’ র কবিতা অনুযায়ী।
21। শেইখ জালালুদ্দীন রুমীর কবিতা অনুযায়ী।
এছাড়াও আরো অনেকে বিষয়টির সত্যায়ন করেছেন। এভাবে দেখা যায় শিয়া ও সুন্নী উভয়েই এ বিষয়ে একমত। যারা সুন্নী সূত্রের বই ও লেখা পড়ে থাকেন তারা বুঝতে পারবেন যে শিয়া ও সুন্নী উভয়েই একমত যে আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর একটি সন্তান ছিলো যার নাম মুহাম্মাদ , তার উপাধি মাহদী ও তার কুনিয়াত বা ডাকনাম হলো আবুল কাসিম এবং এও সত্য যে তিনি ছিলেন তার পিতার একমাত্র সন্তান , তবে তাদের মাঝে মাহদী সম্পর্কে সামান্য মতভেদ আছে। যেমন ইবনে খাল্লেকান ও অন্যান্য সুন্নী ব্যক্তিদের মধ্যে ইবনে খাল্লেকান বলেন , “ শিয়ারা ভাবে মাহদী হচ্ছেন ইমাম হাসান আসকারীর সন্তান। ’ এরপর তিনি বলেছেন ,- ‘ মাহদীর জীবন এখন পর্যন্ত চলছে এ বিষয়টি সাধারণ নয় এবং তার সম্ভাবনা কম। ”
যখন হাসান আসকারীর ছেলে আবুল কাসেম মাহদীর জন্ম হয়ে গেছে বলে প্রমাণিত হবে তখন মাহদী (আঃ) জন্ম ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে , ভবিষ্যতে জন্ম নেবেন একথা সঠিক নয় বলে প্রমাণিত হবে। যদিও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে মুতাওয়াতির হাদীস থেকে এবং আহলে বাইতের নিষ্পাপ সদস্যদের কথা থেকে , যারা অন্যদের চাইতে বেশী জ্ঞান রাখেন এবং সূফী সাধক এবং পণ্ডিত ব্যক্তিদের কথা থেকে জানা গেছে প্রতীক্ষিত মাহদী এ শিশুটিই যার কথা আমরা ইতিমধ্যে বর্ণনা করেছি।
যাহোক , তার জন্ম সম্পর্কে যা অধিকতর সঠিক বলে মনে হয় তা হলো তিনি জন্ম নিয়েছিলেন 255 হিজরীর 15ই শাবান। আর তাই তার বাবার ইন্তেকালের সময় তার বয়স ছিলো পাচঁ বছর।
মাহদীর (আঃ) নাম , উপাধী ও ডাক নাম
তিরমিযী তার ‘ সহীহ ’ -র দ্বিতীয় খণ্ডে (270 পৃষ্ঠায়) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ এ পৃথিবী শেষ হবে না যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি এ পৃথিবী জয় করে। তার নাম আমার নামের মত। ”
একই বইয়ের একই জায়গায় তিনি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
‘ যদি পৃথিবীর জীবন আর একদিনের বেশী না থাকে তবুও আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে যার নাম হবে আমার নামের মত। ”
এরপর তিনি লিখেছেন এ হাদীসটি গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বস্ত। ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এ (98 পৃষ্ঠায়) বর্ণনা করেছেন আহমাদ , আবু দাউদ ও তিরমিযী থেকে এবং তিনজনই রাসূল (সাঃ) থেকে যিনি বলেছেনঃ
“ পৃথিবী শেষ হবে না যতক্ষণ না আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আসবে এবং শাসন করবে। তার নাম হবে আমার নামের মত। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীনের ’ লেখক একই হাদীস বর্ণনা করেছেন। ‘ ইকদুদ দুরার ’ - এর লেখক দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইমাম আবু বকর মুক্বারীর ‘ সুনান ’ থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ পৃথিবী শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি তা জয় করে। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে তিনি হাফেয আবু নাঈমের ‘ সিফাতুল মাহদী ’ এবং আবু মুক্কারীর ‘ সুনান ’ থেকে এবং তারা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে। তার নাম আমার নামের মত এবং তার নৈতিকতা আমার নৈতিকতার মত। সে পৃথিবীকে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে। ”
আবার উক্ত বইয়ের একই অধ্যায়ে তিনি হাফেয আবু নাঈম থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ পৃথিবীর জীবন যদি আর একদিনের বেশী না থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটাবেন যার নাম হবে আমার নামের মত এবং যার নৈতিকতা হবে আমার নৈতিকতা। তার ডাক নাম হবে আবুল কাসিম। ”
এছাড়া একই বইয়ের একই অধ্যায়ে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ সময়ের শেষে আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে। তার নাম ও ডাক নাম আমার নাম ও ডাক নামের মত হবে। সে পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নৃশংসতায় ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
আমরা উক্ত বিষয়ে যা বর্ণনা করেছি তা অল্প কিছু সংখ্যক হাদীস যা হযরত মাহদীর (আঃ) নাম ও ডাক নাম উল্লেখ করে।
‘ ইকদুদ দুরার ’ - এর লেখক এ বিষয়ে একটি আলাদা অধ্যায় বর্ণনা করেছেন। এগুলো ও অন্যান্য কিছু হাদীস এবং তাদের দীর্ঘ ব্যাখ্যা (যা আমরা ইতিমধ্যে কিছু বর্ণনা করেছি এবং যা ভবিষ্যতে উল্লেখ করবো) দেখায় যে তার নাম মুহাম্মাদ । তার উপাধি হচ্ছে মাহদী এবং ডাক নাম বা কুনিয়াত হলো আবুল কাসিম এবং এগুলো সুপরিচিত বিষয়। যাহোক দু ’ একটি হাদীসে তার নাম আহমাদ বলে বর্ণিত হয়েছে। সম্ভবতঃ এটি বর্ণনাকারীর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অথবা তার পক্ষ থেকে একটি ভুল। এ ধারণা যদি ভুলও হয় তবে আমরা বলবো এ হাদীস অন্যান্য হাদীসগুলোর তুলনায় সংখ্যায় অতি নগণ্য।
‘ তাযকেরাতলু আউলিয়ার ’ লেখক আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর সন্তানদের কথা বলতে গিয়ে বলেন , “ তাদের মধ্যে আছে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে মূসা ইবনে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হোসেইন ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব। তার ডাক নাম হচ্ছে আবু আব্দুল্লাহ ও আবুল ক্বাসেম এবং তিনি হলেন উত্তরাধিরারী , হুজ্জাত (প্রমাণ) , যুগের কর্তা , ক্বায়েম , এবং মুনতাযার (প্রতীক্ষিত জন)। তিনি হবেন শেষ ইমাম। ”
‘ মাতালিবুস সূল ’ - এর লেখক হযরত মাহদীর জন্মের স্থান উল্লেখ করার পর বলেন- ‘ যাহোক , তার নাম হলো মুহাম্মাদ , তার ডাক নাম আবুল ক্বাসিম এবং তার উপাধিগুলো হলো- হুজ্জাত (প্রমাণ) , খালাফাহ সালেহ (সৎকর্মশীল উত্তরাধিকারী)। তাকে মুনতাযার (প্রতীক্ষিতজন) নামেও ডাকা হয়। ’
ইবনে হাজার তার কিতাব ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ - এ ইমাম আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর কথা উল্লেখ করার পর বলেন- “ তিনি কোন উত্তরাধিকারী রেখে যান নি একমাত্র পুত্র আবুল ক্বাসিম মুহাম্মাদ হুজ্জাত ছাড়া। যার বয়স তার বাবার ইন্তেকালের সময় ছিলো পাঁচ বছর। কিন্তু আল্লাহ তাকে সে বয়সেই প্রজ্ঞা দিয়েছিলেন এবং তাকে ‘ ক্বায়েম ’ এবং ‘ মুনতাযার ’ বলে সম্বোধন করা হয়। ”
নুরুল আবসার এর লেখক মাহদীর (আঃ) কথা উল্লেখ করার পর বলেন- “ তার নাম হলো মুহাম্মাদ এবং তার ডাক নাম আবুল ক্বাসিম। ইমামিয়াহরা তাকে এ উপাধি দিয়েছে যেমন- হুজ্জাত , মাহদী , খালাফে সালেহ , ক্বায়েম এবং সাহেবুয্যামান। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে ‘ মাহদী ’ উপাধি। ”
মাহদী (আঃ) ও তার পিতা-মাতার নাম
পূর্ববর্তী হাদীসগুলো থেকে যা স্পষ্ট হয়ে যায় তাহলো (এ বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ে) যে প্রতীক্ষিত মাহদী হলেন আবু মুহাম্মাদ ইমাম হাসান আসকারীর পুত্রসন্তান।
‘ নুরুল আবসার ’ -এর লেখক বলেন- “ মাহদীর পিতা ছিলেন আবু মুহাম্মাদ খালেস ইবনে আলী হাদি ইবনে মুহাম্মাদ জাওয়াদ ইবনে আলী রিদা। মাহদীর মা ছিলেন একজন ক্রীতদাসী যার নাম ছিলো নারজিস এবং কেউ বলে তার নাম ছিলো ‘ সীগাল ’ এবং অন্যরা বলে তার নাম ছিলো ‘ সুযান ’ ।
শৈশবে ইমাম মাহদীর (আঃ) ইমামত লাভ
এতক্ষণ মাহদীর (আঃ) বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমরা যা লিখেছি তা প্রমাণ করে যে তিনি শৈশবেই ইমামতের সম্মান লাভ করেছিলেন এবং এ মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন মাত্র পাচঁ বছর বয়সে।
এখন আমরা দেখতে চাই যে পাচঁ বছর বয়সে কারো পক্ষে ইমামতের আসন পাওয়া সম্ভব এবং অনুমোদনযোগ্য কিনা , নাকি নবী , রাসূল ও তাদের উত্তরাধিকারীদের জন্য প্রথমে বালেগ হওয়া ও শারীরিক যোগ্যতা লাভ করা অত্যাবশ্যক।
এ বিষয়ে আমরা বিশদ আলোচনা না করে শুধু সংক্ষেপে বলবো যে , রিসালাত , নবুয়ত ও ইমামত এবং তাদের উত্তরাধিকার একমাত্র আল্লাহর হাতে ; এতে অন্য কারো পছন্দ ও অধিকার নেই। অতএব বিবেকবুদ্ধি বলে যে প্রমাণ উপস্থিত ’ থাকার কারণে বলা যায় কোন শিশু যদি নবুয়ত অথবা ইমামত লাভ করে এতে আপত্তি করার কিছু নেই যেহেতু মহান আল্লাহ একজন ইমাম ও নবীর গুণাবলী একজন শিশুর ভিতরে জমা করতে সক্ষম। আল্লাহর ক্ষমতায় কোন দূর্বলতা নেই এবং ঈসা (আঃ) ও ইয়াহইয়া (আঃ)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির ঘটনা আমাদের কথার সত্যতার সাক্ষ্য দেয়।
“ বাসীরুদ দারাজাত ” বইয়ের লেখক আলী ইবনে ইসবাত থেকে বর্ণনা করেন- “ আমি হযরত আবু জাফরকে (ইমাম জাফর সাদিক (আঃ)) আমার দিকে আসতে দেখলাম। তিনি যখন আমার কাছে চলে আসলেন আমি তাকে একবার আপাদমস্তক দেখলাম। যেন মিশরে আমার বন্ধুদের কাছে তার বর্ণনা দিতে পারি। এরপর তিনি আল্লাহকে সিজদা করলেন এবং বললেন , “ নিশ্চয়ই আল্লাহ ইমামতের বিষয়ে যুক্তি উপস্থিত করেছেন যেভাবে তিনি করেছেন নবুয়তের বিষয়ে এবং তিনি বলেছেন :
) وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا (
“ এবং আমরা তাকে জ্ঞান দিয়েছিলাম শৈশবে। ” (সূরা মারইয়ামঃ 12)
তিনি আরো বলেছেন ,
) حَتَّى إِذَا بَلَغَ أَشُدَّهُ وَبَلَغَ أَرْبَعِينَ سَنَةً (
“ যখন সে পূর্ণত্বে পৌঁছায় এবং চল্লিশ বছর বয়সে পৌঁছায়। ” (সূরা আহক্বাফঃ 15)
“ ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দা ” -র লেখক মাহদীর (আঃ) জন্ম বর্ণনা করে 452 পৃষ্ঠায় ‘ ফাসলুল খিতাব ’ বই থেকে উল্লেখ করেছেন : মহান আল্লাহ তাকে প্রজ্ঞা দান করেছেন তার শৈশবেই এবং তাকে বানিয়েছেন একজন ‘ হুজ্জাত ’ (প্রমাণ) দুনিয়ার মানুষের জন্য। যেমন তিনি তার নবীদের বিষয়ে বলেছেন :
) يَايَحْيَى خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا (
“ হে ইয়াহইয়া , কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধরো এবং আমরা তাকে প্রজ্ঞা দিয়েছিলাম যখন সে শিশু ছিলো। ” (সূরা মারইয়ামঃ 12)
তিনি আরো বলেন (ঈসা আঃ সম্পর্কে) :
) فَأَشَارَتْ إِلَيْهِ قَالُوا كَيْفَ نُكَلِّمُ مَنْ كَانَ فِي الْمَهْدِ صَبِيًّا (
“ তারা বললো : আমরা কীভাবে তার সাথে কথা বলবো যে দোলনায় এক শিশু ? ” (সূরা মারইয়ামঃ 29)
) قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا (
“ সে বললো : নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর একজন দাস , তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে একজন নবী বানিয়েছেন। ” (সূরা মারিইয়ামঃ 30)
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক ’ -এর 114 পৃষ্ঠায় আবু মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর মৃত্যু উল্লেখ করার পর বলেন- “ তিনি আবুল কাসিম মুহাম্মাদ হুজ্জাতকে ছাড়া আর কাউকে তার উত্তরাধিকারী করে যান নি যার বয়স তার পিতার মৃত্যুর সময় ছিলো পাচঁ বছর। কিন্তু আল্লাহ তাকে সে সময়ই প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। ”
এছাড়া শাবরাউই তার ‘ ইত্তেহাফ ’ -এর 79 (পৃষ্ঠায়) উল্লেখ করেছেন যে , তার খেলাফাত বা উত্তরাধিকার তাঁর পিতার মৃত্যুর পরে পাঁচ বছর বয়সে শুরু হয়েছিলো এবং লেখক মনে করেন যে , তার জন্ম হয়েছিলো 15ই শাবানের রাতে।
মহান আল্লাহ তার বাবার মৃত্যুর সময় তাকে পাঁচ বছর বয়সে প্রজ্ঞা দান করেন যেভাবে তিনি নবী ইয়াহইয়াকে শৈশবে ইমামত দান করেছিলেন এবং ঈসা (আঃ) কে শৈশবে নবী বানিয়েছিলেন। শাবরাউই তার ‘ ইত্তেহাফ ’ -এর 79 পৃষ্ঠায় বলেছেন যে তার খিলাফত (উত্তরাধিকার) শুরু হয়েছিলো পাঁচ বছর বয়সে , তার বাবার মৃত্যুর পর এবং তিনি মনে করেন তার জন্ম হয়েছিলো 15ই শাবান। ইবনে খালকানও ‘ ওয়াফিয়াতুল আইয়্যান-এর 1ম খণ্ডের 451 পৃষ্ঠায় হযরতের জন্ম দিবস 15ই শাবান 255 হিযরী বলে উল্লেখ করেছেন। সুয়েদি তার ‘ সাবায়েকুয-যাহাব ’ (78 পৃষ্ঠা)-এ তার পিতার মৃত্যুর সময়ে তার বয়সকে পাঁচ বছর ছিলো বলে উল্লেখ করেছেন।
মাহদী (আঃ) ও তার দীর্ঘ জীবন
আমরা পূর্বের হাদীসগুলো থেকে জানতে পেরেছি যে প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) যিনি শেষ যুগে আবির্ভূত হবেন এবং পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবেন যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো এবং তিনি হাসান আসকারীর সন্তান আবুল কাসেম মুহাম্মাদ আল মাহদী ছাড়া কেউ নন। এটিও প্রমাণিত যে তিনি জন্মেছিলেন 255 হিজরীর 15ই শাবান ভোরে। এ বিষয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে যে তিনি সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত বেঁচে আছেন এবং মাহদীর (আঃ) বয়স এখন এক হাজার একশত বছরেরও বেশী এবং শুধু আল্লাহই বলতে পারেন তিনি কবে (পবিত্র কাবা ঘরে) আবির্ভূত হবেন এবং কবে ইন্তেকাল করবেন।
যদিও জনগণের মাঝে দীর্ঘ জীবন একটি সাধারণ ঘটনা নয় তবু তা প্রকৃতিগতভাবে সম্ভব । এছাড়া মাহদীর (আঃ) দীর্ঘ জীবনের প্রমাণ ও কারণও রয়েছে। অন্য কথায় , মাহদীর দীর্ঘায়িত জীবন একটি সম্ভব ঘটনা এবং যুক্তিও তা নিশ্চিত করে।
‘ তাযকেরাতুল আইম্মা ’ র লেখক বলেন , “ পরো ইমামিয়া মাযহাব বিশ্বাস করে যে খালাফ-ই-হুজ্জাত জীবিত আছেন এবং তার রিযক লাভ করছেন। হযরত বেচেঁ আছেন এটি প্রমাণ করতে তারা নীচের যক্তিগুলো উপস্থিত করে –
তাদের যুক্তি- একদল লোক যেমন , হযরত খিযির (আঃ) ও হযরত ইলইয়াস (আঃ) এখন পর্যন্ত এক লম্বা জীবন যাপন করছেন ; এখন পর্যন্ত জানা যায়নি কত বছর ধরে তারা জীবিত আছেন। প্রত্যেক বছর তারা পরস্পর সাক্ষাত করেন এবং পরস্পরের চুল স্পর্শ করেন। ”
তওরাতে এসেছে যে , যুলকারনাইন 3 ,000 বছর বেচেছিলেন । কিন্তু মুসলমানরা বিশ্বাস করে তিনি 1 ,500 বছর বেচেছিলেন।
মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বলেন- ‘ আওয়াজ ইবনে উনাক 3 ,600 বছর বেঁচেছিলেন। আওয়াজ ইবনে উনাক (যার বাবার নাম ছিলো সুবহান ও মায়ের নাম ছিলো উনাক) আদম (আঃ) এর যুগে জন্মগ্রহণ করেছিলো এবং জীবন যাপন করতে থাকে যতক্ষণ না মূসা (আঃ) তাকে হত্যা করেন। ’
যাহোক , থামারুসও বেচেছিলোঁ 1 ,000 বছর।
নবীদের মধ্যে আমরা হযরত আদম (আঃ) ও নূহ (আঃ) এর কথা বলতে পারি যারা 1 ,000 বছরের বেশী জীবিত ছিলেন।
ক্বাইনান 900 বছর অন্যদের মাঝে বেঁচেছিলেন। মেহলাঈল 800 বছর বেঁচেছিলো। নুক্বাইল ইবনে আব্দুল্লাহ বেঁচেছিলো 700 বছর। ভবিষ্যতবক্তা রাবিয়া ইবনে উমর বেঁচেছিলো 600 বছর। আমের ইবনে যরেব , যে আরবদের মাঝে ছিলো একজন বিচারক , সে বেঁচেছিলো 500 বছর। একইভাবে সুলাবা এবং সাম ইবনে নূহ 500 বছর বেঁচেছিলো। হারব ইবনে মাযায জারহামি 400 বছর বেঁচেছিলো।
আরফাখশাদ 480 বছর বেঁচেছিলেন। ক্বায়েস ইবনে সাঈদা 380 বছর বেঁচে ছিলো। কাআব ইবনে জুমহা অথবা জাম্মা দুসী 390 বছর বেচেছিলেন। হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) 250 বছর বেঁচেছিলেন এবং অন্যান্যদের মতে 300 বছর বেঁচেছিলেন।
‘ মাতালিবুস সুল ’ - এর লেখক বলেন- “ মাহদীর জন্ম হয়েছিলো মুতামিদ- এর সময় এবং এখন পর্যন্ত গোপন আছেন (শত্রুদের দিক থেকে) ভয়ের কারণে। কোন ব্যক্তি যদি আত্মগোপনে যায় এবং এরপর তার কাছ থেকে আর কোন সংবাদ না আসে তার অর্থ এটি নয় যে তার মৃত্যু হয়ে গেছে। আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় ইমাম মাহদী (আঃ)-এর দীর্ঘ জীবন কোন আশ্চর্যজনক ঘটনা নয়। কারণ আল্লাহ জীবনকে দীর্ঘায়িত করেছেন অনেক নবীর , ওয়াসীর , নির্বাচিতদের এবং শত্রুদের। তার পবিত্র বান্দাদের মধ্যে আমরা উল্লেখ করতে পারি হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত খিযির (আঃ)-এর কথা। এ ছাড়া আরও অনেক নবী ছিলেন (যেমন হযরত নূহ আঃ) যারা 1 ,000 বছর বেঁচেছিলেন। বিতাড়িত শত্রুদের মাঝে আমরা উল্লেখ করতে পারি শয়তান ও দাজ্জাল- এর কথা এবং অন্যরা যেমন আদ বেঁচেছিলো প্রায় 1 ,000 বছর। একই ঘটনা ছিলো লোকমান (আঃ)- এর বিষয়ে। এসব আল্লাহর ক্ষমতা বর্ণনা করে যার মাধ্যমে তিনি তার কিছু বান্দাকে দীর্ঘ জীবন দিয়েছেন। তাই এটি বলা কী ভুল হতে পারে যে মাহদীর জীবনকেদীর্ঘায়িত করা হয়েছে তার আবির্ভাবকার্ল পর্যন্ত ”
মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন ও রিযক লাভ করছেন
যখন আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে এবং প্রমাণ করতে চাই যে প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন , তার রিযক লাভ করছেন এবং অন্যদের মত জীবন যাপন করছেন , ঐ পর্যন্ত যখন আল্লাহ তাকে আবির্ভূত হওয়ার অনুমতি দিবেন এবং সত্য ও ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠা করবেন এবং নিপীড়নকে ধ্বংস করবেন , তখন আমরা আর কিছু বলার আগে নীচের প্রাথমিক বিষয়গুলো উল্লেখ করতে বাধ্য –
প্রথমতঃ মানুষের পক্ষে শত শত অথবা হাজার হাজার বছর বেচেঁ থাকা সম্ভব , যদি আল্লাহ চান। এর উদাহরণ আপনারা ইতিমধ্যেই পেয়েছেন।
দ্বিতীয়তঃ প্রতীক্ষিত মাহদী (আঃ) হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি আবুল কাসিম মুহাম্মাদ ইবনে হাসান আসকারী ইবনে আলী হাদী ইবনে মুহাম্মাদ জাওয়াদ ইবনে আলী....যেভাবে তা ইতিমধ্যেই উল্লেখিত হয়েছে।
তৃতীয়তঃ মাহদী (আঃ) ঐ দিনে (15ই শাবান 255হিঃ) জন্মগ্রহণ করেছেন যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি এবং ইমাম হাসান আসকারীর (আঃ) মাহদী ছাড়া অন্য কোন সন্তান ছিলো না। অন্য কথায় , তিনি তার পিতার একমাত্র সন্তান ছিলেন।
এখন আপনাদের কাছে এ বিষয়গুলো পরিষ্কার হওয়াতে আমরা বলতে পারি যে মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন এবং রিযক লাভ করছেন।
পক্ষপাতিত্বহীন কোন ব্যক্তির জন্য নীচের যে কোন একটি বিষয় যথেষ্ট-
প্রথমতঃ যা বিশ্বাস করতে সুবিধাজনক তা হলো মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন তা বিশ্বাস করা। কারণ আমরা তার জন্ম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি কিন্তু তার মৃত্যু সম্পর্কে নয়।
একজন সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত লোকও মাহদীর (আঃ) মৃত্যু সম্পর্কে কিছু বর্ণনা করে নি। শুধু যা দেখা যায় তা হলো কিছু অস্বীকারকারী এর সম্ভাব্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে যে , এটি কীভাবে সম্ভব যে মাহদী (আঃ) এত দীর্ঘ জীবন লাভ করবে ?
এ পর্যন্ত আমরা বিশ্বস্ত হাদীসবেত্তা , ঐতিহাসিক ও বংশধারা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মাহদী (আঃ)-র ইন্তেকাল সম্পর্কে কোন কথা পাই নি।
মাহদীর (আঃ) দীর্ঘ জীবন গতানুগতিক কোন ঘটনা নয় বলে তা অস্বীকার করা আমাদের জন্য সাজে না। আর যে বিশ্বাস করে যে মাহদীর (আঃ) মৃত্যু হয়েছে সে তার মৃত্যু সম্পর্কে প্রমাণ দিতে বাধ্য থাকবে।
দ্বিতীয়তঃ যখন মাহদীর (আঃ) জন্ম হয়েছে প্রমাণিত হয় তখন নীচের যে কোন একটি বিষয় আমরা গ্রহণ করতে বাধ্য-
এক , হয় আমরা স্বীকার করে নেবো মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন এবং অন্যান্য মানুষের মতই জীবন যাপন করছেন ঐ পর্যন্ত যখন আল্লাহ তাকেআদেশ করবেন আবির্ভূত হওয়ার জন্য অথবাদুই , বিশ্বাস করা যে , তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আল্লাহ তার ক্ষমতা বলে তাকে আবার জীবিত করবেন একটি নির্ধারিত সময়ে। কিন্তু এতে কোন সন্দেহ নেই যে প্রথম সম্ভাবনাটি প্রাকৃতিক নিয়মের কাছাকাছি পরবর্তীটির চাইতে , কারণ মৃত্যুর পর জীবিত হওয়া আরো দূরবর্তী সম্ভাবনা। নবী-রাসূল-রা (আঃ) মৃতকে জীবিত করতেন একটি অলৌকিক ঘটনার অংশ হিসেবে।
তৃতীয়তঃ যে হাদীস শিয়া ও সুন্নী উভয়ে সত্য বলে গ্রহণ করেছে তা হলো রাসূল (সাঃ)-এর পরে খলিফা এবং মুসলমানদের ইমাম হবেন 12জন যতদিন এ ধর্ম চলবে। মাহদী তাদের মধ্যে 12তম প্রমাণিত হওয়ার পর বিশ্বাস করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায় যে তিনি জীবিত আছেন ও জীবন যাপন করছেন। আর তা না হলে মুসলমানদের মধ্যে কোন ইমাম থাকবে না এবং তারা জাহেলিয়াতের যুগের মানুষের মত মৃত্যুবরণ করবে।
মাহদী (আঃ)-এর জীবিত থাকার বিষয়ে বিখ্যাত সুন্নী আলেমদের বর্ণনা রয়েছে তাদের মধ্যে একজন হলেন শেইখ মহিউদ্দীন আল আরাবী যিনি তার কিতাব ‘ ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ ’ -তে , ‘ আল ইয়াওয়াকিত্ব ওয়াল জাওহার ’ কিতাবে যেভাবে শেইখ আব্দুল ওয়াহাব শারানী বর্ণনা করেছেন , যেভাবে ‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ বলেছেন যে , মাহদী হচ্ছেন ইমাম হাসান আসকারীর (আঃ) ঔরসজাত সন্তান এবং ইমাম হাসান আসকারী 260 হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি মাহদীর অস্তিত্ব ও তার আবির্ভাবকাল পর্যন্ত জীবিত থাকাকে সমথর্ন করেছেন। কিন্তু তার মৃত্যু হয়েছে এবং তাকে আবার জীবিত করা হবে একটি নির্দিষ্ট সময়ে এমন কথা বলেন নি।
তাদের মাঝে আছেন শেইখ আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইউসূফ ইবনে মুহাম্মাদ গাঞ্জী। তার কিতাব ‘ বায়ান ফী আখবার সাহেবুয যামান ’ -এ ইসাফুর রাগেবীনের লেখক 277 পৃষ্ঠায় যা বলেছেন-
‘ মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন ও আত্মগোপনে (গায়বাতে) যাওয়ার পর এখনও জীবন যাপন করছেন এবং তা অসম্ভব কিছু নয়। এ বইয়ের এ কথার প্রমাণগুলোর একটি হচ্ছে যে আল্লাহর বন্ধুদের মাঝে হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) ও হযরত ইলইয়াস (আঃ) এখনও জীবিত আছেন এবং আল্লাহর শত্রুদের মাঝে আছে দাজ্জাল ও শয়তান। এসব ব্যক্তিদের অস্তিত্ব সম্পর্কে কোরআন ও রাষূলের (সাঃ) হাদীস সাক্ষ্য দেয় ,
এ ছাড়াও আছেন জ্ঞানী ও সূফীসাধক শেইখ খাজা মুহাম্মাদ পারসা যিনি তার কিতাব ‘ ফাসলুল খিতাব ’ - এ (যেভাবে ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দার লেখক 45 পৃষ্ঠায় লিখেছেন) মাহদী (আঃ) জন্মের কথা উল্লেখ করে বলেছেন- “ আল্লাহ শৈশবকালে মাহদী (আঃ) উপর প্রজ্ঞা দান করেছেন যেভাবে তিনি দিয়েছিলেন হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-কে। ” খাজা মুহাম্মাদ পারসা আরও বলেছেন- “ আল্লাহ মাহদীর জীবনকে দীর্ঘায়িত করেছেন যেভাবে তিনি খিযিরকে দীর্ঘ জীবন দিয়েছেন। ”
আরও আছেন শেইখ আব্দুল ওয়াহাব শারানী যিনি তার কিতাব ‘ আল ইয়াওয়াক্বিত আল জাওহার ’ (যেভাবে ইসাফুর রাগেবীনের 157 পৃষ্ঠায় এসেছে)-এ বলেন- “ মাহদী ইমাম হাসান আসকারীর সন্তান এবং তার জন্ম তারিখ হলো 15ই শাবান , 255 হিজরী। তিনি এখনও বেচেঁ আছেন যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈসা ইবনে মারইয়ামের সাথে তিনি সাক্ষাত করেন। ” এরপর তিনি বলেন- “ শেইখ হাসান আরাকী এ কথাটি বর্ণনা করেছেন হযরত মাহদীর সাথে তার সাক্ষাতের পর এবং সাইয়্যেদ আলী কাওয়াস এর সমর্থন দিয়েছেন । ”
এর মাঝে আছে শেইখ সাদরুদ্দীন কুনাউই যিনি তার মৃত্যুকালে তার ছাত্রদের বলেন (ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দার 469 পৃষ্ঠা অনুযায়ী) , “ তোমরা আমার চিকিৎসা ও দর্শনশাস্ত্রের বইগুলো বিক্রি করে সে পয়সা দরিদ্রদের দিয়ে দিও। কিন্তু আমার হাদীস ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে বইগুলো পাঠাগারে সংরক্ষণ করবে এবং প্রত্যেক রাতে 70 হাজার বার তাওহীদের সাক্ষ্য দাও এবং আমার সালাম পৌঁছে দাও মাহদীর (আঃ) কাছে। ”
এ বইয়ের লেখক বলতে চান- শেইখ সাদরুদ্দীন- এর কথা মাহদী (আঃ)- এর অস্তিত্ব প্রমাণ করে না কারণ তিনি হয়তো এ চিন্তা করে একথাগুলো বলেছিলেন যে হয়তো তার ছাত্ররা মাহদী (আঃ)-এর আবির্ভাব প্রত্যক্ষ করবে।
তাদের মধ্যে আছেন সাদউদ্দীন হামাভী (ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দারু 474 পৃষ্ঠায় শেইখ আযীয বিন মুহাম্মাদ নাসাফী থেকে বর্ণিত) আল্লাহর ওয়ালীদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন- “ আল্লাহ এ উম্মাতের জন্য 12জন ‘ ওয়ালী ’ (সংরক্ষক) নিয়োগ করেছেন আহলুল বায়েত থেকে এবং তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন.... কিন্তু শেষ ওয়ালী যিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শেষ উত্তরাধিকারী এবং শেষ সংরক্ষক 12তম খলিফা হলেন মাহদী সাহেবুয যামান। ”
তাদের মাঝে আছেন শেইখ শাহাবুদ্দীন হিন্দী , যিনি মালিক উল উলামা উপাধিতে পরিচিত তার কিতাব ‘ হিদায়াতুস সুয়াদাতে (যেভাবে দুরারিল মুসাউইয়াতে এসেছে) বলেছেন- “ ইমাম হোসেইন (আঃ)- এর নবম বংশধর হলেন হুজ্জাতুল্লাহ ক্বায়েম আল মাহদী , যিনি গোপন আছেন। তিনি দীর্ঘ জীবন যাপন করবেন ঠিক যেমন ঈসা , ইলইয়াস ও খিযির (আঃ) (বিশ্বাসীদের মাঝে) এবং (অবিশ্বাসীদের মাঝে) দাজ্জাল , এবং সামেরী দীর্ঘ জীবন যাপন করছে। ”
শেইখ মুহাম্মাদ যিনি খাজা পারসা নামে বিখ্যাত তিনি তার কিতাব ‘ ফাসলুল খিতাবে ’ এর মাজির্নে (দুরারিল মূসাউইয়া অনুযায়ী) বলেছেন- “ খিলাফত ও ইমামত মাহদীতে শেষ হবে। তিনি তার পিতার ইন্তেকাল থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত ইমাম। ঈসা (আঃ) তার পিছনে নামায পড়বেন এবং তাকে স্বীকার করবেন এবং লোকদেরকে তার বিশ্বাসের দিকে আহবান করবেন। ”
তাদের মাঝে আছে বিখ্যাত হাদীসবেত্তা শেইখ শায়েব ইবনে হাজার আসকালানী যিনি ‘ ফাতহুল বারী ফী শারহ সহী আল বোখারী ’ কিতাব লিখেছেন। তার বই ‘ ক্বওলুল মুখতাসার- ফী আলামাতুল মাহদী আল মুনতাযার ’ (যেভাবে ফুতুহাতুল ইসলামিয়ার 2য় খণ্ডে। 320 পৃষ্ঠায় এসেছে)- এ বলেন- “ শক্তিশালী হাদীসসমূহ আমাদের বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে যে মাহদী আছেন। মাহদী হলেন সেই ব্যক্তি যার আত্মপ্রকাশ ঈসা ও দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের সাথে ঘটবে। মাহদী বলতে এ ব্যক্তিকেই বোঝায় এবং তার আগে আর সবাই মোটেও মাহদী নয়। ”
যারা এর চেয়ে বেশী জানতে চান তারা ‘ কাশফুল আসূরার ফীল গায়ের আনিল ইনতাযার ’ , বইটি পড়তে পারেন যা হাজ্ব মিরযা হুসেইন নূরী তাবারসী লিখে গেছেন।
মাহদী (আঃ) ও যারা তাকে দেখেছে
এ অধ্যায়ে আমরা তিনটি সুন্দর ঘটনা বর্ণনা করবো যা যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করবো না বরং হৃদয়কে প্রশান্ত করার জন্য সেগুলোর উল্লেখ করবো।
প্রথমঃ শেইখ আব্দুল ওয়াহাব শারানী তার কিতাব ‘ তাবাক্বাতুল উরাফা ’ -তে শেইখ হাসান আরাক্বীর কথা লিখতে গিয়ে বলেন- “ আমি সাইয়্যেদ আবুল আব্বাস হারিমির সাথে গেলাম শেইখ হাসান আরাক্বীর সাথে সাক্ষাত করতে। শেইখ আরাক্বী বললেন , ‘ আমি কি তোমাদেরকে আমার জীবনের কাহিনী শোনাবো এর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ? আমি এমনভাবে তা বর্ণনা করবো যে তোমরা মনে করবে তোমরা আমার অন্ত রঙ্গ বন্ধু ছিলে শৈশব কাল থেকেই। আমি বললাম , ‘ জ্বী আপনি বলতে পারেন। ’
তিনি বললেন- “ আমি হস্তশিল্প কর্মীদের মাঝে একজন যুবক ছিলাম। শুক্রবারগুলোতে আমরা খেলাধুলা , মদপান ও জুয়া খেলে কাটাতাম। এক শুক্রবার আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ইলহামের মত কিছু লাভ করলাম যে- ‘ তোমাকে কি এ ধরনের কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে ? ’ অতএব , আমি এসব কাজ ছেড়ে দিলাম এবং আামর সাথীদের কাছ থেকে পালিয়ে গেলাম। তারা আমার পিছু নিলো কিন্তু আমাকে খুজে পেলো না। আমি বনি উমাইয়্যার মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং একজন ব্যক্তিকে মিম্বরে দেখলাম হযরত মাহদী (আঃ) সম্পর্কে কথা বলতে। এর মাধ্যমে আমি মাহদী (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলাম। একটি সিজদাও বাদ যেতো না যে আমি আল্লাহর কাছে তার সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা পুরণ করার জন্য বলতাম না।
একদিন রাতে আমি নফল নামাজ পড়ার সময় হঠাৎ দেখলাম কেউ আমার পিছনে বসা আছেন। তিনি আমার পিঠে তার হাত বুলিয়ে বললেন- ‘ হে আমার সন্তান , দয়ালু খোদা তোমার ইচ্ছা পুরণ করেছেন। আমি মাহদী , তুমি কি চাও ? ’
আমি বললাম- ‘ আপনি কি আমার সাথে আমার বাসায় আসবেন ? ’
তিনি বললেন- ‘ হ্যা ’ , তখন আমরা দুজন একত্রে চললাম এবং তিনি পথে বললেন ,- ‘ আমাকে কোন নিজর্ন জায়গায় নিয়ে যাও। ’
আমি তাকে নির্জন স্থানে ’ নিয়ে গেলাম এবং তিনি সেখানে আমার সাথে সাত দিন থাকলেন। ”
দ্বিতীয়ঃ ‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 455 পৃষ্ঠায় (একটি ঘটনা) বর্ণনা করেছেন শেইখ আলী ইবনে ঈসা আরবালী থেকে যিনি শিয়া ও সুন্নী উভয়ের কাছে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি। লেখক বলেন- “ জনগণ ইমাম মাহদী (আঃ) এর মোজেযা সম্পর্কে ঘটনা বর্ণনা করে যা বর্ণনা করতে অনেক সময় লাগবে। যাহোক আমি দু ’ টো ঘটনার কথা বলবো যা আমাদের সময়ের নিকটবর্তীকালে ঘটেছে এবং একদল নির্ভরযোগ্য ভাই এগুলো বর্ণনা করেছে।
হিল্লাহ ও ফুরাত শহরের মাঝে (ইরাকে) এক লোক বাস করতো যার নাম ছিলো ইসমাইল ইবনে হাসান। নির্ভরযোগ্য ভাইরা ইসমাইল থেকে বর্ণনা করলো যে , তার বাম উরুতে একটি ফোঁড়া দেখা দিলো যার আকৃতি হলো হাতের তালুর মত । ডাক্তাররা ওই ফোঁড়া দেখে তা সারাতে অপারগতা প্রকাশ করলো। অতএব , ইসমাইল সামাররাতে চলে গেলো এবং ইমাম আলী হাদী ও ইমাম হাসান আসকারী (আঃ)-র মাযার যিয়ারাতে গেলো। এরপর সে ভূগর্ভস্থ ঘরে প্রবেশ করলো। সেখানে দয়ালু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলো এবং মাহদী (আঃ)-এর কাছে সাহায্য চাইলো।
এরপর সে দযলা নদীতে নেমে মোস্তাহাব গোসল করলো এবং তার পোষাককে বদলে নিলো। হঠাৎ সে দেখলো চারজন ঘোড়সওয়ার সামাররা শহরের দিক থেকে আসছে। তাদের একজন ছিলো বৃদ্ধ মানুষ যার হাতে একটি বর্শা এবং আরেকজন যুবক যিনি রঙ্গীন পোষাক পরে আছেন। যিনি বর্শা বহন করছিলেন তিনি ছিলেন ডান দিকে এবং অন্য দু ’ জন ছিলো বাম দিকে। যে যুবক রঙ্গীন পোষাক পরেছিলেন তিনি ছিলেন মাঝখানে। সেই যুবক ইসমাইলকে জিজ্ঞেস করলেন , “ তুমি কি আগামীকাল তোমার পরিবারের কাছে যাবে ? ” ইসলাইল বললো- জ্বী। তিনি বললেন ,- আমার কাছে আসো যেন আমি তোমার সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারি। ইসমাইল তার কাছে গেলো । তিনি নীচু হয়ে তার উরুতে তার পবিত্র হাত রাখলেন এবং ঘোড়ার জীনে সোজা হয়ে বসলেন। বৃদ্ধ লোকটি যে বর্শা ধরে ছিলো তিনি বললেন- ‘ তুমি সুস্থ হয়ে গেছো। তিনি তোমার ইমাম। ’
চারজন ঘোড়সওয়ার চলে যেতে লাগলো এবং ইসমাইলও তাদের পিছনে পিছনে চললো।
‘ ইমাম বললেন- ‘ ফিরে যাও ’ ।
ইসমাইল বললো- ‘ আমি আপনার কাছ থেকে কখনোই বিচ্ছিন্ন হবো না ’ ।
ইমাম বললেন , ‘ এটি তোমার নিজের ভালোর জন্যই , ফিরে যাও। ’
ইসমাইল বললো- ‘ আমি আপনার কাছ থেকে কোন অবস্থাতেই ’ বিচ্ছিন্ন হবো না ’ ।
বৃদ্ধ মানুষটি তখন মাঝখানে হস্তক্ষেপ করলো এবং বললো ‘ তোমার কি কোন লজ্জা নেই। তোমার ইমাম তোমাকে দু ’ বার আদেশ দিয়েছেন ফিরে যাওয়ার জন্য এরপরও তুমি অবাধ্য হচ্ছো ? ’
ইসমাইল থামলো। ইমাম সামনে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেন এবং পিছনে ফিরে বললেন- ‘ যখন তুমি বাগদাদে পৌছবে খলিফা মোতাসিম বিল্লাহ তোমাকে জোরপূর্বক ডেকে পাঠাবে। যখন সে তোমাকে কিছু দিতে চাইবে তা প্রত্যাখ্যান করো। এছাড়া আমাদের সন্তান রাযীউদ্দীনকে বলো তোমার পক্ষ হয়ে আলী ইবনে আওয়াজকে লিখতে। আমিও তাকে ইশারা করবো তোমাকে দেয়ার জন্য যা তোমার ইচ্ছা। ’
এরপর হযরত তার সাথীদেরসহ চলে গেলেন এবং ইসমাইলের দৃষ্টি তাদের উপর নিবদ্ধ থাকলো ঐ সময় পর্যন্ত যতক্ষণ আর সে তাদের দেখতে পেলো না। সে মাটিতে কিছুক্ষণের জন্য বসে রইলো এরপর তাদের সাথে বিচ্ছেদের কারণে কাদতেঁ শুরু করলো।
এরপর সে সামাররাতে গেলো যেখানে লোকজন তাকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞেস করলো , ‘ আমরা তোমার মধ্যে এত পরিবতর্ন দেখছি কেন ? কী ঘটেছে ? ’ ইসমাইল বললো- ‘ তোমরা কি জানো ঘোড়সওয়াররা কারা ছিলো যারা শহর ছেড়ে নদীর দিকে গিয়েছিলো ? ’ তারা বললো- তারা মর্যাদাবান ব্যক্তি ছিলো এবং গবাদিপশুর মালিক। ইসমাইল বললো , তারা ছিলো ইমাম ও তার সাথীরা। যিনি রঙ্গীন পোষাক পড়েছিলেন তিনি ছিলেন ইমাম এবং তিনিই তার পবিত্র হাতে আমার জখমে হাত বুলিয়েছিলেন। তারা বললো- ‘ আমাদেরকে দেখতে দাও। ’ যখন ইসমাইল তাদেরকে তার উরু দেখালো , সেখানে একটা দাগ পর্যন্ত ছিলো না। জনগণ তার জামা ছিড়ঁতে লাগলো তাবাররুকের জন্য এবং পরে অন্যরা যাতে তার কাছে পৌঁছাতে না পারে তাই তাকে ট্রেজারীতে নিয়ে গেলো। এরপর খলিফার প্রতিনিধি এলো এবং তাকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো । তার পারিবারিক পরিচিতি , তার দেশের বাড়ী , বাগদাদ থেকে প্রথম সপ্তাহে সে কী উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো সে সম্পর্কে।
পরদিন সকালে ইসমাইল এক বড় ভীড় এর মাঝ দিয়ে তার দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে সামাররা শহর ত্যাগ করলো। পথে সে এক জায়গায় এসে পৌঁছালো যেখানে অনেক লোক জমা হয়েছিলো এবং তারা তার নাম , বংশধারা এবং কোন জায়গা থেকে এসেছে এসব জিজ্ঞেস করলো। যখন তারা তাকে আগে উল্লেখিত নিদর্শন দেখে চিনতে পারলো তারা তার জামা ছিঁড়তে শুরু করলো তাবাররুক হিসেবে নেবার জন্য। খলিফার প্রতিনিধি ঘটনাটির বিশদ বিবরণ লিখে বাগদাদে পাঠিয়ে ছিলো। মন্ত্রী সৈয়দ রাযী উদ্দীনকে ডেকে পাঠালো ঘটনার সত্যতা জানার জন্য। যখন রাযিউদ্দীন (যে ছিলো ইসমাইলের সাথী ও সমর্থকরা ছাড়ার আগে ইসমাইলের মেযবান) এবং অন্যরা ইসমাইলকে দেখলো তারা নেমে এলো। যখন ইসমাইল তাদেরকে তার উরু দেখালো রাযিউদ্দীন প্রায় এক ঘন্টার জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলো। জ্ঞান ফেরার পর সে ইসমাইলের হাত ধরে তাকে মন্ত্রীর কাছে নিয়ে গেলো। রাযিউদ্দীন কেঁদে বললো- ‘ সে আমার ভাই এবং সব মানুষের মাঝে সে আমার সবচেয়ে প্রিয়। ’
মন্ত্রী ইসমাইলের কাছ থেকে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলো এবং সেও তার পুরো বর্ণনা দিলো। মন্ত্রী সেই ডাক্তারদের ডেকে পাঠালো যারা আগে ইসমাইলকে দেখেছিলো। যখন তারা এলো জিজ্ঞেস করলো- ‘ কখন আপনারা তার জখম শেষবারের মত দেখেছিলেন ? তারা বললো- ‘ দশ দিন আগে ’ । মন্ত্রী ইসমাইলের উরু দেখলো এবং যখন ডাক্তাররা এর কোন চিহ্ন দেখতে পেলো না তারা বললো- ‘ এটিতো মসিহর কাজ। ’ মন্ত্রী বললেন , ‘ আমরা জানি কে এ কাজটি করেছেন। ’
মন্ত্রী ইসমাইলকে খলিফার সামনে নিয়ে গেলো , খলিফা ইসমাইলকে ঘটনার বর্ণনা দিতে বললো এবং ইসমাইল তার খুটিনাটিু বর্ণনা দিলো যা ঘটেছে। যখন খলিফা ইসমাইলকে এক হাজার দিনার উপহার দিলেন ইসমাইল বললো- ‘ কিভাবে আমি এ উপহারের এক অংশও নিতে সাহস করবো ? ’ খলিফা বললেন- ‘ কাকে তুমি ভয় পাও ? ’ সে বললো- ‘ যিনি আমাকে সুস্থ করেছেন তাকে , কারণ তিনি আমাকে নিষেধ করেছেন আপনার কাছ থেকে কিছু নিতে। ’ এ কথা শুনে খলিফা কাদতেঁ শুরু করলো।
আলী ইবনে ঈসা বলেন- আমি একবার এ ঘটনা বর্ণনা করছিলাম একটি দলের কাছে যারা আমার চারদিকে বসে ছিলো। ইসমাইলের ছেলে শামসুদ্দিনও সেখানে উপস্থিত ’ ছিলো কিন্তু তখন আমি তাকে চিনতাম না। শামসুদ্দিন বললো ‘ আমি ইসমাইলের ছেলে। ’
আমি বললাম- ‘ তুমি কি তোমার বাবার উরুতে জখমটি দেখেছিলে ? ’ সে বললো- ‘ সে সময় আমি শিশু ছিলাম। কিন্তু আমি আমার বাবা-মা , আত্মিয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে এ বিষয়ে শুনেছি এবং জায়গাটি দেখেছি তা সুস্থ হয়ে যাবার পর। আমি কোন জখমের চিহ্ন সেখানে দেখি নি এবং সেখানে লোম গজিয়ে গেছে।
আলী ইবনে ঈসা আরও বললেন- আমি এ ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম সাইয়্যেদ সাফিউদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ এবং নাজমুদ্দীন হায়দার ইবনে আমিরের কাছেও এবং তারা আমাকে এ সম্পর্কে জানিয়েছে এবং বলেছে- ‘ আমরা ইসমাইলকে আগেও দেখেছি এবং তার সস্থতার পরও দেখেছি। ’
এছাড়া তার ছেলে আমাকে বলেছে যে তার পিতা তার সুস্থতার পরে সামাররাতে 40 বার গিয়েছিলো এ আশায় যে হয়তো সে আবার তার সাক্ষাত লাভ করবে।
দ্বিতীয়ঃ সাইয়্যেদ বাক্বী আসওয়া আলাউই হাসানী আমাকে বলেছেন যে তার বাবা আসওয়া মাহদীর অস্তিত্ব স্বীকার করতো না। তিনি মাঝে মাঝেই বলতেন , ‘ যখন মাহদী আসবেন এবং আমাকে সুস্থ করবেন আমি লোকজনের কথায় (মাহদী সম্পর্কে) সাক্ষী দিবো। ’ আমরা যখন সবাই এশার নামাজের জন্য একত্র হলাম আমরা আমাদের বাবার কাছ থেকে একটি চীৎকার শুনতে পেলাম। আমরা তার কাছে গেলাম এবং তিনি বললেন- ‘ এই এখন ইমাম এ জায়গা দিয়ে গেছেন , তার খোঁজ কর! ’ আমরা সবাই তার খোঁজে বের হলাম কিন্তু কাউকে খুঁজে পেলাম না। আমরা যখন ফিরে আসলাম তখন আমাদের বাবা বললেন-
‘ কেউ একজন আমার কাছে এলো ও বললো- ‘ হে আসওয়াহ ’ । আমি বললাম- ‘ আপনার সেবায় ’ । তিনি বললেন , ‘ আমি মাহদী। আমি এসেছি তোমাকে সুস্থ করতে। ’ তিনি তার হাত লম্বা করে দিলেন এবং আমার উরুতে চাপ দিলেন এবং এরপর চলে গেলেন। ” বর্ণনাকারী বলেন- ‘ এ ঘটনার পর সে হরিণের মত দৌড়াতো এবং কোন চিহ্নই আর দেখা যায় নি। ’
আলী ইবনে ঈসা বলেন , আমি এ ঘটনা সম্পর্কে সাইয়্যেদ বাক্বীর ছেলের কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম এবং সেও তা স্বীকার করেছে।
ষষ্ঠ অধ্যায়
গাইবাত (আত্মগোপন)-এর হাদীস
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (447 পৃষ্ঠায়) ‘ ফারায়েদুস সিমতাঈন ’ থেকে ইমাম মুহাম্মাদ বাকীর (আঃ)-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি বর্ণনা করেন তার পিতা থেকে যিনি বর্ণনা করেন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে এবং তিনি রাসূল (সাঃ) থেকে যে ,
“ মাহদী আমার বংশ থেকে। তার জন্য একটি আত্মগোপনকাল থাকবে। যখন সে আবির্ভূত হবে সে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায় বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে যেমনভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
একই বইয়ের 448 পৃষ্ঠায় এর লেখক সাঈদ ইবনে জুবায়ের থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আলী আমার ‘ ওয়াসী ’ এবং তার বংশ থেকে আসবে প্রতীক্ষিত ক্বায়েম , মাহদী , যে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যিনি আামকে সতর্ককারী ও সুসংবাদ দানকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন যে , আত্মগোপনকালে মাহদীর ইমামতে যাদের দৃঢ় বিশ্বাস থাকবে তারা লাল দিয়াশলাইয়ের চাইতেও দূর্লভ হবে। ’
তখন জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী দাঁড়ালেন এবং বললেন- ‘ ইয়া রাসূলুল্লাহ , আপনার বংশ থেকে ‘ ক্বায়েম ’ এর কি কোন আত্মগোপনকাল থাকবে ? ’ তিনি বললেন- ‘ হ্যাঁ , আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যে সে বিশ্বাসীদের পরীক্ষা করবে এবং অবিশ্বাসীদের ধ্বংস করবে (তার আত্মগোপনের মাধ্যমে)। ’ এরপর তিনি বললেন , ‘ হে জাবির , এ বিষয়টি ঐশী বিষয় এবং এ রহস্যটি ঐশী রহস্য। তাই এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থেকে সর্তক থাকো। কারণ ঐশী বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করা ধর্মদ্রোহীতা। ”
একই বইয়ের একই পৃষ্ঠায় লেখক হাসান ইবনে খালিদ থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি আলী ইবনে মূসা রিদা (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে ,
“ আল্লাহ পৃথিবী থেকে প্রত্যেক নৃশংসতা ও নিপীড়নকে মুছে ফেলবেন আমার চতুর্থতম বংশের সন্তানের হাতে যে হবে সর্বশ্রেষ্ঠ দাসীর সন্তান। সে হবে সেই ব্যক্তি যার জন্ম হওয়া সম্পর্কে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করবে। সে সেই ব্যক্তি যে আত্মগোপনে যাবে। যখন সে আবির্ভূত হবে পৃথিবী তার রবের আলোতে আলোকিত হয়ে যাবে। ”
একই বইয়ের (454 পৃষ্ঠায়) লেখক আহমাদ ইবনে যাইদ থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি দেবেল ইবনে আলী খুযাঈ থেকে তিনি ইমাম রিদার (আঃ) সামনে উপস্থিত ছিলেন এবং একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন যাتاء তে শেষ হয়েছিলো , তিনি বলেন- ইমাম রিদা (আঃ) বলেন- “ আমার পরে ইমাম হচ্ছে আমার সন্তান মুহাম্মাদ এবং তার পরে ইমাম হবে তার সন্তান আলী। তার পরে আসবে হাসান এবং হাসানের পর আসবে হুজ্জাত আল ক্বায়েম , যার আত্মগোপনের সময় জনগণ তার জন্য অপেক্ষা করবে এবং যাকে মানা হবে তার আবির্ভাবের সময়। সে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। তার উত্থান সম্পর্কে আমার বাবা আমার পিতামহদের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূল (সাঃ) বলেছেন- “ মাহদীর (আবির্ভাবের) উদাহরণ হবে কিয়ামতের মত যা হঠাৎ ঘটবে। ”
উক্ত বইয়ের লেখক (488 পৃষ্ঠায়) বর্ণনা করেছেন “ গায়াতুল মারাম ” থেকে যা বর্ণনা করেছে “ ফারায়েদুস সিমতাইন ” থেকে এবং তা জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আমার বংশ থেকে আসবে। তার নাম ও ডাক নাম আমার নাম ও ডাক নামের মত হবে। সব মানুষের মধ্যে সে চেহারায় ও চরিত্রে হবে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী । তার এক আত্মগোপনকাল থাকবে যার কারণে জাতিসমূহ পথভ্রষ্ট হবে। মাহদী একটি জলজ্বলে তারার মত আবির্ভূত হবে এবং পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
আবার ‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র একই পৃষ্ঠায় তিনি (শেইখ কুনদুযী) ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ থেকে তা ইমাম বাকীর (আঃ) থেকে , তিনি তার পিতৃপুরুষদের কাছ থেকে তারা আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আমার বংশ থেকে। তার জন্য থাকবে একটি আত্মগোপনকাল যার কারণে জাতিসমূহ পথভ্রষ্ট হবে। সে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
একই বইয়ের 493 পৃষ্ঠায় তিনি ‘ মানাকেব ’ বই থেকে বর্ণনা করেন যা ইমাম বাক্বীর (আঃ) থেকে বর্ণনা করে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ রহমতপ্রাপ্ত সে যে আমার আহলে বায়েতের ক্বায়েমকে অনুভব করবে এবং তাকে ইমাম বলে বিশ্বাস করবে তার আত্মগোপনকালে (আবির্ভাবের আগে) এবং তার বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব করে এবং তার শত্রুদের পরিত্যাগ করে। এ ধরনের ব্যক্তি আমার প্রেমিক ও সাথীদের অন্তর্ভূক্ত হবে এবং বিচার দিবসে তারা হবে আমার লোকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ”
একই বইয়ের লেখক আবু বাসীর থেকে বর্ণনা করেন তিনি বর্ণনা করেন ইমাম জাফর সাদিক থেকে তিনি তার প্রপিতামহ থেকে যিনি বর্ণনা করেন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আমার বংশ থেকে। তার নাম হবে আমার নামের মত এবং তার ডাকনাম হবে আমার ডাক নামের মত। সব মানুষের মধ্য থেকে সেই হবে চেহারায় ও চরিত্রে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী। তার একটি আত্মগোপনকাল থাকবে। যার কারণে জনগণ তাদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। তখন মাহদী আবির্ভূত হবে জ্বলজ্বলে তারার মত এবং পৃথিবীকে পূর্ণ করে দিবে সাম্য ও ন্যায়বিচার দিয়ে ঠিক যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
একই বইতে একই রকম একটি হাদীস আবু বাসীর থেকে দেখা যায় শুধু এ পাথর্ক্য সহকারে- “ মাহদী এক জ্বলজ্বলে তারার মত আবির্ভূত হবে এবং তার সাথে আনবে নবীর রিয্ক। ”
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (494) পৃষ্ঠায় আবু বাসীর থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি বর্ণনা করেছেন জাবির ইবনে ইয়াযীদ জআফী থেকে যে- আমি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীকে বলতে শুনেছি যে- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বলেছেনঃ
“ হে জাবির , আমার ওয়াসীগণ এবং আমার পরে মুসলমানদের ইমামরা হচ্ছে আলী , হাসান , হোসেইন , আলী ইবনে হোসেইন , মুহাম্মাদ ইবনে আলী- বাক্বীর নামে বিখ্যাত। হে জাবির তুমি তার সাক্ষাত পাবে এবং যখন পাবে আমার সালাম তার কাছে পৌছেঁ দিও। বাকীর-এর পর আসবে জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , মূসা ইবনে জাফর , আলী ইবনে মূসা , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মাদ , হাসান ইবনে আলী এবং আল ক্বায়েম , যার নাম ও ডাক নাম আমার নাম ও ডাক নামের অনুরূপ। ‘ ক্বায়েম ’ হাসান ইবনে আলীর সন্তান। মাহদী হলো সেই ব্যক্তি যা পূর্ব ও পশ্চিমের উপর বিজয় লাভ করবে। মাহদী হলো সেই ব্যক্তি যে তার সাথীদের দৃষ্টি থেকে আত্মগোপন করবে। কোন ব্যক্তি তার ইমামতে দঢ়ৃ বিশ্বাস রাখবে না শুধু তারা ছাড়া যাদের হৃদয়ের বিশ্বাসকে আল্লাহ পরীক্ষা করে নিয়েছেন। ”
মাহদী (আঃ) ও তার আত্মগোপনের ধরন
ইবনে বাবউইয়্যাহ বর্ণনা করেন সাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (যিনি ইমাম হাসান আসকারীর মৃত্যু ও দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ’ ছিলেন) থেকে- “ অসংখ্য মানুষ ইমাম হাসান আসকারীর দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ’ হয়েছিলো তাই কারো পক্ষে একত্রে কোন মিথ্যা তৈরী করা সম্ভব নয়। ”
বর্ণনাকারী বলেন- “ 288 হিজরীতে যখন ইমাম হাসান আসকারীর মৃত্যুর পর 28 বছর পার হয়ে গেছে আমরা আহমাদ ইবনে ওবায়দুল্লাহ ইবনে খাকান- এর সামনে উপস্থিত ’ হলাম। সে ছিলো কোমে খলিফার প্রতিনিধি , রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ছিলো তার উপর। সেই জমায়েতে আবু তালিবের বংশধর যারা সামাররার অধিবাসী ছিলো তাদের সম্পর্কে ও তাদের বিশ্বাস , ধার্মিকর্তা ও সাহসিকতা নিয়ে আলোচনা হলো। আহমাদ ইবনে ওবায়দুল্লাহ বললো- “ সামাররা শহরে আলাভী (আলীর বংশধর)-দের মধ্যে আমি হাসান ইবনে আলীর মত কোন ব্যক্তির দেখা পাই নি এবং কোন রাজার মধ্যে ও সমস্ত বনি হাশিমের মধ্যে এমন কারো কথা শুনি নি যে পবিত্রতায় , ব্যক্তিত্বে , শ্রেষ্ঠত্বে ও উদারতায় তার মত। তাকে প্রধান লোকদের উপর গুরুত্ব দেয়া হত। একইভাবে সেনাপতি , মন্ত্রী , লেখক ও সাধারণ জনগণ তাকে খুব শ্রদ্ধা করতো।
যখন ইমাম হাসান আসকারী অসুস্থ হয়ে পড়লেন , খলিফা আমার বাবাকে ডেকে পাঠালো ইমামের অসুস্থতা সম্পর্কে জানতে। আমার বাবা সাথে সাথেই রাজধানীতে চলে গেলো এবং শীঘ্রই ফিরে এলো। তিনি খলিফার পাঁচজন বিশেষ ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের নিয়ে আসলেন যারা তার কাছে নির্ভরযোগ্য ছিলো এবং তাদের একজন ছিলো নুহরাইর খাদেম। তিনি এ পাঁচজন ব্যক্তিকে ইমামের বাড়ি পাহারা দিতে বললেন এবং তার অসুস্থতা ’ সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে বললেন। তিনি বেশ ক ’ জন ডাক্তার ডাকলেন এবং তাদেরকে প্রতিদিন সকালে ও রাতে ইমামকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিলেন। দু ’ দিন পর ইমামের অবস্থার অবনতি হওয়ার সংবাদ পৌছালে আমার বাবা ছুটে গেলেন তাকে দেখতে এবং ডাক্তারদের আদেশ দিলেন ইমামকে একা থাকতে দিতে। এরপর তিনি প্রধান কাযীকে ডাকলেন এবং তাকে তার দশজন বিশস্ত সাথী আনতে আদেশ দিলেন যারা বিশ্বাসে , আমানতদারীতে ও ধার্মিকতায় নির্ভরযোগ্য ছিলো। প্রধান কাযী দশজনকে ডাকলেন এবং তাদেরকে ইমামের কাছে রাত দিন থাকার আদেশ দিলেন। তারাও তার খেদমতে রইলো যতক্ষণ পর্যন্ত না ইমাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন।
ইমাম হাসান আসকারী (আঃ) 260 হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। এতে সামাররাতে যেন ভূমিকম্প সংঘটিত হলো।
খলিফা তার বেশ কিছু লোককে ইমামের বাড়িতে পাঠালেন এবং তারা ইমামের ঘরগুলো খুঁজলো এবং যা পেলো তাতেই তালা মেরে দিলো। তারা ইমামের সন্তানকে খোজ করলো । তারা ধাত্রীদের নিয়ে এলো ইমাম হাসান আসকারীর দাসীদের পরীক্ষা করার জন্য। একজন ধাত্রী বললো ‘ অমুক দাসী গর্ভবতী। ’ খলিফা হুরাইর খাদেম ও তার সাথীদেরকে এবং অন্য মহিলাদের বললো এ দাসীর উপর নজর রাখতে।
এরপর তারা ইমামের দাফন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো এবং পরো শহর থমকে গেলো । বনি হাশিম , সেনাপতিগণ , লেখকগণ ও জনগণ হযরতের জানাযায় অংশ নিলো। সেদিন সামাররাতে যেন কেয়ামতের দশ্যৃ দেখা গেলো। যখন ইমামের দেহকে গোসল দেয়া হলো এবং কাফন পড়ানো হলো খলিফা আবু ঈসা মুতাওয়াক্কিলকে জানাযা পড়ার জন্য সামনে পাঠালেন। যখন আবু ঈসা ইমামের দেহের কাছে গেলো সে কাফনের কাপড় তুলে তার চেহারাকে লোকদেরকে দেখালো এবং বললো- এ ব্যক্তি ইমাম হাসান আসকারীর সাধারণভাবে মৃত্যু ঘটেছে। তার অসুস্থতার সময় অমুক ডাক্তার , অমুক কাযী , অমুক বিশস্ত ব্যক্তি এবং অমুক ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি উপস্থিত ছিলো এবং তারা সবাই এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে। এরপর সে ইমামের চেহারা ঢেকে দিলো এবং জানাযা পড়ালো এবং তার জানাযায় পাচঁ তাকবীর ছিলো। তার আদেশে ইমামের দেহ তার বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে তার প্রপিতামহের বাড়িতে সমাহিত করা হলো।
হযরতের দাফনের পর এবং জনগণ চলে যাওয়ার পর খলিফা এবং তার সাথীরা তার (ইমাম হাসান আসকারী) সন্তান সম্পর্কে খোজঁ খবর নিতে শুরু করলো। তারা প্রতিটি বাড়ি ভালোভাবে খুজে দেখলো। হযরতের সম্পদ উত্তরাধিকারীদের কাছে বন্টন করতে তারা বাধা দিলো। যারা ঐ দাসীর উপর নজর রাখার দায়িত্বে ছিলো তারা দু ’ বছর পর্যন্ত তার উপর নযর রাখলো। এরপর তারা হযরতের সম্পদ তার মা ও ভাইকে প্রদান করলো।
ইমাম হাসান আসকারীর মা নিজেকে হযরতের ওয়াসী বলে দাবী করলো এবং কাযীর সামনে তা প্রমাণিত হলো। কিন্তু তখনও খলিফা যুগের ইমামকে (হযরতের সন্তানকে) খুঁজে বেড়াচ্ছিলো।
মুহাম্মাদ ইবনে হাসান তুসী তার ‘ ফেহরেস্ত -এ ’ ‘ আহমাদ ইবনে ওবায়দুল্লাহর জীবন ’ অধ্যায়েও রেওয়ায়েতটি এনেছেন। আহমাদ ইবনে আব্বাস ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ নাজাশীও এ রেওয়ায়েতটি বর্ণনা করেছেন।
মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে নুমান (শেইখ মুফিদ) তার বই ‘ ইরশাদ-এ বলেছেন- “ ইমাম হাসান আসকারী 260 হিজরীর রবিউল আউয়াল প্রথম দিন অসুস্থ হন এবং ইন্তেকাল করেন 8ই রবিউল আউয়াল শুক্রবার । ইন্তেকালের সময় ইমাম হাসান আসকারীর বয়স ছিলো 28 বছর। তাকে একই বাড়িতে দাফন করা হয় , যা সামররাতে ছিলো। যেখানে তার প্রপিতামহ সমাধিত ছিলেন। ইমাম হাসান আসকারী (আঃ) তার সন্তানের জন্ম হওয়াকে গোপন রেখেছিলেন এবং তার বিষয়টি ঢেকে রেখেছিলেন যেহেতু সে সময় পরিস্থিতি অনুকূল ছিলো না। সে সময়কার খলিফা ইমামের সন্তানদের খোঁজে খুব খোঁজাখুঁজি করছিলো এবং তাদের বিষয় জানতে চাচ্ছিলো যেহেতু মাহদী সম্পর্কে বিশ্বাস ইমামিয়া শিয়াদের মাঝে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিলো এবং তারা তার আগমন আশা করছিলো। ইমাম হাসান আসকারী তার জীবদ্দশায় কখনোই তার সন্তানকে প্রকাশ্যে দেখান নি এবং তার মৃত্যুর পরও তার শত্রুরা তার সন্তানকে চেনার সুযোগ পায় নি। ”
মাহদী (আঃ)-এর স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন আত্মগোপন
প্রতীক্ষিত মাহদীর জন্য দু ’ বার আত্মগোপন রয়েছে-একটি স্বল্পকালীন ও অপরটি দীর্ঘসময়ের জন্য ।
স্বল্পকালীন আত্মগোপন শুরু হয়েছিলো হযরতের জন্ম থেকে এবং তা চলতে থাকে বিশেষ প্রতিনিধি ব্যবস্থার শেষ পর্যন্ত যার মেয়াদ ছিলো 74 বছর।
দীর্ঘকালীন আত্মগোপন শুরু হয়েছে স্বল্পকালীন আত্মগোপনের পর এবং ততদিন পর্যন্ত তা চলবে যখন হযরত মাহদী আত্মপ্রকাশ করবেন এবং তার শক্তি নিয়ে বিদ্রোহ করবেন।
‘ ইসবাতুল ওয়াসিয়া ’ -গ্রন্থে , ’ আলী ইবনে হোসেইন ইবনে আলী মাসুদী বলেন- “ বর্ণনা এসেছে যে ইমাম আলী আন নাক্বী (আঃ) অনুসারীদের দৃষ্টি থেকে হারিয়ে গেলেন তার গুটিকয়েক বিশেষ অনুসারীদের ছাড়া। যখন ইমামতের দায়িত্ব ইমাম হাসান আসকারীর কাছে অর্পণ করা হলো তিনি তার বিশেষ কিছু অনুসারীর সাথে কথা বলতেন এবং অন্যদের সাথে পর্দার আড়াল থেকে বলতেন। শুধু সে সময় ছাড়া যখন তিনি ঘোড়ায় চড়তেন এবং রাজার বাড়ির দিকে যেতেন। ”
ইমাম আসকারী এবং তার পিতা এ আচরণ করছিলেন হযরত মাহদীর আত্মগোপন-এর ক্ষেত্র তৈরী করার জন্য। তা এজন্য যেন অনুসারীরা আত্মগোপন-এর বিষয়টির সাথে পরিচিত হয় এবং তা অস্বীকার না করে এবং তারা ইমামের অনুপস্থিতি ও আত্মগোপনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)- এর সময় থেকে শুরু করে ইমাম আলী আন-নাক্বী (আঃ) ও ইমাম হাসান আসকারী (আঃ) পর্যন্ত অনুসারীদের নিয়ম ছিলো তারা যখনই ইমামের সাথে দেখা করতে চাইতো তারা সাক্ষাত করতে পারতো। তারা যদি এ থেকে বঞ্চিত হতো তাহলে সন্দেহ ও দোদুল্যমানতা তাদেরকে স্পর্শ করতো। বরং তাদের কারো কারো বিশ্বাস দুর্বল হয়ে যেতো। এজন্য ইমাম আলী আন-নাক্বী (আঃ) ও ইমাম হাসান আসকারী (আঃ) মাসুদীর বর্ণনা মতে এপথ অবলম্বন করেছিলেন যেন অনুসারীরা ধীরে ধীরে ইমামের আত্মগোপনের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
ইমাম হাসান আসকারীর চাইতে তার পিতা ইমাম আলী আন- নাক্বী (আঃ) নিজেকে অনুসারীদের কাছ থেকে কম সরিয়ে রাখতেন। এর কারণ হচ্ছে ইমাম মাহদী (আঃ)-এর জন্য দু ’ বার আত্মগোপন রয়েছে। একটি স্বল্পকালীন যেখানে তার বিশেষ প্রতিনিধি ছিলো যাদের মাধ্যমে অনুসারীরা তাদের ইমামের সাথে চিঠিপত্র আদান প্রদান করতো , ততক্ষণ পর্যন্ত যখন তার অনুসারীরা তার অনুপস্থিতির সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেলো এবং তখন থেকে শুরু হলো তার দীর্ঘকালীন আত্মগোপন যখন বিশেষ প্রতিনিধি থাকার ব্যবস্থাও বাতিল হয়ে গেলো।
সপ্তম অধ্যায়
আসমানী কন্ঠস্বর
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন (অংশ 3 , অধ্যায় চতুর্থ) ইমাম হোসেইন (আঃ) থেকে- “ যদি তোমরা পূর্ব দিক থেকে একটি আগুন দেখতে পাও তিন অথবা সাত দিনের জন্য তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমরা আলে মুহাম্মাদের ‘ ফারাজ ’ (মুক্তি) আশা করতে পারো। ”
ইমাম (আঃ) আরও বলেন- “ পরে একজন আহবানকারী আকাশ থেকে মাহদীর নাম এমনভাবে বলবে যে তা পূর্ব ও পশ্চিম সবদিকে শোনা যাবে। যারা ঘুমিয়ে থাকবে তারা প্রত্যেকেই জেগে উঠবে এবং যারা বসে থাকবে তারা ভয়ে দু ’ পায়ের উপর দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন তার উপর যে আহবানের উত্তর দিবে কারণ আহবানকারী আর কেউ নয় জীবরাইল ছাড়া। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 414 পৃষ্ঠায় ‘ দুররুল মানযুম ’ থেকে বর্ণনা করেছেন- “ মাহদীর আবির্ভাবের প্রমাণগুলোর একটি হলো এক আহবানকারী ডেকে উঠবে- ‘ জেনে রাখো , ‘ যুগের সর্দার ’ আবির্ভূত হয়েছে। ’ এরপর যে কেউ ঘুমিয়ে থাকবে সে জেগে উঠবে এবং যে দাড়িয়েঁ থাকবে সে বসে পড়বে। ”
আসমানী নিদর্শনসমূহ
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক (পরিচ্ছেদে-3 , চতুর্থ অধ্যায়ে) হাফিজ আবু বকর ইবনে হাম্মাদ থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন- ‘ মাহদী আবির্ভূত হবে না যতক্ষণ না সূর্যের সাথে কিছু নিদর্শন আবির্ভূত হয়। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক হাফিয নাঈম ইবনে হেমাদ এবং তিনি বাশার ইবনে হাযরামী থেকে বর্ণনা করেন- “ রমযান মাসে ঘটনাসমূহের নিদর্শন হবে আসমানী নিদর্শন এবং এরপর জনগণ পরস্পর বিভেদ করবে। যখন তোমরা নিদর্শনগুলো দেখবে তখন নিজের জন্য যতটকু পারো খাদ্য জমা কর। ”
আবার একই বইয়ের একই অধ্যায়ে এর লেখক হাফেজ নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ‘ আল ফাতান ’ থেকে তিনি কা ’ আব আল আহবার থেকে বর্ণনা করেন- “ মাহদীর আগমনের পূর্বে জ্বলজ্বলে তারাসমূহ আবির্ভূত হবে পূর্বদিক থেকে। ”
সূর্য ও চাঁদের গ্রহণ
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক প্রথম পরিচ্ছেদ , চতুর্থ অধ্যায়ে হাফেয নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি ইয়াযিদ ইবনে খালিল আসাফী থেকে বর্ণনা করেন-
“ আমি ইমাম বাকির (আঃ)-এর কাছে উপস্থিত ’ ছিলাম। তিনি বললেন , দু ’ টি নিদর্শন মাহদীর আবির্ভাবের আগে ঘটবে (যা আদম (আঃ)-এর অবতরণ থেকে এখন পর্যন্ত দেখা যায় নি)। একটি নিদর্শন হলো 15ই রমযান সূর্য গ্রহণ হবে এবং চন্দ্র গ্রহণ হবে রমযান মাসের শেষের দিকে। ’
এক ব্যক্তি বললো- ‘ হে রাসূলুল্লাহর সন্তান , আপনি যা বলছেন তা নয়। বরং সূর্য গ্রহণ হবে রমযান মাসের শেষে এবং চন্দ্র গ্রহণ হবে রমযান মাসের মাঝামাঝি। ’ ইমাম বাকের (আঃ) বললেন- ‘ যিনি একথা বলছেন তিনি (তোমার থেকে) ভালো জানেন যে আদম (আঃ)-এর অবতরণ থেকে এ পর্যন্ত এ দু ’ টি নিদর্শন ঘটে নি। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ - এর লেখক একই রেওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন।
জনগণের মাঝে মতভেদ ও হতাশা
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক পরিচ্ছেদ এক , চতুর্থ অধ্যায়-এ ইমাম হোসেইন (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন-
“ যে বিষয়ে তোমরা অপেক্ষা করছো , যেমন মাহদী (আঃ)-এর আগমন , তা পূরণ হবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হও এবং তোমাদের ব্যক্তি কিছু অন্যদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দাও এবং যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে অভিযোগ কর। ”
বর্ণনাকারী বলেন- ‘ আমি বললাম- এতে কি ভালো কিছু থাকবে ? ইমাম (আঃ) উত্তর দিলেন- “ কল্যাণ থাকবে যখন মাহদী আবির্ভূত হবে এবং এ ধরনের নৃশংসতা ও নিপীড়ন ধ্বংস করবেন। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 491 পৃষ্ঠায় হাফেয আবু নাঈম ইসফাহানীর ‘ আরবাঈন ’ থেকে বর্ণনা করেন যে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) বলেছেন-
“ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম- ‘ হে রাসূলুল্লাহ , মাহদী কি আমাদের বংশ থেকে নাকি অন্য কোন বংশ থেকে ? ’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন- “ বরং সে আমাদের কাছ থেকে। ধর্ম তার হাতে গিয়ে সমাপ্ত হবে যেভাবে তা আমাদের কাছ থেকে শুরু হয়েছে। জনগণ বিদ্রোহ থেকে মুক্তি পাবে মাহদীর মাধ্যমে যেভাবে তারা শিরক থেকে মুক্তি পেয়েছিলো আমাদের মাধ্যমে। মাহদীর মাধ্যমে আল্লাহ তাদের হৃদয়ে ঐক্য সৃষ্টি করবেন যেভাবে তিনি তাদের মধ্যে আমাদের মাধ্যমে ঐক্য সৃষ্টি করেছিলেন ঘৃণা ও শিরকের পর। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 151 পৃষ্ঠায় আহমাদ ও মাওয়ারদি থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “ তোমাদেরকে সুসংবাদ মাহদী সম্পর্কে । সে কুরাইশ থেকে এবং আমার বংশ থেকে সে আবির্ভূত হবে জনগণের মাঝে বিভেদ এবং দ্বন্দ্বের সময়। ”
নৃশংসতা ও নিপীড়ন
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক ’ -এ (পৃষ্ঠা 99) আবুল কাসিম তাবরানি থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “ আমার পরে আসবে খলিফারা। খলিফাদের পরে আসবে শাসকরা এবং শাসকদের পরে আসবে রাজারা। তাদের পর আসবে অত্যাচারীরা এবং তার পরে আবির্ভূত হবে এক ব্যক্তি আমার আহলে বায়েত থেকে যে পৃথিবীকে ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা অবিচারে পূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো। ”
“ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক (148 পৃষ্ঠায়) একই রকম একটি হাদীস হাকেম থেকে বর্ণনা করেছেন।
বিশৃঙ্খলা
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তৃতীয় পরিচ্ছেদ , নবম অধ্যায়ে হাফিয আবু নাঈম থেকে বর্ণনা করেছেন এবং তিনি আবু হালাল থেকে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন- “ যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছিলেন আমি তারঁ কাছে গেলাম। তিনি একটি হাদীস বললেন এবং এভাবে শেষ করলেন- “ হে ফাতেমা , আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি যিনি আমাকে সত্যসহ নিয়োগ দিয়েছেন যে মাহদী এ উম্মাহ থেকে এবং সে হাসান ও হোসেইন থেকে।
আল্লাহ মাহদীকে এমন সময়ে পাঠাবেন যখন পৃথিবী বিশৃঙ্খলায় পড়বে। যখন বিদ্রোহ বিজয়ী হবে , যখন উপায় কর্তিত হবে , যখন একদল অপর দলের উপর বিদ্রোহ করবে , যখন কোন বৃদ্ধ কম বয়সীদের উপর দয়া করবে না এবং যখন কোন কম বয়সী থাকবে না যারা বয়স্কদের শ্রদ্ধা করবে। মাহদী পথভ্রষ্টতা ও দুষ্কর্মের দূর্গগুলো জয় করবে। মাহদী শেষ যুগে ধর্মের জন্য উঠে দাঁড়াবে যেভাবে আমি এর শুরুতে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম। সে পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে যেভাবে তা নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
হত্যা ও মৃত্যু
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক প্রথম পরিচ্ছেদ , চতুর্থ অধ্যায়ে আলী ইবনে মুহাম্মাদ আযদী থেকে এবং তিনি তার পিতা থেকে তিনি তার পিতামহ আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন- “ মাহদীর সময়ে লাল ও সাদা মৃত্যু ও পঙ্গপাল দৃশ্যমান হবে। লাল মৃত্যু তরবারীর (অস্ত্র ) কথা ইঙ্গিত করে এবং সাদা মৃত্যু প্লেগের কথা বোঝায়। ”
একই বইতে একই অধ্যায়ে এর লেখক ইমাম আবু আমরো উসমান ইবনে সাঈদ মুক্বারীর ‘ সুনান ’ এবং হাফেজ নাঈম ইবনে হেমাদ- এর ‘ ফাতান ’ থেকে আমিরুল মোমিনীন আলী (আঃ)-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন-
“ মাহদী আবির্ভূত হবে না যতক্ষণ না (প্রতি) তিনজনের মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়। অন্যজন মৃত্যুবরণ করে এবং তৃতীয়জন বাকী থাকে। ”
দুর্যোগ এবং পরীক্ষা
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক ‘ মেশকাতলু মাসাবিহ ’ ও হাকেম এর ‘ মুসতাদরাক ’ থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ দুর্যোগ এ উম্মতের উপর আপতিত হবে এমনভাবে যে , কোন ব্যক্তি এ থেকে কোন আশ্রয় খুঁজে পাবে না। এরপর আল্লাহ আমার আহলে বায়েত থেকে একজনকে নিয়োগ দিবেন যে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা আগে নৃশংসতা ও অত্যাচারে পূর্ণ ছিলো। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ এর লেখক প্রথম পরিচ্ছেদ , চতুর্থ অধ্যায়ে ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বীর (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন- “ মাহদী আবির্ভূত হবে না যতক্ষণ না জনগণ ভীত হয় , যখন জনগণ ভূমিকম্প ও প্লেগ-এ আক্রান্ত হয় , যখন বিশৃঙ্খলা ও মতভেদ জনগণের মধ্যে দেখা দেয় , যখন তাদের ধর্মের বিষয়ে বিভেদ দেখা দেয় , তখন জনগণের অবস্থা ’ এমনভাবে পরিবর্তিত হবে যে তারা মৃত্যু চাইবে রাত ও দিন। মাহদী আবির্ভূত হবে হতাশা ও নিরাশার সময়ে। রহমতপাপ্ত সে যে মাহদীকে অনুভব করবে এবং তার সাহায্যকারীদের কাতারে যোগদান করবে। অভিশাপ তার উপর যে তাকে ও তার আদেশের বিরোধিতা করবে। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে এর লেখক আবু সাঈদ খুদরী থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমার পরে বিদ্রোহ দেখা দিবে তা থেকে মুক্তি সম্ভব হবে না। ঐ বিদ্রোহগুলোতে যুদ্ধ ও ছড়ানো ছিটানো সংঘাত ঘটবে। এরপর আরও কঠিন বিপর্যয় দেখা দেবে। এমনভাবে যে , এক জায়গায় তা থেমে গেলে অন্য জায়গায় তা চলতে থাকবে। তা ঐ পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে ঠেকবে যে , কোন আরব ঘর ও কোন মুসলমান তা থেকে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়ে থাকবে না। তখন আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে। ”
এ হাদীসটি হাফেয আবু মুহাম্মাদ হোসেইন তার ‘ মাসাবিহ ’ -তে এবং হাফিয নাঈম ইবনে হেমাদ তার বই ‘ ফাতান ’ -এ উল্লেখ করেছেন। সহীহ বোখারীতেও এর একটি প্রমাণ দেখা যায়।
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ (পৃষ্ঠা 97)-এ হাকিম আবু আব্দুল্লাহর ‘ সহীহ ’ থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “ শেষ যুগে কঠিন দুর্যোগ আমার উম্মতের উপর আপতিত হবে। এমন কঠিন দুর্যোগ যে তা আগে কখনোই শোনা যায় নি এবং জনগণ তা থেকে কোন আশ্রয় পেতে ব্যর্থ হবে। সে সময় আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দিবেন যে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
সাইয়্যেদ খোরাসানী
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক পঞ্চম অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে বর্ণনা করেন যিনি সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ বনি আব্বাস থেকে এক ব্যক্তি পূর্ব দিক হতে আত্মপ্রকাশ করবে এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তা প্রতিষ্ঠিত হবে। এরপর ছোট ছোট কালো পতাকাবাহী লোকেরা উঠে দাড়াবে এবং তারা আবু সুফিয়ানের বংশের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তারা মাহদীর কাছে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। ”
একই বইতে একই অধ্যায়ে এর লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়াহ থেকে বর্ণনা করেন- “ পতাকাবাহী লোকজন খোরাসান থেকে উত্থিত হবে , এরপর সাদা রং-এর পতাকার লোকেরা উঠে দাড়াবে। বনি তামিম গোত্রের তামিম ইবনে সালেহ নামে এক লোক তাদের মুখোমুখি হবে। তখন জনগণ মাহদীকে চাইবে ও তাকে খুজবে। ”
একই বইয়ের একই অধ্যয়ে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি শারি ইবনে আব্দুল্লাহ , কাশিফ ইবনে সাদ ও হামযা ইবনে হাবিব থেকে বর্ণনা করেন-
“ পূর্ব দিকের জনগণ বনি হাশিমের এক ব্যক্তির কাছে আনুগত্যের শপথ করবে যে খোরাসানের সেনাবাহিনী নিয়ে আবির্ভূত হবে। বনি তামিম গোত্রের এক ব্যক্তি তার মুখোমুখি হবে। যদি পাহাড়ও তার মুখোমুখি হয় সে তা ধ্বংস করে দিবে। পরে সে সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর মুখোমু খি হবে এবং তাদেরকে পরাজিত করবে। তাদের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধ হবে এবং সে তাদের হত্যা করবে। সে তাদেরকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় উচ্ছেদ করবে এবং তাদেরকে ইরাকে পরাজিত করবে। এরপর তাদের মাঝে একটি ঘটনা ঘটবে যাতে সুফিয়ানী বিজয় লাভ করবে এবং হাশেমী বংশীয় এক লোক মক্কার দিকে পালিয়ে যাবে এবং তামিম ইবনে সালেহ (যে হাশেমীর সেনাবাহিনীর একজন সেনাপতি) বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে পালিয়ে যাবে। যখন মাহদী আবার আবির্ভূত হবেন হাশেমীও আবির্ভূত হবে। ”
নাফসে যাকিয়্যাহর (পবিত্র আত্মার ব্যক্তি) হত্যাকাণ্ড
ইকদুদ দুরার এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি আম্মার ইবনে ইয়াসির থেকে বর্ণনা করেন - “ যখন নাফসে যাকিয়্যাহকে হত্যা করা হবে এক আহবানকারী আকাশ থেকে ডেকে উঠবে ‘ জেনে রাখ তোমাদের শাসক হচ্ছে অমুক ব্যক্তি (মাহদী ) যে পৃথিবীকে সত্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে । ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক নাইম ইবনে হেমাদ-এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি কাব আল আহবার থেকে বর্ণনা করেন যে- “ মদীনা লুট করা বৈধ হয়ে যাবে এবং নাফসে যাকিয়্যাহকে হত্যা করা হবে। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক ইমাম হোসেইন ইবনে আলীর (আঃ) কাছ থেকে বর্ণনা করেন- “ মাহদীর জন্য পাঁচটি নিদর্শন থাকবে- 1. সুফিয়ানী ; 2. ইয়ামানী ; 3. আসমানী আহবান ; 4. বাইদাহর ভুমি ধ্বসে যাওয়া ও 5. নাফসে যাকিয়্যাহর হত্যাকাণ্ড। ”
দাজ্জালের বিদ্রোহ
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক পঞ্চম অধ্যায়ে বুখারী ও মুসলিম থেকে বর্ণনা করেন এবং তারা মা ’ আয ইবনে জাবাল থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূল ল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমার উম্মতের মধ্য থেকে একটি গোত্র সত্যের জন্য যুদ্ধ করবে এবং শত্রুদের উপর বিজয়ী হবে যতক্ষণ না সে শেষবারের মত দাজ্জালের মুখোমুখি হয়। ” একটি হাদীসে উল্লেখ আছে হযরত (সাঃ) বলেছেন- “ আমার উম্মতের একটি দল। ”
একই বইয়ের নবম অধ্যায়ে লেখক হাকেমের ‘ মুসতাদরাক ’ থেকে বর্ণনা করেন (যিনি বর্ণনাধারাকে সঠিক মনে করেন যদি তা মুসলিমও বর্ণনা করে থাকেন) যিনি জাবিল ইবনে সামরাহ এবং নাফেহ ইবনে উক্ববাহ থেকে বর্ণনা করেছেন-
“ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি- ‘ তোমরা আরব উপদ্বীপের লোকজনের সাথে যুদ্ধ করবে এবং তাদের উপর বিজয় লাভ করবে। এরপর তোমরা ইরানীদের সাথে যুদ্ধ করবে এবং তাদের উপরও বিজয় লাভ করবে। এরপর তোমরা দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে। ”
একই বইয়ের 12তম অধ্যায়ে লেখক আবুল আব্বাস ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে তুগলাব থেকে বর্ণনা করেন- “ দাজ্জালকে দাজ্জাল বলা হয় এজন্য যে সব কিছু উল্টোভাবে দেখায়। ”
একই অধ্যায়ে লেখক বুখারী থেকে বর্ণনা করেন এবং তিনি আনাস ইবনে মালিক থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “ এমন কোন নবীর উম্মাত নেই যা ভয়ংকর ও মিথ্যাবাদী দাজ্জালকে ভয় করে না। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক ’ - এ (99 পৃষ্ঠায়) আবুল হোসেইন আবারী থেকে বর্ণনা করেন- “ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে প্রচুর হাদীস এসেছে মাহদীর আবির্ভাব সম্পর্কে যে হযরত মাহদী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর বংশধর , তিনি সাত বছর শাসন করবেন , তিনি পৃথিবীকে ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন এবং তিনি ঈসা (আঃ)- এর সাথে আবির্ভূত হবেন এবং ঈসা (আঃ) তাকে দাজ্জাল হত্যায় সাহায্য করবেন। ”
সুফিয়ানীর বিদ্রোহ
‘ ইক্বদুদ দুরার ’ -এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে সাফওয়ান থেকে এবং তিনি হাফসা (নবী (সাঃ)-এর স্ত্রী) থেকে বর্ণনা করেন-
“ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি এ বাড়ি একটি সেনাবাহিনীর হাত থেকে নিরাপদ থাকবে যা এটিকে আক্রমণ করবে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেনাদলটি একটি নরম ভূমিতে অবস্থান নিবে। মাঝখানের সারিটি মাটিতে দেবে যাবে। যখন প্রথম সারিটি শেষ সারির কাছ থেকে সাহায্য চাইবে তখন তাদের মধ্যে থেকে কেউ বেঁচে থাকবে না সে ছাড়া যে তাদের বিষয়ে জানাবে। ”
এক ব্যক্তি আব্দুল্লাহ ইবনে সাফওয়ানকে সম্বোধন করে বলেন- “ আমি সাক্ষী দিচ্ছি যে আপনি হাফসার বিষয়ে মিথ্যা বলেন নি এবং তিনিও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে মিথ্যা বলেন নি। ” এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম তার ‘ সহীহ ’ তে বর্ণনা করেছেন।
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক ইমাম মুসলিম (সহীহ) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উতবা থেকে বর্ণনা করেন যে-
“ আমি উম্মুল মুমিনীন (নবীর (সাঃ) স্ত্রী উম্মে সালামা)-এর কাছে গেলাম হারিস ইবনে রবীয়াহ এবং আব্দুল্লাহ ইবনে সাফওয়ানের সাথে। দু ’ জনই উম্মে সালামার কাছে জানতে চান ঐ সেনাবাহিনী সম্পর্কে যা মাটিতে দেবে যাবে। উম্মে সালামা বললেন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- ‘ এক ব্যক্তি কাবা ঘরে আশ্রয় নিবে। আল্লাহ একটি সেনাবাহিনী আনবেন এবং যখন তারা নরম ভুমিতে পৌঁছাবে তারা এতে ডুবে যাবে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম- ‘ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার কী অবস্থা ’ হবে যে ব্যর্থ হবে ? তিনি বললেন- সেও তাদের সাথে ডুবে যাবে কিন্তু আল্লাহ তাকে বিচার দিবসে তার নিয়ত অনুযায়ী বিচার করবেন। ”
একটি হাদীসে ইমাম বাকীর (আঃ) বলেন- ‘ নরম ভূমি ’ বলতে মদীনাকে বোঝানো হয়েছে ।
একই বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ের তৃতীয় অংশে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি যুহুরী থেকে বর্ণনা করেন যে- “ যখন সুফিয়ানী এবং মাহদী পরস্পর যুদ্ধে মুখোমুখি হবে তখন আকাশ থেকে একটি চীৎকার শোনা যাবে- ‘ জেনে রাখো আল্লাহর ওয়ালীরা অমুক ব্যক্তির (মাহদীর) সাহায্যকারী। ”
একই বইয়ের 2য় অংশে , চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি খলিল ইবনে সুফিয়ান থেকে বর্ণনা করেন- “ সুফিয়ানী বিদ্রোহ করবে এবং তার হাতে থাকবে তিনটি বাশী। সে তা যার জন্য বাজাবে সেই মারা যাবে। ”
একই বইয়ের 2য় অংশে , চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ (ফাতান) এবং আবু আব্দুল্লাহ (মুসতাদরাক) থেকে এবং তারা ইবনে মাসুদ থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ সাতটি দুর্যোগ থেকে সতর্ক থাকো যা আমার পরে ঘটতে যাচ্ছে- মদীনার বিশৃঙ্খলা , মক্কার বিশৃঙ্খলা , ইয়েমেনের বিশৃঙ্খলা , সিরিয়ার বিশৃঙ্খলা , পূর্ব দিক থেকে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে , পশ্চিম দিক থেকে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে এবং শেষটি যা মধ্য সিরিয়া থেকে দেখা দিবে তা হবে সুফিয়ানীর বিশৃঙ্খলা । ”
ইবনে মাসুদ বলেন- ‘ তোমাদের কেউ কেউ দুর্যোগসমূহের শুরু দেখবে এবং আমরা এর শেষ অংশ দেখবো ’ ।
ওয়ালিদ ইবনে আব্বাস বলেন- “ মদীনার বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিলো তালহা ও যুবায়ের-এর কাছ থেকে। মক্কার বিশৃঙ্খলা ছিলো ইবনে জুবায়ের থেকে , ইয়েমেনের বিশৃঙ্খলা ছিলো নাজদাহ থেকে , সিরিয়ার বিশৃঙ্খলা বনি উমাইয়্যাহ থেকে এবং মধ্য সিরিয়ার বিশৃঙ্খলাও এ একই দল থেকে। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর পরিচ্ছেদ 2 , চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক জাবির ইবনে ইয়াযীদ জুয়াফী থেকে এবং তিনি ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বীর (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে ইমাম বাক্বীর (আঃ) বলেছেন- “ হে জাবির নিজের জায়গায় দৃঢ়ভাবে বসে থাকো যতক্ষণ আমি নিদর্শনগুলো তোমার কাছে বর্ণনা করি- সিরিয়া থেকে তিনটি পতাকা বেরোবে। লাল এবং সাদা পতাকা , কালো ও সাদা পতাকা এবং সুফিয়ানীর পতাকা। সুফিয়ানী দশ হাজার সৈন্যকে কুফার দিকে পাঠাবে। তারা লুট করবে , হত্যা করবে এবং এর অধিবাসীদের বন্দী করবে। যখন তারা এ কাজে ব্যস্ত হবে তখন খোরাসান থেকে সৈন্যরা পতাকা বহন করে দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাবে। তারা মাহদীর সাহায্যকারী। সুফিয়ানী মদীনার দিকে সৈন্য প্রেরণ করবে এবং মাহদী মদীনা থেকে মক্কায় গোপনে চলে যাবেন। সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর প্রধানকে মাহদীর মক্কার দিকে গোপনে চলে যাওয়া সম্পর্কে জানানো হবে।
নাজদেহ ইবনে আমের হানাফী খাওয়ারিজদের একজন যে তার বাহিনীকে ধরার জন্য আদেশ দিবে। কিন্তু তারা তাকে খুঁজে পাবে না। সুফিয়ানীর সেনাবাহিনীর সেনাপতি ‘ বাইদাহ ’ (মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী নরম স্থান) নামের এক জায়গায় পৌঁছাবে এবং এক আহবানকারী আসমান থেকে ডেকে উঠবে- ‘ হে বাইদাহ , এ দলটিকে ধ্বংস কর। ’ তখন বাইদাহর স্থানটি তাদের গিলে ফেলবে ’ । ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (414 পৃষ্ঠায়) ‘ দুররুল মুনজুম ’ বই থেকে বর্ণনা করেছেন- “ মাহদীর আবির্ভাবের একটি নিদর্শন হবে সুফিয়ানীর বিদ্রোহ। সে মক্কার দিকে 30 ,000 সৈন্য পাঠাবে যেখানে তারা ‘ বাইদাহ ’ নামক স্থানে ’ ডুবে যাবে। ”
ইবনে আবিল হাদীদ তার নাহজুল বালাগার তাফসীরে (খণ্ড-1 , পৃষ্ঠা 211) গায়েব সম্পর্কে আলী (আঃ)-এর ভাষণ সম্পর্কে বলেন- “ আবু দাউদ থায়ালেসি বর্ণনা করেছেন সোলাইমান যাররিক থেকে , তিনি আব্দুল আযীয থেকে , তিনি আবুল আলিয়া থেকে , তিনি মাযরাহ থেকে (যিনি আলী (আঃ) সাথী ছিলেন) যিনি বলেন-
“ একটি সেনাবাহিনী অগ্রসর হবে যতক্ষণ না বাইদাহর ভূমি পর্যন্ত পৌঁছায়। সেখানে সৈন্যবাহিনীটি মাটিতে ডুবে যাবে। ”
আবুল আলিয়া বলেন- ‘ আমি মাযরাহকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি আমাকে গায়েব সম্পর্কে কোন সংবাদ দিবেন কিনা। তিনি বললেন- “ আমি যা বলি তা সংরক্ষণ কর কারণ আলী ইবনে আবি তালিবের মত একজন নির্ভরযোগ্য মানুষ আমাকে তা জানিয়েছেন। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 153 পৃষ্ঠায় বলেছেন- “ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে সুফিয়ানী সিরিয়া থেকে মাহদীর বিরুদ্ধে সৈন্যবাহিনী পাঠাবে এবং তারা ‘ বাইদাহ ’ র ভূমিতে এসে মাটিতে ডুবে যাবে। কেউ বেঁচে থাকবে না সে ব্যক্তি ছাড়া যে তাদের সম্পর্কে খবরটা ছড়িয়ে দিবে। সুফিয়ানী এবং মাহদী তাদের নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে ঐ ব্যক্তির দিকে এগিয়ে যাবে এবং মাহদীর বিজয় হবে এবং সুফিয়ানী নিহত হবে। ”
মাহদীর (আঃ) আগমনের নিদর্শনসমূহ
‘ ফুসুলুল মুহিম্মা ’ -র লেখক 12তম অধ্যায়ে বলেন- হাদীসসমূহে এসেছে মাহদীর আবির্ভাব ও ঘটনাসমূহ সম্পর্কে যা তার উত্থানের আগে ঘটবে এবং প্রমাণ সম্পর্কে যা তার আবির্ভাবের আগে আবিষ্কৃত হবে। যেমন-
1. সুফিয়ানীর বিদ্রোহ।
2. হাসানী-র হত্যাকাণ্ড।
3. বনি আব্বাসের মাঝে সাম্রাজ্য নিয়ে দ্বন্দ্ব।
4. মধ্য রমযানে সূর্যগ্রহণ।
5. চন্দ্রগ্রহণ রমযানের শেষে যা জ্যোর্তিবিজ্ঞানের হিসাব বিরোধী।
6. পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠবে।
7. 70 জন ধার্মিক ব্যক্তিকে হত্যা।
8. হত্যাকাণ্ড।
9. কুফার মসজিদের দেয়াল ধ্বংস হওয়া।
10. খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহীদের অগ্রসর হওয়া।
11. ইয়ামানীর উত্থান।
12. মিশরে মাগরেবীদের বিদ্রোহ এবং সিরিয়ায় গিয়ে ক্ষমতা দখল।
13. তুর্কীদের একটি দ্বীপে অবতরণ।
14. রামাল্লাহতে (ফিলিস্তীনে) রোমানদের আগমন।
15. পূর্ব দিকে একটি নক্ষত্র উঠবে যা চাঁদের মত জ্বলজ্বলে।
16 , চাঁদটি দু ’ টুকরো হয়ে পরস্পর নিকটবর্তী থাকবে।
17. আকাশে একটি লাল আভা দেখা যাবে।
18. একটি আগুন দেখা যাবে পূর্ব দিকে এবং তিন দিন অথবা সাত দিন থাকবে।
19. আরবরা তাদের লাগাম ছেড়ে দিবে।
20. আরবরা শহরসমূহের মালিক হবে।
21. আরবরা ইরানীদের শাসন থেকে বেরিয়ে আসবে।
22. মিশরের অধিবাসীরা তাদের শাসককে হত্যা করবে।
23. সিরিয়া ধ্বংস হবে এবং তিনটি পতাকা এর দিকে অগ্রসর হবে।
24. ক্বায়েম ও আরবের পতাকা মিশরের দিকে অগ্রসর হবে।
25. খোরাসানের দিকে খোদাই করা পতাকা অগ্রসর হবে।
26. কিছু আরব হীরাহর উপকণ্ঠে পৌছাবে।
27. পূর্বদিক থেকে কালো পতাকা আসবে।
28. ফোরাত নদীতে একটি ফাটল দেখা দিবে যার কারণে কুফার রাস্তায় পানি বইবে।
29. ষাটজন মিথ্যাবাদী আবির্ভূত হবে এবং পত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে।
30. আবু তালিবের বংশধর থেকে বারোজন বিদ্রোহ করবে এবং প্রত্যেকেই নিজেকে ইমাম দাবী করবে।
31. বনি আব্বাসের একজন মর্যাদাবান ব্যক্তি বাগদাদের কাছে কার্ক সেতুর কাছে পানিতে ডুবে মারা যাবে।
32. একটি কালো বাতাস বাগদাদে বইবে।
33. বাগদাদে একটি ভূমিকম্প হবে এতে এর বেশীর ভাগ অংশই ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে।
34. ইরাকের অধিবাসীদেরকে ভয় আকড়েঁ ধরবে। 35. ইরাকের লোকদের মৃত্যু দ্রুত্র ধরে ফেলবে।
36. ইরাকের লোকেরা সম্পদ ও ফলের অভাবে পড়বে।
37. তারা চারাগাছ ও গুড়ো খাদ্যের দিকে আকৃষ্ট হবে।
38. জনগণের কৃষি উৎপাদন হবে অত্যন্ত কম।
39. অনারবদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিবে এবং তারা পরস্পরের রক্ত ঝরাবে।
40. দাসরা তাদের প্রভুদের অবাধ্য হবে ও তাদেরকে হত্যা করবে ।
41. এরপর চব্বিশবার বৃষ্টি হবে। পৃথিবীর মাটি এর মৃত্যুর পর আবার জীবিত হবে এবং এর সম্পদ উগড়ে দিবে। তখন সব ধরনের দূর্যোগ মাহদীর প্রতি বিশ্বাসীদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হবে। তখন তারা বুঝতে পারবে মাহদী মক্কায় আবির্ভূত হয়েছেন। ফলে তারা মক্কার দিকে অগ্রসর হবে তাকে সাহায্য করার জন্য।
এসব ঘটনার কিছু অবশ্যই ঘটবে আর কিছু শর্তসাপেক্ষে ঘটতে পারে। আল্লাহ ভালো জানেন কী ঘটবে। আমরা হাদীস অনুযায়ী ঘটনাগুলো বর্ণনা করলাম।
আলী ইবনে ইয়াযীদ ইযাদী তার পিতা থেকে এবং তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) বলেছেন- “ যখন ক্বায়েমের আবির্ভাব নিকটবর্তী হবে লাল ও সাদা মৃত্যু হাজির হবে। লাল রঙ্গের পঙ্গপাল মৌসুমের বাইরে দেখা যাবে। লাল মৃত্যু তরবারীর (অস্ত্র ) কথা বোঝায় এবং সাদা মৃত্যু প্লেগের কথা বোঝায়। ”
জাবির জুআফী বর্ণনা করেন যে ইমাম মোহাম্মাদ বাক্বীর (আঃ) তাকে বলেছেন- “ নিজের জায়গায় স্থির থাকো যতক্ষণ না এ নিদর্শনগুলো দেখো। সেগুলো হচ্ছে বনি আব্বাসের মাঝে দ্বন্দ্ব , আকাশ থেকে এক আহবানকারী ডেকে উঠবে , সিরিয়াতে একটি গ্রাম দেবে যাবে , তুর্কীদের এক দ্বীপে অবতরণ করবে , রামাল্লাহতে রোমানদের আগমন ঘটবে , ঘটবে প্রত্যেক ভূমিতে দ্বন্দ্ব যতক্ষণ না সিরিয়া ধ্বংস হয়ে যায় , সামাজিক জীবন ধ্বংস হওয়ার কারণ হবে এবং পতাকাসমূহের উত্তোলন- যার একটি হবে লাল ও সাদা , অন্যটি কালো ও সাদা এবং অন্যটি সুফিয়ানীর। ”
মাহদী (আঃ)-এর আগমনের বছর ও দিন সম্পর্কে হাদীস
আবু বাসীর নবী (সাঃ)-এর বংশধর ইমাম সাদিক (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন- “ মাহদী বেজোড় বছরে ছাড়া আবির্ভূত হবে না , যেমন , প্রথম তৃতীয় , সপ্তম অথবা নবম বছরে। ”
আবারো আবু বাসীর ইমাম জাফর সাদিক (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন- “ ক্বায়েমের নাম ঘোষণা করা হবে পবিত্র রমযান মাসের 23 তারিখের রাতে। ক্বায়েম আবির্ভূত হবেন আশুরার দিনে যেদিন ইমাম হোসেইন (আঃ) শহীদ হন। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি ক্বায়েম শনিবার দিন , 10ই মুহাররাম রুকন ও মাকামের মাঝে আবির্ভূত হয়েছে এবং কেউ একজন তার সামনে দাড়িয়ে চীৎকার করে বলছে বাইয়্যাত , বাইয়্যাত। ফলে মাহদীর অনুসারীরা তার দিকে ফিরবে সব দিক থেকে এবং তার কাছে বাইয়্যাত হবে। মাহদীর মাধ্যমে আল্লাহ পৃথিবীকে ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন ঠিক যেভাবে তা নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। এরপর মাহদী তার মনোযোগ মক্কা থেকে কুফার দিকে দিবেন এবং নাজাফে যাবেন যেখান থেকে সৈনিকদের পাঠাবেন বিভিন্ন শহরের দিকে। ”
আব্দুল কারীম নাখী থেকে বর্ণনা এসেছে- “ আমি ইমাম সাদিক (আঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম ‘ কতদিন ক্বায়েম শাসন করবেন ? ” ইমাম (আঃ) উত্তর দিলেন- সাত বছর। রাত ও দিন মাহদীর সময়ে এত লম্বা হবে যে তখনকার এক বছর এখনকার দশ বছরের সমান হবে এবং মাহদীর সাত বছর তোমাদের হিসেবে সত্তর বছর। ”
একটি দীর্ঘ হাদীসে ইমাম বাকীর (আঃ) বলেন- “ যখন ক্বায়েম আবির্ভূত হবেন ; তার মনোযোগ থাকবে কুফার দিকে। তিনি কুফার মসজিদগুলোর উনয়ন্ন ঘটাবেন , রাস্তার পাশে ঝুল বারান্দাগুলো ভেঙ্গে ফেলবেন , রাস্তার পাশের ড্রেইন পাইপ ও কুপগুলো ধ্বংস করবেন , সব ধরনের অবিশ্বাসকে উপড়ে ফেলবেন , প্রত্যেক সূন্নাতকে জীবিত করবেন এবং ইস্তাম্বুল , চীন ও দায়লামের পাহাড়গুলো দখল করবেন। তিনি প্রায় সাত বছর থাকবেন যেখানে প্রত্যেক বছর হবে তোমাদের হিসাবে দশ বছরের সমান। ”
অন্য একটি বর্ণনায় মোহাম্মাদ বাক্বীর (আঃ) বলেন- “ পৃথিবী মাহদীর জন্য বিস্তৃতত হবে এবং সম্পদসমূহ তার সামনে থাকবে। তার শাসন পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। আল্লাহ তার ধর্মকে সব ধর্মের উপর স্থাপন করবেন মুশরিকরা তাকে যতই অপছন্দ করুক না কেন। এমন কোন জরাজীর্ণ স্থান থাকবে না যার উন্নয়ন মাহদী করবেন না। পৃথিবী তার শস্যকে না কমিয়ে তার বৃদ্ধি ঘটাবে। মাহদীর সময়ে মানুষ এমন বরকত উপভোগ করবে যা তারা এর আগে কখনোই ভোগ করে নি। ’
বর্ণনাকারী বলেনঃ ‘ হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান! কখন আপনার ক্বায়েম আবির্ভূত হবেন ? ’ ।
তিনি বললেন- ‘ সে সময় যখন পুরুষরা নারীদের অনুসরণ করবে এবং নারীরা পুরুষদের অনুসরণ করবে , যখন নারীরা ঘোড়ায় চড়বে ; যখন জনগণ তাদের নামাজকে হত্যা করবে এবং তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করবে ; যখন রক্তপাত করা সামান্য বিষয় হয়ে উঠবে ; যখন প্রকাশ্য ব্যভিচার ব্যবসা হয়ে দাড়াবে ; যখন তারা উচুঁ উচুঁ দালান তৈরী করবে ; যখন তারা মিথ্যা বলাকে বৈধ বলে মনে করবে ; যখন তারা ঘুষ গ্রহণ করবে , যখন তারা তাদের লোভ ও আকাঙ্ক্ষার অনুসরণ করবে ; যখন তারা এ পৃথিবীর জন্য ধর্মকে বিক্রি করে দিবে , যখন তারা যাকে খাওয়াবে তাকে দায়বদ্ধ করে ফেললো বলে ভাববে , যখন তারা ধৈর্যকে দূর্বলতা এবং অবিচারকে সম্মান হিসেবে গন্য করবে।
যখন তাদের শাসকরা হবে খারাপ এবং মন্ত্রীরা হবে মিথ্যাবাদী , যখন তাদের মাঝে সাহায্যকারীরা হবে অন্যায়কারী , যখন কোরআন তেলাওয়াতকারীরা হবে সীমালংঘনকারী , যখন নৃশংসতা ও নিপীড়ন প্রকাশ্য হয়ে পড়বে , যখন তালাক বৃদ্ধি পাবে , যখন জনগণ অশ্লীলতা ও ব্যভিচারে লিপ্ত হবে , যখন জবরদস্তিমূলক সাক্ষী ও মিথ্যা গ্রহণ করা হবে , যখন তারা মদপান ও জুয়াখেলায় নিয়োজিত হবে , যখন পুরুষ পুরুষের সাথে যৌনকার্যে লিপ্ত হবে , যখন নারীরা নারীদের সাথে যৌনকার্যে লিপ্ত হবে , যখন জনগণ যাকাতকে গনিমতের মাল মনে করবে এবং দানকে ক্ষতি হিসেবে দেখবে , যখন তারা খারাপ লোকদের জিহবাকে ভয় করবে , যখন সুফিয়ানী বিদ্রোহ করবে সিরিয়া থেকে , যখন ‘ বাইদাহ ’ (যা মক্কা ও মদীনার মাঝখানে) দেবে যাবে , যখন রুকন ও মাকামের মধ্যবর্তী স্থানে ’ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশের এক সন্তানকে হত্যা করা হবে এবং যখন আকাশ থেকে একটি উচ্চ কণ্ঠ শোনা যাবে যে , ‘ সত্য আছে মাহদী তার অনুসারীদের সাথে ’ , তখন আমাদের ক্বায়েম আবির্ভূত হবে।
যখন সে পুনরাগমন করবে তখন সে কাবার দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াবে এবং তার 313 জন অনসারী তাকে চারদিকে ঘিরে থাকবে। ক্বায়েমের প্রথম কথা হবে কোরআনের এ আয়াত-
) بَقِيَّتُ اللَّـهِ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ (
‘ যা আল্লাহর সাথে রয়ে যায় তা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বিশ্বাসী হও। ’ (সূরা হুদঃ 86)
এরপর তিনি বলবেনঃ ‘ আমি ‘ বাক্বিয়াতুল্লাহ ’ , আল্লাহর প্রতিনিধি ও প্রমাণ তোমাদের উপর। ’
এরপর প্রত্যেক মুসলমান তাকে এভাবে সালাম জানাবে- ‘ আসসালামু আলাইকা ইয়া বাক্বিয়াতুল্লাহা ফী আরদিহী (আপনার উপর সালাম হে আল্লাহর সর্বশেষ (প্রতিনিধি) পৃথিবীর উপর। ’
‘ যখনই 10 ,000 ব্যক্তি তার চারদিকে জড়ো হবে। কোন ইহুদী ও খৃষ্টান বাকী থাকবে না তার উপর বিশ্বাস আনতে এবং ইসলামই হবে তখন একমাত্র ধর্ম। ’
‘ আকাশ থেকে পৃথিবীতে একটি আগুন নেমে আসবে এবং (আল্লাহ ছাড়া) পূজার যেকোন বস্তুকে তা পুড়ে ফেলবে। ’
কোন কোন ঐতিহাসিক বলেনঃ মাহদী হলেন সেই প্রতীক্ষিত ক্বায়েম। মাহদী সম্পর্কে হাদীসগুলো পরস্পর সমর্থক।
অষ্টম অধ্যায়
মাহদীর (আঃ) জন্য অপেক্ষা করার ফযীলত
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক (493 পৃষ্ঠায়) ‘ খাওয়ারাযমী ’ র ‘ মানাকিব ’ থেকে বর্ণনা করেন যে ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বীর (আঃ) তার পিতা থেকে এবং তিনি তার পিতা থেকে এবং তিনি আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ ফারাজ ’ (মুক্তির জন্য) -এর অপেক্ষা করা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত। ”
‘ মানাকিব ’ -এর লেখক বলেনঃ “ ফারাজের জন্য অপেক্ষার অর্থ হলো মাহদীর আবির্ভাবের জন্য অপেক্ষা করা। ”
‘ কামালুদ্দীন ’ বইতে শেইখ সাদুক আম্মার সাবাতি থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন যেখানে ইমাম সাদিক (আঃ) বলেছেন-
‘ দুষ্ট সরকারের শাসনের সময় ইবাদাত , সৎকর্মশীল সরকারের অধীনে ইবাদাতের চাইতে উত্তম। এছাড়া দুষ্ট সরকারের সময় ইবাদাতের পুরস্কার সৎকর্মশীল সরকারের সময়ে ইবাদাতের পুরস্কারের চাইতে বেশী। ’
আম্মার বলেন- ‘ আমি ইমামকে বললাম , আমার জীবন আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। এটি কি এমন যে সত্যের আবির্ভাবের সময়ে আমরা ক্বায়েমের সাথীদের অন্তর্ভূক্ত হতে চাইবোনা ? আপনার নেতৃত্বে ও আনুগত্যে আমাদের কর্মকাণ্ড কি সত্য সরকারের অধীনে অনুসারীদের কর্মকাণ্ড থেকে উত্তম! ? ’
ইমাম সাদিক (আঃ) উত্তরে বললেনঃ ‘ সুবহানাল্লাহ , আমরা কি চাই না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সত্য ও ন্যায়বিচারকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করেন এবং জনগণের সাধারণ অবস্থার উন্নতি ঘটুক ? এবং আল্লাহ (জনগণের) বক্তব্যে একতা আনেন এবং জনগণের বিভিন্নমূখী অন্তরকে আমন্ত্রণ করেন ? যেন তারা পৃথিবীতে আল্লাহর অবাধ্য না হয় ? এবং তার নিষেধাজ্ঞাগুলো তাঁর সৃষ্ট প্রাণীর উপর প্রয়োগ হয় এবং আল্লাহ তার জনগণের কাছে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেন যেন তা প্রকাশ হয়ে যায় ? যেন কারো ভয়ে সত্যের কোন কিছু গোপন না থাকে... ? ”
আবির্ভাবের সময় উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকা
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 456 পৃষ্ঠায় ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ এর লেখক থেকে এবং তিনি আহমাদ ইবনে যিয়াদ থেকে এবং তিনি দেবেল ইবনে খযাঈু থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যেখানে দেবেল ইমাম রিদার (আঃ) কাছে গেলেন এবং তার কবিতা আবৃত্তি করলেন। তার কবিতাতে ইমাম মাহদীর (আঃ) কথা ছিলো। ইমাম বললেন-
‘ রুহুল কদ্দুস তোমার জিহবা দিয়ে কথা বলেছে। তুমি কি জানো সেই ইমাম কে ? তিনি সেই ব্যক্তি যার জন্য জনগণ অপেক্ষা করবে এবং তারা তার প্রতি আত্মসমপির্ত হবে তার আবির্ভাবের সময়ে। মাহদীর আবির্ভার্ব সম্পর্কে আমার পিতা তার পিতা থেকে এবং তিনি তার পিতা থেকে এবং তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে- ‘ মাহদীর উদাহরণ হচ্ছে কিয়ামতের উদাহরণ , যা হঠাৎ করে ছাড়া আসবে না ’ । ”
এ বইয়ের লেখক বলতে চান- কিছু কিছু হাদীসে আত্মগোপন বা গাইবাত সম্পর্কে বলা হয়েছে যে মাহদী জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মত আবির্ভূত হবে। আবার কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ মাহদীর (আঃ) বিষয়কে এক রাতে ফয়সালা করবেন।
এগুলো দেখে বঝা যায় যে মাহদীর (আঃ) আবির্ভাবের দিন অজানা এবং যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি ছাড়া কেউ জানেন না।
শেষ যুগে মাহদীর (আঃ) আবির্ভাব
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 148 পৃষ্ঠায় হাকীম এর ‘ সহীহ ’ থেকে এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যেঃ
“ শেষ যুগে আমার উম্মতের উপর এক ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসবে। আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন অথবা তিনি বলেছেন , ‘ আমার আহলে বাইত থেকে , যে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ এর 98 পৃষ্ঠায় আহমাদ ও মুসলিম থেকে এবং তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ শেষ যুগে একজন খলিফা উপস্থিত থাকবেন এবং সম্পদ বণ্টন করবেন হিসাব ছাড়া। ”
“ ইসাফুর রাগেবীন ” -এর লেখক একই হাদীস বর্ণনা করেছেন 149 পৃষ্ঠায়। এ বইয়ের লেখক বলতে চান যে অন্যান্য হাদীস পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় এ খলিফাই হচ্ছেন ইমাম মাহদী (আঃ)।
“ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক ইমাম আবু উমার মাদায়েনি থেকে এবং তিনি আবু সাইদ খুদরী থেকে এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ
“ শেষ যুগে উন্নত নাক ও পৌরুষদীপ্ত সুশ্রী চেহারার অধিকারী এক যুবক আমার বংশ থেকে আবির্ভূত হবে এবং সে পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায় বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা আগে নৃশংসতা ও অত্যাচারে পূর্ণ ছিল ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 430 পৃষ্ঠায় ‘ মিশকাতুল মাসাবীহ ’ র লেখক থেকে এবং তিনি মুসলিম-এর ‘ সহীহ ’ এবং আহমাদ- এর ‘ মুসনাদ ’ থেকে এবং তারা জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ শেষ যুগে একজন খলিফা উপস্থিত ’ থাকবেন যিনি সম্পদ বণ্টন করবেন হিসাব ছাড়া। ”
অন্য আরেকটি হাদীসে এসেছে , “ আমার উম্মতের শেষ যুগে একজন খলিফা আসবেন যিনি সম্পদ বণ্টন করবেন কোন হিসাব ছাড়া। ”
‘ ইয়া নাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ -এর লেখক থেকে এবং তিনি আলী ইবনে হালাল থেকে এবং তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আসবে শেষ যুগে এবং পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা আগে নৃশংসতা ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক সপ্তম অধ্যায়ে হাফেয আবু আব্দুল্লাহর ‘ মুসতাদরাক ’ থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী তরবারীসহ আবির্ভূত হবে আমার উম্মতের শেষ যুগে। আল্লাহ বৃষ্টি পাঠাবেন এবং ভূমি তার গাছকে বৃদ্ধি পেতে দিবে। (মাহদী) সম্পদ বণ্টন করবে সঠিকভাবে। ”
হাকীম বলেন- ‘ এর বর্ণনা পরম্পরা বিবেচনা করে এ হাদীসটি সঠিক । কিন্তু বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি। ”
আবির্ভাবের দিনে মাহদীর (আঃ) বৈশিষ্ট্য
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ে হাফেয আবু নাঈম থেকে , তিনি আবু ইমামাহর “ সিফাত আল মাহদী ” থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটি হাদীসে যা কিছু মাহদীর আবির্ভাবের আগে ও পরে ঘটবে তা উল্লেখ করেছিলেন। আব্দুল ক্বায়েস নামে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলো , ‘ ইয়া রাসূলুল্লাহ , সেদিন জনগণের ইমাম কে হবেন ? ’
তিনি (সাঃ) বললেন- “ সে হবে মাহদী , আমার বংশ থেকে যার বয়স হবে তখন চল্লিশ বছর। ”
‘ ইকদুদ দুরার ” -এর লেখক উল্লেখিত অধ্যায়ে হাফিয নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ‘ ফাতান ’ থেকে বর্ণনা করেন যে , আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) বলেছেন যে , “ মাহদী উঠে দাঁড়াবে যখন তার বয়স হবে ত্রিশ অথবা চল্লিশ বছর। ”
উক্ত বই-এর একই অধ্যায়ে লেখক আবু আব্দুল্লাহ মাদায়েনি এবং আবু বকর বায়হাক্বী থেকে বর্ণনা করেন যে ইবনে আব্বাস বলেছেন- “ আমার আশা আছে রাত ও দিন শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ আমাদের আহলুল বায়েত এর মধ্য থেকে এক যুবককে নিয়োগ দেন। ষড়যন্ত্র তাকে কিছু করতে পারবে না এবং সেও ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়বে না। তিনি এ উম্মতের বিষয়াবলী প্রতিষ্ঠা করবেন , যেভাবে আল্লাহ এ উম্মতের বিষয়াবলী আমাদের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন। আমার আশা যে বিষয়াবলীর সমাপ্তি ঘটবে আমাদের মাঝেই। ”
বর্ণনাকারী বলেন , “ আমি ইবনে আব্বাসকে বললাম , ‘ এ বিষয়ে কি আপনারা অসহায় যে আপনারা আপনাদের যুবকদের নিয়ে আশা করছেন ? তিনি বললেন , ‘ আল্লাহ করেন যা তাঁর ইচ্ছা। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক ইমাম হোসেইন ইবনে আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে , “ মাহদী আবির্ভূত হবে কিন্তু জনগণ তাকে অস্বীকার করবে , কারণ সে তাদের কাছে ফেরত আসবে যুবক চেহারা নিয়ে। সবচে বড় দুর্যোগ হলো যে তাদের কর্তৃত্বশীল নেতা তাদের কাছে যুবক অবস্থায় আসবে অথচ তারা তাকে বৃদ্ধ ও দূর্বল হিসেবে চিন্তা করবে। ”
একই বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ে লেখক হাফেয আবু আব্দুল্লাহর ‘ মুসতাদরাক ’ থেকে এবং তিনি সানবান থেকে বর্ণনা করেন যে , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ একজন খলিফার তিনজন সন্তানকে হত্যা করা হবে তোমাদের কোষাগারের কাছে , যখন তোমরা তাকে (যুবককে) দেখবে তার প্রতি অনুগত্যের শপথ করো , কারণ তিনিই মাহদী , আল্লাহর খলিফা। ”
হাকীম বলেন , “ এ হাদীসটি সঠিক যদিও বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা না করে থাকে। ”
একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে লেখক হাফেয আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদের ‘ ফাতান ’ বই থেকে এবং তিনি ইসহাক ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে তালহা থেকে বর্ণনা করেন যে তাউস বর্ণনা করেন , উমর ইবনে খাত্তাব তার পরিবারকে বিদায় জানালেন এবং বললেন- “ এটি কী অন্যায় হবে যদি আমি কাবার সম্পদ ও অস্ত্রশস্ত্র আল্লাহর পথে ব্যয় করি ? ” আলী বললেন , “ হে আমিরুল মুমিনীন , এ চিন্তা থেকে বিরত থাকন। আপনি কাবার মালিক নন। কাবার মালিক হচ্ছে কুরাইশ বংশ থেকে এক যুবক যে কাবার সম্পদকে আল্লাহর পথে বিলিয়ে দিবে শেষ যুগে। ”
এ বইয়ের লেখক বলতে চান সবগুলো হাদীস পর্যালোচনা করলে বুঝা যায় যে মাহদী (আঃ)-এর জীবন দীর্ঘ হওয়া সত্বেও আবির্ভাবকালে তিনি যুবক চেহারা নিয়েই হাজির হবেন। কারণ আল্লাহ পাক তার উপরে বার্ধক্যকে স্থগিত করে দিয়েছেন।
মাহদীর (আঃ) আবির্ভাবের স্থান
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক দ্বিতীয় অধ্যায়ে জাবির ইবনে ইয়াযীদ থেকে এবং তিনি ইমাম বাকির (আঃ) থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন যেখানে তিনি মাহদীর আবির্ভাবের নিদর্শনগুলো ও সুফিয়ানীর সৈন্যবাহিনীর মাটিতে দেবে যাওয়া উল্লেখ করে বলেন , “ সুফিয়ানী মদিনায় সৈন্যদল পাঠাবে যার ফলে মাহদী মক্কার দিকে গোপনে চলে যাবেন। মাহদীর গোপনে চলে যাবার খবর সুফিয়ানীর সেনাপতিদের কাছে পৌছালে তারা একদল সৈন্যকে মাহদীর পশ্চাৎধাবন করার জন্য পাঠাবে কিন্তু তারা তাকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হবে। মাহদী (আঃ) মক্কায় প্রবেশ করবেন ভয়ের মাঝে এবং মুসা ইবনে ইমরান (আঃ)-এর মত অপেক্ষা করবেন। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 150 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “ গোলযোগ শুরু হবে বাদশাহর মৃত্যুতে। এক ব্যক্তি মদিনা থেকে মক্কায় আত্মগোপনে যাবে। মক্কার কিছু লোক তার কাছে আসবে এবং তার কাছে বায়াত হবে রুকন ও মাক্বামের মাঝে। সিরিয়া থেকে একটি সেনাবাহিনী তাদের দিকে পাঠানো হবে যা মক্কা ও মদিনার মাঝামাঝি ‘ বাইদাহ ’ নামের স্থানে মাটিতে দেবে যাবে। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 431 পৃষ্ঠায় ‘ জাওহার আল আক্বদাইন থেকে এবং তা ইবনে দাউদ থেকে এবং তিনি ইমাম আহমাদ এবং হাফেয বায়হাক্বী থেকে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ র লেখক 488 পৃষ্ঠায় ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ -এর লেখক থেকে এবং তিনি হাসান ইবনে খালিদ থেকে এবং তিনি ইমাম আলী ইবনে মূসা রিদা (আঃ) থেকে মাহদীর অদৃশ্যকাল সম্পর্কে একটি হাদীস ও মাহদী (আঃ) যে তারই চতুর্থ তম বংশ তা বর্ণনা করেন এবং বলেন , “ মাহদী হলো সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে আকাশ থেকে এক আহবানকারী ঘোষণা করবে এবং সারা পৃথিবীর বাসিন্দারা তা শুনবে। সে বলবে , ‘ সচেতন হও আল্লাহর প্রতিনিধি আবির্ভূত হয়েছে আল্লাহর ঘরে (কাবায়)। তাকে অনুসরণ কর যেহেতু সত্য তার সাথে আছে ’ । ”
মাহদীর (আঃ) কাছে বায়াতের স্থান
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক দ্বিতীয় অধ্যায়ে আবুল হাসান মালাকি থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ যদি পৃথিবীর জীবন একদিনও বাকী থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির উত্থান ঘটাবেন যার নাম হবে আমার নামের মত এবং তার চেহারা হবে আমার চেহারার মত এবং তার ডাক নাম হবে আবু আব্দুল্লাহ। জনগণ তার কাছে রুকন ও মাকামের মধ্যবর্তী স্থানে ’ বায়াত হবে। ”
একই বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ের দ্বিতীয় অংশে এর লেখক আবু দাউদের ‘ সুনান ’ , তিরমিযির ‘ জাময়ে ’ , আহমাদের ‘ মসনাদ ’ , ইবনে মাজাহ-র ‘ সুনান ’ , বায়হাকীর ‘ বেহসাথ ওয়া নশুর ’ এবং অন্যান্য কিছুর সূত্র ধরে উম্মে সালামা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ এক বাদশাহর মৃত্যুরু পর গোলযোগ শুরু হবে এবং এক ব্যক্তি মদীনা থেকে মক্কার দিকে আত্মগোপন করবে। মক্কার কিছু অধিবাসী তার কাছে রুকন ও মাক্বামের মধ্যবর্তী স্থানে বায়াত করবে। ”
একই বইয়ের লেখক বলেছেন- হাদীসটির টীকায় ব্যক্তিটিকে মাহদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লিখিত বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে লেখক আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন যেখানে তিনি সুফিয়ানীর উত্থান এবং মাহদীর (আঃ) মদীনা থেকে মক্কায় গমন এবং তার কাছে বায়াত হওয়া বর্ণনা করেন এবং বলেনঃ
“ মাহদী রুকন ও মাক্বামের মধ্যবর্তী স্থানে বসবেন এবং তার হাত লম্বা করে দিবেন। জনগণ তার কাছে বায়াত গ্রহণ করবে এবং আল্লাহ তার জন্য জনগণের হৃদয়ে ভালোবাসা জমা রাখবেন। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক সপ্তম অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ- এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে , “ জনগণ মাহদীর কাছে রুকন ও মাক্বামের মধ্যবর্তী স্থানে বায়াত করবে। মাহদী ঘুমন্ত কাউকে জাগ্রত করবে না এবং কারো রক্তও ঝরাবে না। ”
এ বইয়ের লেখক বলতে চান- এ কথা বায়াতের পূর্ব মুহূর্তের সময়ের বিষয়ে বলা হয়েছে কিন্তু সে সময়ের কথা বলা হয় নি যখন হযরত পৃথিবীতে সংস্কার ও তার বিজয় আনার চেষ্টা করবেন।
ইবনে হাজার তার বই ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 98 পৃষ্ঠায় ইবনে আসাকির থেকে এবং তিনি হযরত আলী (আঃ) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে , “ মাহদী মদীনা থেকে মক্কায় গোপনে চলে যাবেন এবং মক্কার কিছু অধিবাসী মাহদীর কাছে আসবে এবং তার কাছে রুকন ও মাকামের মধ্যবর্তী স্থানে বায়াত গ্রহণ করবে। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ের দ্বিতীয় অংশে জাবির ইবনে ইয়াযীদ থেকে এবং তিনি ইমাম মুহাম্মাদ বাকির থেকে বর্ণনা করেন যে মাহদী মদীনা থেকে মক্কায় গোপনে চলে যাবেন এবং আরও বলেন- “ জনগণ তার কাছে রুকন ও মাকামের মধ্যবর্তী স্থানে ’ বায়াত করবে। হে জাবির , মাহদী আসবে হুসেইনের (আঃ) বংশ থেকে। ”
প্রাথমিক ঘটনাবলী
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর পঞ্চম অধ্যায়ে লেখক আহমাদ এর ‘ মুসনাদ ’ , ইবনে মাজাহ-র ‘ সুনান ’ , বায়হাকী , আবু উমাম মাদায়েনি , নাঈম ইবনে হেমাদ , আবুল কাসিম তাবারানি এবং আবু নাঈম ইসফাহানি এবং তারা আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আমাদের আহলে বাইত থেকে। আল্লাহ তার বিষয়কে এক রাতের মাঝে ঠিক করে দিবেন। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক ’ -এর 98 পৃষ্ঠায় ইবনে মাজাহ থেকে বর্ণনা করেন যে , “ পূর্ব দিক থেকে এক জনগোষ্ঠী উঠে দাড়াবেঁ এবং তারা মাহদীর শাসনের জন্য পস্তুতি ‘ গ্রহণ করবে। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক পঞ্চম অধ্যায়ে আবু নাঈম-এর ‘ সিফাত আল মাহদী ’ থেকে এবং তিনি সাওবান থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ যখন তোমরা পূর্ব দিক থেকে কালো পতাকা আসতে দেখবে তখন তাদের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও এমনও যদি হয় যে বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে যেতে হয় , কারণ মাহদী , যে আল্লাহর প্রতিনিধি , সে তাদের মাঝে থাকবে। ”
বর্ণনাকারী বলেন- হাকীম আবু আব্দুল্লাহ ‘ মুসতাদরাক ’ -এ এবং ইমাম আবু উমার ‘ সুনান ’ -এ এবং হাফিয নাঈম ইবনে হেমাদ ‘ ফাতান ’ -এ এ হাদীসের কথাগুলো বর্ণনা করেছেন।
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে এর লেখক সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ বনি আব্বাস এর এক লোক পূর্ব দিক থেকে উঠে দাঁড়াবে এবং জমিনে সে টিকে থাকবে যতক্ষণ না আল্লাহ চান। এরপর একটি দল আবির্ভূত হবে ছোট ছোট কালো পতাকা নিয়ে এবং তারা আবু সুফিয়ানের এক বংশধর ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করবে মাহদীর কাছে নিজেদের সমর্পণ করতে ও তার অনুগত্য করতে। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 448 পৃষ্ঠায় ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ থেকে এবং তা হাফিয আবু নাঈম থেকে এবং তিনি ইমাম বাকির থেকে বর্ণনা করেন- “ আল্লাহ আমাদের বন্ধুদের ও অনুসারীদের অন্তরে ভয় দিয়েছেন। যখন আমাদের ‘ ক্বায়েম ’ , যিনি মাহদী , আবির্ভূত হবেন আমাদের অনুসারীদের প্রত্যেকে হবে ভয়ানক সিংহের চাইতে সাহসী এবং বর্শার ফলার চাইতে ধারালো। ”
মাহদীর (আঃ) সাহায্যকারীরা
ইবনে হাজার ‘ সাওয়ায়েক ’ -এর 98 পৃষ্ঠায় ইবনে আসাকির থেকে বর্ণনা করেন যে হযরত আলী (আঃ) বলেছেন- “ যখন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর বংশ থেকে ‘ ক্বায়েম ’ আবির্ভূত হবে তখন আল্লাহ পূর্ব ও পশ্চিমের অধিবাসীদের একত্র করবেন। তার সাথীরা আসবে কুফা থেকে এবং সাহসীরা যারা তাকে সাহায্য করবে তারা আসবে সিরিয়া থেকে। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ের দ্বিতীয় অংশে জাবির ইবনে ইয়াযিদ জুয়াফি থেকে এবং তিনি ইমাম মুহাম্মাদ বাকীর (আঃ) থেকে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন যেখানে মাহদীর আবির্ভাবের কিছু নিদর্শন উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সুফিয়ানীর বিদ্রোহ , মাহদীর মদীনা থেকে মক্কায় গোপনে চলে যাওয়া। এরপর তিনি বলেছেন- “ আল্লাহ মাহদীর 313 জন সাহাবীকে একত্র করবেন। ”
একই বইয়ে চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম অংশে এর লেখক হাকীম আবু আব্দুল্লাহর ‘ মুসতাদরাক ’ থেকে এবং তিনি মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া থেকে বর্ণনা করেন- “ আমরা আলীর সামনে উপস্থিত ’ ছিলাম। এক ব্যক্তি হযরতকে মাহদী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। হযরত আলী (আঃ) বললেন- “ হায় , এবং তিনি তা সাতবার বললেন। এরপর বললেন- “ মাহদী শেষ যুগে আসবে , সে সময় যখন কেউ আল্লাহর নাম বললে তাকে হত্যা করা হবে। এরপর আল্লাহ একটি দলকে একত্র করবেন যাদের বিচক্ষণতা ও ক্ষিপ্রতা মেঘের মত হবে এবং তিনি তাদের অন্তরগুলোকে পরস্পরের নিকটবর্তী করবেন। তারা না কাউকে ভয় পাবে , না তারা পালাবে। তাদের সংখ্যা হবে ‘ বদর ’ -এর সাহাবীদের সংখ্যায়। অতীতের কোন লোক তাদের অগ্রবর্তী হয় নি এবং ভবিষ্যতের লোকেরা তাদেরকে বুঝতে পারবে না। তাদের সংখ্যা হবে তালুত (আঃ)-এর সাথীদের সংখ্যার সমান যারা নদী অতিক্রম করেছিলো। ”
বর্ণনাকারী বলেন- “ হাকীম বলেছেন- এ হাদীসটি সঠিক যদিও বুখারী ও মুসলিম বর্ণনা না করে থাকে। ”
একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে লেখক আবু আমরো উসমান ইবনে সাঈদ মুক্বাররীর ‘ সুনান ’ থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাহদী ও তার আবির্ভাব সম্পর্কে বলেছেনঃ
“ সিরিয়া থেকে সাহসী লোকেরা হযরতের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবে তাদের অনুসারীদেরসহ এবং মিশরের মর্যাদাবানরা তার সাথে যোগদান করবে। অন্য আরেকটি দল পূর্ব দিক থেকে অগ্রসর হবে মক্কায় পৌঁছা পর্যন্ত এবং তারা তার কাছে বায়াত করবে। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 449 পৃষ্ঠায় গানজী থেকে এবং তিনি ইবনে আসিম কুফী থেকে বর্ণনা করেন যে আলী (আঃ) বলেছেন- “ সাবাস তালেক্বান (বর্তমান ইরানের একটি জেলা)-এর লোকদের জন্য , কারণ আল্লাহ তাদের মাঝে মূল্যবান সম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন , সেগুলো না সোনা না রুপা। বরং তারা হচ্ছে সেই লোকজন যারা আল্লাহকে প্রকৃত অর্থে চিনেছে এবং তারা শেষ যুগে মাহদীর সাহায্যকারী হবে। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 150 পৃষ্ঠায় বলেছেন- “ এটি সত্য যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ গোলযোগ সৃষ্টি হবে এক বাদশাহর মৃত্যুতে। ” এরপর তিনি মক্কায় মাহদীর আবির্ভাব , মক্কায় তার কাছে জনগণের বায়াত , ‘ বাইদাহ ’ -তে সুফিয়ানীর সৈন্যবাহিনীর মাটিতে দেবে যাওয়া সম্পর্কে উল্লেখ করলেন এবং বললেন “ তখন জনগণ মাহদীর কাছে মোজেযা প্রত্যক্ষ করবে , সিরিয়া থেকে সাহসী লোকেরা এবং ইরাক থেকে একদল লোক হযরতের কাছে যাবে এবং তার কাছে বায়াত করবে। ”
ফেরেশতারা মাহদীকে (আঃ) সাহায্য করবে
‘ ইক্বদুদ দুরার ’ -এর লেখক পঞ্চম অধ্যায়ে আবু আমারা উসমান ইবনে সাঈদ মুকাররীর ‘ সুনান ’ থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামান থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদীর কাছে বায়াত করা হবে রুকন ও মাকামের মধ্যবর্তী স্থানে। সে সিরিয়ার দিকে যাত্রা করবে এবং জীবরাইল তার সামনে এবং মিকাইল তার ডানে থাকবে। ”
একই বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম অংশে লেখক ইমাম মোহাম্মাদ বাকীর (আঃ) থেকে একটি হাদীস যেখানে তিনি মাহদীর আবির্ভাব এবং রুকন ও মাক্বাম-এর মধ্যবর্তী স্থানে ’ তিনি তার কাছে বায়াতের কথা উল্লেখ করেন এবং এরপর বলেন- “ জিবরাইল তার সামনে ও মিকাইল তার বায়েঁ থাকবে। ”
আবার একই বইয়ের লেখক সপ্তম অধ্যায়ে আবু আমারা উসমান ইবনে সাঈদ মুকাররীর ‘ সুনান ’ থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামান থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলল্লাহ (সাঃ) মাহদীর আবির্ভাব এবং রুকন ও মাক্বাম এর মধ্যবর্তী স্থানে ’ তার কাছে বায়াতের কথা উল্লেখ করে বলেন , “ মাহদীর মনোযোগ থাকবে সিরিয়ার দিকে এবং জিবরাইল থাকবে তার সামনে এবং মিকাইল থাকবে তার বামে। ”
ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-এর অবতরণ
বুখারী তার ‘ সহীহ ’ র দ্বিতীয় খণ্ডে 158 পৃষ্ঠায় আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ সে সময়টি কেমন হবে যখন ইবনে মারইয়াম তোমাদের মাঝে অবতরণ করবে এবং তোমাদের ইমাম আসবে তোমাদের মাঝ থেকে। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক দশম অধ্যায়ে এ হাদীসটি মুসলিম এর ‘ সহীহ ’ থেকে বর্ণনা করেছেন।
‘ ইক্বদুদ দুরার ’ -এর লেখক আবু নাঈমের ‘ মানাক্বিব-ই-মাহদী ’ থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ যার পিছনে ঈসা ইবনে মারইয়াম নামাজ পড়বে সে আমার বংশ থেকে। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ‘ ফাতান ’ থেকে একই ধরনের একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 159 পৃষ্ঠায় শেইখ মহিউদ্দীন আল আরাবীর ‘ ফুতুহাত ’ থেকে বর্ণনা করেছেনঃ
“ সর্বশক্তিমান আল্লাহ ঈসা ইবনে মারইয়ামকে সাদা মিনারে অবতরণ করাবেন যা দামেস্কের পূর্বে অবস্থিত , দু ’ জন ফেরেশতা তার সাথে থাকবে একজন তার ডান পাশে এবং অন্যজন তার বামে। জনগণ তখন তাদের সান্ধ্যকালীন নামাজে ব্যস্ত থাকবে। যখন ঈসা অবতরণ করবেন ইমাম তার স্থানকে ঈসাকে দিতে চাইবেন। এরপর তিনি জনতার সাথে জামাতে নামাজ পড়বেন। ”
‘ ফুতুহাত ’ -এর লেখক হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেছেন অবতরণের পর ঈসা জনতার সাথে নামাজ পড়বেন একথা অন্যান্য হাদীসের সাথে মেলে না। যিনি জনতার নামাজে ইমামতি করবেন তিনি হলেন মাহদী। এরপর তিনি বলেন- ঈসার অবতরণের সময় জনতা সান্ধ্যকালীন নামাজে রত থাকবে একথা ইতিহাসের সাথে মিলে না। যেখানে বলা হয়েছে “ জনতা ঈসার অবতরণের সময় ফজরের নামাজে রত থাকবে। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক ’ -এর 99 পৃষ্ঠায় বলেছেন- ‘ যা স্পষ্ট তা হলো মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে ঈসার অবতরণের পূ্র্বে । ’
আবুল হাসান আরাবি বলেন- “ হযরত মুস্তাফা (সাঃ)-এর কাছ থেকে বর্ণনাকারীর পরম্পরা বজায় রেখে প্রচুর হাদীস এসেছে যে- মাহদী আবির্ভূত হবেন এবং মাহদী নবী (সাঃ)-এর বংশ থেকে এবং মাহদী সাত বছর শাসন করবেন এবং মাহদী পৃথিবীকে ন্যায়বিচারে পরিপূর্ণ করে দিবেন এবং মাহদী ঈসা (আঃ)-এর সাথে আবির্ভূত হবেন এবং ঈসা দাজ্জালকে ফিলিস্তীনের লদু ফটকে হত্যা করতে মাহদীকে সাহায্য করবেন এবং মাহদী এ উম্মতের নেতৃত্ব দিবেন এবং ঈসা তার পিছনে নামাজ পড়বেন। ”
ইবনে হাজার বলেন- ‘ আবুল হাসান আবারির অভিমত যে “ মাহদী জামায়াতের ইমামতি করবেন এবং ঈসা তার পিছনে দাড়াবেন ” এর সমর্থন খুঁজে পাওয়া যায় হাদীসগুলোতে ’ কিন্তু তাফতাযানির অভিমত যে “ ঈসা (আঃ) মাহদীর (আঃ) ইমামতি করবেন , কারণ ঈসা মাহদীর চাইতে সম্মানিত ” এ কথার কোন প্রমাণ নেই। কারণ ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসারী হিসেবে এবং মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর শরীয়তের অধীনে থাকবেন , তার নিজ শরীয়তের জন্য তার কোন স্বাধীনতা থাকবে না।
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর 163 পৃষ্ঠায় লেখক বলেন- ‘ সুয়ুতি তার ‘ কাশফ ’ - এ বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন যে ঈসা (আঃ) অবতরণের পর চল্লিশ বছর বেচেঁ থাকবেন। এবং ‘ ই ’ লাম ’ নামক বইতে লিখেছেন ঈসা (আঃ) মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর শরীয়ত অনুযায়ী বিচার করবেন।
মাহদীর (আঃ) আবির্ভাবে বরকত
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক পঞ্চম অধ্যায়ে হাকীম আবু আব্দুল্লাহর ‘ মুসতাদরাক ’ থেকে এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বলেনঃ
“ মাহদীর সময়ে বন্য ও হিংস্র প্রাণীরা শান্তিতে বসবাস করবে এবং পৃথিবী তার গুপ্তধন বের করে দিবে। ’ আমি বললাম- পৃথিবীর কোন গুপ্তধন ? তিনি বললেন- ‘ সোনা ও রুপার ইট ’ । ”
হাকীম বলেন- এ হাদীসটির বর্ণনা পরম্পরা সঠিক , কিন্তু মুসলিম ও বুখারী তা বর্ণনা করে নি।
একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে লেখক হাকীম এর ‘ মুসতাদরাক ’ থেকে এবং তিনি উসমান ইবনে সাঈদ মুক্বাররীর ‘ সুনান ’ থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আকাশের বাসিন্দা , পশু-পাখি ও সমূদ্রের মাছেরা মাহদীর উপস্থিতিতে আনন্দিত হবে। মাহদীর শাসনামলে পানি প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যাবে। সব জায়গায় ঝর্ণা বের হয়ে আসবে। পৃথিবীর খনিজ পদার্থ বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে এবং পৃথিবী তার ধন সম্পদ বের করে দিবে। ”
একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে লেখক হাকীম-এর ‘ মুসতাদরাক ’ থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ এক কঠিন দুর্যোগ যার ব্যাপকতা সম্পর্কে আগে আর কখনো শোনা যায় নি তা আমার উম্মতের উপর আসবে। এমন হবে যে আমার উম্মতের অবস্থা ’ খুবই খারাপ হয়ে পড়বে এবং পৃথিবী নৃশংসতা ও নিপীড়নে ছেয়ে যাবে। বিশ্বাসীরা নিজেদের জন্য কোন আশয় খুঁজে পাবে না। তখন আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির উত্থান ঘটাবেন যে পৃথিবীকে ন্যায়বিচার ও সাম্যে পূর্ণ করে দিবে ঠিক যেভাবে তা অত্যাচার ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। আকাশ ও পৃথিবীর বাসিন্দারা মাহদীকে নিয়ে সন্তষ্ট ‘ থাকবে। পৃথিবী তার শস্যকে মজদু করবে না , বের করে দিবে এবং আকাশও তার বৃষ্টি ফোটাকে ধরে রাখবে না ঝরিয়ে দিবে। মাহদী জনগণের উপর সাত , আট অথবা নয় বছর শাসন করবে। আল্লাহ কল্যাণ ও বরকত এত পরিমাণ দিবেন যে জীবিতরা চাইবে মৃতরাও জীবিত হয়ে উঠুক। ”
হাকীম বলেন- এ হাদীসটি বর্ণনা পরম্পরা সঠিক কিন্তু মুসলিম ও বুখারী তা বর্ণনা করে নি।
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক আবু নাঈম-এর ‘ মানাকিব- ই-মাহদী ’ এবং তাবারানির ‘ মুয়াজ্জাম ’ থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদীর যুগে আমার উম্মত এমন নেয়ামত উপভোগ করবে যে তারা এর আগে কখনোই তা ভোগ করে নি। আকাশ তাদের উপর বৃষ্টি ঝরাবে আর পৃথিবী তার সবজি কিছুমাত্র ধরে না রেখে বের করে দিবে। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আমার উম্মত থেকে আবির্ভূত হবে। আল্লাহ তাকে জনগণের ত্রাণকর্তা হিসেবে নির্ধারণ করবেন। মাহদীর উপস্থিতির কারণে আমার উম্মত আনন্দে থাকবে। তার কারণে পশুরাও প্রশংসিত জীবন যাপন করবে। পৃথিবী তার সবজি বের করে দিবে। মাহদী সম্পদকে ন্যায়পরায়ণতার সাথে বণ্টন করবে। ”
উল্লেখিত বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে এর লেখক তাবরানির ‘ মুয়াজাম ’ এবং নাঈম ইবনে হেমাদের ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করে বলেন যে , রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদীর যুগে আমার উম্মত এমন নেয়ামত ভোগ করবে যা এর আগে কখনো ভোগ করে নি। আকাশ তাদের উপর বৃষ্টি ঝরাবে এবং পৃথিবী তার সবজিকে বের করে দেয়ার ব্যাপারে কোন কার্পণ্য করবে না। সম্পদের তখন তেমন মূল্য থাকবে না। এমন হবে কোন ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলবে হে মাহদী আমাকে সম্পদ দান করুন। হযরত উত্তরে বলবেন- নাও। ”
একই বইয়ে লেখক আবু নাঈম ইসফাহানির ‘ সিফাতুল মাহদী ’ থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ যে আমার ‘ সুন্নাত ’ অনুযায়ী কাজ করবে সে হবে সেই ব্যক্তি যে আবির্ভূত হবে। আকাশ তার নেয়ামতসমূহ অবতরণ করবে এবং পৃথিবীও তার নেয়ামত উগরে দিবে। পৃথিবী ন্যায়বিচারে পূর্ণ হবে ঠিক যেভাবে তা নিপীড়ন দিয়ে পূর্ণ ছিলো। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 97 পৃষ্ঠায় হাকীম-এর ‘ সহীহ ’ থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আকাশ ও পৃথিবীর বাসিন্দারা মাহদীকে ভালোবাসবে। পৃথিবী তার সবজিকে বের করে দিবে এবং কিছইু মজুদ করবে না। আল্লাহ পৃথিবীর বাসিন্দাদের এত বরকত ও নেয়ামত দিবেন যে যারা জীবিত তারা চাইবে মৃতরাও জীবিত হয়ে উঠুক। ”
মাহদীর (আঃ) কর্মকাণ্ড ও আহবান
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক সপ্তম অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন-
“ যখন অনৈতিকতা ব্যাপক আকার ধারণ করবে মাহদী মক্কায় আবির্ভূত হবেন। তখন তার সাথে থাকবে নবী (সাঃ)-এর পতাকা , তরবারী , জামা এবং অন্যান্য নিদর্শন। এশার নামাজ শেষ করার পর পরই তিনি উচ্চ কণ্ঠে বলবেন- ‘ হে জনতা , আমি তোমাদেরকে সে সময়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি যখন তোমরা তোমাদের রবের সামনে দাড়াবে এবং তিনি তার যুক্তি পেশ করা সম্পূর্ণ করবেন। তিনি নবীদের পাঠিয়েছেন , কিতাব পাঠিয়েছেন এবং তোমাদেরকে আদেশ করেছেন আল্লাহর সাথে কোন শরীক না করতে। আল্লাহ ও তার নবীর কাছে আত্মসমপর্ণ ও আনুগত্যকে রক্ষা কর। কোরআন যা জীবিত করতে চায় তোমরাও তা জীবিত করার জন্য সংগ্রাম কর এবং কোরআন যা কিছুর মৃত্যু চায় তোমরা তার জন্য সংগ্রাম কর। ধার্মিকতায় আমার সাথী ও মন্ত্রী হও কারণ পৃথিবী ধ্বংসের নিকটবর্তী এবং বিদায় জানিয়েছে। আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ও তারঁ রাসূলের দিকে আহবান করছি এবং তার কিতাব অনুযায়ী কাজ করার আহবান জানাচ্ছি। মিথ্যা থেকে দুরে থাকো এবং নবীর (সাঃ) সূন্নাতকে (পদ্ধতিকে) জীবিত কর। ’
মাহদী আবির্ভূত হবেন দ্রুততার সাথে এবং হঠাৎ করে হেমন্তের মেঘের মত তিনশত তেরজন লোকের সাথে , যা ‘ বদর ’ -এর সাহাবীদের সংখ্যার সমান। রাতে তিনি ইবাদতে ব্যস্ত থাকবেন এবং দিনের বেলা তিনি হবেন গর্জনরত সিংহের মত। এভাবে আল্লাহ মাহদীর জন্য ‘ হেজায ’ -এ বিজয় আনবেন। মাহদী বনি হাশিম-এর লোকদের কারাগার থেকে মুক্ত করবেন যারা সে সময় কারাগারে থাকবেন। কালো পতাকাধারী জনতা কুফায় প্রবেশ করবে এবং মাহদীর কাছে যাবে তাদের অনুগত্যের শপথ করতে। মাহদী নিজে তার সেনাবাহিনীকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় পাঠাবেন আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করার জন্য। অত্যাচারীরা পরাজিত হবে এবং শহরগুলোর অধিবাসীরা মাহদীর কাছে আত্মসমর্পণ করবে। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে এর লেখক আবু নাঈম-এর ‘ সিফাতুল মাহদী ’ থেকে এবং তিনি আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমার বংশ থেকে একজন আবির্ভূত হবে যে আমার ‘ সূন্নাত ’ অনুযায়ী কাজ করবে। আকাশ থেকে রহমত নাযিল হবে এবং পৃথিবী তার নেয়ামত উগরে দিবে। পৃথিবী ন্যায়বিচার ও সাম্যে পূর্ণ হয়ে যাবে ঠিক যেভাবে তা অত্যাচার ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক আব্দুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেন যে- “ আমি ইমাম বাক্বির (আঃ)-কে বললাম- ‘ আমাকে ‘ ক্বায়েম ’ সম্পর্কে বলুন। ’ তিনি বললেন-
‘ আমি ক্বায়েম নই এবং যাকে তোমরা বল সে ক্বায়েম নয়। ’
আমি জিজ্ঞেস করলাম- ‘ মাহদীর পথ ও নীতিমালা কী হবে ? ’ তিনি উত্তর দিলেন- ‘ ঠিক রাসূলুল্লাহর (সাঃ) মত। ’
একই বইয়ে তিনি নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তিনি বিবি আয়শা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আমার বংশ থেকে। সে আমার সুন্নাতের জন্য যুদ্ধ করবে ঠিক যেভাবে আমি ওহীর জন্য করেছি। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক ’ -এর 98 পৃষ্ঠায় এবং ‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 433 পৃষ্ঠায় একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন প্রায় একই কথায়।
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 16 পৃষ্ঠায় বলেছেন- “ মহিউদ্দীন আল আরাবী তার ‘ ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ ’ -তে বলেছেন- ‘ মাহদী এলহাম অনুযায়ী কাজ করবেন যেহেতু নবীর (সাঃ) নীতিমালা তার কাছে প্রকাশিত হবে এলহামের মাধ্যমে , যেভাবে রাসূল (সাঃ) বলেছেন ”
এভাবে রাসূল (সাঃ) আমাদের বুঝিয়েছেন যে মাহদী রাসূল (সাঃ)-এর অনুসারী এবং তিনি অবিশ্বাসী নন। এছাড়া তিনি আমাদের বুঝিয়েছেন যে তিনি নিষ্পাপ।
মাহদীর (আঃ) পন্থা
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক পঞ্চম অধ্যায়ে আবু আমারা উসমান ইবনে সাঈদ মুকাররীর ‘ সুনান ’ থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আকাশের বাসিন্দারা , পৃথিবীর বাসিন্দারা , পাখিরা , পশুরা এবং মাছেরা মাহদীর উপস্থিতিতে ’ আনন্দিত হবে। ”
একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে লেখক আবু নাঈম-এর ‘ সিফাতুল মাহদী ’ এবং ইমাম আহমদ-এর ‘ মুসনাদ ’ থেকে বর্ণনা করেন এবং তারা আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমি তোমাদের মাহদী সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছি- পৃথিবী ও আকাশের বাসিন্দারা তার উপরে সন্তুষ্ট থাকবে। ”
একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে এর লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ- এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন- “ এক ব্যক্তি ইমাম বাক্বির (আঃ)-এর কাছে আসলেন এবং বললেন- ‘ আমার সম্পদের উপর যাকাত এর এ পাঁচশত দিরহাম গ্রহণ করুন। ’
ইমাম বাক্বির (আঃ) বললেন- ‘ তুমি এ পাঁচশত দিরহাম তোমার মুসলমান প্রতিবেশী এবং তোমার যে মুসলমান ভাইয়েরা দুর্দশায় আছে তাদের দাও। ’ এরপর ইমাম (আঃ) বললেন- ‘ যখন আমাদের বংশধর থেকে মাহদী ‘ আল ক্বায়েম ’ আবির্ভূত হবে সে সম্পদকে সমানভাবে বণ্টন করবে এবং চাষীদের সাথে ন্যায়বিচারের সাথে বিনিময় করবে। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক আবু আমারা মুকাররীর ‘ সুনান ’ থেকে এবং হাফেয নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি কাআব আল আকবার থেকে বর্ণনা করেন যে- “ আমি নবীর বইগুলোতে মাহদীর নাম দেখেছি। তার শাসন ন্যায়পরায়নতা বিবর্জিত নয় এবং নিপীড়নমূলকও নয়। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক্ব ’ -এর 98 পৃষ্ঠাতে রুইয়ানি , তাবরানি এবং অন্যান্য থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “ মাহদী আমার বংশধর থেকে। পৃথিবী ও আকাশের বাসিন্দারা এবং পাখিরা মাহদীর খিলাফত নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে। ”
একই বইয়ের 99 পৃষ্ঠায় লেখক আহমাদ ও মাওয়ারদী থেকে একই ধরনের বিষয়বস্তু সম্বলিত একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
মাহদীর (আঃ) প্রশংসনীয় নৈতিকতা
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ে হারিস ইবনে মুগাইরা নাযরি থেকে বর্ণনা করেন যে- “ আমি হোসেইন ইবনে আলীকে (আঃ) বললাম- ‘ কী চিহ্ন থেকে আমরা মাহদীকে চিনবো ?
তিনি বললেনঃ ‘ তার শান্ত অবস্থা ’ ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে। ’
একই বইয়ের লেখক হাফেয আবু মোহাম্মাদ হোসেইন-এর ‘ মাসাবীব ’ থেকে এবং তিনি কাআব আল আকবার থেকে বর্ণনা করেন যে- “ ঈগল ও তার দুই ডানার মত মাহদী আল্লাহর জন্য বিনীত হবে। ”
একই বইয়ের অষ্টম অধ্যায়ে তিনি নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি তাউস থেকে বর্ণনা করেন- “ মাহদীর নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি হলো সে হবে তার কর্মকর্তাদের সাথে কঠোর নিয়মের অনুসারী এবং দরিদ্রদের সাথে উদার ও দয়ালু । ”
একই বইয়ের নবম অধ্যায়ের তৃতীয় অংশে তিনি নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি আবু রুমিয়াহ থেকে বর্ণনা করেন- “ মাহদী দরিদ্রদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন এবং তাদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিবেন। ”
একই বইয়ের নবম অধ্যায়ের তৃতীয় অংশে তিনি হোসেইন ইবনে আলী (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন-
“ যখন মাহদী আবির্ভূত হবে তার এবং আরব ও কুরাইশদের মধ্যে আর কিছু ফয়সালাকারী হবে না তরবারী ছাড়া। কী কারণে তারা হযরতের আবির্ভাব এর জন্য তাড়াহুড়া করছে ? আমি আল্লাহর কসম করে বলছি মাহদী মোটা ও জীর্ণ পোষাক ছাড়া কিছু পড়বে না এবং বার্লির রুটি ছাড়া কিছু খাবে না এবং তার তরবারীর নীচে মৃত্যু লুকিয়ে থাকবে। ”
ধর্ম মাহদীতে (আঃ) গিয়ে শেষ হবে
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক প্রথম অধ্যায়ে একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ যেমন , আবুল ক্বাসিম তাবারানি , আবু নাঈম ইসফাহানি , আব্দুর রহমান ইবনে হাতিম এবং আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ এবং অন্যান্য থেকে বর্ণনা করেন যে আমিরুল মুমিনীন আলী (আঃ) বলেছেন- “ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম- ‘ ইয়া রাসূলুল্লাহ , মাহদী কি আমাদের বংশ থেকে (আসবে) নাকি অন্যদের ? ’
তিনি বললেন- ‘ প্রকৃত ব্যাপার হলো সে আমাদের থেকে আসবে। আল্লাহ মাহদীতে ধর্মের সমাপ্তি টানবেন যেভাবে তিনি আমাদের মাধ্যমে তা শুরু করেছিলেন। ”
একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে পূর্ববর্তী বর্ণনাকারীদের কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) বলেছেন- “ আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। মাহদী কি আমাদের থেকে , মোহাম্মাদের বংশধর নাকি অন্যদের থেকে ? তিনি উত্তর দিলেন- ‘ প্রকৃত ব্যাপার হলো সে আমাদের কাছ থেকে আসবে। আল্লাহ ধর্মের সমাপ্তি টানবেন মাহদীতে ঠিক যেভাবে তিনি তা আমাদের মাধ্যমে শুরু করেছিলেন ’ । ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ে লেখক হাফেয আবু বকর বায়হাক্বী থেকে এবং তিনি আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আমার বংশ থেকে , ধর্ম তার মাধ্যমে সমাপ্ত হবে ঠিক যেভাবে তা আমাদের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো। ”
ইবনে হাজার তার ‘ সাওয়ায়েক ’ -এর 97 পৃষ্ঠায় আবুল কাসিম তাবারানি থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আমাদের থেকে। ধর্ম সমাপ্ত হবে তার মাধ্যমে ঠিক যেভাবে তা আমাদের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 148 পৃষ্ঠায় তাবরানি থেকে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ মাহদী আমাদের বংশ থেকে। ধর্ম তার মাধ্যমে সমাপ্ত হবে ঠিক যেভাবে তা আমাদের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো। ”
ইহুদী ও খৃষ্টানরা
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক সপ্তম অধ্যায়ে নাঈম ইবনে হেমাদ- এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি সুলাইমান ইবনে ঈসা থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেন- “ আমার কাছে সংবাদ পৌছেছে যে তাবারিয়া হৃদ থেকে ‘ অঙ্গীকার-এর নৌকা ’ বের করে আনা হবে। নৌকাটি বহন করে বায়তুল মুকাদ্দাসের সামনে স্থাপন করা হবে। একদল ইহুদী তা প্রত্যক্ষ করবে এবং তারা আত্মসমপর্ণ করবে। ”
একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে লেখক বলেন- কোন কোন হাদীসে এটি বলা হয়েছে- “ যে কারণে মাহদীকে মাহদী বলা হয় তা হলো তাকে তাওরাতের দিকে পরিচালিত করা হবে এবং তিনি তা সিরিয়ার পাহাড় থেকে বের করে আনবেন। তিনি ইহুদীদের সেই কিতাবের দিকে আহবান করবেন এবং একদল তাওরাতের প্রতি আত্মসমর্পণ করবে। ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক বলেন- আবু আমারা মাদায়েনি তার ‘ সুনান ’ -এ বলেছেন- “ মাহদীকে মাহদী বলা হয় এ কারণে যে তাকে সিরিয়ার পর্বতমালার দিকে পরিচালিত করা হবে এবং তিনি সেখান থেকে তাওরাতের কিতাবগুলো বের করে আনবেন। তিনি ইহুদীদের সাথে তাওরাতের মাধ্যমে বিতর্ক করবেন ও যুক্তি উপস্থাপন করবেন এবং ইহুদীদের একটি দল তার কাছে আত্মসমর্পণ করবে। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 153 পৃষ্ঠায় বলেছেন- “ মাহদী অঙ্গীকার-এর নৌকা এবং তাওরাতের কিতাবগুলোকে যথাক্রমে আনথাকিয়ার গুহা থেকে এবং সিরিয়ার পাহাড় থেকে বের করে আনবেন। তিনি ইহুদীদের সাথে তাওরাতের মাধ্যমে বিতর্ক করবেন এবং ইহুদীদের একটি বিরাট দল তার কাছে আত্মসমর্পণ করবে। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 476 পৃষ্ঠায় ‘ মেশকাত আল মাসাবীহ ’ র লেখক থেকে এবং তিনি আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ ঈসা ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন এবং ন্যায়পরায়নতার সাথে বিচার করবেন। তিনি ক্রুশ ধ্বংস করবেন এবং শুকরের গোশত নিষিদ্ধ করবেন । তিনি ‘ জিযিয়া কর ’ বাতিল করবেন। কম বয়সী উটগুলোকে মুক্ত করে দিবেন এবং তাদের উপর আরোহণ করবেন না। তিনি শত্রুতা উচ্ছেদ করবেন এবং বিদ্বেষ , ঘৃণা এবং ঈর্ষা ধ্বংস করবেন। ”
এ বইয়ের লেখক বলেন- “ জিযিয়া বাতিল করবেন অর্থ সবাই ইসলামের অনুসারী হয়ে যাওয়ার কারণে ‘ জিযিয়া ’ থাকবে না ঠিক সে অর্থে যে তিনি ক্রুশ ধ্বংস করবেন। এছাড়া শত্রুতা , বিদ্বেষ ও ঘৃণা এবং ঈর্ষা ঈসা ইবনে মরিয়মের অবতরণের বরকতে দূর হয়ে যাবে। ”
শুধু ইসলাম ধর্ম থাকবে
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক দ্বিতীয় অধ্যায়ে আবুল হাসান রাবঈ মালেকি থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাহদী , তার উপাধি ও তার বায়াত গ্রহণের স্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেনঃ
“ আল্লাহ মাহদীর মাধ্যমে ধর্মকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেন এবং তাকে বিজয় দান করবেন। তখন যারা বলবে ‘ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই ’ তারা ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ থাকবে না। ”
ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 476 পৃষ্ঠায় শেইখ মহিউদ্দীন আল আরাবীর ‘ ফুতুহাতুল মাক্কিয়্যাহ ’ র 366 অধ্যায় থেকে বর্ণনা করেন যে ,
“ মাহদী তখন আবির্ভূত হবেন যখন ধর্ম হারিয়ে যেতে থাকবে। যারা তা গ্রহণ করবে না তাদেরকে হত্যা করা হবে এবং যে তার সাথে বিতর্কে জড়িত হবে সে পরাজিত হবে। তিনি ধর্মের বাস্তবতা প্রকাশ করবেন এমনভাবে যদি রাসূল (সাঃ) জীবিত থাকতেন তিনিও এভাবেই বিচার করতেন। তিনি পৃথিবীর বুক থেকে অন্য সব ধমর্কে উচ্ছেদ করে দিবেন। তখন সত্য ধর্ম ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন ধর্ম থাকবে না। ”
মাহদীর (আঃ) সংস্কার
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 486 পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন যে হযরত আলী ইবনে মূসা আল রিদা এবং তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার আহলে বায়েতের গুণাবলী এবং মেরাজ সম্পর্কে বলার সময় বলেন- “ আমি জিজ্ঞেস করলাম , ‘ হে আমার রব কারা আমার ওয়াসী ? আমি একটি ডাক শুনলাম ‘ হে মুহাম্মাদ , তোমার ওয়াসী হলো তারা যাদের নাম আমার আরশে লেখা রয়েছে। ’
‘ আমি তাকালাম এবং দেখলাম 12টি নূর। একটি সবুজ ঢাকনা প্রত্যেক নূরের উপর এবং আমার ওয়াসীদের নাম তাদের প্রত্যেকটির উপর লেখা রয়েছে আর তাদের প্রথম জন ছিলো আলী এবং শেষজন মাহদী। ’
আমি জিজ্ঞেস করলাম , ‘ হে আমার রব , তারা কি আমার পরে আমার ওয়াসী (অসিয়ত সম্পাদনকারী) ? ’
আমি একটি কণ্ঠ শুনলাম- ‘ তোমার পরে , তারা আমার বন্ধু , নির্বাচিত ব্যক্তিগণ এবং আমার সৃষ্টির উপরে প্রমাণসমূহ। তারা তোমার ওয়াসী। আমি আমার গৌরব ও মর্যাদার শপথ করে বলছি আমি পৃথিবী থেকে অত্যাচারকে বিদায় করে দিবো সর্বশেষ জনের হাতে , সে হলো মাহদী। আমি তাকে পূর্ব ও পশ্চিমে বিজয়ী করবো। আমি বাতাস দিয়ে তার বিজয় আনবো এবং মেঘকে তার অনুগত করবো। আমি তাকে শক্তি দিবো কিছু মাধ্যমের সাহায্যে এবং তার নিজস্ব সেনাবাহিনীর মাধ্যমে। আমি তাকে ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করবো যতক্ষণ না সে আমার সরকার গঠন করে এবং জনতাকে ‘ তাওহীদ ’ এর চারদিকে জড়ো করে। এরপর আমি তার রাজ্যকে বিস্তৃত করবো এবং দিনগুলোকে বৃদ্ধি করবো বিচার দবিস পর্যন্ত। ”
আবারও ‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 486 পৃষ্ঠায় আবুল মুআইয়েদ মুয়াফিক্ব ইবনে আহমাদ খাওয়ারাযমী থেকে এবং তিনি আবু সুলাইমান থেকে বর্ণনা করেন যে , “ আমি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) বলতে শুনেছি , “ যে রাতে আমাকে আকাশে উঠানো হলো আমি একটি ডাক শুনলাম- ‘ হে মুহাম্মাদ , তুমি কি তোমার ওয়াসীদের দেখতে চাও ? ’
আমি বললাম- ‘ জী ’ ।
আমাকে বলা হলো- ‘ আরশের ডান দিকে তাকাও ’ । আমি তাকানোর সাথে সাথেই আলী , ফাতেমা , হাসান , হোসেইন , আলী ইবনে হোসেইন , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , জাফর ইবনে মুহাম্মাদ , মূসা ইবনে জাফর , আলী ইবনে মূসা , মুহাম্মাদ ইবনে আলী , আলী ইবনে মুহাম্মাদ , হাসান ইবনে আলী এবং মুহাম্মাদ ইবনে হাসানকে দেখলাম , যে তাদের মাঝে জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মত দেখাচ্ছিলো।
পরে আমাকে বলা হলো- ‘ হে মুহাম্মাদ , তারা আমার দাসদের উপর আমার প্রমাণ। তারা তোমার ওয়াসী এবং মাহদী তাদের মধ্যে তোমার বংশধরদের পক্ষে প্রতিশোধ গ্রহণকারী , আমি আমার গৌরব ও মর্যাদার শপথ করছি যে মাহদী আমার শত্রুদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণকারী এবং আমার বন্ধুদের সাহায্যকারী ’ । ”
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম অংশে আবু নাঈমের ‘ সিফাতুল মাহদী ’ থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুলাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “ এ জাতির উপর অভিশাপ এর অত্যাচারী শাসকদের জন্য। কীভাবে তারা বিশ্বাসীদের হত্যা করে এবং তাদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করে , তাদেরকে বাদ রেখে যারা তাদের মেনে চলে। যখন আল্লাহ ইসলামকে মর্যাদা দিতে চাইবেন তিনি অত্যাচারীদের ধ্বংস করবেন। সব কিছুর উপর আল্লাহর ক্ষমতা রয়েছে এবং তিনি একটি জাতিকে শুদ্ধ করতে সক্ষম যা নৈতিকতা হারিয়েছে। ”
এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-
“ হে হুযাইফা , যদি পৃথিবীর জীবন একদিনও বাকী না থাকে আল্লাহ সে দিনটিকে এতটা দীর্ঘ করবেন যে আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে এবং শাসন করবে। সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পরিচালনা করবে এবং ইসলামকে প্রকাশ করবে। আল্লাহ তার শপথ ভঙ্গ করেন না এবং তিনি হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত। ”
উল্লিখিত বইয়ের নবম অধ্যায়ের তৃতীয় অংশে এর লেখক আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি মাহদী সম্পর্কে , মাহদী ও তার সংস্কার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন- “ কোন মিথ্যা কথা নেই যা মাহদী উপড়ে ফেলবেন না এবং কোন সূন্নাহ বাকী থাকবে না যা মাহদী জীবিত করবেন না। ”
একই বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে তিনি একদল হাদীস বিশেষজ্ঞ যেমন আবু নাঈম ইসফাহানি , আবুল ক্বাসেম তাবরানি , আবু আব্দুর রহমান ইবনে আবু হাতিম , আবু আব্দুল্লাহ নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে এবং তারা আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাহদী এবং তার হাতে আল্লাহ ধর্মের যে সমাপ্তি টানবেন তার কথা বলার সময় বলেন- “ জনগণ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে মাহদীর কারণে , ঠিক যেভাবে তারা মুক্তি পেয়েছিলো শিরক থেকে। তার কারণে আল্লাহ তাদেরকে পরস্পরের সাথে অন্তরঙ্গ করবেন শত্রুতার পর ঠিক যেভাবে তাদেরকে তিনি পরস্পরের সাথে অন্তরঙ্গ করেছিলেন খোদাদ্রোহীতার শত্রুতার পর।
একই বইয়ের নবম অধ্যায়ে তৃতীয় অংশে তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ণনা করেন , ‘ আমি ইমাম বাকিরক্বে জিজ্ঞেস করলাম যখন মাহদী আবির্ভূত হবেন তখন তার পন্থা কী হবে ? ’
তিনি উত্তর দিলেন- “ তিনি তার সামনে থাকা খোদাদ্রোহীতামূলক কথাকে ধ্বংস করবেন ঠিক যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) করেছিলেন। মাহদী নুতনভাবে ও তাজাভাবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করবেন। ”
একই বইয়ের একই অধ্যায়ের একই অংশে লেখক আলী ইবনে আবি তালিব থেকে বর্ণনা করেন- “ কোন খোদাদ্রোহীতামূলক কথা নেই যা মাহদী উচ্ছেদ করবেন না এবং কোন ‘ সুন্নাহ নেই যা মাহদী প্রতিষ্ঠা করবেন না। ”
উল্লিখিত বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে তিনি আবু বকর বায়হাকীর ‘ বেসাথ ওয়া নুশুর ’ , আহমাদ-এর ‘ মুসতাদরাক ’ এবং আবু নাঈম-এর ‘ সিফাতুল মাহদী ’ থেকে বর্ণনা করেন এবং তারা সবাই আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমি তোমাদেরকে মাহদীর সুসংবাদ দিচ্ছি। সে আমার উম্মতের ভিতর আবির্ভুত হবে এমন এক সময়ে যখন তারা পরস্পর বিভেদ ও যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন হযরত পৃথিবীকে সাম্য ও ন্যায়বিচার দিয়ে পূর্ণ করে দিবেন ঠিক যেভাবে তা অত্যাচার ও নিপীড়নে পূর্ণ ছিলো। মাহদী মুহাম্মাদের উম্মতের হৃদয়গুলোকে পূর্ণ করে দিবেন সম্পদ দিয়ে এবং তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন। তার ন্যায়বিচার সবাইকে বকেু জড়িয়ে ধরবে। ”
উল্লিখিত বইয়ের সপ্তম অধ্যায়ে তিনি আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণনা করেন- “ মাহদী তার প্রধান ব্যক্তিদের বিভিন্ন শহরে পাঠাবেন জনগণের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। নেকড়ে এবং ভেড়া সব একসাথে ঘাস খাবে। শিশুরা সাপ ও বিচ্ছু নিয়ে খেলবে সামান্যতম ক্ষতি ছাড়াই। খারাপ বিদায় হয়ে যাবে এবং ভালো থাকবে। জনগণ 750 গ্রাম চাষ করবে পরিবর্তে ফসল তুলবে 525 কিলোগ্রাম ঠিক যেভাবে পবিত্র কোরআনে তা বলা হয়েছে। ব্যভিচার , মদপান ও সূদ-এর শিকড় উপড়ে ফেলা হবে। জনগণ ইবাদত , ঐশী আইন , বিশ্বাস এবং সমাজে মেলামেশার প্রতি আসক্তি অনুভব করবে। মানুষের হায়াত বৃদ্ধি পাবে। আমানত ফেরত দেয়া হবে। গাছগুলো ফল দিবে। রহমত ও বরকত বহুগুণ হবে এবং শয়তানদের ধ্বংস করা হবে। সৎগুণসম্পন্ন লোকেরা বেঁচে থাকবে এবং আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন লোকদের অস্তিত্ব থাকবে না। ”
একই বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়ে লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ-এর ‘ ফাতান ’ থেকে এবং তিনি জাফর ইবনে বাশার শামি থেকে বর্ণনা করেন যে “ (মাহদীর যুগে) অবিচার এমনভাবে তিরস্কৃত হবে যে কোন ব্যক্তির কোন সম্পদ যদি অন্য কারো দাঁতের নীচেও লুকানো থাকে তাও সে খুলে তার মালিককে ফেরত দিবে। ”
মাহদীর (আঃ) অধীনে বিজয় ও উন্নয়ন
‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক তৃতীয় অধ্যায়ে আবুল হাসান মালেকি থেকে এবং তিনি হুযাইফা ইবনে ইয়ামানী থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “ যদি পৃথিবীর জীবন একদিনও বাকী না থাকে আল্লাহ আমার বংশ থেকে এক ব্যক্তির উত্থান ঘটাবেন যার নাম হবে আমার নামের মত এবং তার চরিত্র হবে হুবহু আমার চরিত্র। আল্লাহ ধর্মকে পুনরুজ্জীবিত করবেন তার মাধ্যমে এবং তাকে বিজয় দিবেন। শুধু যারা বলে ‘ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই ’ তারা ছাড়া আর কেউ পৃথিবীর বুকে থাকবে না। ”
উল্লিখিত বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে এর লেখক আবু আব্দুল্লাহ ইবনে জওযীর ‘ তারিখ ’ থেকে এবং তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুলাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ চার ব্যক্তি সারা পৃথিবীকে শাসন করেছে- তাদের দু ’ জন বিশ্বাসী এবং দু ’ জন অবিশ্বাসী । বিশ্বাসী দু ’ জন হলো যুলক্বারনাইন (আঃ) ও হযরত সুলাইমান (আঃ) এবং দু ’ জন অবিশ্বাসী হলো বাখতুন নসর এবং নমরুদ। শীঘ্রই আমার বংশের এক ব্যক্তি সারা পৃথিবীর মালিক হবে। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 150 পৃষ্ঠায় বলেছেন- “ হাদীস এসেছে মাহদী পূর্ব ও পশ্চিমের মালিক হবেন। ”
‘ ইয়ানাবিউল মুওয়াদ্দা ’ -র লেখক 447 পৃষ্ঠায় ‘ ফারায়েদুস সিমতাইন ’ থেকে এবং তা সাঈদ ইবনে জুবায়ের থেকে এবং তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“ আমার পর বারোজন খলিফা ও উত্তরাধিকারী আসবে যারা হবে আল্লাহর সৃষ্টির উপরে তার হুজ্জাত (প্রমাণ) । তাদের প্রথম জন হলো আলী এবং তাদের শেষ জন আমার সন্তান মাহদী। পৃথিবী ঐশী আলোতে আলোকিত হয়ে যাবে এবং মাহদীর শাসন পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। ”
মাহদীর (আঃ) খিলাফত ও শাসন-এর সময়
মাহদীর (আঃ) খিলাফত ও শাসন এবং হযরতের হায়াত সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস এসেছে সুন্নী সূত্রে।
আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন যে মাহদী (আঃ) সাত বছর শাসন করবেন। তিরমিযি বর্ণনা করেছেন মাহদী (আঃ) শাসন করবেন পাঁচ অথবা সাত অথবা নয় বছর। ইবনে মাজাহও একই বিষয় বর্ণনা করেছেন।
হাকিম বর্ণনা করেছেন মাহদী (আঃ) শাসন করবেন সাত অথবা নয় বছর। কিন্তু ইবনে হাজার মাহদীর (আঃ) শাসন শুধু সাত বছর উল্লেখ করেছেন।
তাবরানি ও বায্যায থেকে বর্ণনা করা হয়েছে মাহদী (আঃ) সাত , আট অথবা বেশী হলে নয় বছর বাঁচবেন। মাওয়ারদি এবং আহমাদ বর্ণনা করেছেন হযরত মাহদী (আঃ) বাঁচবেন পাঁচ , সাত , আট অথবা নয় বছর এবং তারপরে আর কোন ভালো থাকবে না। কোন কোন হাদীস বিশেষজ্ঞ বলেন মাহদীর শাসন 20 বছর দীর্ঘায়িত হবে ঠিক যেভাবে ‘ ইকদুদ দুরার ’ -এর লেখক আবু নাঈম ও তাবরানি থেকে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া ‘ ইকদুদ দুরার ’ এর লেখক নাঈম ইবনে হেমাদ থেকে বর্ণনা করেছেন যে মাহদী চল্লিশ বছর বেঁচে থাকবেন। যাহোক , যেসব হাদীস মাহদীর জীবন সাত বছর বলে উল্লেখ করে সেগুলোর সংখ্যাই বেশী। কোন কোন হাদীস বলে মাহদী (আঃ) শাসন করবেন সাত বছর যেখানে প্রত্যেক বছর হবে বিশ বছরের সমান। অর্থাৎ প্রত্যেক বছর মাহদী (আঃ) 20 বছরের জন্য সংস্কারমূলক কাজ ও ইসলামি শিক্ষার প্রচলন করবেন। কোন কোন হাদীস বলে তিনি দশ বছরের জন্য শাসন করবেন। আলেমদের বক্তব্য বিভিন্ন। কেউ বলেন- সন্দেহ জেগেছে বর্ণনাকারী থেকে এবং এ বক্তব্যের সমর্থন তিরমিযির কথায় পাওয়া যায় , তিনি বলেন- “ এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ থেকে ঘটেছে। ”
‘ ইসাফুর রাগেবীন ’ -এর লেখক 155 পৃষ্ঠায় বলেছেন- “ বেশীর ভাগ হাদীস বলে মাহদীর (আঃ) শাসন সাত বছর থাকবে এবং সাত থেকে নয় বছর হলো সন্দেহজনক। ”
ইবনে হাজার বলেন- “ মাহদী সাত বছরের জন্য শাসন করবেন এ বিষয়ে হাদীসগুলোর ঐক্য দেখা যায়। তিনি আবুল হাসান আবারি থেকে বর্ণনা করেন যে , প্রচুর নির্ভরযোর্গ্য হাদীস ইঙ্গিত করে মাহদী (আঃ) সাত বছর শাসন করবেন। ”
এ বইয়ের লেখক বলেন- হাদীসে এ পাথর্ক্য এসেছে হয়তো এ কারণে যে মাহদীর (আঃ) আবির্ভাবের সময়টকু যেমন কারো জানা নেই তেমনি তার শাসনকালও জানার জন্য নয় , যেন প্রত্যেক ব্যক্তি মাহদীর বিজয় এবং দীর্ঘ উপস্থিতির ’ আকাঙ্ক্ষা করে।
মাহদী (আঃ)-এর 313 জন প্রধান সাহায্যকারী ও উৎপত্তি স্থান
আসবাগ ইবনে নবাতাহু বলেন- “ আমিরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) একটি খুতবা দিলেন এবং সেখানে মাহদীর আবির্ভার্ব ও সাহায্যকারীদের সম্পর্কে বললেন। আবু খালিদ হালাবি অথবা কাবুলি বললেন- ‘ হে আলী , তার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন। ’
তিনি বললেন- ‘ চরিত্র ও সৃষ্টি গঠনের দিক থেকে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর সবচেয়ে নিকটবর্তী । আমি কি তোমাদের তার সাহায্যকারীদের সম্পর্কে বলবো ?
তারা বললো- ‘ জী , হে আমিরুল মুমিনীন ’ ।
তিনি বললেন , ‘ আমি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) বলতে শুনেছি যে , ‘ তাদের প্রথমজন বসরা থেকে এবং তাদের শেষজন ইয়ামামাহ থেকে। এরপর হযরত মাহদীর সাথীদেরকে গুনতে শুরু করলেন। জনতা কাঁদতে থাকলো এবং আলী (আঃ) বলতে থাকলেনঃ ‘ দু ’ জন বসরা থেকে , একজন আহওয়ায থেকে , একজন মিনা থেকে , একজন শুসতার থেকে , একজন দুরাক্ব থেকে , চারজন যাদের নাম আলী , আহমাদ , আব্দুল্লাহ এবং জাফর বাসতান থেকে , দু ’ জন যাদের নাম মুহাম্মাদ এবং হাসান আম্মান থেকে , দু ’ জন-শাদ্দাদ এবং শাদীদ সিরাফ থেকে , তিনজন- হাফাস , ইয়াক্বুব ও আহমাদ শিরাজ থেকে , চারজন- মূসা , আলী , আব্দুল্লাহ এবং গালাফান মারাজ অথবা আরাজ থেকে , আব্দুল্লাহ নামে একজন কারাজ থেকে , কাদীম নামে একজন বরুজারদ থেকে , আব্দুর রাযযাক নামে একজন নাহরাওয়ানদ থেকে , দু ’ জন আব্দুল্লাহ এবং আব্দসু সামাদ দাইনুল থেকে , তিনজন- জাফর ইসহাক্ব এবং মূসা হামাদান থেকে , দু ’ জন যাদের দু ’ জনের নাম নবী (সাঃ)-এর আহলে বায়েতের নামের মত ক্বোম থেকে , দারিদ নামে একজন এবং আরো পাঁচজন যাদের নাম আসহাবে কাহফ-এর মত খোরাসান থেকে।
একজন আমোল থেকে , একজন জুইজান থেকে , একজন হেরাত থেকে , একজন বলখ থেকে , একজন ক্বারাহ থেকে , একজন আঈন থেকে , একজন দামঘান থেকে , একজন সারখাস থেকে , তিনজন সাইয়ার থেকে , একজন সাইয়াহ থেকে , একজন সমরকান্দ থেকে , চব্বিশজন তালেক্বান থেকে- তারাই ওরা যাদের সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন- খোরাসানে ধনভাণ্ডার রয়েছে যা সোনা অথবা রুপা নয়। তারা হলো মানুষ যাদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূল একত্র করবেন।
দু ’ জন কাযভিন থেকে , একজন ফারস থেকে , একজন আহবার থেকে , একজন বিরজান থেকে , একজন শাখ থেকে , এজন সীরাহ থেকে , একজন আরদাবিল থেকে , একজন মোরাদ থেকে , একজন তাদাম্মোর থেকে , একজন আরমানি থেকে , তিনজন মারাগা থেকে , একজন খুঈ থেকে , একজন সালমাস থেকে , একজন বাদিসেস থেকে , একজন নাসূর থেকে , একজন বারকারি থেকে , একজন সারখিস থেকে , একজন মুনাইজারদ থেকে , একজন ক্বালিক্বালা থেকে , তিনজন ওয়াসেথ থেকে , দশজন বাগদাদ থেকে , চারজন কুফা থেকে , একজন কাদেসিয়াহ থেকে , একজন সুরাহ থেকে , একজন সিরাত থেকে , একজন নায়েল থেকে , একজন সাইদাহ থেকে , একজন জুইজান থেকে , একজন ক্বুসুর থেকে , একজন আনবার থেকে , একজন আকবারাহ থেকে , একজন হানানেহ থেকে , একজন তাবূক থেকে , একজন জামেদাহ থেকে , তিনজন আবাদান থেকে , ছয়জন হাদিসাহ মূসেল থেকে , একজন মসূল থেকে , একজন মাকলাসায়া থেকে , একজন নাসিবীন থেকে , একজন আরওয়ান থেকে , একজন ফারাক্বীন থেকে , একজন আমেদ থেকে , একজন রাসউল আঈন থেকে , একজন রেককাহ থেকে , একজন হারান থেকে , একজন বালেস থেকে , একজন ক্বাবীহ থেকে , একজন তারতুস থেকে , একজন কাসর থেকে , একজন আদনেহ থেকে , একজন হামারি থেকে , একজন আরার থেকে , একজন ক্বুরেস থেকে , একজন আনথাকিয়া থেকে , তিনজন হালাব থেকে , দু ’ জন হামাস থেকে , চারজন দামেশক থেকে , একজন সিরিয়া থেকে , একজন ক্বাসওয়ান থেকে , একজন কাইমুত থেকে , একজন সুর থেকে , একজন কারাজ থেকে , একজন আযরাহ থেকে , একজন আমের থেকে , একজন ডাকার থেকে , দু ’ জন বাইতুল মুকাদ্দাস থেকে , একজন রামাল্লাহ থেকে , একজন বালেস থেকে , দু ’ জন আক্কা থেকে , একজন আরাফাত থেকে , একজন আসকালান থেকে , একজন গাজাহ থেকে , চারজন ফাসাথ থেকে , একজন কারামিস থেকে , একজন দামিয়াম থেকে , একজন মাহালেহ থেকে , একজন আসকানদারিয়েহ থেকে , একজন বারকাহ থেকে , একজন তানজাহ থেকে , একজন মরানজাহ থেকে , একজন কীরওয়ান থেকে , পাঁচজন সুস আকসা থেকে , দু ’ জন কিরুস থেকে , তিনজন জামিমন থেকে , একজন কুস থেকে , একজন এডেন থেকে , একজন আলালি থেকে , দশজন মদীনা থেকে , চারজন মক্কা থেকে , একজন তায়েফ থেকে , একজন দাইর থেকে , একজন শিরওয়ান থেকে , একজন যুবাইদ থেকে , দশজন সারু থেকে , একজন আহসাহ থেকে , একজন কাতীফ থেকে , একজন হাজার থেকে এবং একজন ইয়ামামাহ থেকে। ”
আলী (আঃ) বললেন- ‘ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে আমার কাছে গুনলেন 313 জন পর্যন্ত , বদরের সাথীদের সমান সংখ্যায় , আল্লাহ যাদেরকে পূর্ব ও পশ্চিম থেকে জড়ো করবেন পবিত্র কাবার কাছে চোখের পলকে। যখন মক্কার লোকজন তা দেখবে তারা বলবে- ‘ সুফিয়ানী আমাদেরকে তার চারপাশে জমা করেছে। ’ মক্কার লোকদের সংস্পর্শে আসার পর তারা দেখবে কাবার চারদিকে একটি দল জড়ো হয়েছে এবং অন্ধকার ও মলিনতা তাদের কাছ থেকে চলে গেছে এবং আশার প্রভাত জেগেছে। তারা পরস্পরকে বলবে- নাজাত (সম্ভবত এ অর্থে যে তারা নাজাত পেয়েছে)। মর্যাদাবান ব্যক্তিরা পর্যবেক্ষণ করবে এবং শাসকরা গভীর চিন্তায় ডুবে যাবে। ’
আমিরুল মুমিনীন (আঃ) বললেন- “ আমি যেন তাদেরকে দেখতে পাচ্ছি। তাদের চেহারা , উচ্চতা , শারীরিক গঠন , তাদের মুখ , সৌন্দর্য এবং পোষাক সবই এক। যেন তারা কিছুর সন্ধানে আছে যা তারা হারিয়ে ফেলেছে এবং এখন তারা চিন্তামগ্ন ও দ্বিধান্বিত এ বিষয়ে , যতক্ষণ না এক ব্যক্তি যে সৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মত দেখতে উপস্থিত ’ হয় তাদের সামনে , কাবার গিলাফের পেছন থেকে। তারা তাকে জিজ্ঞেস করবে , ‘ আপনি কি মাহদী ? ’ তিনি বলবেনঃ ‘ হ্যাঁ , আমি শপথকৃত মাহদী। ’ এরপর হযরত তাদেরকে বলবেন- “ আমার কাছে আনুগত্যের শপথ করো চল্লিশটি বৈশিষ্ট্যের জন্য এবং আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ হও দশটি গুণাবলীর জন্য ’ । ”
আনাফ বললেন- “ হে আলী , কী সেই গুণাবলী ? তিনি বললেন- তারা বায়াত করবে যে তারা চুরি করবে না , ব্যভিচার করবে না , অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবে না , সম্মানিত ব্যক্তিকে অসম্মান করবে না , কোন মুসলমানকে গালি দিবে না , কোন বাড়িতে দলবেধে চড়াও হবে না , শুকনো ও দূর্বল পশুর উপর আরোহণ করবে না , নিজেদেরকে মিথ্যাভাবে সাজাবে না (গোনাহ করবে না) , পশম পরবে না , সিল্ক পরবে না। এমন কিছু ব্যবহার করবে না যা অন্যের পথ আটকায় , এতিমদের প্রতি অবিচার করবে না , ছল চাতুরী করবে না , কাউকে ধোকা দিবে না , এতিমদের সম্পদ খাবে না , সমকামিতায় যাবে না , মদ খাবে না , বিশ্বস্ততা ভঙ্গ করবে না , শপথ ভঙ্গ করবে না , গম ও বার্লি মজদু করবে না , আশ্রয়প্রার্থীকে হত্যা করবে না , পরাজিতের পেছন ধাওয়া করবে না , অন্যায়ভাবে রক্ত ঝরাবে না , এবং আহতকে হত্যা করবে না , এছাড়া প্রত্যেকে মোটা জামা পরবে , মাটিকে বালিশ বানাবে , বার্লির রুটি খাবে , যা কিছু অল্প সে পায় তা নিয়ে সন্তষ্ট ‘ থাকবে , জিহাদে (ধর্ম যুদ্ধে) অংশগ্রহণ করবে যেভাবে তা করা উচিত ; মেশক ও অন্যান্য সুগন্ধির ঘ্রাণ নিবে ও অপবিত্রতা এড়িয়ে চলবে। ”
সূচীপত্রঃ
লেখকের কথা 7
প্রথম অধ্যায় 14
মাহদী (আঃ) সম্পর্কে কোরআনের আয়াত 15
মাহদী ( আঃ ) সম্পর্কে নবীর ( সাঃ ) হাদীস 20
মাহদী ( আঃ ) সম্পর্কে হযরত আলী ( আঃ )- এর খোতবা 24
মাহদী ( আঃ ) সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিদের কথা 28
মাহদী সম্পর্কে কবিতা ও গীতি কবিতা 31
দ্বিতীয় অধ্যায় 37
মাহদী ( আঃ ) আরব বংশ থেকে 38
মাহদী ( আঃ ) এ ‘ উম্মাহ ’ ( জাতি ) থেকে 41
মাহদী ( আঃ ) কেনান থেকে 48
মাহদী ( আঃ ) ক্বুরাইশ থেকে 49
মাহদী ( আঃ ) বনি হাশিম থেকে 52
মাহদী ( আঃ ) আবু তালিবের বংশ থেকে 55
মাহদী ( আঃ ) মুহাম্মদ ( সাঃ ) এর বংশ থেকে 59
মাহদী (আঃ) নবীর (সাঃ) বংশ থেকে 63
মাহদী (আঃ) নবীর (সাঃ) পরিবার থেকে 67
মাহদী (আঃ) আলীর (আঃ) বংশ থেকে 75
মাহদী (আঃ) ফাতেমার (আঃ) বংশ থেকে 77
মাহদী (আঃ) ‘ সেবতাঈনের ’ (ইমাম হাসান ও হোসেইনের আঃ) বংশ থেকে 80
মাহদী (আঃ) ইমাম হোসেইনের (আঃ) নবম বংশধর 84
মাহদী (আঃ) ইমাম হাসান আসকারীর (আঃ) সন্তান 91
তৃতীয় অধ্যায় 95
মাহদী (আঃ) ও তার চেহারা 96
মাহদী (আঃ) ও তার চরিত্র 98
মাহদী (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মত 100
মাহদী (আঃ) ও তার চিন্তাভাবনা 101
মাহদী (আঃ) ও তার জ্ঞান 103
মাহদী (আঃ) ও তার ন্যায়পরায়নতা 105
মাহদী (আঃ) ও তার উদারতা 106
মাহদী (আঃ) ও তার শাসন 107
চতুর্থ অধ্যায় 112
মাহদী (আঃ) ও তার সম্মান 113
মাহদী (আঃ) ও তার উচ্চ মর্যাদা 114
মাহদী (আঃ) ও ঈসা (আঃ) 116
মাহদী (আঃ) ও বেহেশত 118
মাহদী (আঃ) এবং তার খিলাফত 121
মাহদী (আঃ) আল্লাহর হুজ্জাত (প্রমাণ) 123
মাহদী (আঃ) ও ধর্মের পূর্ণতা 124
মাহদী (আঃ) যুগের ইমাম 127
প্রশ্ন হলো বর্তমান যুগের ইমাম কে ?128
পঞ্চম অধ্যায় 131
মাহদী (আঃ) ও তার জন্ম 132
মাহদীর (আঃ) নাম , উপাধী ও ডাক নাম 136
মাহদী (আঃ) ও তার পিতা-মাতার নাম 139
শৈশবে ইমাম মাহদীর (আঃ) ইমামত লাভ 140
মাহদী (আঃ) ও তার দীর্ঘ জীবন 143
মাহদী (আঃ) জীবিত আছেন ও রিযক লাভ করছেন 146
মাহদী (আঃ) ও যারা তাকে দেখেছে 151
ষষ্ঠ অধ্যায় 157
গাইবাত (আত্মগোপন)-এর হাদীস 158
মাহদী (আঃ) ও তার আত্মগোপনের ধরন 162
মাহদী (আঃ)-এর স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন আত্মগোপন 165
সপ্তম অধ্যায় 167
আসমানী কন্ঠস্বর 168
আসমানী নিদর্শনসমূহ 169
নৃশংসতা ও নিপীড়ন 172
সাইয়্যেদ খোরাসানী 175
নাফসে যাকিয়্যাহর (পবিত্র আত্মার ব্যক্তি) হত্যাকাণ্ড 177
দাজ্জালের বিদ্রোহ 178
সুফিয়ানীর বিদ্রোহ 180
মাহদীর (আঃ) আগমনের নিদর্শনসমূহ 184
মাহদী (আঃ)-এর আগমনের বছর ও দিন সম্পর্কে হাদীস 187
অষ্টম অধ্যায় 190
মাহদীর (আঃ) জন্য অপেক্ষা করার ফযীলত 191
আবির্ভাবের সময় উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকা 192
শেষ যুগে মাহদীর (আঃ) আবির্ভাব 193
আবির্ভাবের দিনে মাহদীর (আঃ) বৈশিষ্ট্য 195
মাহদীর (আঃ) আবির্ভাবের স্থান 197
মাহদীর (আঃ) কাছে বায়াতের স্থান 199
মাহদীর (আঃ) সাহায্যকারীরা 202
ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-এর অবতরণ 205
মাহদীর (আঃ) আবির্ভাবে বরকত 207
মাহদীর (আঃ) কর্মকাণ্ড ও আহবান 210
মাহদীর (আঃ) পন্থা 213
মাহদীর (আঃ) প্রশংসনীয় নৈতিকতা 215
ধর্ম মাহদীতে (আঃ) গিয়ে শেষ হবে 216
ইহুদী ও খৃষ্টানরা 218
শুধু ইসলাম ধর্ম থাকবে 220
মাহদীর (আঃ) সংস্কার 221
মাহদীর (আঃ) অধীনে বিজয় ও উন্নয়ন 225
মাহদীর (আঃ) খিলাফত ও শাসন-এর সময় 227
মাহদী (আঃ)-এর 313 জন প্রধান সাহায্যকারী ও উৎপত্তি স্থান 229